১৯ এপ্রি, ২০১৩

কোন আড়ালে পালাবো বলো?

কৈশোরে আমার একটা শখ ছিলো, কোন ডায়েরি পেলে প্রতিটি পাতার নিচে লিখে রাখা বিভিন্ন লেখক ও দার্শনিকদের উদ্ধৃতিগুলো পড়তাম। উপদেশ পেতে আমার বড়ই ভালো লাগত সেই বয়সে-- বড় ভাই, স্যার, মসজিদের ইমাম সবার উপদেশ আমি গোগ্রাসে গিলতাম আর চিন্তাভাবনা করতাম, খুবই আনন্দ লাগত। সেই সময়ে পড়া একটা উক্তি আমার আজকে মনে পড়ছে, কে বলেছিলেন মনে নেই -- "অন্ধকারে তুমি কি সেটাই তোমার চরিত্র।" একই রকমের একটা কথা পড়েছিলাম একবার, "নির্জনতায় মানুষ ফেরেশতার চাইতে উত্তম নইলে শয়তানের চাইতে অধম।" এই কথাতেও চিন্তার খোরাক পেয়েছিলাম। আজকে হঠাৎ এই বাণী দু'টো মনে পড়ে যাওয়ায় ভাবছিলাম, আসলেই চিন্তাজাগানো কথা এগুলো। সবার সামনে আমরা অনেক সুন্দর ভালোমানুষের রূপ ধরে থাকতে পারি, সুন্দর কথা বলতেই পারি, হাসিমুখে তাদের সামনে বিনম্র ভালোমানুষের ভাব দেখাতে পারি। কিন্তু যখন আমি নির্জনতায় রুমে একা, তখন শয়তান এসে ওয়াসওয়াসা দেয়, মনের ভিতরে কুচিন্তা ও কুধারণাদের আগমন হয়। মাথায় হয়ত থাকে, কেউ তো আর দেখতে পাচ্ছে না, সমস্যা কী? সেরকম সময়ে অনেক ভালোমানুষের ভিতর থেকেও ভয়াবহ জন্তু-জানোয়ার বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু আসলে আমরা কি কখনো *আড়ালে* থাকতে পারি?


একটা গল্প শুনেছিলাম ইমাম গাজ্জালির 'বিদায়াতুল হিদায়াহ' গ্রন্থটির উপরে ইমাম আহমাদ সা'দের আলোচনায় যা অনেকটা এমন -- একবার একজন উস্তাদ তার ছাত্রদের হাতে ফল ধরিয়ে দিয়ে বললেন, যাও তোমরা সবাই লুকিয়ে ফলটি খেয়ে এসো এমন স্থানে গিয়ে যেন সেখানে কেউ না দেখে তোমাদের। কিছুক্ষণ পর সবাই ফল খেয়ে ফিরলেও একজন ফল হাতেই শিক্ষকের কাছে এলো। উস্তাদ জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি খাওনি কেন? সে উত্তর দিলো, আমি অনেকদূরে গাছপালার আড়ালে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু খেতে গিয়ে মনে হলো, আমাকে কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন। আমি তো তার চোখের সীমানার বাইরে কিছুতেই যেতে পারবো না। সেই শিক্ষক আনন্দিত হয়ে বললেন, তুমিই আমার শিক্ষা ঠিকভাবে নিতে পেরেছ, আল্লাহকে এড়িয়ে আমরা কখনো কোথাও যেতে পারব না, তিনি সবকিছুই দেখেন ও জানেন।

পথচলার সময়ে আমাদের চোখ কী দেখে সেটা আর কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখেন। নিজের কম্পিউটারে নিজের রুমে বসে আমরা কী দেখি, কী করি কেউ তার সাক্ষী না রইলেও আল্লাহ জানেন, কিরামান-কাতিবিন সাক্ষী থাকেন। আমরা হয়ত সমগ্র পৃথিবীর সবাইকে ধোঁকা দিতে পারব, আল্লাহকে কখনো পারব না। অথচ আমাদের সবকিছুর হিসাব কেবল তিনিই নিবেন। উস্তাদ নুমান আলী খান তার এক আলোচনায় টিপস দিয়েছিলেন তরুণ ছেলেমেয়েদের যেন একা/নির্জনতা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে। সম্ভব হলে ক্লাসের ফাঁকে মসজিদে গিয়ে পড়তে, ভাইবোন অথবা ভালো সঙ্গীর সাথে বা উপস্থিতিতে সময় কাটাতে। খারাপ চিন্তা, কথাবার্তা, দৃশ্য থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। সর্বপ্রথম্ম তাওবা করে নিয়াত করতে হবে অন্যায়মুক্ত থাকার। নিয়াত করলে আল্লাহ সাহায্য করেন তার বান্দাদেরকে। যার হৃদয় আল্লাহকে মানতে চায়, আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার জন্য পথ খুলে কঠিক কাজকেও সহজ করে দেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাই একমাত্র সাহায্যকারী, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই সর্বোত্তম পৃষ্ঠপোষক।

[১৮ এপ্রিল, ২০১৩]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে