৭ আগ, ২০১৩

এই সময়ে আমাদের সমাজের স্বচ্ছল অথবা ধার্মিক পরিবারদের কথা

সম্পদের প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা একটা অদ্ভুত ধরণের অহংবোধ নিয়ে এনে দেয়, অনুভূতিবোধকেও বোধহয় ভোঁতা করে দেয়। সহমর্মিতা জিনিসটা হয়ত খেয়েই ফেলে। সমাজের উচ্চবিত্তদের কম অংশই 'মনুষ্যত্ব' ধারণ করেন বলে মনে হয় ইদানিংকার ঢাকাভিত্তিক শহুরে জীবনের অভিজ্ঞতায়। অন্যদের জায়গায় তারা কখনো নিজেদেরকে বসিয়ে করে জীবনের কষ্টগুলোকে হয়ত ভেবে দেখতে, অনুভব করতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না তাদের কতটা যুদ্ধ করতে হয়। নিজেদের 'থাকা' কে তারা স্বাভাবিক ধরে অন্যদেরকে অবমূল্যায়ণ করেন প্রাচুর্য আর ক্ষমতার মানদন্ডে। অথচ সেই 'থাকা'টুকু তাদের সৌভাগ্য, আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া কল্যাণমাত্র, যার জবাবদিহিতাও হবে আখিরাতে, কঠিনভাবেই।


আমি বুঝেছি মানুষ যত কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, পরের কষ্ট বোঝার যোগ্যতাও তার বাড়ে। যারা না চাইতেই অনেক পেয়ে যায়, এমনকি সম্পদের সাথে 'ধর্মীয় জ্ঞান ও অবস্থান' যখন কিঞ্চিৎ অর্জন হয় --তাদের অবস্থা হয় আরো গুরুতর। শক্তিশালী এই দুই দানব তাদের অন্তরের ভেতরে ঘাঁটি গেড়ে থাকে তখন। হিদায়াহ যে একটা উপহার, যেই শব্দটা এসেছে 'হাদিয়া' থেকে, সেটাও অনুধাবন করা সম্ভব হয়না এইসব 'ধার্মিক' মানুষদের। আল্লাহর নূরে যাদের অন্তরালোকিত হয়ে চারিদিকে আলো ছড়ানোর কথা, তারা অনেকেই দুনিয়াতেই মানুষকে বিচার করতে লেগে যান যেন! অথচ, আখিরাতের মুক্তি পেয়ে যাবার নিশ্চয়তা এই জগতে বেঁচে থাকা কারো নেই, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আশা নেই কারো, নিরাশাও নেই কারো।

উন্মত্ত হয়ে টাকার উপার্জন হয়েছে আমাদের একেকটা জীবনের মূল লক্ষ্য, মেশিন হতে হবে মেশিন -- টাকার মেশিন। সমাজের মানুষের সম্মান আর মূল্য এখন মানবিকবোধ-জ্ঞানবুদ্ধিকে ছাপিয়ে টাকায় ঢুকে গেছে। এককালে স্কুল মাস্টারের সন্তানদের ছিলো বিয়ের পাত্র-পাত্রী হিসেবে সকলের পছন্দ। এখন কন্যার জন্য সবার প্রয়োজন হয় টাকার মেশিন। যত টাকা থাকে, ঢাকায় ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামে বাড়ি, কুমিল্লায় জমি থাকে-- ততবেশি মূল্য ছেলের। চরিত্রহীন সন্তানদেরকে টাকার ভার দেখিয়ে বিকিয়ে দিতে চান অভিভাবকরা, সফলও হচ্ছেন তুমুলভাবে। সম্পদের 'আপাত' আধিক্য এবং চরিত্রহীনতার সংসারগুলোর পরের গল্পগুলো এখন সবাই টের পায়। অনৈতিক সম্পর্কের ছড়াছড়ি, নিত্যনতুন জঘন্যতা আমাদের পত্রিকার পাতাগুলোর শিরোনামে। সে যাহোক, এসব ভাবতে এসে মনে পড়ে গেলো কিছু কথা আমার --

"অসাধারণ আর চমৎকার মানুষ হিসেবে আমরা তাদেরকেই পাই যারা জীবনে পরাজিত হয়েছেন, দুঃখ-কষ্টে ভুগেছেন, জীবনযুদ্ধে ধুঁকেছেন, অনেক কিছু হারিয়েছেন; যারা শত কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতায় জীবনকে গভীর থেকে উপলব্ধি করেছেন। তাদের থাকে জীবনের প্রতি ভালোবাসা, স্পর্শকাতরতা, থাকে গভীর জীবনবোধ, ভাঙ্গাকে গড়ে নেয়ার প্রতি আর্তি যা তাদেরকে সহানুভূতিশীল, বিনয়ী, নম্র, দয়ার্দ্র এবং অন্যের কষ্টের ব্যাপারে সচেতন করে তোলে। অসাধারণ আর সুন্দর মানুষেরা আপনা আপনিই তৈরি হয়ে যায় না।" ~[Elisabeth Kubler-Ross-এর উদ্ধৃতির আলোকে]

স্বপ্ন কারখানা, তিলোত্তমা নগরী
০৭ আগস্ট, ২০১৩ ঈসায়ী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে