আল্লাহর রাহমাতে ছোটবেলা থেকে কুরআনকে নিয়ে দিনগুলো চলার অভ্যাস তৈরি হলেও নিজের ভুলে একটা সময় এসে এই সম্পর্কে ভাটা পড়ে গেলো। সমরেশ, শীর্ষেন্দু আর সুনীলের
বইগুলোর মোটা মোটা ভলিউম প্রথম থেকে শেষ পাতা গিলতে শুরু করলাম, নতুন
ভালোবাসায় পুরনো একটা মধুর সম্পর্ক হালকা হতে শুরু করলো।
'সেই বেলার কুরআন শেখায় আভিজাত্য কম ছিলো, কিন্তু গভীরতা আর আন্তরিকতা ছিলো অন্যমাত্রার' --এই বিষয়টা উপলব্ধি করলাম আজকে জুমু'আতে খতীব সাহেব কুরআন নিয়ে আলাপ করছিলেন যখন। ইখলাস জিনিসটার মাত্রা সত্যিই অন্যরকম। তখন যেই আয়াত পড়তাম, সেই একটা আয়াতের গভীরতা বুকের গহীনে দাগ কেটে থাকত। মনে আছে যখন পড়েছিলাম, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ভরসা করে, আল্লাহ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট হবেন' -- তখন সেই জীবনের প্রতিদিনের প্রতিমূহুর্ত আমি চেষ্টা করেছিলাম প্রাণপণে একটা অসম্ভবকে সম্ভব করতে। ব্যক্তিজীবনের সবচাইতে শক্তিশালী পার্থিব অর্জন আমার এই আয়াতের শক্তির উপরে ভিত্তি করেই ছিলো। এখন আমি হয়ত অনেক বেশি জানি সেই সময়ের তুলনায়, অথচ শক্তি কাজ করেনা তেমন। যা কমে গেছে তা হলো *ইখলাস*, sincerity.
আত্মিক শূণ্যতায় কুরআনের অনুপস্থিতিটা মারাত্মক -- এটা ঘুরে-ফিরে আমাকে আবিষ্কার করতে হলো নতুনমাত্রায়। insincerity সমস্যাটা এমনিতেই মানবচরিত্রে প্রকট। তার সাথে যখন প্রযুক্তির জীবন যুক্ত হয়, তখন প্রতিটা জিনিসের আবেদন এমনিতেই কমে যায়। সব আটপৌরে সাধারণ হয়ে যায়। পাঠ-করা শব্দগুলো তখন হালকা তুলোর মতন লাগে। অথচ এই শব্দগুলো পাহাড়ের উপরে নাযিল হলে তা চুরমার হয়ে যেত। গোটা বিষয়টাই অনুধাবনের ব্যাপার। এই আমার নিজের দিকে তাকিয়েই বুঝি, কয়েক বছর আগেও অনেক নোট/ব্লগ লিখতাম। কুরআনের উপরে দারুণ সব স্কলারদের আলোচনা শুনে, তাফসীর ঘেঁটে লিখতে বসে যেতাম। অল্প করে বিষয়গুলোকে তুলে আনার একটা ইচ্ছা ছিলো। ইদানিং যখন আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা, কুরআনের গভীরতা আর তাকে উপলব্ধি করার ব্যাপারে যোগ্যতা, নিজ জীবনে প্রয়োগের মাত্রা -- এগুলো বুঝলাম তখন আসলে হাত আর আগায় না। আমি বুঝতে পারলাম একসময়, কুরআনের এমাথা-ওমাথা উল্টেপাল্টে, সূরাগুলোকে ভালোবেসে মুখের আগায় নিয়ে এসে, অশ্লীলতা-অন্যায়-মিথ্যা-দম্ভকে বিদায় দিতে পারা হলো আমার জীবনে কুরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হক। শব্দবিলাসের মাঝে নেই কুরআনের হক আদায়। কুরআনের প্রতিটি আয়াত নাযিলের পরিপ্রেক্ষিত ছিলো। তর্কে জিততে টুকলিফাই করে আয়াত/হাদিস লাগিয়ে দেয়াতে কি আসলেই আমি জিতলাম? নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে --আমি কেন এই কাজটা করছি, ঠিক হচ্ছে তো? এর যোগ্যতা আমার আছে কি? আমি নিজে মানি তো?
আমাদের এই জীবনচলার নির্দেশিকা কুরআন। আমার আল্লাহ আমাকে এই সময়ে, এই সমাজে, এই জীবন দিয়ে এতেই কীভাবে জীবনটাকে অর্থপূর্ণ করতে হবে-- সেই কথা জানিয়ে দিয়েছেন কুরআনে। আমি তাকে ফেলে হন্যে হয়ে এখানে ওখানে ঘুরেছি। মানুষের কাছে বাঁধা পড়েছি, দাসত্ব এভাবেই করেছি প্রযুক্তির, মানুষের ক্ষমতার। আল্লাহ তো সবার কাছ থেকে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে চলার মুক্তি আর সম্মানের পথটাই দেখিয়েছেন কুরআনে। বুঝেছি ক'দিন? প্রতিদিন কতখানি সময় দিই? কতটুকু মুখস্ত করেছি আমি? উচ্চারণ আমার সঠিক হয়? কতখানি শিখে কাজে লাগিয়েছি জীবনে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই বলে দিবে আত্মার অবস্থান। আগুন নাকি বাগান -- কোন মঞ্জিলকে লক্ষ্য করে আগাচ্ছি, তা কুরআনের প্রতি ভালোবাসায় আমাদের অন্তরের অনুভূতিরাই আমাদের জানান দিবে। আল্লাহ আমাদের দয়া করুন, মাফ করুন, কবুল করুন।
স্বপ্ন কারখানা
০২ আগস্ট, ২০১৩
'সেই বেলার কুরআন শেখায় আভিজাত্য কম ছিলো, কিন্তু গভীরতা আর আন্তরিকতা ছিলো অন্যমাত্রার' --এই বিষয়টা উপলব্ধি করলাম আজকে জুমু'আতে খতীব সাহেব কুরআন নিয়ে আলাপ করছিলেন যখন। ইখলাস জিনিসটার মাত্রা সত্যিই অন্যরকম। তখন যেই আয়াত পড়তাম, সেই একটা আয়াতের গভীরতা বুকের গহীনে দাগ কেটে থাকত। মনে আছে যখন পড়েছিলাম, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ভরসা করে, আল্লাহ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট হবেন' -- তখন সেই জীবনের প্রতিদিনের প্রতিমূহুর্ত আমি চেষ্টা করেছিলাম প্রাণপণে একটা অসম্ভবকে সম্ভব করতে। ব্যক্তিজীবনের সবচাইতে শক্তিশালী পার্থিব অর্জন আমার এই আয়াতের শক্তির উপরে ভিত্তি করেই ছিলো। এখন আমি হয়ত অনেক বেশি জানি সেই সময়ের তুলনায়, অথচ শক্তি কাজ করেনা তেমন। যা কমে গেছে তা হলো *ইখলাস*, sincerity.
আত্মিক শূণ্যতায় কুরআনের অনুপস্থিতিটা মারাত্মক -- এটা ঘুরে-ফিরে আমাকে আবিষ্কার করতে হলো নতুনমাত্রায়। insincerity সমস্যাটা এমনিতেই মানবচরিত্রে প্রকট। তার সাথে যখন প্রযুক্তির জীবন যুক্ত হয়, তখন প্রতিটা জিনিসের আবেদন এমনিতেই কমে যায়। সব আটপৌরে সাধারণ হয়ে যায়। পাঠ-করা শব্দগুলো তখন হালকা তুলোর মতন লাগে। অথচ এই শব্দগুলো পাহাড়ের উপরে নাযিল হলে তা চুরমার হয়ে যেত। গোটা বিষয়টাই অনুধাবনের ব্যাপার। এই আমার নিজের দিকে তাকিয়েই বুঝি, কয়েক বছর আগেও অনেক নোট/ব্লগ লিখতাম। কুরআনের উপরে দারুণ সব স্কলারদের আলোচনা শুনে, তাফসীর ঘেঁটে লিখতে বসে যেতাম। অল্প করে বিষয়গুলোকে তুলে আনার একটা ইচ্ছা ছিলো। ইদানিং যখন আরবি ভাষার প্রয়োজনীয়তা, কুরআনের গভীরতা আর তাকে উপলব্ধি করার ব্যাপারে যোগ্যতা, নিজ জীবনে প্রয়োগের মাত্রা -- এগুলো বুঝলাম তখন আসলে হাত আর আগায় না। আমি বুঝতে পারলাম একসময়, কুরআনের এমাথা-ওমাথা উল্টেপাল্টে, সূরাগুলোকে ভালোবেসে মুখের আগায় নিয়ে এসে, অশ্লীলতা-অন্যায়-মিথ্যা-দম্ভকে বিদায় দিতে পারা হলো আমার জীবনে কুরআনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হক। শব্দবিলাসের মাঝে নেই কুরআনের হক আদায়। কুরআনের প্রতিটি আয়াত নাযিলের পরিপ্রেক্ষিত ছিলো। তর্কে জিততে টুকলিফাই করে আয়াত/হাদিস লাগিয়ে দেয়াতে কি আসলেই আমি জিতলাম? নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে --আমি কেন এই কাজটা করছি, ঠিক হচ্ছে তো? এর যোগ্যতা আমার আছে কি? আমি নিজে মানি তো?
আমাদের এই জীবনচলার নির্দেশিকা কুরআন। আমার আল্লাহ আমাকে এই সময়ে, এই সমাজে, এই জীবন দিয়ে এতেই কীভাবে জীবনটাকে অর্থপূর্ণ করতে হবে-- সেই কথা জানিয়ে দিয়েছেন কুরআনে। আমি তাকে ফেলে হন্যে হয়ে এখানে ওখানে ঘুরেছি। মানুষের কাছে বাঁধা পড়েছি, দাসত্ব এভাবেই করেছি প্রযুক্তির, মানুষের ক্ষমতার। আল্লাহ তো সবার কাছ থেকে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে চলার মুক্তি আর সম্মানের পথটাই দেখিয়েছেন কুরআনে। বুঝেছি ক'দিন? প্রতিদিন কতখানি সময় দিই? কতটুকু মুখস্ত করেছি আমি? উচ্চারণ আমার সঠিক হয়? কতখানি শিখে কাজে লাগিয়েছি জীবনে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই বলে দিবে আত্মার অবস্থান। আগুন নাকি বাগান -- কোন মঞ্জিলকে লক্ষ্য করে আগাচ্ছি, তা কুরআনের প্রতি ভালোবাসায় আমাদের অন্তরের অনুভূতিরাই আমাদের জানান দিবে। আল্লাহ আমাদের দয়া করুন, মাফ করুন, কবুল করুন।
স্বপ্ন কারখানা
০২ আগস্ট, ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে