২১ জুল, ২০১৩

এই রমাদানে

এই রমাদানে আগের কয়েক বছরের মতন হুলুস্থূল প্ল্যান করিনি। অনেক ভিডিও দেখে, অনেক লেখা পড়ে, আলাপ আলোচনা ও অনেক পরিকল্পনা করে সবশেষে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকার বিষয়টাকে সজ্ঞানে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছি। আগের বছরগুলোতে রমাদান শেষে সবসময়ে মন আমার ভারাক্রান্ত হয়ে থাকত। আমার উপলব্ধি, কিছু সময় একান্তই নিজের করে নিতে হয়, তাই আমাদের সবারই ভিতরে যা আছে, সেটুকু নিয়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ রমাদান। গত জুমু'আতে খতীব সাহেব বলছিলেন, রমাদান হলো ক্ষমা লাভের সুযোগ, তাই বেশি বেশি ইস্তিগফার করার মাস। কথাটা বুকে দাগ কেটেছে।

রোজার আগে স্রেফ ঠিক করেছিলাম নিজের গোড়াটাকে শক্ত করা দরকার। তাই, সলাতের ব্যাপারে খুব যত্নবান হবো, আর কুরআনুল কারীম পড়বো একটানা। মুফতি তাকী উসমানীর (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন) তাফসীর সেটটা এতদিন ধরে বিছানা থেকে এক হাত দূরে টেবিলের উপরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। তাকিয়ে দেখলেও কেমন আলাদা অনুভূতি হত, নেড়েচেড়ে দেখতাম মাঝে মাঝে। বুক হু হু করে উঠতো অজ্ঞতার তুচ্ছতায়, এখনো করে। আমার আল্লাহ আমার জীবনে ঠিকভাবে জন্য এতকিছু জানিয়ে দিয়েছেন, আমি পড়েই দেখিনি। আখিরাতে কুরআন শাফা'আতকারী হবে তো এই অধমের? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সাহসও করিনা...


এই রমাদানে পড়ার চেষ্টা করছি। একটানা রিডিং পড়ে যাওয়া। মাঝে মাঝে চলতি পথে টিকাগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছি। অজস্র উপলব্ধি এই সময়ের পৃথিবী, চারপাশ দেখে জীবন্ত হচ্ছে। নিজের অন্তরের কথা ভেবেও টের পাই কুরআনে আমার কথাই বলা হয়েছে যেন। প্রকৃতির বর্ণনায় আল্লাহর সৃষ্টির নিপুণতাগুলোকে নতুন করে আবিষ্কার করি, ইতিহাসের বর্ণনাগুলোতে সাবধানবাণীকে খুঁজে পাই...

সবশেষে টের পাই, আমি খুবই একা। সবাইই আসলে একা। এক আল্লাহ ছাড়া আমাদের কোন প্রকৃত বন্ধু নেই সবসময় পাশে থাকার, যিনি আমার সবকিছুতেই ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নেবেন। মহান আল্লাহর সেই বিশালত্বকে অনুভব করার চেষ্টা করতে অস্থির এবং অকৃতজ্ঞ এই অন্তরের উপরে অনেক কাজ করতে হয়। নফসের সাথে এক অনন্ত যুদ্ধ চলে। এই জীবনের সফলতা তো আল্লাহর রাহমাতের উপরেই সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে। তিনি সমগ্র পৃথিবীর মুসলিমদেরকে ক্ষমা করে কবুল করুন...

[২০ জুলাই, ২০১৩]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে