ব্যাপারটা এমন না যে ফেসবুকে রাশি-রাশি ভারা-ভারা স্কলার বসবাস করেন। বরং ব্যাপারটা পুরাই উলটা। একসময় আমরা ইসলাম শিখতাম কখনো স্কুলের ইসলাম শিক্ষা স্যার, এলাকার মসজিদের ইমামের কাছে ছোট-খাটো প্রশ্ন করে। ফিকহের বই ছিলো বাসায়, সেগুলো দেখে তাহারাত, সলাত, সিয়ামের মতন বিষয় শিখতাম। কুরআনুল কারীমের অনুবাদ, রিয়াদুস সলিহীন, বুখারী, মুসলিম শরীফ পড়া হত মন দিয়ে; শেখার আগ্রহে। আমাদের অনেকেরই এমনই হিসেব ছিলো।
এই তো কয়েক বছর আগে থেকে ফেসবুকে যেই জিনিস দেখে ভালো লাগত তা হলো কয়েকজন ভাই এবং আপুর লেখা যেখানে ইসলামের উপলব্ধি ছিলো। সেখান থেকে নিজের জায়গাগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োগ করার সময় সাহায্য পেতাম। কখন যেন এই জায়াগাটা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেলো। দু'চার বছর আবেগ ভিজিয়ে ইসলাম শেখা, অ্যাকাডেমিকভাবে ইসলামের স্পর্শ না নেওয়া মানুষগুলো সকাল বিকাল শ্লীল-অশ্লীল শব্দ দিয়ে পারস্পরিক আক্রমণ শুরু করে দিলো। এখন যেখানে সেখানে ফাতওয়া পাওয়া যায়। স্কলারদের তুলাধুনা করা হয়। অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তোলপাড়। ব্যক্তিজীবনে, নিজের মাঝেই ইসলাম ঠিকমতন প্রয়োগ না করলেও ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়ের উৎসধারা হতে আমাদের ভুল হয়না।
এমন তো না যে এই পৃথিবী কেবলই সমালোচনার। আমাদের জীবনে উদ্দীপনা আছে, ভালোবাসা ও শেখার শত-শত ঘটনা আছে, বরং মানুষ সমালোচনা থেকে কখনই তেমন শিক্ষাগ্রহণ করে না। সমালোচনার এবং অমতের আদব আছে -- সম্ভবত খুব কম লোকই জানি। অন্যকে শব্দবাণে ডুবিয়ে দিয়ে আমাদের ঈমানের উন্নতি হয়না, আমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যাব না -- এই বিষয়টি উপলব্ধি করার প্রয়োজন আছে। ফেসবুকে সবাই লিখতে পারে, তার মানে এই না যা-তা লিখবো। আবেগের বশে টুকরো কিছু জ্ঞানে ধরাকে সরা জ্ঞান হতেই পারে, তার মানে এই নয় আমি সঠিক। হতে পারে কেউ এমন একটা উৎস থেকে ইসলাম শিখেছেন যাকে আমি সঠিক মনে করিনা -- তার মানে এটা নয় আমার পথই সঠিক, তার মানে এটা নয় সেই মানুষটি জান্নাতি হবেন না। যদি আমার পথ সঠিকও হয়, তবু আমার জান্নাত নিশ্চিত না। এই হিসাব কেবলই আল্লাহর কাছে। হতে পারে যেই মানুষ হয়ত কোন দলভুক্তই নয় সেও জান্নাত পাবে। যদি জান্নাত আমাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে খেয়াল রাখা দরকার -- অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আমাদের দম্ভভরা এইসব 'ব্যাশিং', 'পচানি', সমালোচনা আর হাসিঠাট্টা কতখানি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
একদম শেষে, আমরা আল্লাহর কাছে যাবো কেবল আমাদের কাজগুলো নিয়ে। আমি যেটুকু সময় পেয়েছিলাম, তাতে কতখানি সময় আমি কেবলই তার জন্য ব্যয় করেছি, তাতে কতটুকু ভালোবাসা-ভয় ছিলো তার জন্য। ঈমানের হিসেবটা আমাদের শত শত লাইনের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে হবেনা। আল্লাহই ভালো জানেন কী হবে আমাদের। সে এক ভয়াবহ সময় হবে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। আপনার চলার পথে রাস্তার পাশে পিঠা বানিয়ে জীবন চালানো গরীব অশীতিপর বৃদ্ধাও জান্নাতি হবেন হয়ত, কে জানে সেকথা? তিনি আপনার/আমার মতন তত্ত্ব জানেন না। এই জ্ঞান, এই প্রযুক্তি তার কাছে না গেলেও তিনি সফল হতে পারেন তার জীবনের অতটুকুতেই। ভেবে দেখা দরকার, আমরা কি আদৌ কল্যাণের পথে আছি? আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াহ দিন। সঠিক কথা হাতে না এলে আমাদের কী-বোর্ড থেকে হাতকে সামলে চলার তাওফিক দান করুন। জীবনের প্রতিটি কাজ, ক্ষমা-ধৈর্য-ভালোবাসা-অনুযোগ হোক কেবলই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
[১৯ জুলাই, ২০১৩]
এই তো কয়েক বছর আগে থেকে ফেসবুকে যেই জিনিস দেখে ভালো লাগত তা হলো কয়েকজন ভাই এবং আপুর লেখা যেখানে ইসলামের উপলব্ধি ছিলো। সেখান থেকে নিজের জায়গাগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োগ করার সময় সাহায্য পেতাম। কখন যেন এই জায়াগাটা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেলো। দু'চার বছর আবেগ ভিজিয়ে ইসলাম শেখা, অ্যাকাডেমিকভাবে ইসলামের স্পর্শ না নেওয়া মানুষগুলো সকাল বিকাল শ্লীল-অশ্লীল শব্দ দিয়ে পারস্পরিক আক্রমণ শুরু করে দিলো। এখন যেখানে সেখানে ফাতওয়া পাওয়া যায়। স্কলারদের তুলাধুনা করা হয়। অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তোলপাড়। ব্যক্তিজীবনে, নিজের মাঝেই ইসলাম ঠিকমতন প্রয়োগ না করলেও ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়ের উৎসধারা হতে আমাদের ভুল হয়না।
এমন তো না যে এই পৃথিবী কেবলই সমালোচনার। আমাদের জীবনে উদ্দীপনা আছে, ভালোবাসা ও শেখার শত-শত ঘটনা আছে, বরং মানুষ সমালোচনা থেকে কখনই তেমন শিক্ষাগ্রহণ করে না। সমালোচনার এবং অমতের আদব আছে -- সম্ভবত খুব কম লোকই জানি। অন্যকে শব্দবাণে ডুবিয়ে দিয়ে আমাদের ঈমানের উন্নতি হয়না, আমরা এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যাব না -- এই বিষয়টি উপলব্ধি করার প্রয়োজন আছে। ফেসবুকে সবাই লিখতে পারে, তার মানে এই না যা-তা লিখবো। আবেগের বশে টুকরো কিছু জ্ঞানে ধরাকে সরা জ্ঞান হতেই পারে, তার মানে এই নয় আমি সঠিক। হতে পারে কেউ এমন একটা উৎস থেকে ইসলাম শিখেছেন যাকে আমি সঠিক মনে করিনা -- তার মানে এটা নয় আমার পথই সঠিক, তার মানে এটা নয় সেই মানুষটি জান্নাতি হবেন না। যদি আমার পথ সঠিকও হয়, তবু আমার জান্নাত নিশ্চিত না। এই হিসাব কেবলই আল্লাহর কাছে। হতে পারে যেই মানুষ হয়ত কোন দলভুক্তই নয় সেও জান্নাত পাবে। যদি জান্নাত আমাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে খেয়াল রাখা দরকার -- অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আমাদের দম্ভভরা এইসব 'ব্যাশিং', 'পচানি', সমালোচনা আর হাসিঠাট্টা কতখানি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
একদম শেষে, আমরা আল্লাহর কাছে যাবো কেবল আমাদের কাজগুলো নিয়ে। আমি যেটুকু সময় পেয়েছিলাম, তাতে কতখানি সময় আমি কেবলই তার জন্য ব্যয় করেছি, তাতে কতটুকু ভালোবাসা-ভয় ছিলো তার জন্য। ঈমানের হিসেবটা আমাদের শত শত লাইনের ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে হবেনা। আল্লাহই ভালো জানেন কী হবে আমাদের। সে এক ভয়াবহ সময় হবে। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। আপনার চলার পথে রাস্তার পাশে পিঠা বানিয়ে জীবন চালানো গরীব অশীতিপর বৃদ্ধাও জান্নাতি হবেন হয়ত, কে জানে সেকথা? তিনি আপনার/আমার মতন তত্ত্ব জানেন না। এই জ্ঞান, এই প্রযুক্তি তার কাছে না গেলেও তিনি সফল হতে পারেন তার জীবনের অতটুকুতেই। ভেবে দেখা দরকার, আমরা কি আদৌ কল্যাণের পথে আছি? আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াহ দিন। সঠিক কথা হাতে না এলে আমাদের কী-বোর্ড থেকে হাতকে সামলে চলার তাওফিক দান করুন। জীবনের প্রতিটি কাজ, ক্ষমা-ধৈর্য-ভালোবাসা-অনুযোগ হোক কেবলই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
[১৯ জুলাই, ২০১৩]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে