বিদায় ২০১৫
সবাইকে জানতে হয় কখন কোনো একটা পর্যায় শেষ হয়। যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি সময় তাকে থাকার জন্য যদি আমরা জোর খাটাই, আমরা শান্তি হারিয়ে ফেলবো। আরো হারাবো সেই পর্যায়টির মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে যা শেখা যায় সে ব্যাপারগুলোকেও।
কোনো একটি পর্যায়ের শেষ, দরজা বন্ধ হওয়া, অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি — যে নামটিই আমরা দেই না কেন, যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো জীবনের যে মূহুর্তগুলো শেষ হয়ে গেলো, তাদের ছেড়ে দেয়া।
আপনি কি চাকরিটা হারিয়েছেন? ভালোবাসার সম্পর্কটি শেষ হয়ে গেছে? বাবা-মায়ের বাড়িটি ছেড়ে আসতে হয়েছে? দেশ ছেড়ে প্রবাসে গিয়েছেন? দীর্ঘকাল ধরে চলা বন্ধুত্বের সম্পর্কটি হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে?
আপনি দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতে পারবেন কেন এমনটা হলো তা ভাবতে ভাবতে।
আপনি নিজেকে নিজে বলতেই পারেন– যে জিনিসটি আপনার জীবনে এতটা দৃঢ়ভাবে ছিলো, এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তা হঠাৎ করে কেন এমন করে ধূলিস্মাত হয়ে গেলো তার কারণ উদঘাটন না করে আপনি আর একটি পদক্ষেপও দিবেন না সামনের দিকে।
কিন্তু এমন আচরণ আপনার সাথে জড়িয়ে থাকা সবগুলো মানুষকে তীব্র কষ্টের মাঝে রাখবে – আপনার বাবা-মা, আপনার স্বামী কিংবা স্ত্রী, আপনার ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধুদের।
সবাই তাদের নিজ অধ্যায়গুলো শেষ করে চলেছে, নতুন পাতা উল্টেছে, জীবনে সবাই যখন এগিয়ে চলেছে তখন আপনাকে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে সবার খারাপ লাগবে।
সবকিছুই পেরিয়ে যায়। সবচেয়ে ভালো যে কাজটি আপনি করতে পারেন তা হলো সত্যিকারভাবে পার হয়ে যেতে দিন।
সে কারণেই যে কাজটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ (যত কষ্টেরই হোক না কেন) তা হলো স্মৃতিগুলো ধ্বংস করে ফেলা। এগিয়ে চলুন, এতিমদের অনেক কিছু দান করুন, আপনার কাছে থাকা বইগুলো বিক্রি করুন নয়ত উপহার দিয়ে দিন।
আপনি যা কিছু দেখতে পান, তার সবকিছুই অদৃশ্য জগতের একটা স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি– তাই কিছু স্মৃতিদের হাত থেকে নিজেকে মুক্তি দেয়া মানে অন্যান্য স্মৃতিদের সেখানে কিছু জায়গা করে দেয়া।
যা কিছু যাবার যেতে দিন। মুক্তি দেন সেগুলোকে। নিজেকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে নিন। জীবনকে কেউ কখনো স্পষ্ট করে বুঝতে পারে না; তাই আমরা কখনো জয়ী হই এবং কখনো হেরে যাই।
কোন কিছুর বিনিময় চেয়ে কাজ করবেন না, আশা করবেন না আপনার কাজগুলো প্রশংসিত হবে। তেমনি আশা করবেন না আপনার প্রতিভার স্ফূরণ হবে, আপনার ভালোবাসা কেউ বুঝতে পারবে।
আপনার আবেগের টেলিভিশনে একই অনুষ্ঠান একটানা বারবার করে দেখা বন্ধ করুন যেখানে আপনি দেখতে পান কেমন করে আপনার একটা ক্ষত হয়েছিলো আর তাতে আপনি কতটাই না ভুগেছেন– এমন ব্যাপার তো আপনাকে শুধুই বিষাক্ত করে চলেছে, আর কিছুই নয়।
আপনার ভালোবাসার যে সম্পর্কটি ভেঙ্গে গেছে, তাকে গ্রহণ করতে না পারার মতন ভয়ংকর ব্যাপার তো আর নেই। তেমনই ভয়ংকর হলো এমন কাজ যার কোন শুরু হবার তারিখ নেই, এমন সিদ্ধান্ত যা সবসময় ‘উপযুক্ত মূহুর্তটির’ জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়।
একটা নতুন অধ্যায় শুরু করার আগে আগেরটা শেষ হতে হয়। নিজেকে বলুন যে যা চলে গেছে তা আর ফিরে আসবে না। নিজেকে সেই সময়টার কথা মনে করিয়ে দিন যখন আপনি সেই মানুষটি কিংবা সেই জিনিসগুলো ছাড়াই আপনি বেঁচে থাকতে পারতেন — কোনো কিছুই তো অপূরণীয় নয়। একটা অভ্যাস তো আর অভাব নয়। হয়ত কথাটি বেশি সরল শোনাচ্ছে, হয়ত ব্যাপারটি খুব বেশি কঠিন, কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু চক্র বন্ধ হয়। তা কোন অহংকার, অযোগ্যতা, দম্ভের জন্য নয় বরং স্রেফ তা আপনাকে সাথে আর যায় না। দরজা বন্ধ করুন, স্মৃতিখাতাকে বদলে ফেলুন, ঘরদোর পরিষ্কার করুন, ধুলোবালি ঝেড়ে ফেলুন।
আপনি যা ছিলেন তা থেকে বদলে আপনি প্রকৃতপক্ষে যা , সেটিই হয়ে যান।
—– পাওলো কোয়েলহো