১৮ এপ্রি, ২০১৩

সফল জীবন কার? কোথায় যাব সফল হয়ে?

আমার বন্ধুর চাচী মারা গেছেন রোড অ্যাক্সিডেন্টে। ছোট্ট একটা সন্তান আছে তার। শিক্ষিকা ছিলেন, ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নির্দেশ চলেই এসেছিলো, তাই তার রূহ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো। শোকাহত বন্ধুকে বলার কিছু পাচ্ছিলাম না, নীরবতাটুকুতে শুধু দু'আ করা। আল্লাহ যেন তার বান্দাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। তিনি যেন আল্লাহর রাহমাতপূর্ণ অভ্যর্থনাতে গৃহীত হন কবরে।

অদ্ভুত লাগে! নিশ্চিত যাত্রা আমাদের কবরে। এই রূহ আমার পৃথিবীর কিছু না। এই শরীরে রূহ না থাকলে তা একটা লাশমাত্র। সেই শরীরে রং মেখে, কাপড় চড়িয়ে, প্রসাধন লাগিয়ে আমাদের অন্ধজীবনের অজস্র সময় কাটে। এই আত্মার যত্ন তো নেয়া হয় না তেমন। মহান আল্লাহর স্মরণে চোখের পানিতে ধুয়ে এই আত্মার যত্ন হতে পারত, খারাপ শব্দ থেকে কান সরিয়ে রেখে, নোংরা-অশ্লীলতা থেকে চোখকে সাবধানে রেখে এই যত্ন হতে পারত, মুখকে অনর্থক কথাবার্তা থেকে, আঙ্গুলকে অর্থহীন শব্দলিখন থেকে মুক্ত রেখেও এই অন্তরকে যত্নে রাখা যায়। নফস শয়তানের কাছে এমনভাবেই পরাজিত থাকে যে মুক্তির জন্য দু'রাকা'আত সলাত আদায়ও করতে পারিনা! 


প্রায়ই খেয়াল করে দেখি, যেভাবেই হোক দিন কেটে গেছে এই জীবনে। ভার্সিটিতে হল পাইনি যখন একটা মেসের মেঝেতে চাদর বিছিয়ে কাটিয়ে দিয়েছিলাম মাসের পর মাস, সকালে ১০টাকার কমে নাশতা সেরে ফেলতাম খরচ কমাতে। তখনো অনেকে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে কেনাকাটা করে আরামের মাঝে ছিলো। অনেকগুলো বছর পরে পাশ করে খেয়াল করে দেখি ওদের অনেকেই এখনো সন্তুষ্ট হবার মতন চাকুরি করেনা। বর্তমানকে সবাই আয়েশে কাটাতে চায়, *সুন্দর জীবন* হিসেবে পেতে চায়, কিন্তু এই সুন্দর কী আসলে? নিজের জমিতে ঘর-বাড়ি, ব্যাঙ্কের টাকা, ফ্ল্যাট কিনে, পাজেরো বা অ্যালিয়ন কিনে *সফলতা* অনুভব কি আদৌ সফলতা? বেশি সফল হতে পারেন চায়ের দোকানদার ইসহাক চাচা, তিনি পাগলী বুড়িকে বিনে পয়সায় চা খাওয়ান, টাকা নিয়ে ঝগড়া করেন না কারো সাথে, খিস্তি করেন না কখনো। বি,এ পাশ করে শারীরিক অসুস্থতার দরুন চায়ের দোকানী হলেও তার মুখে হাসি থাকত সবসময়। তার কথা ভাবলেই মনে হয়, কত ঐশ্বর্য তিনি জমিয়েছেন ঐ নিশ্চিত জগতে, হয়ত আমাদের আশেপাশের অনেক কোটিপতি সেখানে ভিখিরি হয়ে থাকবে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে এমন জীবনধারণের তাওফিক দিন, যার উপরে তিনি সন্তষ্ট হন। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিন সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে চলা, সেই পথ নিঃসন্দেহে কঠিন পথ। কেবল তারাই পারেন, যারা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত সৌভাগ্যবান। আল্লাহ আমাদেরকে সেই দলে অন্তর্ভুক্ত করুন।

১৬ এপ্রিল, ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে