২৩ সেপ, ২০৩০

প্রিয়তম বাণী

আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেনঃ
“হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।”[আয-যুমারঃ৫৩] 
 “তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব।” [গাফির - ৬০] 

১ জুল, ২০২২

নিজেকে পরিবর্তনের পরিকল্পনা

কয়েকটা ভাবনা ভাবাচ্ছিলো বছরের প্রথম দিনে, হয়ত সবাইকে নতুন বছরের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে হইচই করতে দেখে। আমারো সবার মতন কী পেলাম কী চাই টাইপের ভাবনা কাজ করলো। পিছনে তাকিয়ে দেখি, অনেক ক্ষয়, ভুল, পাপ। সামনে অজানা জীবন, অনেক কাজ, আবশ্যক মৃত্যু। দুনিয়াতে এসে কেবল মৃত্যুটাই আমার নিশ্চিত ছিল, এরপরেও অনেক কিছু পেয়েছি, পাচ্ছি। একদিন মালাকুল মাওত এসে হাজির হবেন, জানিনা আমার রূহ কি পানির জগ থেকে পানি ঝরার মতন ঝরে পড়বে, নাকি কাটাভরা গাছের শাখা ভেজা উলের মধ্য দিয়ে টেনে বের করার মতন যন্ত্রণা দিয়ে বের হবে। আমি কি পারব

১৯ এপ্রি, ২০২০

মনের জানালা মাঝে # ৬০


(৫১২)
শবে বরাত বিদাত কিনা সেইটা নিয়া নানান রকমের আলাপ-আলোচনা থাকলেও হালুয়া খাওয়া যে বিদাত না সেইটা নিয়া উলামারা একমত। যত খুশি হালুয়া খান!

(৫১৩)
বিদায় তো তারই সুন্দর হয়, যার অবস্থান থাকে অর্থপূর্ণ। সুন্দর বিদায় মানে কি আর আড়ম্বর, জাঁকজমক, ঢাকঢোল? সুন্দর বিদায় হলো যতটুকু থাকা হলো, ততটুকুতে নিজ জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া, রবের স্মরণ, ভালোবাসার মানুষদের অশ্রু। চাইলেই কি আর যাবার আয়োজন সুন্দর করতে পারে সবাই? সে তো তারই হয়, যার কাজ হয় সুন্দর।

(৫১৪)
যে মানুষটির কথা ভাবলে মনে হতো, তিনি এই দেশের মুসলিম সমাজের তীব্র মতপার্থক্যের ফলে সৃষ্ট অরাজকতাকে কমিয়ে একীভূত করবেন -- সেই মানুষটি আমাদের বড্ড অসহায় করে ফেলে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর একজন ব্যতিক্রমধর্মী আলেম ছিলেন। আল্লাহ তার এই বান্দাকে যেন জান্নাতের পেয়ালার পানি করান। আমরা একের পর এক মহান মানুষদের হারিয়ে ফেলছি নানান ভাবে। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। [১১ মে, ২০১৬]

(৫১৫)
তবু পৃথিবীতে ভালোবাসা রয়ে যাবে।
হয়ত কেউ জীবনের যন্ত্রণায়, রোগের দংশনে বিদায় নেবে জগতসংসার ছেড়ে রবের কাছে, কেউ তারে বিদায় দিয়ে পড়ে থাকবে আমৃত্যু যুদ্ধে। এই কষ্টকর বৃত্তে তবু ভালোবাসা জয়ী হয়। রক্ত-জ্বালা-যন্ত্রণা-শংকা পেরিয়ে মানব হৃদয় প্রেমে ডুবে।

ভালোবাসুন পৃথিবীবাসীকে। দয়াময় আল্লাহ আপনায় ভালোবাসবেন। এ জগত পেরিয়ে অনন্ত জগতে পাবেন আনন্দভরা অভ্যর্থনা! ভালোবাসা-দয়া বৃথা যায় না...

(৫১৬)
করোনাভাইরাসের প্রকোপে হঠাৎ চোখের সামনে অনেক অন্যায় দেখতে পাচ্ছি স্পষ্টভাবে, পুরোনো অন্যায়ের বীজ থেকে মহীরুহ হবার কিছু দৃষ্টান্ত। কষ্ট লাগে, খারাপ লাগে, অসহায়ও লাগে। কিন্তু মনে রাখা উচিত কি নয় যে এত এত সৃষ্টি, ধ্বংস, সভ্যতা-সংস্কৃতি, রাজত্ব-বিচার, শক্তি ও প্রতাপ এগুলো একদমই মানুষের ব্যক্তি যোগ্যতা না। একদমই 'কিছু সংখ্যক' লোকেরও অর্জন না। কারোই কোনো শক্তি নাই, কারোই কোনো 'যোগ্যতা' দিয়ে কিছু ঘটে যায় না।

জীবনে দেখলাম এত অসাধারণ মানুষগুলো, কী অবহেলায় খরচ হয়ে গেলো। এত নিকৃষ্ট মানুষগুলো, কত ক্ষমতা-অর্থ কব্জা করে দাপুটে সময় কাটালো। অথচ, আগের মানুষদের একজনের তুলনায় এরা লক্ষ-কোটিজন একত্রিত হলেও কোন মূল্যই নেই। এই বিচারও দেখার সময় এই জগত না, এর পরের একটা জগত আছে, সেখানে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার হয়। আমরা হয়ত চোখে সেটাই দেখবো, যেগুলা আপাত ক্ষমতা, ষড়যন্ত্র, লড়াই দিয়ে লোকে জিতবে। কিন্তু এরাও খুব খুব অল্প সময়েই শেষ হয়ে যাবে।

কে থাকে দীর্ঘ সময়? কেউ না। হয়ত আমরা চাই, আমাদের চাওয়ার মতন করে 'অন্যায়ের ধ্বংস' হোক। কিন্তু আল্লাহ ত সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন। তিনিই পরম ক্ষমতাবান। আর কেউ নেই। এই মহামারীর সময়ে অসহায়ত্বের এই গূঢ়তম উপলব্ধি হয়ত আমাদের প্রতি রবের পক্ষ থেকে উপহার। দিনশেষে যেকোনো উপায়েই হোক, আমরা মাটিতেই মিশে যাবো। যে যা করবো, তা সাথে নিয়ে যাবো...

১৮ এপ্রিল, ২০২০
ঢাকা, বাংলাদেশ।

ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষের সাথে যে আচরণ অবশ্যই পরিতাজ্য

আমরা মুসলিমরা পারস্পরিক দ্বীনের কথা, উপকারী কথা স্মরণ করিয়ে দিবো, এটা ঈমানেরই একটা দাবি। এই কাজটা হয় আল্লাহকে ভালোবেসে, অপরকে ভালোবেসে। আমরা জানি আল্লাহই সকল হিদায়াতের মালিক, তিনি সুন্দর, তিনি কোমলচিত্ত। তাই, কাউকে উপদেশ দিতে হলে সেটা হবে ভালোবেসে। যাকে চিনিনা, এমন কাউকে অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত উপদেশ দেয়াও উচিত নয়; তা করতে হয় প্রজ্ঞার সাথে। তবে যাদের আমরা চিনি, জানি, ভালোবাসি, তাদের যদি আমরা দেখি বিষণ্ন, দুঃখে জর্জরিত, তখন সচেতনভাবেই পাশে থাকা উচিত। তাকে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে আহত হয়। বরং বুদ্ধিমত্তার সাথে, ভালোবেসেই কথা বলতে হবে যে জিনিসটায় তার উপকার হয়। মানুষ অনেক সময় উপদেশ ছাড়াই কাছের মানুষদের সান্নিধ্যে পেলেই সঠিক বুঝ পেয়ে যায়, অনেক সময় তাদের হয়ত বকা দিতে হয়। এই ব্যালান্সটা তখনই সম্ভব, যখন আমরা ওই মানুষটাকে জানবো ও ভালোবাসবো।

তবে কেউ যখন ডিপ্রেসড থাকে, তার অবস্থা আসলে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বলেই সে ডিপ্রেশনে ভুগে। সচেতনভাবেই তাদের পাশে থাকতে হবে, উপদেশও খেয়াল করে দেয়া উচিত। অন্তত এমন কথা বলা উচিত নয় যা হয়ত তাকে আরো আহত করবে। সচরাচর যে বিষয়গুলো সহজেই একজন ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষকে আমরা বলে ফেলি কিন্তু সেগুলো তাকে কষ্টও দিতে পারে এমন বিষয়গুলো হলো--




১) "জীবনের ভালো বিষয়গুলোর দিকে দেখো" 

- আসলে সে তো ভালো দিক ত সে দেখতে পাচ্ছে না বলেই সে বিষণ্ণ, ডিপ্রেসড। এভাবে বললে হয়ত তাকে অন্যায়ভাবে জাজ করা হয়ে যেতে পারে। সে মনে করতে পারে সে জীবনের ভালো দিকগুলো দেখতে পায় না, সে আসলে অকৃতজ্ঞ। এই ইঙ্গিতে সে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারে। আমরা এই উপদেশগুলো মানুষটিকে বুঝে তবেই দিবো...

২) "সবর করো, ধৈর্য ধরো!" 

- কেউ যদি ডিপ্রেসড থাকে, তাকে যদি বলতে থাকা হয় যে "ধৈর্য ধরো... ধৈর্য ধরো"-- অনেক সময়েই এটা এক ধরনের জাজমেন্ট করা হয়। এতে করে বলেই দেয়া হচ্ছে ইঙ্গিতে যে সে সবর করছে না, যে আসলে ধৈর্যহীন। হয়ত তার এখন এই কথাটা শোনা প্রয়োজন নেই, বরং যে কথা শুনলে, তার আল্লাহর উপরে, নিজের উপরে আস্থা বৃদ্ধি পাবে এমন কথা বললে সে হয়ত আপনাতেই ধৈর্যধারণ করবে আল্লাহর কাছ থেকে বিনিময় পাওয়ার আশায়...

৩) "এই দোয়া পড়ো, ঐ দোয়া পড়ো..." 

- দু'আ করলে, আল্লাহর স্মরণ করলে তা অবশ্যই মানুষের হৃদয়কে প্রশান্ত করে, মনের শান্তির কারণ হয়। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন "যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।" [১]। কিন্তু কেউ যখন ডিপ্রেসড, তাকে গিয়ে যদি আমরা বলে ফেলি যে, "এই দোয়া পড়ো, ঐ দোয়া পড়ো..." তাতে হয়ত একটা জাজমেন্ট স্পষ্ট থাকে যে আসলে ডিপ্রেসড ব্যক্তি দোয়া পড়ে না। এতটুকু জ্ঞানও হয়ত তার নাই! আল্লাহ তো অন্তরের কথাই জানেন, একদম দোয়ার শব্দই তো লাগে না, তাইনা? এটা আমরা জেনে বুঝেই যদি তার প্রতি সহমর্মী হয়ে আরো উপকারী পদ্ধতি হিসেবে দোয়ার কিছু একটা সামনে রেখে দিই, আল্লাহ জানেন, হয়ত নিজে থেকেই সে আগ্রহী হয়ে আল্লাহর কাছে আরবি দোয়াগুলো দিয়েই চাইবে। কিন্তু আমাদের আচরণ হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ ও ভালোবাসাপূর্ণ।

8)"আরেহ, বাদ দাও এইসব ডিপ্রেশন, এগুলা কোনো ব্যাপারই নাহ.." 

- এই কথা বলা খুব বাজে একটা কাজ। যে মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগেনি সে ভাবতেও পারে না এর অনুভূতিটা কেমন। এখনকার সামাজিক জীবনে এটা নানানভাবে লোকজনকে আঁকড়ে ধরে। তবে ঈমানদারগণ ইনশাআল্লাহ সহজেই বেরিয়ে আসতে পারবে। এই বিশ্বাস নিজে রেখে অপর ভাই/বোনের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে উদারতার হাত বাড়িয়ে দেয়া দরকার। কিন্তু এসব অনুভূতিগুলোকে যখন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে বলা হয়, তখন সে এতে সংকুচিত হয়ে যাবে, আরো খারাপ ফিল করবে, অপমানিত অনুভব করবে। আমরা হয়ত তাকে আরো সুন্দর কোনো কাজে তার সংগী করে নিতে পারি যাতে লোকের উপকার আছে, যেখানে ব্যস্ত হয়ে সে বিষণ্ণ অনুভূতিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ পাবে না।

৫) "তোমার চেয়েও লোকে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে ..."

- এই ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে খুব প্রচলিত। হয়ত যখন তখন অসাবধান হয়ে অন্যকে আমরা বলে বসি, "দেখো তুমি এটুকুতেই এরকম মন খারাপ, ওই যে দেখো ইয়েমেনের লোকেরা না খেয়ে আছে। ওদের দিকে তাকিয়ে হলেও ভালো থাকো।" -- এটা ঠিক নয়। ইয়েমেনের শিশুরা খেতে পারছে না, এটা খুবই বড় সত্য। কিন্তু তার মানে তো এটা না যে আমাদের জীবনের কষ্টগুলো মিথ্যে। বরং, অপরের দিকে ভালোবাসা আমাদের নিজেদেরকেও ভালোবাসার পথ সুগম করে দেয়। পরোপকার করতে চাওয়ার ইচ্ছে আমাদের অন্তরকে উদার করে দেয়, ঈমানকে বাড়িয়ে দেয়। তাই এমনভাবে না বলে বরং মানুষটি যেভাবে নিজের কষ্টকে ভুলে ভালো কাজে উৎসাহী হবে, আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে জীবনের কাজে ব্যস্ত হবে এমন কিছু বলা উচিত।

মোটকথা, সচেতনভাবে মানুষের সাথে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে। অনেকসময় আমাদের অনেকের কেবল প্রয়োজন হয় ভালোবাসা, সহমর্মিতা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে উত্তম আখলাক দান করুন, দ্বীনের উত্তম বুঝ দান করুন, আমাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন।

রেফারেন্সঃ
[১] সূরা আর-রাদ, আয়াত ২৮ http://tanzil.net/#trans/bn.bengali/13:28
[২] শেইখ আজহার নাসেরের আলোচনা শুনুনঃ https://www.youtube.com/watch?v=MPhYITkCJ_0

মনের জানালা মাঝে # ৫৯



(৫০৮)
আপনার চোখগুলো যা দেখতে চায়, আপনি তো কেবল সেটাই দেখতে পান।

মূল দেখার বস্তুগুলো আমাদের কন্ট্রোলের বাইরে, আল্লাহ যা চান, সেটাই হয়। তাই, ঘটনাগুলো দেখতেই হয়। কিন্তু ঘটনা তো প্রতি মূহুর্তেই আমাদেরই চারপাশে অজস্র। ফ্যান ঘুরলে কাপড় নড়ে, বাইরে পাখি ডাকে, কেউ কাউকে কিছু বলতেসে, এমন হাজারো ঘটনা। এগুলোর মাঝে আমরা যেটা চাই, সেটাই কেবল খেয়াল করি। আর যা খেয়াল করি, তাকে নিজেদের ইচ্ছেমতন ব্যাখ্যা করি। রাস্তায় কেউ কাউকে থাপ্পড় দিলো-- এই দৃশ্য দেখে আপনি ভাবতে পারবেন এটা অন্যায়, ভাবতে পারবেন দুর্বলদের উপরে সবলের অত্যাচার, ভাবতে পারবেন এটা বড় ভাই ছোট ভাইকে শাসন করেছে। ঘটনা যাই হোক, যে অনুভূতি আপনি পেতে চান, আপনি নিজেকে সেটাই বিশ্বাস করান, ঘটনা তখন তেমনটিই মনে হয়।

[২৪ এপ্রিল, ২০১৬]

(৫০৯)
সচরাচর আমাদের হাসি থাকে মৃদু, উচ্চস্বরে নয়। সেটাই উত্তম। কিন্তু মাঝে মাঝে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে হয়, মাঝে মাঝে হিহিহি করে, আবার কখনো হোহোহো করেও হাসতে হয়। কখনো হাসি হবে মুচকি, কখনো নিঃশব্দে দাঁত বের করেও হাসা উচিত। হৃদয়কে বৈচিত্র্য দিয়ে আনন্দ দেয়া উচিত, তাহলে মানুষটার ব্যক্তিত্বের মাঝেও আনন্দময় ভিন্নতা তৈরি হতে পারে।

যে প্রাণখুলে হাসতে জানে না, তার প্রাণের উচ্ছ্বলতা প্রকৃতপক্ষে মরেই থাকে। হাসিতে থাকে আমাদের হৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি।

(৫১০)
শাইখ হামজা ইউসুফ হ্যানসনের আব্বা মারা গেছেন ক'দিন আগে, পৃথিবীর অনেক স্কলাররাই তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করছেন, দোয়া জানিয়ে। ৮৯ বছর বয়সে এসে তিনি মৃত্যুর কিছুকাল আগে কালেমা শাহাদাত পাঠ করেন। কী সুন্দর বিদায়! যার ছেলে সবাইকে ভালোবেসে গিয়েছে, শেখায় উদারতা, সহমর্মিতা আর জ্ঞানের গভীরতা; তার পিতা ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পাবেন-- এটাই তো স্বাভাবিক। আল্লাহ হামজা ইউসুফের পিতাকে জান্নাতবাসী করুন এবং আমাদের উত্তম, সহজ, ঈমানী মৃত্যু দান করুন।
[১৯ এপ্রিল, ২০১৬]

২৬ ডিসে, ২০১৬

শুদ্ধ সাহিত্যের স্রষ্টা নসীম হিজাযী ও তার উপন্যাসসমূহ

নসীম হিজাযী দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। কিন্তু প্রায়ই তার বইগুলো ঘেঁটে তার মতন লেখকের প্রয়োজনীয়তা যে কী ভীষণ অনুভব করি তা বলার মতন না। আল্লাহ তার কাজগুলোকে কবুল করে নিন, তার ভুলত্রুটি মাফ করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান করে নিন। সুস্থ সাহিত্য, ইসলামের চেতনায় ভাস্বর, শক্তিশালী ভাষা ও দৃশ্যপট তৈরির কাজটা তিনি করেছেন নিপুণ দক্ষতায়।

৮ ডিসে, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫৮


(৫০১)
লোকে আপনাকে অশান্তিতে রাখে না। লোকে আপনাকে যন্ত্রণা দেয় না। আপনি বরং নিজের দিকে তাকান, নিজের গভীরে, হৃদয়ে, আপনার সত্ত্বার গভীরে। আপনি যে ঘটনাতে ত্যক্ত-বিরক্ত, সেই ঘটনাতেই দিব্যি আরেকজন হাসিমুখে কাটাচ্ছে জীবন। কষ্ট-যন্ত্রণা ঘটনার মাঝে নয়, বরং ঘটনাকে আপনি কীভাবে গ্রহণ করেন, তার মাঝে। তাই সহজভাবে গ্রহণ করুন জীবন। সুখে থাকার ভিন্ন কোনো উপায় নেই।

(৫০২)
একটু ধৈর্য ধরুন, শান্ত হোন।প্রথম প্রথম অনেক কিছুই কঠিন থাকে, পরে সেগুলো সহজ হয়ে যায়।\

(৫০৩)
জীবনে পেছনের ঘটনাগুলোকে আপনি যেভাবে ব্যাখ্যা করবেন, আলাপে আনবেন, অনুভব করবেন-- সেগুলো সেভাবেই আপনাকে শক্তি দিবে অথবা ধ্বংস করবে। জীবনের ঘটনাকে আপনি যেভাবে নিবেন, জীবনের প্রভাব আপনার প্রতি অমনই হয়। ঘটনা যা-ই হোক।

(৫০৪)
চারপাশের পরিবেশে খুব অশান্তি লাগে? মানুষগুলো কি জীবনটাকে দুর্বিসহ করে তুলছে? জ্বী, এরকমটা প্রায় সমস্ত মানুষের জীবনেই হয়। ইচ্ছে করবে অন্যায়কারী, অত্যাচারী, মিথ্যুক, নির্মম মানুষগুলোর বেড়াজাল থেকে পালাতে। কিন্তু হয়ত বেশিরভাগ মানুষই পারে না। আপনি মানুষগুলোকে বদলাতেও পারবেন না। আপনি শুধু পারবেন আপনাকে বদলাতে। আমরা শুধু আমাদের নিজেদের বদলাতে পারি। আপনি আপনাকে পরিবর্তন করুন। আপনার নিজেকে বদলে দিন। আপনার শান্তিটুকু আপনার নিজের মাঝে, সেটুকু নিয়ে থাকুন। পৃথিবীতে ভালো থাকার এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি।

(৫০৫)
আপনার জীবনটা হলো আপনার পছন্দগুলোর ফলে বেছে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর সমষ্টি। আপনার যদি জীবনটাকে এখন সহ্য না হয়, বুঝে নিন আপনি এমন কিছু নিয়ে পড়ে আছেন যা আপনার ভুল পছন্দ। শীঘ্রই নিজের জন্য বেছে নিন ভালো কিছু।

(৫০৬)
শব্দ দিয়ে অনেক কিছুকে গড়ে দেয়া যায়, আবার ধ্বংস করে দেয়া যায় অনেক কিছু, শব্দ ব্যবহারের আগে তাই খেয়াল করা উচিত।

(৫০৭)
সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।

১৭ জুন, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫৭


(৪৯৫)
যখন সবকিছু অসহ্য লাগছে, তখনো কিন্তু দেখবেন আপনার অনেককিছু আরেকজনের লাইফে কমন হলেও সে অন্যরকম আছে। আসলে, সমস্যা বেশিরভাগটাই আমাদের নিজেদের মাঝেই। নিজেকে ভালো রাখুন।

(৪৯৬)
ভালো থাকা একটা অভ্যাস। খারাপ থাকাও। মন খারাপটাও অভ্যাস। দক্ষতাও অভ্যাসের ফসল। তাই, নিজের অভ্যাস নিজে গড়ুন, যেমন ইচ্ছে হয়, তেমনটাই থাকুন!

(৪৯৭)
যিনি দিতে শিখেননি, তিনি আসলে পেতেও শেখেননি। দেয়ার আনন্দ তো পাওয়ার আনন্দের চেয়ে আকাশ সমান বড়।

(৪৯৮)
শুধু এই জন্যেই কি আরেকজনকে ঘৃণা করছেন যে তার পাপগুলো সে আপনার চেয়ে ভিন্ন পদ্ধতিতে করে?

(৪৯৯)
আপনি কেবল চেষ্টা করতে পারেন। ফলাফল ঘটানোর শক্তি-ক্ষমতা আপনার নেই, তা ঘটাতে আপনি পারবেন না। ফলাফলের চিন্তা বাদ দিন।

(৫০০)
গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না।

১২ জুন, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫৬



(৪৮৯)
কখনো কখনো শব্দেরা আমাদের বুকের কথাগুলোকে প্রকাশের জন্য একদমই তুচ্ছ হয়ে যায়। তখন হৃদয়ের আর্তি আর কাঁপুনিগুলো এমন এক ভাষায় তরঙ্গায়িত হয় যা কেবল তিনিই শুনতে পান।

(৪৯০)
আজকের খুব তীব্র কষ্টের অনুভূতিটা আর কয়েক মাস পরে আরে এমন তীব্র লাগবে না, দেখবেন দিব্যি এটা মনে করে হাসছেন আর ভাবছেন 'আহা সময়টা কেমন করেই না পার করেছি!'... জীবনটা এমনই।

(৪৯১)
"মন ভালো নেই"-- এই কথা আওড়ায় যিনি, তার আপাতত মন ভালো হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে যদি সত্যিই মন ভালো করতে চান।

(৪৯২)
এই তীব্র রোদে যখন 'গ্রীষ্মকালের' উপরে রাগ হয়, তখন একটু সচেতন মানুষ ঠিক অনুভব করতে পারেন যে অনেক ঠান্ডার দেশে মানুষ রোদের জন্য কতটা লালায়িত থাকে।   আপনার জন্য অনাকাংখিত বস্তুটি হয়ত কারো প্রবল প্রার্থনার চাওয়াও হতে পারে। ক্ষুব্ধ হবার আগে ভেবে দেখুন একটু! :)

(৪৯৩)
যে কাজ আপনার আত্মাকে আনন্দিত করে, সে কাজগুলো করুন। দেখবেন আপনি বদলে যেতে থাকবেন।

(৪৯৪)
জীবনের ভুল আর কষ্টগুলো অর্থহীন নয়। সেগুলো থেকে পাওয়া শিক্ষাই তো আমাদের সামনে আরো এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যোগায়।

৫ জুন, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫৫

 

(৪৮৪)
আপনার চোখগুলো যা দেখতে চায়, আপনি তো কেবল সেটাই দেখতে পান।

(৪৮৫)
কোনো ভালো কাজ করতে ইচ্ছে হলে সাথে সাথে করে ফেলুন। সংশয় করবেন না। শেষে হয়ত কাজটা করা হবেনা।

(৪৮৬)
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কী হবে? বরং সে যা করে, আপনিও তাই করুন। লক্ষ্যপানে ছুটতে থাকুন একটানা।

(৪৮৭)
আপনি যখন কিছু পান, তখন কিছু জিনিস থাকে যা হারান। আপনি যখন কিছু হারান, তখন কিছু জিনিস পেয়ে থাকেন। এই ভারসাম্যই জীবন। জীবনটাকে অন্যভাবেও দেখা যায়, অনুভব করা যায়।

(৪৮৮)
প্রবঞ্চিত হওয়া ভালো। উপেক্ষিত হওয়াও। নইলে কেমন করে বুঝবেন ভালোবাসা পাওয়া আর মূল্যায়িত হবার আনন্দ ও মর্যাদা?

৩ জুন, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫৪


(৪৭৯)
আপনি যখন কিছু পান, তখন কিছু জিনিস থাকে যা হারান। আপনি যখন কিছু হারান, তখন কিছু জিনিস পেয়ে থাকেন। এই ভারসাম্যই জীবন। জীবনটাকে অন্যভাবেও দেখা যায়, অনুভব করা যায়।

(৪৮০)
বেশি ভালো কখনই ভালো না। স্বর্ণের মধ্যে ইচ্ছে করেই খাদ মেশানো হয় যেন তা টিকে থাকে। মানুষও বেশি ভালো দেখতে পেলে বুঝতে হবে তা ভঙ্গুর-- হয়ত তার খাদ দেখা যাচ্ছে না, অথবা সে আপাতত এই অবস্থায় আছে, খুব শীঘ্রই ভেঙ্গে যাবে। ভুলত্রুটি মেশানো, অতি পারফেক্ট না হওয়া মানুষগুলোই শক্তপোক্ত, বাস্তব। অবাস্তব ও কল্পনাতে তো কত কিছুই হয়, জাগতিক পৃথিবীতে সেগুলোর অস্তিত্ব রয় না।

(৪৮১)
আজকের দিনটি সুন্দর। এটা বর্তমান। আজ আমরা যদি হাল না ছেড়ে একে জীবনের সেরা দিন হিসেবে তৈরি করতে চেষ্টা করি, তা হবে বিশাল প্রাপ্তি। হাল ছাড়বেন না।

(৪৮২)
"আমি তো চারপাশে মানুষদের প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা বিলিয়ে দেবারই যথেষ্ট সময় পাইনা, লোকে কেমন করে এত রাগ-ক্রোধ-ঘৃণা করার সময় পায় সেটাও তো বুঝেই পাইনা!"

(৪৮৩)
সেই পুরোনো কথা! চলার পথের সকল কুত্তার ঘেউ-ঘেউয়ের জবাব দিতে গেলে আপনি কোনোদিন গন্তব্যে পৌছাতে পারবেন না। একজন জ্ঞানী মানুষ বলেছিলেন, জগতে মূলতঃ দুই ধরণের মানুষ আছে, একদল কাজ করে, অপরদল কাজের সমালোচনা করে। তাই লোকের ও লোকের কাজের সমালোচক না হয়ে বরং কর্মী হওয়ার চেষ্টা করা দরকার। সমালোচকরা তো নিকৃষ্ট প্রজাতির মানুষ।

২৬ মার্চ, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫৩


(৪৭৪)
ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত আপনি?
ভেবে দেখুন, আমাদের জীবনটা কিন্তু অনেকটা বহুতল ভবনের মতন। প্রতিটি দিনে আপনি গেঁথে চলেছেন একেকটি তলা। আপনার আজকের দিনটির উত্তম বিনির্মান আপনার আগামী দিনের মজবুত ভিত্তির গাঁথুনির আত্মবিশ্বাস দেবে। আপনার বর্তমান হলো আপনার জন্য উপহার। এই মূহুর্ত, এই দিনটি তেমন করে গড়ে তুলুন যেমনটি আপনি চান। জীবনটা খুব অমূল্য উপহার। কষ্ট -যন্ত্রণা? সেটা নেই কার জীবনে বলুন? নবী-রাসূলরা আল্লাহর প্রিয়তম ছিলেন, তারা আরো বেশি কষ্ট পেয়েছেন। এই কষ্টগুলোর মাঝে আছে মুক্তির পয়গাম, অনন্ত শান্তির প্রচ্ছন্ন বার্তা। জীবনে যা-ই আসুক, আলিংগন করে গ্রহণ করে নিন। প্রতিটি মূহুর্ত খুব সুন্দর, স্বপ্নময়। এই বর্তমানে মন দিন, উজাড় করে দিন আপনার সবটুকু। ভেংগে ফেলুন আপনার মাঝে জমে থাকা শংকা ও উদ্বিগ্নতার দেয়াল। আপনি যা চান, তা করতে থাকুন আপ্রাণ প্রচেষ্টা দিয়ে, লক্ষ্যে আপনি অবশ্যই পৌছবেন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার সাথে আছেন! তো, আর কেন ভুলে ডুবে থাকা?

(৪৭৫)
এক গুরুজন একবার উপদেশ দিচ্ছিলেন--
মনে রেখো, বেয়াদব মানুষদের থেকে সবসময় দূরে থাকবে। বেয়াদবরা কিছু গড়তে পারে না, বরং সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। বেয়াদবরা যেকোন হিসাব-নিকাশের উর্ধ্বে ভয়ংকর ও সদাপরিতাজ্য।

(৪৭৬)
কারো প্রতি রাগ প্রকাশ না করে রাগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললে ঝগড়ার পরিবর্তে হয়ত সমাধান পাবেন।

(৪৭৭)
কোন কিছুর ব্যাপারে ধারণা করে নেয়ার আগে খুব সুপরিচিত সেই পাগলাটে পদ্ধতিটা চেষ্টা করে দেখুন; লোকে যাকে "জিজ্ঞাসা করা" বলে।

(৪৭৮) 
কোথাও গিয়ে উপস্থিত সবার চেয়ে নিজেকে উত্তম অথবা বড় মনে করাটা কিন্তু আত্মবিশ্বাস না, বরং নিজেকে কারো সাথে তুলনা করতে না যাওয়াই হলো আত্মবিশ্বাস।

২৫ ফেব, ২০১৬

কে মাথা নোয়াতে জানে না? কে?


আমরা যখন একদম ভুলে যেতে থাকি, ডুবে যেতে থাকি নিজেদের ক্ষমতা, সামর্থ্য, ষড়যন্ত্র, উদাসীনতার অদ্ভুত মোহে, তখন আল্লাহ একটা নাড়া দিয়ে দেন। ঝকঝকে আকাশ হঠাৎ কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো, কেমন রুদ্র ঝড় ঘিরে ফেললো চারপাশ, কেমন শিলা বৃষ্টির ঠাস ঠাস আঘাতগুলো জানালার কাঁচে, শার্সিতে, গাড়ির ছাদে, গায়ের উপরে আঘাতের মতন হয়ে আমাদের সত্ত্বায় নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা কি আদৌ অনুভব করতে পারি? আমরা কি পারি উপলব্ধি করতে? কেমন শিউরে উঠেছিলাম আমরা কেউ কেউ!

আমরা যখন কথা বলি, তখন আল্লাহকে মনেই রাখিনা। শ্রেষ্ঠ আর প্রিয়তম যেই মানুষ, তাকেও আল্লাহ শিখিয়েছিলেন "ইনশাআল্লাহ" বলতে, অর্থাৎ আল্লাহ যদি চান তবেই না হবে! ঝড়-ঝঞ্চার মতন দুই-একটা ঘটনায় তো গোটা কাজই তো বন্ধ হয়ে যায়। অথচ একটা ঘটনা না ঘটার হাজার হাজার উপলক্ষ থাকে যার কিছুই আমাদের হাতে নয়। তবু আমরা বুঝিনা আমরা অহংকার করি, আমরা অতিরিক্ত দম্ভ দেখাই।

'কেউ রুখতে পারবে না', 'করেই ছাড়বো', 'দেখিয়ে দিবো', 'বুঝিয়ে ছাড়বো'-- এমন কত বক্তব্য! কেউ কেউ বলে, অমুক নাকি মাথা নোয়ায় না কারো কাছে, আবার কেউ বলছি ও মাটি তোমার তরে ঠেকাই মাথা। শুধুই কি আলংকারিক মাথা নোয়ানো? আমরা নতজানু হয়ে, মাথা নুইয়ে দিই বৃষ্টিতে, ঝড়ে, সূর্য আর চাঁদের গ্রহণেও! আমরা মাথা নোয়াতে জানি, মাথা নোয়ানো ভুলতে জানিনা।

তোমার তরে এমনভাবে মাথা ঠেকানোর জন্য কবুল করে নাও প্রভু, যা তোমায় খুশি করবে, আমাদের মুক্তি দেবে!

[২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬]

২০ ফেব, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫২

 

(৪৭০)
জীবন স্রোতে আমরা বয়ে চলি। আল্লাহ আমাদের তার ইচ্ছেমতন আয়ু দেন, আমরা নানা উপায়ে তা ব্যবহার করি। বিভিন্ন সুযোগে, বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন কাজে মন দেই। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের চাওয়া অনুযায়ী জীবনে খুব কম কাজই আমরা করতে পারি। আল্লাহ চাইলে না চাওয়া কাজও করে ফেলি, আল্লাহ না চাইলে হাজার চাইলেও কিছু করতে পারিনা।

(৪৭১)
হাল ছেড়ো না বন্ধু। এই হাল না ছাড়াই তো জীবন। এই জীবন সমদ্রের পুরোটাই তো উত্তাল ঢেউ। হাল ছাড়ার কিছু নেই, দিগন্ত দেখারও কিছু নেই। যারা মনে করে হাল ঠিকই আছে, ধরে ফেলেছি-- তারাই ডুবন্ত। তাই ধরে থাকো হাল। লেগে থাকো।

(৪৭২)
আমরা জীবনে যা করি, যা অর্জন করি, যা অভুতপূর্ব জিনিস শিখি-- সব আমাদের মাঝেই ছিলো, থাকে। সময়ে সময়ে আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু সেই উপলব্ধি করতে একটা 'জার্নির' মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পাওলো কোয়েলহো আলকেমিস্টে এই ব্যাপারটা বুঝিয়েছে। একটা অভিজ্ঞতার আগে-পরের আমরা একই মানুষ না। একই জিনিস আমাদের ভিন্নভাবে ধরা দেয়, দেখার চোখ বদলায়। অভিজ্ঞতা খুব খেলো কিছু না। তাই, যত তিক্ত হোক, অভিজ্ঞতার তুলনা হয় না। নিজের ভেতরেই যা ছিলো, তাকেই নতুন করে খুঁজে পেতেই আমরা ছুটে বেড়াই পৃথিবীর এই প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে।

সময়ের সাথে সাথে পৃথিবী যতটা বদলায়, দেখার চোখটা তার চেয়ে অনেক বেশিই বদলায়...

(৪৭৩)
আপনার কি মনে পড়ে শেষবার যখন মনে হয়েছিলো এই কষ্ট আর আপনি সহ্য করতে পারবেন না! আপনি পেরেছেন, এখনো পারবেন, আগামীতেও পারবেন। তাই অধৈর্য হয়েন না, আশাহত হবেন না।

১৯ ফেব, ২০১৬

রুমী কবিতা (উনবিংশ কিস্তি)

 

* * * * * *
আত্মাকে শোনার ক্ষমতা দিয়ে যে কান দান করা হয়েছে তা এমন কিছু শুনতে পায় মন যা বুঝতেও পারে না।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * *
অন্যদের জীবনের ঘটনাগুলো কেমন করে ঘটেছে, অন্যদের গল্প শুনে সন্তুষ্ট হয়ে যেয়ো না। নিজ জীবনের লুকিয়ে থাকা কল্পকাহিনীর পর্দা উন্মোচিত করো।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * * 
তোমার হৃদয়টাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ভাঙ্গতে থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত তা না খুলে যায়।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * *
তুমি যা ভালোবাসো, সেটাই তো তুমি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * *
খোদাকে এমনভাবে স্মরণ করো, যেন তোমার নিজেকেই ভুলে যাও। যাকে স্মরণ করা হচ্ছে আর যে স্মরণ করছে, তারা উহ্য হয়ে যাক; তুমি মিশে যাও খোদার স্মরণের মাঝে। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
এমন একটা  গোপন ঔষধ আছে যা শুধু তাদেরকে দেয়া হয় যারা এতটা বেশি আহত হয় যে তারা আর আশা করতে পারে না। ~ জালালুদ্দিন রুমী


* * * * *
মরে যাওয়া আর চলে যাওয়ার মাঝে অনেক পার্থক্য। সূর্য অস্ত যায়, চাঁদ ডুবে যায় ঠিকই। কিন্তু তারা তো আর চলে যায় না। ~জালালুদ্দিন রুমী


* * * * *
তুমি আমার পথ,
তুমিই আমার গন্তব্য।
আর কিছু বোলো না।

~জালালুদ্দিন রুমী

১৮ ফেব, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫১

 

(৪৬৭)
বড় হবার পর থেকে যে জিনিসটা খুব খুব ইচ্ছে হতো, তা হলো-- সবকিছু ভুলে কবে আবারো নিশ্চিন্তে বইতে ডুব দেবো। ঠিক ছোটবেলার মতন... স্বপ্নালু চোখে লেখকের লিখে যাওয়া পৃথিবীতে আমি প্রবল ভালোবাসা আর কল্পনার প্রখরতায় মনে আঁকবো লেখাগুলোর প্রতিটি দৃশ্যপট। পাঠক হবার জন্যও পৃথিবীটা খুব ছোট! চাকুরি আর দায়িত্বের বোঝা নিয়ে দিনগুলো ক্ষয়ে যায়। অথচ পড়ার ছিলো অনেক কিছু। অদ্ভুত হাহাকার লাগে! কত মানুষের কত বৈচিত্র্যময় জীবন। কূপমণ্ডূকদের মতন নিজ জগত নিয়ে মিথ্যে অহং, জান্তব ঔদ্ধত্য থেকে বেরিয়ে আসতে বইয়ের মতন দুঃসাহসী ও বিশ্বাসী বন্ধু আর কে আছে? যে পড়ে আর যে পড়ে না, তারা কি কোনোদিন সমান হতে পারে? কক্ষনো না। কোনভাবেই না!

আমাদের রব আমাদের যতটা জ্ঞান দিয়েছেন, ততটুকুই আমাদের জানা; তিনি যা শেখাননি, তার কিছুই আমরা জানিনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী।

(৪৬৮)
মানুষ বদলায়, খুব বদলায়। সময়ের সাথে সাথে বদলায় রুচি, দেখার চোখ, অনুভবের হৃদয়। পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়াই নয়, তাকে অভিনন্দিত করতে না পারলে আমরা পরাজিত হবো। মন্থর থাকা স্রষ্টার সৃষ্টির কোথাও নেই। গাছের পাতা বদলায়, রং বদলায় আকাশের, ভালোলাগা-মন্দলাগা বদলায় মানুষের হৃদয়ের, বদলে যায় নদীর গতিপথ, ছায়াপথ, নীহারিকা, নক্ষত্রালোক, মায়াবী রাতের ক্ষণগুলোও... থেমে থাকেনা আমাদের আয়ু, জীবনকাল। তাই ভাংগা গড়ার এই জীবনের পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়াতেই উপায়...


(৪৬৯)
একজন জ্ঞানী মানুষের কাছে এসে এক ব্যক্তি বলেছিলো,
- আমি তো খুব ক্ষুদ্র, আমি যতই আন্তরিক চেষ্টা করি না কেন, আমি কি আদৌ কোনো পরিবর্তন করতে পারবো কিছু?

জ্ঞানী মানুষটি বলেছিলেন,
- ক্ষুদ্র কিছুর শক্তি নেই বলছো? তাহলে অন্ধকার রাতে মশার সাথে কাটিয়ো, বুঝবে ক্ষুদ্র হলেও ডেডিকেটেড থাকলে কেউ কতটা শক্তিশালী!

১৭ ফেব, ২০১৬

শান্তিতে থাকার জন্য ভালোবাসতে হয়

 শান্তিতে থাকার কিছু সার্বজনীন উপায় আছে, তা মেনে চলতেই হয়।

হৃদয়ের ভেতরটা ফাঁকা করতে পারেন? যেমন ধরুন, কারো খারাপ ব্যবহার, অন্যায়গুলোতে আহত হয়ে না থাকা? অথবা ধরুন, নিজের ব্যর্থতা, অসুস্থতা, অসহায়ত্বে ভারাক্রান্ত হয়ে আছেন?

নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না? নিজেকে মুক্তি দিন। ছাড় দিন। সমস্ত প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দয়া করে ছাড় দিন। গ্রহণ করেই নিন যা হয়েছে। চেয়ে দেখুন, পৃথিবীটা অনেক বড়, লক্ষ-কোটি মানুষ এতে। আপনার মতই সবারই অনেক অপূর্ণতা-যন্ত্রণা-কষ্ট-না পাওয়ার বেদনা। আপনি যা চাইছেন, তা পেয়েও অনেকে শান্তিতে নেই। আমি এত ভাবতেও হবে না, স্রেফ নিজেকে ছাড় দিন সমস্ত জিঞ্জির থেকে।

পারবেন না লোকের খারাপটা নিয়ে আলাপ না করে থাকতে? আপনার আত্নীয় যিনি, তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে সমালোচনা না করে থাকতে পারবেন না? মানুষ তো আপনার পছন্দের হতে পারবে না। পছন্দ-অপছন্দ আপনার মনের ব্যাপার। আপনি যাকে অপছন্দ করেন, সে কিন্তু অনেকের পছন্দের ব্যক্তি হতেই পারে। আসলে, পছন্দ আপনি করছেন কারণ আপনি যা চিন্তা করেন, সেটা আপনারই তৈরি। আপনার ভালোলাগার কারণ আপনিই, আপনার অনুভূতির মূল প্রকৌশলি আপনি নিজেই।

ভালোবাসতে পারবেন না এখন সবকিছুকে? তুচ্ছ মানুষগুলোকে ভালোবাসুন। আপনি যখন ভালোবাসতে পারবেন, তখন বুকের ভেতরে বসন্তবাতাস অনুভব করতে পারবেন। ভালোবাসতে পারার মাঝে আছে শান্তি। কিন্তু যতক্ষণ আপনি অন্যদের প্রতি ঘৃণা করা থেকে, নিজেকে তাদের চেয়ে উচ্চমানের মানুষ মনে করা থেকে, খুঁতখুঁতানি স্বভাবে অশান্তিতে থাকা থেকে বাঁচতে না পারবেন-- আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসতে পারবেন না।

যে ভালোবাসতে পারে না, সে বেদনাক্লিষ্ট ও দুর্বল মানুষ। ভালোবাসুন, দয়া করুন। উপেক্ষা করুন নেতিবাচকতাগুলোকে। কারো খুঁত আর ভুল খুঁজতে চাইলে ভালোবাসা যায় না। মানুষ ভুলে ভরা প্রাণী, অন্যায় আর অপরাধে ডুবে থাকা প্রাণী। তাকে ভালোবাসতে পারার মূল কারণটা আপনার হৃদয়। কাউকে ভালোবাসার কৃতিত্ব কেবলই আপনার।

হৃদয়কে মুক্ত করুন সমস্ত জিঞ্জির থেকে, সমস্ত অশান্তি ও অতৃপ্তির জাল থেকে, সমস্ত ঘৃণার কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে থাকার অসহায়ত্ব থেকে। হৃদয়কে শান্তি দিন, নিজেকে ক্ষমা করুন, নিজের নেতিবাচক, ঘৃণাবাচক, অশান্তিময় চিন্তাগুলোকে উপেক্ষা করুন। চেষ্টা করুন নিজ ভালোবাসাটা চারপাশে ছড়িয়ে দেয়ার। কারণে ভালোবাসুন, অকারণে ভালোবাসুন। যখন আপনি ভালোবাসতে পারবেন-- ভালোলাগায় আপনার চোখ ভিজেও আসতে পারে! হৃদয়ে শান্তির পরশ পেতে, বুকে বসন্ত বাতাসের স্পর্শ পেতে সমস্ত ভার ফেলে দিয়ে, ঘৃণা ফেলে দিয়ে, ভালোবাসুন।

ভালোবাসার মাঝেই রয়েছে জীবনের এক গভীরতম দর্শন।

[১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬]

৩ ফেব, ২০১৬

[অনুবাদ] পাওলো কোয়েলহো # ২

 




* * * * * * * *
যাদুতে এবং আমাদের জীবনে শুধু একটা জিনিসই বর্তমান, তা হলো-- এই মূহুর্তটি।

আপনি সময়কে কখনো দুইটি বিন্দুর দুরত্বের মতন করে মাপতে পারবেন না, সময় কখনো দুরত্ব পার হয় না।

আমরা মানুষরা বর্তমানের উপরে মনোযোগ দিতে সীমাহীন সংগ্রামের মধ্যে থাকি। কেননা, আমরা চিন্তা করতে থাকি আমরা কী করেছিলাম, কী করলে আমাদের অতীতটা আরো ভালো হতে পারতো, কী কী করে ফেলার কারণে আমাদের জীবনের এই অবস্থা, যা করার দরকার ছিলো, সেটা আমরা কেন করিনি....

~ পাওলো কোয়েলহো

* * * * * * * *
স্বপ্নের পেছনে ছুটে চললে কিছু মূল্য দিতে হয়। সেই মূল্যটি হতে পারে আমাদের কিছু অভ্যাসকে পরিবর্তন করা, হতে পারে এর ফলে কিছু কষ্টসাধ্য কাজের মধ্য দিয়ে যাওয়া, অথবা হতে পারে চেষ্টার পরেও আশাহত হওয়া। স্বপ্ন দেখা যতই চড়া মূল্যের লোকসানের কাজ হোক না কেন, যারা স্বপ্ন দেখেনা তাদের লোকসানের তুলনায় স্বপ্নচারীদের লোকসানের তুলনাই চলে না। ~পাওলো কোয়েলহো


* * * * * *
অনেক সময় আমরা যে জীবনধারায় চলছি সেভাবে সেভাবেই চলতে এতটাই মত্ত হয়ে থাকি যে অনেক সুন্দর সুন্দর সম্ভাবনাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করে ফেলি তা স্রেফ এই কারণে যে আমরা জানিনা সে সুযোগ দিয়ে কী করা যেতে পারে।~পাওলো কোয়েলহো

 * * * * * *
সোজা রাস্তায় দক্ষ চালক গড়ে ওঠে না। ~ পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
কুঠার ভুলে যায় আঘাতের কথা, গাছ তা ভোলে না। ~ পাওলো কোয়েলহো
 

২ ফেব, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫০

 

(৪৬৪)
যে জিনিস আমরা বুঝিনা, তার প্রশংসা আমরা করিনা, তাকে আমরা ভালোবাসিনা। যে জিনিসের মর্ম আমরা বুঝিনা, তার প্রতি আমাদের মুগ্ধতা আসে না, আমরা আকর্ষণ অনুভব করিনা।

কোনো কিছু আমরা ভালোবাসিনা, পছন্দ করিনা তার মানে এটা কখনই না যে তা আসলে অমূল্যবান, অসুন্দর। মূলত আমাদের অনুভূতি আমাদের বোধের উপরে নির্ভরশীল।যা কিছু আমাদের বোধের সীমানায়  থাকে না, সে তো সুস্পষ্ট অনাকর্ষণীয়ই বটে!

(৪৬৫)
ভালোবাসা পাওয়ার সূত্র জানতে চান? সেটার ক্ষেত্রে হয়ত অনেকগুলো বিষয় থাকতে পারে, আছেও। তাই সে হিসেব লম্বা কলেবরের হবে। তবে ঘৃণার সূত্র খুব সরল। আপনি ভালোবাসলেই যে বিনিময়ে ভালোবাসা পাবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে ঘৃণা করলে তার বিনিময়ে কোনোদিন ভালোবাসা পাবেন না, তা নিশ্চিত। ঘৃণার বিনিময়ে কেবল ঘৃণাই পাওয়া যায়। ঘৃণা করে ভালোবাসা, যত্ন আর উত্তম আচরণের আশা কেবল মূর্খরাই করে। মানুষ শুধু নয়, পশুপাখিরাও ভালোবাসার অনুভূতি টের পায়। মুখের শব্দ দিয়েই কেবল আবেগের আদান-প্রদান হয় তা নয়। ভালোবাসার আলাদা তরংগ আছে যা সরাসরি হৃদয়কে আলোড়িত করে। ভালোবাসা আর ঘৃণার অনুভূতি মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে।

(৪৬৬)
আপনি সারাদিন যা চিন্তা করবেন, পৃথিবীটা আপনার অমন মনে হতে থাকবে। আপনি যদি বিকৃত চিন্তা করতে থাকেন, আপনি দেখবেন চারপাশে অনেক বিকৃত মানুষ। এমনকি আপনার সাথেও সবাই বিকৃত আচরণ করছে। আপনার পৃথিবীটা আপনারই প্রতিবিম্ব। যারা নোংরা, তারা নিজের নোংরামিটাই খুঁজে পায় অন্যের মাঝে। সবার মাঝের নোংরা বিষয় নিয়ে কথা বলা, অন্যদের গায়ে কালিমা লাগানো, গীবত করা, সম্মানিতদের বেইজ্জতি করতে চাওয়া মানুষগুলো মূলত অহংকারী আর বেয়াদব, শয়তান তাদের চালকের আসনে থাকে। ধ্বংস করতে বিশেষ কোন গুণ থাকা লাগে না। আপনি সৃষ্টিশীলতার চেষ্টা না করলেই আপনি প্রবল ধ্বংসকারী হয়ে যেতে পারবেন।

সৃষ্টি করা সহজ কাজ নয়। সৃষ্টি করতে হলে একটা মানুষের নিজের ভেতরে শতবার ভাংতে হয়। নিজেকে বিলিয়ে, তার জ্বালা সহ্য করে মানুষ সৃষ্টি করে যেকোনো কিছু। ভালো মানুষেরা পারে অন্য মানুষের ভেতর থেকে ভালোটুকু বের করে আনতে।ভালো মানুষ পারে অন্যদের মাঝে আলো জ্বালাতে। ঠিক এই মূহুর্তেও আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই ভেবে যে আপনি সৃষ্টিশীল, সুন্দর চিন্তার কবেন নাকি কদর্য কুৎসিত সমালোচনাকারী হিসেবে নিজের অহংকারকে জারি রাখবেন। হৃদয়কে ভারমুক্ত করুন, নিজের নোংরা, কুৎসিত, কদাকার চিন্তাগুলোর চাষাবাদ না করে ভিন্ন কিছু করুন। কোনো ভালো কিছু করতে না পারলেও, খারাপ কিছু না করে থাকুন। খারাপ কিছু না করাও তো একটা ভালো কাজ, তাইনা?

২৩ জানু, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৪৯

 

(৪৬২)
জীবনটা স্বপ্নের মতন। চোখের সামনে যত অস্থিরতা, অশান্তি, উদ্বিগ্নতায় আপনি ডুবে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন-- এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী। জীবনের কোনো দুঃখই যেমন দীর্ঘস্থায়ী নয়, আনন্দগুলোও তেমনি। চোখটা বন্ধ করে চিন্তা করে দেখুন, ১০-১৫-২০ বছরের পুরোনো সময়গুলোকে আপনার মনে হবে অল্প ক'দিন আগের মাত্র! এর মাঝে পৃথিবী খুবই বদলেছে, আপনার জীবনটাও। কিন্তু জীবনের অনুভূতিগূলো একই রকম আছে। সেই দুশ্চিন্তা, কষ্ট-বেদনা, হাহাকার, স্বপ্ন। হয়ত বিষয়বস্তু বদলেছে, কিন্তু জীবনের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটুকুর মতই আপনার জীবন।

ভেঙ্গে পড়বেন না, খুব বেশি চিন্তায় হারিয়েও যাবেন না। জীবনটা আল্লাহর দেয়া একটা উপহার। বিশ্বাস করুন, আপনি যতই কষ্ট পেয়ে অস্থির হয়ে যান না কেন, আল্লাহ ঠিকই এই সময়ের শেষে একটা সুন্দর সমাধান রেখেছেন। আপনি যতদিনে সেই কষ্টটা সামলে উঠবেন, ততদিনে নতুন কিছু এসে হাজির হবে, হতেই হবে। এটাই দুনিয়া।জান্নাতে পা দেয়ার আগ পর্যন্ত এই উথাল-পাথাল কষ্টের মাঝে বেঁচে থাকাই জীবন। ছেড়ে দিন সব ধরণের আশা। আল্লাহ যা আপনাকে উপহার দিচ্ছেন প্রতিদিনের জীবনে, মেনে নিন। মেনে নিয়ে বর্তমানকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টাটার মাঝেই রয়েছে জীবনে সুখী থাকার এক নির্যাস।

(৪৬৩)
আমরা কত শত ক্ষুদ্র স্মৃতি ধরে রাখি, জমিয়ে রাখি। একসময় চল ছিলো ডায়েরির পাতায় ফুল শুকিয়ে রাখা, বন্ধুদের লেখা চিঠি, স্কুল-কলেজের র‍্যাগ ডে-তে বন্ধুদের লিখে দেয়া মন্তব্য, দু'কথা। বিভিন্ন সময়ে চলে যাওয়া ঘটনার নানান পদচিহ্ন। অথচ যা যায়, চলেই যায়। খুব সুখস্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়, যখন জীবনের নতুন ধাক্কা এসে ফেলে দিতে নেয়, তখন পেছনের ঐ রোমন্থন অনুভূতি জাগাবে যে আপনার জীবনে প্রাপ্তি বলে অনেক কিছুই ছিলো, সে কারো ভালোবাসা হোক, অন্য কোন অর্জন হোক। এছাড়া অন্য স্মৃতিগুলো বরং ঝরে যেতে দেয়াই ভালো। যা চলে যায় তাদের চলে যেতে না দিলে কি আর আগামী আসতে পারবে? স্মৃতিতে নতুনকে আলিঙ্গন করার জায়গা দিতে তাই অযথা স্মৃতিদের ঝরে যেতে দিতে হয়। পেছনে ফিরে তাকালে কেউ আগাতে পারে না, ব্যক্তি মানুষও নয়, জাতিটাও নয়। ইতিহাস কেবল একটা স্পৃহা। শিক্ষা ও উপলব্ধিটুকু ছাড়া তা নিয়ে পড়ে থাকলে তা এগিয়ে যাবার বাধা। এমন বাধাগুলোকে জীবনে বেঁধে না রাখলেই কি নয়?