১০ জানু, ২০১৪

আমাদের হৃদয়টার যত্ন নেয়া প্রয়োজন

আমরা কত্তো কিছুই তো করি... নিজের জন্য, অন্যের জন্য। অন্য কারো সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতেও চেষ্টা করি। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই, তাদের চেষ্টাও থাকে যত বেশি পারা যায় লোকের সামনে হোক অথবা অগোচরেই হোক, বেশি বেশি অন্যের উপকার করতে থাকা। কখনো জনমভোর অন্যের জন্য করে একসময় কষ্ট পেয়ে যাওয়া, অথবা কারো ভালো করতে গিয়ে যেন হয়ত নিজের ক্ষতি হলেও মেনে নিই, ভালোবাসা থেকে, দয়া থেকে। অন্যের জন্য নিজের কেমন ধরণের ক্ষতি মেনে নিচ্ছি, সেটা নিয়েও একপ্রস্ত চিন্তা করার আছে...

মনে হয় একটা অন্যরকম ব্যাপার আছে, যেটা হয়ত আমাদের চিন্তা থেকে এড়িয়ে যায়--  আল্লাহ যেদিন আমাদেরকে দাঁড় করাবেন, সেদিন আমরা কারো ভাই হিসেবে না, কারো বোন হিসেবে না, কারো ছেলে কিংবা মেয়ে হয়ে নয়, কারো সন্তান কিংবা বাবা/মা হয়েও নয়, কারো স্বামী বা স্ত্রী হয়েও নয় -- আমরা দাঁড়াবো 'আমি' হয়ে। যেই আমি আমার অন্তরটাকে ধারণ করতাম, যেই আমি আমার হৃদয় নিয়ে কাজ করেছি পৃথিবীতে... বাইরে যা-ই করেছি, হৃদয় জানতো আসল উদ্দেশ্য কী ছিলো, কী করতে পারা যেত অথচ হয়ত করা হয়নি... এমন আরো অনেক কিছু...


হৃদয়টার যত্ন নেয়া প্রয়োজন। হৃদয়ের ব্যাপারে সচেতন হওয়াও প্রয়োজন। হৃদয়ে কীসের স্পর্শ লাগছে, হৃদয় কীসের জন্য আকুল হচ্ছে, হৃদয় আমার কাকে বেশি ভালোবাসে, কী বেশি ভালোবাসে... হৃদয় আমার কাকে খুশি করতে চায়, কেন চায়। অশান্ত আর অন্যায়ের মাঝে আমার হৃদয় কাকে আশ্রয় হিসেবে নেয়... এমন হয়তো আরো অজস্র বিষয় আছে, তা নিজ নিজ জীবনে আমাদের উপলব্ধি ও আবিষ্কারের বিষয়, সচেতনতার বিষয়। কারণ, সেই দিনটি অবধারিত যেদিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে দাঁড় করাবেন, আমাদেরকে বলতে হবে কী করেছিলাম, কেন করেছিলাম।  এই দুনিয়াতেও আল্লাহ আমাদের এই হৃদয়ের দিকেই তাকান, বাহ্যিক বিষয়গুলো তো বাহ্যিকই।

যার সামনে যেমন উপকরণ তার 'আউটপুট' তেমনি বদলে যায়। এই এখন, হাতের সামনে কম্পিউটার-ইন্টারনেট কানেকশন থাকায় এই কথাগুলো হয়ত কিছু মানুষের কাছে পঠিত হবে কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অনেক কঠিন পরীক্ষার মাঝে অনেক অনেক গভীর থেকে উপলব্ধি করেন, নিজেদের বদলে দেন -- কিন্তু তাদের সুযোগ নেই/ইচ্ছা নেই অন্যদের কাছে ছড়ানোর। তাই বলে অনুভব আটকে থাকে না। আল্লাহ ঐ অন্তরটাকেই দেখেন, বাহ্যিক বিষয়গুলো তো কেবলই 'শো-অফ', এ থেকে কেমন অর্জন হতে পারে, তা হৃদয় বুঝতে পারে একটু হলেও...

হৃদয় নিয়ে শঙ্কা-ভীতি-সন্দেহ-অসহায়ত্ব হয়ই, তবে নিজের জন্য রোগের উপশম হিসেবে শিখেছি সেই দু'আ, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সুন্দরতম হৃদয়ের মানুষটি শিখিয়েছিলেন যেন অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আল্লাহর কাছে আমাদের অন্তরকে দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার সাহায্য চাওয়া যায় প্রতিনিয়ত, "ইয়া মুক্কাল্লিবাল ক্কুলুব, সাব্বিত ক্কুলুবানা 'আলা দ্বীনিক"...

[১০ জানুয়ারি, ২০১৪]