১৩ সেপ, ২০১৩

স্রেফ কিছু সম্ভাবনার কথা

অনেক সম্ভাবনার কথা মনে হয় মাঝে মাঝে, স্রেফ কিছু সম্ভাবনার কথা। আমাদের মাঝে একটা অদ্ভুত সত্ত্বা আছে যে বিচারকের আসনে বসতে পছন্দ করে, মানুষ পেলেই তাকে বিচার করে একটা গ্রুপে/দলে/টাইপে ভাগ করে ফেলতে চায়। নিজে একটু দ্বীন সুন্দর করে পালন করতে পারলে যদি এমন মানুষ পাই যে হয়ত ইসলাম পালনে আগ্রহী, তার বেশভূষা এবং মুখের ভাষায় সেইরকমের কিছু আহামরি পাওয়া না গেলে তাকে আমরা হয়ত গুণতিতেও ধরতে চাইনা। সামনের মানুষটার অবস্থানের উপরে ভিত্তি করে তার প্রতি আচরণ প্রতিফলিত হয়, বেশিরভাগ মানুষই এমন আমরা।

কতটুকুই বা জানি আমরা? হয়ত সামনের মানুষটা যখন অনেক কষ্টে যুদ্ধ করছে জীবনের, তার দ্বীন পালনের দুর্বলতা হয়ত আমাদের সামনে পরিষ্কার, তখনো হয়ত আমরা মনে করছি অনেক পরিশ্রম করে আমরা বেশ ভালো জায়গাতে এসেছি, জ্ঞানে-গুণে-পার্থিব অবস্থানে। অথচ আল্লাহ হয়ত আমাদের জীবনের বড় পরীক্ষাতে এখনো ফেলেননি। আমি যেই পরীক্ষা পেরিয়ে এসে মনে করছি অনেকদূর এসেছি, সেই মানুষটা হয়ত এর চাইতে বহুগুণ কঠিন অবস্থা পেরিয়ে আছেন। অথচ আমি তার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে চলে এলাম। ভেবেই নিলাম আমি তার চাইতে অনেক ভালো মুসলিম। অন্যের প্রতি খড়গহস্ত হওয়ার সময় আমাদের কুরআন এবং হাদিসের জ্ঞানটুকু চুলোয় তুলে রাখতে পছন্দ করি আমরা। অনেক কিতাব বুঝি, আলাপ করি কিন্তু কেবল মানার সময় নিজেকে ভালো মনে হতে থাকে।



কোন মানুষের মাঝে কী আছে, তা জানার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনটাই একজন মানুষের নাই, থাকে না, হবেও না। কোথায় যেন তবু একটা সুপিরিয়রিটি ফিলিংস রয়েই যায়। কী জানি, হয়ত হযরত খিজির এবং সাইয়্যিদিনা মুসা আলাইহিমুস সালামের ঘটনাটার শিক্ষা আমাদের মাঝে তেমন একটা দাগ কাটে না। একটা গল্প পড়েছিলাম ফেসবুকেই। এক ডাক্তার এক লোকের সন্তানের একটা অপারেশন করতে খানিক দেরি করায় সেই বাবা ক্ষেপে চিতকার করছিলেন, বলছিলেন সন্তানের কিছু হলে কেমন লাগে সেইটা ডাক্তার বুঝেন কিনা। ডাক্তার উত্তর দিয়েছিলেন, সেদিন সকালে তার সন্তান মারা যায় এবং তিনি তাকে কবর দিয়ে হাসপাতালে অসুস্থ ছেলেটির অপারেশন করতেই কেবল এসেছিলেন, তবু দেরি হয়ে যায়।

কিছু মানুষের জীবনের পরিবর্তনে পেছনে অনেক ক্ষয় করে গতি বদলে আসতে হয়, কিছু মানুষ পারিবারিকভাবেই অনেক সহজ আর্থিক আর দ্বীনী পরিবেশ পায়। সুবিধাভোগী মানুষগুলো তত্ত্বকথা জানলে কখনো এটুকু বুঝতে পারেনা যে পরিবর্তন করা মানুষগুলোর কষ্ট কতটুকু। তবু বিচার করতেই হবে, দৈনন্দিন আচরণে ক্ষিপ্ত হতেই হবে... এখন হয়ত পার পেয়ে গেলাম -- আমার আচরণে কেউ কষ্ট পেয়ে দ্বীনের পথে এসে ভুল বুঝলো কিনা সে চিন্তাও করলাম না। হয়ত এখন তা ভাবতে দায়বদ্ধ নেই, জবাবদিহিতাও নেই। আখিরাতে পাবো কি মুক্তি এত সহজেই?

স্বপ্ন কারখানা, ঢাকা নগরী।
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ঈসায়ী

1 টি মন্তব্য:

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে