২৮ এপ্রি, ২০১৩

ফেসবুক জীবনঃ লাইক শেয়ার আর কমেন্টের ভালোলাগা

ফেসবুকে প্রথম সাইনআপ করেছিলাম ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তখন থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনে কম্পিউটার জড়িয়ে থাকায় খুব কমই বড় সময়ের দুরত্ব হয়েছিলো। জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে সাথে এই দীর্ঘ সময়ে আমার চিন্তা ও উপলব্ধির বিবর্তন হয়েছে, ফেসবুকও যার একটি অংশ। বিগত শাহবাগী-পরবর্তী সময় থেকে এখন অবধি উত্তাল ফেসবুক দেখে অনেক কথা মনে হচ্ছিল...... কেন এত সময় দেয়া এখানে? প্রচুর শেয়ার পাবার নিয়াতেই ছবি এডিট হয়? অনেক লাইক পাওয়ার আনন্দ উপভোগের আশায় স্ট্যাটাস দেয়া হয়? পেইজ প্রমোট করতে নোংরা নামের অজস্র পেইজ খুলে লাইক চেয়ে বেড়ানোতে কী লাভ? পেইজের অ্যাডমিন হওয়ায় কীসের এত অস্থিরতা? কী লাভ? ছবি আপলোড করে কেন এত লাইক ও কমেন্ট পেতে ইচ্ছা করে? কেউ আমাকে স্মার্ট, কিউট, সুইট বললে তাতে কীসের এত আনন্দ? সাহায্য চাওয়ার নামে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে মেরে দেয়া, সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যার প্রচার সর্বোচ্চ হলো যেন সর্বত্র। কথার সত্যতা যাচাই ছাড়াই ছড়াচ্ছে যা-তা।


অশ্লীল অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে গদ্য লেখা, অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে 'জমিয়ে' স্ট্যাটাস দেয়াতেও আনন্দ পাওয়া যায় মনে হয়। কী লাভ প্রচুর like পেয়ে, যে কথা আল্লাহ 'like' করলেন না? কী লাভ মিথ্যা বলে 'লাইক' পেয়ে 'বিখ্যাত' হয়ে? কী হবে প্রচুর শেয়ার পেয়ে যে শেয়ারে আমার গুনাহ শেয়ার হতে থাকলো মিথ্যাচার, অশ্লীলতার, গালাগালির কারণে? ফেসবুকে কেউ মানুষকে দেখে না, ততটুকুই দেখে যতটা দেখানো হয়। মুনাফিক ও পাপাচারীরা ভেক ধরতে পারে ধার্মিকের, কঞ্জুসের পোস্ট দানশীলতায় ভরা থাকতে পারে। হিংসুটেরা ভালোবাসার কথাও বলে উড়িয়ে দিতে পারে। ছদ্মনামে গালাগালি করলে কেউ না ধরতে পারলেও কিরামান-কাতিবিন ঠিকই সাক্ষী রয়ে যাচ্ছেন। কাকে ফাঁকি দিতে চাই আমরা? নাকি আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা এতটাই নিশ্চিন্ত?

অথচ প্রকৃত সফল তো তারাই, যাদের আখিরাতে জান্নাত হবে। পৃথিবীর সেরা মানুষগুলো এই জগতে যারা ছিলেন, তারা অনর্থক কথাকে ভয় করতেন। তারা দুনিয়াবী এমন কথা কম বলতেন যাতে আল্লাহর স্মরণ থাকত না। তারা নিশ্চিত না হয়ে কথা বলতেন না। মিথ্যাকে ভয় করতেন অত্যাধিক। তারা অনর্থক সন্দেহ করে বেড়াতেন না। তাদের শব্দ ছিলো সুন্দর, তাদের সবার লজ্জাশীলতা ছিল অনুপম। ঘরে তাদের কুরআনের সাথেই সময় কাটতো, অধ্যয়নে আর সলাতে, দিনে এবং রাতের শেষভাগে। তারা প্রতিটি জ্ঞান অর্জন করতেন আল্লাহর আরো বেশি কাছে যাওয়া ও সন্তুষ্টি লাভের আশায়। আমরা তাদের মতন হতে পারব না হয়ত, সেই শিক্ষাকে বুকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি কি? মনে রাখতে হবে, জানা এবং বুঝতে পারা এক কথা না। বুঝলে আমরা এমন কাজ করতাম না যা আমাদের পদে পদে জাহান্নামের কাছাকাছি নিয়ে যাবে।

এক ছোটভাই বলেছিল 'ফেসবুকে উচ্চতর ইসলাম শিক্ষার' আগে ওর চিন্তাভাবনা অন্যরকম ছিল -- কথাটা শুনে অনেক হেসেছিলাম। ইসলাম শিখতে হলে কুরআনের কাছেই যেতে হবে। গোটা মনযোগ দিয়েই শিখলে প্রশান্ত হবে অন্তর। বহুবিধ উৎসের অসুস্থ বাক্য, মিথ্যা বাক্য, ভয়াবহ ছবি, গালাগালিতে আসলে 'অ্যাকটিভিজম' করে নিজের এবং ইসলামের কতখানি উন্নতি করি আমরা? যে কাজ নিজেরই উপকারে আসে না, সে আবার কার উপকারে আসতে পারে? সম্পর্ক হোক আল্লাহর সাথে, সম্পর্ক হোক কুরআনের সাথে, সেই উসিলায় আল্লাহ আমাদের মুক্তি দিন অনন্ত জগতে। আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দিন যেন অনর্থক কথা, মিথ্যাচার, অশ্লীলতা, পাপাচারে আমাদের অংশগ্রহণ না থাকে এবং যেন ভালোকাজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।


২৭ এপ্রিল, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে