২৪ জানু, ২০১৪

মনের জানালা মাঝে # ৭


(৭১)
কোন কিছু দিতে হলে নিজের কাছে যথেষ্ট থাকতে হয়। যে রিক্ত, শূণ্য সে কখনো অনেকজনকে দান করতে পারে না। সূর্যের আলো থাকে তাই সে আলো বিলায়। জ্ঞান এবং প্রাণের শক্তি বা অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন। যারা জ্ঞানী, তাদের অনেক থাকে বলেই তারা যেখানে যান জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারেন। যিনি অনুপ্রেরণা দিবেন, তার ভেতরেও যথেষ্ট উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আর মনের শক্তি না থাকলে তিনি দিতে পারেন না, পারবেন না। আমরাও তাই যেন ভুল কারো কাছে আশা না করি।। যার-তার কাছে উদ্দীপনা আর আশার কথা শুনতে চাইলে কি আর হয়? তাদের সামর্থ্য আর যোগ্যতার কথাও মাথায় রাখা জরুরী বটে!

(৭২)
কেন শুধু বেশি বেশি দুশ্চিন্তা মানুষের? এই পৃথিবীর কিছুই তো কারও নয়, ছিলো না, হবেও না। সাময়িক এই ভ্রমণে এত চাপ নেবার কিছু নেই। যিনি অনাদি-অনন্ত তার কথা ভাবুন, দুঃচিন্তা-দুর্ভাবনা চলে যাবে।

(৭৩)
আমি আমার শত্রুর ঘৃণার কাছে পরাজিত হইনি, তাদের আমি এড়িয়ে গেছি নিশ্চিন্তে, নির্বিকারভাবে। কিন্তু কাউকে কোন কারণে নিজ থেকে অপছন্দ করে কথা বলার পরেও তার ভালোবাসা পেয়ে সেথায় পরাজিত হয়েছি, লজ্জায় অধোবদন হয়েছি নিজে নিজেই, নিঃশব্দে। 

সেদিন থেকেই শিখেছি, মনের কাছে জিততে হলে ভালোবাসা দিয়েই কেবল জেতা যায়। শর্তহীন, চিন্তাহীন, দ্বিধাহীন ভালোবাসা... সম্পর্কগুলোর মাঝেও শান্তি আসে কেবলই ভালোবাসায়।

(৭৪)
আমার জীবনের তীব্র এক উপলব্ধি হলো, আমরা চারপাশে যেসব গল্প-তত্ব-রোমান্টিকতা-মিষ্টি কথা শুনে বড় হই, পথ চলি তার প্রায় সবই প্রচন্ড তীব্রভাবে জীবনবিমুখ আর অবাস্তব। এই ভ্রমের মাঝে থেকে ভ্রমকে বাস্তব করার চেষ্টাতেই সবাই কেমন হুমড়ি খেয়ে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে নানাবিধ অশান্তি, বুকের মাঝে শূণ্যতায় বসবাস করে সবাই। প্রেম-ভালোবাসার প্রায় সবই মিথ্যে আর অলীক গল্প, মুভি-উপন্যাসের সবই প্রায় জীবনবিমুখ অস্বাভাবিক কাহিনী।

খানিক আগে একজন এক প্রেমের কৌতুক বলছিলো, উপস্থিত সবাই হাসলো। আমিও ভেবে দেখলাম, এরকম কথা অবাস্তব বলেই সবাই মজা পেলো, সত্য গল্প আমজনতাদের কেউ মজা পায় না, হিংসা করে। কিন্তু তরুণ মনেরা এগুলোকেই সত্য ভেবে ভ্রমকে সত্য করতে চায়। যন্ত্রণাও পায়। এই জীবন খুব সহজ কিছু না, এই জীবন আসলে মুসাফিরের পথ চলার; উপভোগ করার না। যারা উপভোগ করতে মন দেয়, তারা পথ হারিয়ে ফেলে।

(৭৫)
আমরা অনেকেই নিজেদের জীবনের শুরুর সময়গুলো পার হয়ে শেষ সময়ে এসে নিজেদের সত্যিকারের কাজগুলো শুরু করেছি। শেষ এসে যে কাজ শুরু করেছি, তার জন্য সূচনার দিকের সফলতা পাওয়া আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব না। কিন্তু, এই সময়েরই কি শেষ আছে? জীবনের শেষ হলো অনন্তের জগতের শুরু। তবে, আমরা যদি সময়গুলোর সঠিক ব্যবহার করতে চেষ্টা করি, আল্লাহকে কাছে চাই তাহলে আল্লাহ আমাদের সূচনা আর শেষ উভয়কেই প্রাপ্তিতে ভরে দিবেন ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের উপরে খুশি হলে পাপগুলোকেও পুণ্যে রূপান্তরিত করে দিতে পারেন।

আল্লাহর ভান্ডার অফুরন্ত, তার কাছে চাইলে তিনি দান করেন। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যদি সুন্দর হয়, জীবনের স্বর্বস্ব দিয়ে কেবল তার জন্যই আমরা বাঁচি, তাহলে আমরা শেষে এসে শুরু করলেও আমাদের সূচনাও প্রাপ্তিতে ভরে যাবে, গোটা জীবনটাই তখন সফলতায় ভরে যাবে। শেষে এসে শুরু করলেও তখন সূচনাতেও অনেক কিছু পাবো..

শেষটা খারাপ হলে সফল সূচনা অর্থহীন হয়ে যায়।
শেষটা সুন্দর হলে খারাপ সূচনা মনেই থাকেনা।

(৭৬)
যারা মানুষদের মাঝে তুলনা করে তারা বোকা। অবস্তুগত কিছুকে পাল্লায় তুলে নিখুঁত হিসাবের জায়গা পৃথিবী না। এভাবে বিচারে দুইটি পাল্লা মাপার প্রক্রিয়া কোনদিন পরমভাবে সঠিক হবেনা পৃথিবীতে। তাই, মানুষকে হিসেব করা বাদ দিয়ে এগিয়ে চলুন কর্তব্য বুঝে। হিসেব হোক অন্তরের ভেতরের আপনার অবস্থার সাথে, বাইরের পৃথিবী নয়। হৃদয়ের প্রশান্তি গরীবেও পায়, ধনীয় পায়। খারাপ থেকে ভালো হতে চাওয়া মানুষটাও পায়। নিজের ভেতরেই নিজেকে খুঁজে নিন, বুঝে নিন।

(৭৭)
মানুষ খুব অদ্ভুত। আপনি তার কাছে কখনই কিছু প্রত্যাশা করলে সে তা পূরণ করবেই এমন আশা করতে পারেন না। যে মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতিই অকৃতজ্ঞ, সে একজন মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে এমনটা আশা করাই কেমন যেন বোকামি মনে হয়। এই জীবনে, কত মানুষ আপনাকে আশার বাণী শোনাবে, কথা দিবে রঙ্গিন ফানুশ ওড়ানোর মতন করে; কিন্তু ওয়াদা পূরণের সময় ধানাই পানাই করবে। বস্তুগত বা অবস্তুগত যেকোন কথার প্রতিদানের ব্যাপারেই কেন যেন সবসময় এমনই হয়!

(৭৮)
মানুষের কাছে প্রত্যাশা করতে নাই, সেক্ষেত্রে অবশ্যই কষ্ট পেতে হবে। আসলে, মানুষের কাছে কিছু পেলে তাতেও তার প্রতি খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হতে নেই। যে কোন কিছুর প্রকৃত দাতা আল্লাহ, তাই প্রতিটি প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা তারই প্রতি হওয়া উচিত। বিভিন্ন মানুষ মূলত প্রাপ্তির উপলক্ষ হয়। তেমনিভাবে কিছু চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাওয়া উচিত। তিনি চাইলে দিবেন, তিনি না চাইলে সমগ্র পৃথিবী চাইলেও আপনি কিছুই পাবেন না, শূণ্য আর রিক্ত হয়ে পড়ে থাকবেন।

(৭৯)
বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। চিবায়া চিবায়া খায়। কুড়মুড় করে খায়... 

তাই, মনের বাঘ হইতে সাবধান।