১৪ এপ্রি, ২০১৩

কোন কিছু কি সহজ? আমরা কি কিছু করতে পারি?

কোন কিছু কি সহজ? আমরা কি কিছু করতে পারি? সবকিছুই তো কঠিন, যতক্ষণ না তিনি তা সহজ করে দেন, যতক্ষণ না তিনি আমার চারপাশকে একটা কাজের জন্য তৈরি করে দেন। আশেপাশের কতজন কী ভীষণ বদলে গেলো, সুন্দর থেকে সুন্দর মন-প্রাণের হয়ে গেলো। কেউ কেউ এত খারাপ হয়ে গেলো, সেই খারাপ কাজে মরেও গেলো। প্রায়ই ঘোরের মতন লাগে। এইতো সেদিন ছিলাম একসাথেই, একই আড্ডায়। আজ ছেলেগুলো নেই, আর কোনদিন পৃথিবীতে আসবে না। আমার নিজেরও অফিসে বের হবার সময় প্রায় প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় মনে হয়, আজ কি বাসায় ফিরতে পারব দিনশেষে? আমরা তো ভীষণ দুর্বল সৃষ্টি। আমার দুর্বলতা আমি টের পেয়েছি যখন জ্বরে বিছানায় শুয়ে ঘোরে চলে গিয়েছি। অথবা অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের সুঁই আর চাকুর নিচে গিয়ে মনে হয়েছিলো, আমার বিভ্রমের জীবনের সমাপ্তি কি তেমন কঠিন কিছু? যাদের চারপাশে বেঁধে রাখতাম, জুড়ে থাকতাম -- সবাই তো দূরেরই।


কতই তো বদলে যেতে চাইলাম, কতখানিই বা পারি? তবে পরম আরাধ্য যা থাকে, তিনি সেই জিনিসগুলো সহজ করে দিতে থাকেন। পথপানে এগিয়ে গেলে সামনের পথ আলোকিত হয়ে দৃষ্টিসীমায় পথ প্রসারিত হতে থাকে। এই চাওয়া কতজনের কতরকম! যে যেমন জিনিসে মুগ্ধ হয়, ভালোবাসা কাজ করে যেদিকে, সে সেদিকেই ধাবমান হয়। ক্রমে তার প্রাপ্তিগুলোও ঐ কেন্দ্রিকই হয়। দুনিয়াতে ডুবে গেলে যাওয়াই হয়। আখিরাতের পথে কিছু চাইলে চাওয়ার গভীরতার উপরে হয়ত নির্ভর করে অর্জনের তীব্রতাও। তখন পথচলায় অনুভূতির জগতে কষ্টগুলোও হয়ত হালকা হয়ে যায়। সেটা তিনিই করে দেন। তিনিই তো সবকিছুর মালিক, যাকে ইচ্ছা দেন, যাকে ইচ্ছা বঞ্চিত করে কেড়ে নেন। মাঝে মাঝে দু'চোখে দেখে অসম্ভব লাগে আমার, আমি মুগ্ধ চোখে হয়ে বদলে যাওয়া অসাধারণ মানুষদের দেখি, হৃদয়ে নাড়া খাই। শুধু মনে হয়, এই পথযাত্রায় হয়ত থেমেই আছি, তবু তা হয়ত বসে থাকার চাইতে ভালো, জানিনা আমি। তিনি চাইলে সহজ হবে অনেক কিছুই, তার অপার রাহমাতের অপেক্ষাতেই রই। ফিরে তো যাব তার কাছেই, এসেছিলাম তার কাছ থেকেই। শাইখ হামজা ইউসুফের কথাটা স্মরণ হয়ে গেলো --

"আপনি যখন দরজায় দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ছেন, তখন সেই কাজটিও দরজা খুলে যাওয়ার একটি অংশ; আপনি যখন কোন যাত্রাপথে তখন রওয়ানা হওয়ার মাঝেই আপনার যাত্রা শুরু হয়ে গেছে, যদি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে না-ও পারেন তবু চিন্তিত হবেন না। সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন, মৃত্যু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এটাই ছিলো ইমাম গাজ্জালীর মূল বার্তা।"

১০ এপ্রিল, ১৩