২৪ ডিসে, ২০১৫

এবার তবে নিশ্চুপ থাকা হোক

 

প্রতিটি মানুষের জীবনই কষ্টের। এমনকি যে অপরাধ করতে করতে নিজেকে জুলুম করছে, সে-ও তার অপরাধবোধ, গ্লানি ঢাকতে অন্য কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। অথচ রোগে যখন সে ভুগতে থাকে, অথবা যখন মরে যায়, তাকে কাফনের কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটির নিচে রেখে আসা হয়। যুগে যুগে শত-শত ক্ষমতালোভী শাসকগুলো এভাবেই বিদায় নিয়েছে। এরপর, একসময় তারা হয়েছে ইতিহাসে বিলীন। কেউ জানেনা, খোঁজ রাখেনা।

ভাবলে কেমন অদ্ভুত লাগে, না? যে মানুষটি হয়ত পৃথিবীর কোনো একটি কোণে, এই যেমন ইয়েমেনে কিংবা সিরিয়ায় আজ একটা পথচারী কিশোর হেঁটে চলতে গিয়ে বোমার আঘাতে মরেই গেলো। কেন মরলো, কে মারলো-- বুঝলোই না। আবার হয়ত হেবরনে, পশ্চিম তীরে অথবা কাশ্মীরে দখলদারী আর্মির হাতে একটা কিশোর হয়ত বন্দী হলো যখন, তখন তার বয়েসি পশ্চিমা ছেলেগুলো পার্টি করে, নাইটক্লাবিং করে কোমর দোলাচ্ছে। বন্দী ছেলেটি অপরাধ সে বুঝলোও না, তাকে গরম পানিতে পুড়িয়ে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে মেরে ফেলা হলো। লাশটাও ফেরত গেলো না। কিশোরের মা আহাজারি করে বাকিটা জীবন পার করবে। অথবা হয়ত সেই অভাগী মা একদিন নিজেই গুলি খেয়ে মরে যাবেন।

জীবন-মৃত্যুর এই খেলা যখন চলছে, তখনই কেউ আবেগঘন প্রেম করছে, কেউ ঝগড়া করছে, কেউ ঠকাচ্ছে, কেউ বার্থডে কেক কাটছে। সবকিছুরই সাক্ষী থাকছে অনেকগুলো রূহ, অনেকজন ইনসানের। তখনই আকাশে হয়ত আলোচ্ছটা জ্বললো উল্কাপিন্ডের। ফুল ফুটছে বাগানে, একজন গার্ডেনার বছর ধরে বসে ছিলেন নাইটকুইনকে ফুটতে দেখবেন বলে। একদল ডলফিন ঝুপ করে লাফ দিলো। পৃথিবীময় সৌন্দর্যের এই নিপুণ বাগানে কত ঘটনা! কত সৃষ্টি, কত প্রেম, কত ভালোবাসা চারপাশে। তবুও নিষ্ঠুর মানুষগুলোই হত্যা করে, কী পেতে চায় কে জানে? হিংসায় জ্বলে-পুড়ে নিজেই ডুবে যায় অনল দহনে।

এত অনুভূতি ধারণ করতে পারে কি কোনো অন্তর? আমাদের হৃদয়ের মাঝেই তো আকাশের মতন বিশালতা আছে, তবু কি পারি এই পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে অনুভূতিতে ধারণ করতে? তীব্রতম কষ্টের মূহুর্তগুলো কোনো সাহিত্যে থাকে না, কেউ লিখতে পারে না। তেমনি সর্বোচ্চ আনন্দের মূহুর্তও পাওয়া যায় না কোথাও। মানুষ পারেনা সুন্দর কিংবা কষ্টকে শব্দে ধারণ করতে।

বাকি সবই খুব অগভীর, প্রদর্শনী কেবল। অগভীর অনুভূতিহীনতায় সবাই ভেসে যায়। অবাক পৃথিবীতে অনেকেই লিখতে চেয়েছে, একসময় হয়ত শ্রান্ত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যেতে চেয়েছে। পারবে না বলে ছেড়ে দিতে চেয়েছে কেউ কেউ।

যিনি বানিয়েছেন সব, সমস্ত সুন্দর-অসুন্দর,ভালো-মন্দগুলো নিয়ে তিনিই বলা উত্তম। থাকুক তবে সকল শব্দ। এবার তবে নিশ্চুপ থাকা হোক।

**************
৩০ নভেম্বর, ২০১৫
সন্ধ্যা ৬-১৫ মিনিট