তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ঢাবি'র কেন্দ্রীয় মাসজিদে মাগরিবের সলাত আদায় করে শাহবাগে অপেক্ষা করছি বাসের জন্য। ছুটির দিনের সন্ধ্যা, শিশুপার্কে আগত মানুষদের উপচে পড়া ভিড়ে বাসে জায়গা পাওয়ার আশা ত্যাগ করে হাঁটতে শুরু করলাম রমনা পার্ক লাগোয়া ফুটপাত ধরে... একটু নীরব এলাকায় আসতেই এক শক্তপোক্ত যুবককে সামনেই কানে ফোন নিয়ে রীতিমত অস্থিরভাবে ছটফটিয়ে এদিক ওদিক লাফ দিতে দেখলাম। কিছু কথা কানে আসতে একটু ধীরপায়ে হাঁটলাম, কানে এলো --
"ও কেন ছেলের সামনে হাজির হবে? আমি জানতাম, দুপুর থেকেই টের পাচ্ছিলাম যে আজকে ওকে কেউ দেখতে আসবে। শুক্রবারে ওকে দেখতে আসে আমি জানি... ও আমাকে কথা দিসিলো আব্বা-আম্মা ওর সাথে বেঈমানী করবে না। ও কেন তাহলে ছেলেপক্ষের সামনে গেলো। আজকে যদি ওর বিয়ে হয়া যাইত তাইলে যেমন কষ্ট পাইতাম, আমি এখন তেমন কষ্ট পাইতেছি..."
-- এই কথাগুলো বলে পেটা শরীরের এই শক্তপোক্ত যুবক হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। অপেক্ষাকৃত নীরবতায় কান্নার শব্দ আমাকে বুকে কাঁপুনি দিলো। এরুকম কান্না জীবনে অনেকবার শুনেছি। আত্মাছেঁড়া কান্না। এই কান্নার পরে ভয়াবহ চিৎকার আছে, তাতে ক্রোধ আছে। এই ছেলে কয়েকবার লাফ দিয়ে উঠেছে রাস্তাতেই, হয়ত এই ক্রোধ তাকে আরো ভয়াবহ কোন অবস্থায় নিয়ে যাবে। রাগ ও ক্রোধ দমনের কোন ইচ্ছেই তার নাই। মানুষ চাইলেও রাগে সংযত হতে পারে না সহজে, কেননা রাগ সংযত করা একটা অনুশীলন।
প্রেমের নেশায় সে ডুবে ছিলো, কোন এক মেয়েকে নিজ অধিকারে নিয়ে ফেলার খায়েশ ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনাতেই তার ক্রোধ এই পর্যায়ে। হয়ত মেয়েটা এবার শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, লাঞ্ছিত হবে। এরকম *প্রেমিক পুরুষেরা সহজে ছেড়ে দেয় না* এসব ক্ষেত্রে। ছেড়ে না দেয়াটাই এই ছেলের জন্য স্বাভাবিক। তবু মেয়েরা প্রেম করে, কতভাবে নাজেহাল হয়, কতটা লাঞ্ছিত হয়, হবে বা হয়েছে কে জানে? ছেলেরাও তো ঘুরে-ফিরে যায় প্রেম করতে, এমন নানান ভাঙ্গন হয় তাদের হৃদয়ে।
আল্লাহ এসব বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষ সম্পর্কগুলো নিষিদ্ধ করেছেন, সেই মহান নির্দেশের মাত্রা বুঝতে চাইলে হয়ত মুক্তির পথ খুলে যেত। জীবনটাও সরল হত, এসব জটিলতার মাঝে থাকতো না। ক্ষতির জন্য পাগল তরুণ-তরুণীদের কে বুঝায় সেকথা? চারিদিকে যখন বিলবোর্ড-কমার্শিয়াল-নাটক-সিনেমা-সিরিয়ালে-পথেঘটে প্রেমের প্রদর্শনী, সেই অমোঘ শরীরের আর অন্তরের ঢেউকে উপেক্ষা করে বিবাহপুর্ব প্রেমকে বুড়ো আঙ্গুল তারাই দেখাতে পারে যারা আত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যারা তাদের রব আল্লাহকেই কেবল জীবনের শান্তির-মুক্তির-অর্জনের মূল বলে বিশ্বাস করে।
ছেলেটা মেয়েটার সাথে প্রেম করত। মেয়েটা তাকে বলেছিলো তাদের প্রেমে আব্বা-আম্মা 'বেঈমানী' করবে না, কিন্তু তবুও ছেলেপক্ষের সামনে মেয়েটা যায়। যুবক সেই প্রেমে মত্ত ছিলো, সেই স্রোতে আর কী কী ছিলো জানিনা। বুঝি, এরকম বিবাহপূর্ব সম্পর্কে নেশা কাজ করে পুরুষ আর নারীর মাঝে। সারাদিনের অবসর সময়ের সঙ্গী হয়ে যায় ফোনের মাধ্যমে, অথবা শহরের এখানে-ওখানে, পার্কে বা রিকসায়। দুনিয়ার সবকিছু ভুলে মনের সাথে শরীর যোগ হয়ে যায়, যোগ হয় অভ্যাস। অভ্যাসের কারণেই একজন চলে গেলে নতুন সম্পর্ক গড়ে নেয়। একাকীত্ব আর তারা সহ্য করতে পারে না। শয়তানের প্রচেষ্টাও থাকে এসব সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর একাকীত্বে নতুন ফিতনাহ তৈরি করানোর জন্য।
হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ, জীবনে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা আর প্রচুর কান্নাকাটি করে পুরোনো অভ্যাসকে বদলে ফেলার চেষ্টা না থাকলে এসব ছেলেমেয়েরা আবারো সেই হারাম সম্পর্কের দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে। কত ঘটনা, কত ক্ষতি, কত নোংরামির কথাই তো কানে আসে... তবু হয়ত কেউ বুঝতে চায় না কেবল আল্লাহর জন্য অন্তরকে শূণ্য করে আল্লাহর স্মরণ দিয়ে তাকে পূর্ণ করা এই জীবনে কতটা শান্তি দেয়। যার জন্য আমাদের সকল সলাত, ত্যাগ, জীবন, মরণ -- সেই আল্লাহর কাছেই ফিরে আসুক আমাদের ভাই ও বোনেরা। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতের জন্য কবুল করে নিন...
[১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩]
"ও কেন ছেলের সামনে হাজির হবে? আমি জানতাম, দুপুর থেকেই টের পাচ্ছিলাম যে আজকে ওকে কেউ দেখতে আসবে। শুক্রবারে ওকে দেখতে আসে আমি জানি... ও আমাকে কথা দিসিলো আব্বা-আম্মা ওর সাথে বেঈমানী করবে না। ও কেন তাহলে ছেলেপক্ষের সামনে গেলো। আজকে যদি ওর বিয়ে হয়া যাইত তাইলে যেমন কষ্ট পাইতাম, আমি এখন তেমন কষ্ট পাইতেছি..."
-- এই কথাগুলো বলে পেটা শরীরের এই শক্তপোক্ত যুবক হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। অপেক্ষাকৃত নীরবতায় কান্নার শব্দ আমাকে বুকে কাঁপুনি দিলো। এরুকম কান্না জীবনে অনেকবার শুনেছি। আত্মাছেঁড়া কান্না। এই কান্নার পরে ভয়াবহ চিৎকার আছে, তাতে ক্রোধ আছে। এই ছেলে কয়েকবার লাফ দিয়ে উঠেছে রাস্তাতেই, হয়ত এই ক্রোধ তাকে আরো ভয়াবহ কোন অবস্থায় নিয়ে যাবে। রাগ ও ক্রোধ দমনের কোন ইচ্ছেই তার নাই। মানুষ চাইলেও রাগে সংযত হতে পারে না সহজে, কেননা রাগ সংযত করা একটা অনুশীলন।
প্রেমের নেশায় সে ডুবে ছিলো, কোন এক মেয়েকে নিজ অধিকারে নিয়ে ফেলার খায়েশ ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনাতেই তার ক্রোধ এই পর্যায়ে। হয়ত মেয়েটা এবার শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, লাঞ্ছিত হবে। এরকম *প্রেমিক পুরুষেরা সহজে ছেড়ে দেয় না* এসব ক্ষেত্রে। ছেড়ে না দেয়াটাই এই ছেলের জন্য স্বাভাবিক। তবু মেয়েরা প্রেম করে, কতভাবে নাজেহাল হয়, কতটা লাঞ্ছিত হয়, হবে বা হয়েছে কে জানে? ছেলেরাও তো ঘুরে-ফিরে যায় প্রেম করতে, এমন নানান ভাঙ্গন হয় তাদের হৃদয়ে।
আল্লাহ এসব বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষ সম্পর্কগুলো নিষিদ্ধ করেছেন, সেই মহান নির্দেশের মাত্রা বুঝতে চাইলে হয়ত মুক্তির পথ খুলে যেত। জীবনটাও সরল হত, এসব জটিলতার মাঝে থাকতো না। ক্ষতির জন্য পাগল তরুণ-তরুণীদের কে বুঝায় সেকথা? চারিদিকে যখন বিলবোর্ড-কমার্শিয়াল-নাটক-সিনেমা-সিরিয়ালে-পথেঘটে প্রেমের প্রদর্শনী, সেই অমোঘ শরীরের আর অন্তরের ঢেউকে উপেক্ষা করে বিবাহপুর্ব প্রেমকে বুড়ো আঙ্গুল তারাই দেখাতে পারে যারা আত্মিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যারা তাদের রব আল্লাহকেই কেবল জীবনের শান্তির-মুক্তির-অর্জনের মূল বলে বিশ্বাস করে।
ছেলেটা মেয়েটার সাথে প্রেম করত। মেয়েটা তাকে বলেছিলো তাদের প্রেমে আব্বা-আম্মা 'বেঈমানী' করবে না, কিন্তু তবুও ছেলেপক্ষের সামনে মেয়েটা যায়। যুবক সেই প্রেমে মত্ত ছিলো, সেই স্রোতে আর কী কী ছিলো জানিনা। বুঝি, এরকম বিবাহপূর্ব সম্পর্কে নেশা কাজ করে পুরুষ আর নারীর মাঝে। সারাদিনের অবসর সময়ের সঙ্গী হয়ে যায় ফোনের মাধ্যমে, অথবা শহরের এখানে-ওখানে, পার্কে বা রিকসায়। দুনিয়ার সবকিছু ভুলে মনের সাথে শরীর যোগ হয়ে যায়, যোগ হয় অভ্যাস। অভ্যাসের কারণেই একজন চলে গেলে নতুন সম্পর্ক গড়ে নেয়। একাকীত্ব আর তারা সহ্য করতে পারে না। শয়তানের প্রচেষ্টাও থাকে এসব সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার পর একাকীত্বে নতুন ফিতনাহ তৈরি করানোর জন্য।
হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ, জীবনে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা আর প্রচুর কান্নাকাটি করে পুরোনো অভ্যাসকে বদলে ফেলার চেষ্টা না থাকলে এসব ছেলেমেয়েরা আবারো সেই হারাম সম্পর্কের দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খেতে থাকে। কত ঘটনা, কত ক্ষতি, কত নোংরামির কথাই তো কানে আসে... তবু হয়ত কেউ বুঝতে চায় না কেবল আল্লাহর জন্য অন্তরকে শূণ্য করে আল্লাহর স্মরণ দিয়ে তাকে পূর্ণ করা এই জীবনে কতটা শান্তি দেয়। যার জন্য আমাদের সকল সলাত, ত্যাগ, জীবন, মরণ -- সেই আল্লাহর কাছেই ফিরে আসুক আমাদের ভাই ও বোনেরা। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে জান্নাতের জন্য কবুল করে নিন...
[১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩]