কখনো ভাবিনি এরকম কিছু লিখতে বসবো। কিন্তু কিছু কথা আজ বলতে ইচ্ছা করছে। এই কথাগুলো আমার বিগত জীবনে আবিষ্কার করা একদম গভীর উপলব্ধি থেকে বলা।
ছোটবেলা থেকেই যে শিক্ষায় আমি বড় হয়েছি, তা ছিলো একটা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম। যেই ইসলামের অর্থ শান্তি। যেই শান্তির পরশ শুধু এই জাগতিক জীবনকে ছাড়িয়ে অনন্তকালের আখিরাতকেও পূর্ণ করে। এই শান্তি জীবনের প্রতিটি ভাবনা, চিন্তা আর ব্যবহারের মাঝে প্রতিফলিত হয়। আচরণে আর মনের কাছে 'তীব্র' অনুভূতিগুলোকে শীতল সঞ্জীবনীর স্পর্শে স্বাভাবিক গ্রহণীয় করে তোলে। তখন আর মানুষ কিছুতেই 'হায় হায় সব চলে গেলো', '"এ জীবনের আর কী পেলাম" -- জাতীয় ভাবনা থেকে বহুদূরেই থাকে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই বোধকরি তাই আমি 'এক্সট্রিম' হতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমার সবসময়েই এটা নিয়ে একটা হালকা আক্ষেপ মতন ছিলো। কিন্তু কিছু স্বভাব মানুষের বদলে ওঠা ব্যাপক কষ্টসাধ্য, তার ভিন্নরূপ সঠিক পথকে খুঁজে বের করা তখন জরুরী হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এই জ্ঞানের মাঝে আবিষ্কার করলাম কিছু সুন্দরতম পথনির্দেশনা। আমার মহান রব, যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক তিনি আমাকে নিকটবর্তী আর অত্যন্ত কল্যাণকর একটা পথের নির্দেশনা দিয়েছেন পবিত্র কুরআনুল কারীমেই। যার নাম এক কথায়-- মধ্যমপথ।
আমরা আমাদের সমাজে, পরিবারে বড় হই। তারপর আমাদের "পার্সোনাল" একটা মতের সৃষ্টি হয়। এই মতের পক্ষে অনেকেরই প্রচুর যুক্তি থাকে। একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদাহরণ দিইঃ একজন হয়ত বলতেসে-- সে অমুক খাবার খুব পছন্দ করে, তার মতন খাবার হয়ই না। যাকে বলতেসে-- সে হয়ত কখনই ওই খাবার লাইক করে নাই। তাহলে সে এখন এইটার স্ট্যান্ডার্ড বিচার করবে কোনটা? যদি সে বলে "আরে ধুর, ওইটা খাবার হইলো?" তখন এই মধুর গল্প ঝগড়ায় রূপ পেতে অল্প কিছু ক্ষণই লাগবে কেবল। আমরা নরমালি দ্বিতীয় বন্ধু হলে চুপ করে সময়টা পার করে দিই। আর যদি 'ক্যাচাল'কে আলিঙ্গন করতে পছন্দ করি-- তাহলে এগিয়ে যাব আমার পছন্দকে "স্থাপন" করতে।
তাহলে এমতাবস্থায় কী করা উচিত? আমি পবিত্র কুরআনের একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
"তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।"
(সূরা আল ক্বাসাস, ২৮: ৫৫ )
আমি যদি একজন মু'মিন হই। আমার সামনে যদি কেউ প্রবল অজ্ঞ আর অযৌক্তিক কথা বলে, আমি যদি অনেক বিরক্ত হই, আমি কী করবো? তাকে আক্রমণ করবো? নাকি আমি যদি আল্লাহকে ভয় করি, যদি তার সন্তুষ্টিকেই জীবনের গভীরতম প্রাপ্তি হিসেবে মনে করি, আমি অবশ্যই ধৈর্য্যধারণ করবো এবং সালাম দিয়ে সরে আসবো। কেননা আল্লাহ তায়ালা ফিতনা-ফাসাদ চরম অপছন্দ করেন।
শান্তির কথা বলছিলাম ইসলাম-এর ব্যাপারে। কেননা, সামাজিক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আচরণ-- যেগুলো কিনা মৌলিক মানবীয় গুণাবলীতেও পড়ে-- সেগুলোর শিক্ষা আল্লাহ ও তার রাসূল অত্যন্ত সুন্দর করেই জানিয়েছেন। আমি ব্যক্তিজীবনে সবচাইতে পছন্দ করি তাকেই যিনি অনেক বিনয়ী আর নম্র। এটা একটা স্বাভাবিক চয়েস। কমবেশি প্রতিটি মানুষ আমরা নম্র মানুষদেরকেই পছন্দ করি। এইটা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট। কেননা নম্র আর বিনয়ী মানুষদের সামনে আমরা নিজেদের প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাদের আচরণে আক্রমণ হবার ভয় করিনা।
সূরা আর ফুরকানে আল্লাহ বলেছেনঃ
"রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।"
[সূরা ফুরকানঃ ৬৩]
তাহলে, আমরা কি সেই আচরণকেই বেশি ধারণ করার চেষ্টা করবো না যাতে কল্যাণ নিহিত? আসলে ইসলাম তো একটা পরিপূর্ণ জীবন, যার মাঝে আছে স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ দাসত্ব, আছে ব্যক্তিগত আচরণের শিক্ষা, আছে পারিবারিক ও সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ, আছে রাজনৈতিক চেতনার শিক্ষা, আছে শিক্ষাগ্রহণের তাগিদ, লেনদেনের পরিপূর্ণ নিয়মাবলী। এরকম আরও অনেক জিনিসের সমন্বয় ইসলাম। শুধু রাজনীতি আমাদের ইসলাম না, শুধু প্রতিবাদ ইসলাম না, আবার কেবল ইবাদাত ইসলাম না। এইটা আমরা সবাই বুঝি।
যারাই আমরা ইসলামিক, আমাদের প্রয়োজন মৌলিক মানবীয় গুণাবলীগুলো রপ্ত করা। ইবাদাত তো দুই প্রকারের-- হাক্কুল্লাহ এবং হাক্কুল ইবাদ। তাহলে কেন আচরণের অংশগুলো আমরা গুরুত্বের সাথে নেবো না?
সুন্দরতম জিনিসগুলোকে সবাই পছন্দ করেন। মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অত্যন্ত সুন্দর মানবীয় গুণাবলী, চারিত্রিক গুণাবলী দেখেই সবাই তাকে পছন্দ করতো। তার সততা আর সুন্দরভাষী গুণাবলী আমাদের শিক্ষার একটা উৎস। জাতি-ধর্ম-বর্ণ ব্যতিরেকে এই সুন্দর ব্যবহারকে মানুষ প্রবল ভালোবাসে।
একটা হাদীস দিয়ে শেষ করি--
"নম্রতা ও কোমলতা যে জিনিসেই থাকবে, তা সুন্দর ও সুষমামন্ডিত হবে। আর কঠোরতা যে জিনিসেই থাকবে, তা কুৎসিত ও অকল্যাণকর হবে।"[মুসলিম]
রেফারেন্স
ছোটবেলা থেকেই যে শিক্ষায় আমি বড় হয়েছি, তা ছিলো একটা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম। যেই ইসলামের অর্থ শান্তি। যেই শান্তির পরশ শুধু এই জাগতিক জীবনকে ছাড়িয়ে অনন্তকালের আখিরাতকেও পূর্ণ করে। এই শান্তি জীবনের প্রতিটি ভাবনা, চিন্তা আর ব্যবহারের মাঝে প্রতিফলিত হয়। আচরণে আর মনের কাছে 'তীব্র' অনুভূতিগুলোকে শীতল সঞ্জীবনীর স্পর্শে স্বাভাবিক গ্রহণীয় করে তোলে। তখন আর মানুষ কিছুতেই 'হায় হায় সব চলে গেলো', '"এ জীবনের আর কী পেলাম" -- জাতীয় ভাবনা থেকে বহুদূরেই থাকে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই বোধকরি তাই আমি 'এক্সট্রিম' হতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমার সবসময়েই এটা নিয়ে একটা হালকা আক্ষেপ মতন ছিলো। কিন্তু কিছু স্বভাব মানুষের বদলে ওঠা ব্যাপক কষ্টসাধ্য, তার ভিন্নরূপ সঠিক পথকে খুঁজে বের করা তখন জরুরী হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এই জ্ঞানের মাঝে আবিষ্কার করলাম কিছু সুন্দরতম পথনির্দেশনা। আমার মহান রব, যিনি বিশ্বজাহানের প্রতিপালক তিনি আমাকে নিকটবর্তী আর অত্যন্ত কল্যাণকর একটা পথের নির্দেশনা দিয়েছেন পবিত্র কুরআনুল কারীমেই। যার নাম এক কথায়-- মধ্যমপথ।
আমরা আমাদের সমাজে, পরিবারে বড় হই। তারপর আমাদের "পার্সোনাল" একটা মতের সৃষ্টি হয়। এই মতের পক্ষে অনেকেরই প্রচুর যুক্তি থাকে। একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদাহরণ দিইঃ একজন হয়ত বলতেসে-- সে অমুক খাবার খুব পছন্দ করে, তার মতন খাবার হয়ই না। যাকে বলতেসে-- সে হয়ত কখনই ওই খাবার লাইক করে নাই। তাহলে সে এখন এইটার স্ট্যান্ডার্ড বিচার করবে কোনটা? যদি সে বলে "আরে ধুর, ওইটা খাবার হইলো?" তখন এই মধুর গল্প ঝগড়ায় রূপ পেতে অল্প কিছু ক্ষণই লাগবে কেবল। আমরা নরমালি দ্বিতীয় বন্ধু হলে চুপ করে সময়টা পার করে দিই। আর যদি 'ক্যাচাল'কে আলিঙ্গন করতে পছন্দ করি-- তাহলে এগিয়ে যাব আমার পছন্দকে "স্থাপন" করতে।
তাহলে এমতাবস্থায় কী করা উচিত? আমি পবিত্র কুরআনের একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেনঃ
"তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।"
(সূরা আল ক্বাসাস, ২৮: ৫৫ )
আমি যদি একজন মু'মিন হই। আমার সামনে যদি কেউ প্রবল অজ্ঞ আর অযৌক্তিক কথা বলে, আমি যদি অনেক বিরক্ত হই, আমি কী করবো? তাকে আক্রমণ করবো? নাকি আমি যদি আল্লাহকে ভয় করি, যদি তার সন্তুষ্টিকেই জীবনের গভীরতম প্রাপ্তি হিসেবে মনে করি, আমি অবশ্যই ধৈর্য্যধারণ করবো এবং সালাম দিয়ে সরে আসবো। কেননা আল্লাহ তায়ালা ফিতনা-ফাসাদ চরম অপছন্দ করেন।
শান্তির কথা বলছিলাম ইসলাম-এর ব্যাপারে। কেননা, সামাজিক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আচরণ-- যেগুলো কিনা মৌলিক মানবীয় গুণাবলীতেও পড়ে-- সেগুলোর শিক্ষা আল্লাহ ও তার রাসূল অত্যন্ত সুন্দর করেই জানিয়েছেন। আমি ব্যক্তিজীবনে সবচাইতে পছন্দ করি তাকেই যিনি অনেক বিনয়ী আর নম্র। এটা একটা স্বাভাবিক চয়েস। কমবেশি প্রতিটি মানুষ আমরা নম্র মানুষদেরকেই পছন্দ করি। এইটা সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট। কেননা নম্র আর বিনয়ী মানুষদের সামনে আমরা নিজেদের প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাদের আচরণে আক্রমণ হবার ভয় করিনা।
সূরা আর ফুরকানে আল্লাহ বলেছেনঃ
"রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম।"
[সূরা ফুরকানঃ ৬৩]
তাহলে, আমরা কি সেই আচরণকেই বেশি ধারণ করার চেষ্টা করবো না যাতে কল্যাণ নিহিত? আসলে ইসলাম তো একটা পরিপূর্ণ জীবন, যার মাঝে আছে স্রষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ দাসত্ব, আছে ব্যক্তিগত আচরণের শিক্ষা, আছে পারিবারিক ও সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ, আছে রাজনৈতিক চেতনার শিক্ষা, আছে শিক্ষাগ্রহণের তাগিদ, লেনদেনের পরিপূর্ণ নিয়মাবলী। এরকম আরও অনেক জিনিসের সমন্বয় ইসলাম। শুধু রাজনীতি আমাদের ইসলাম না, শুধু প্রতিবাদ ইসলাম না, আবার কেবল ইবাদাত ইসলাম না। এইটা আমরা সবাই বুঝি।
যারাই আমরা ইসলামিক, আমাদের প্রয়োজন মৌলিক মানবীয় গুণাবলীগুলো রপ্ত করা। ইবাদাত তো দুই প্রকারের-- হাক্কুল্লাহ এবং হাক্কুল ইবাদ। তাহলে কেন আচরণের অংশগুলো আমরা গুরুত্বের সাথে নেবো না?
সুন্দরতম জিনিসগুলোকে সবাই পছন্দ করেন। মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অত্যন্ত সুন্দর মানবীয় গুণাবলী, চারিত্রিক গুণাবলী দেখেই সবাই তাকে পছন্দ করতো। তার সততা আর সুন্দরভাষী গুণাবলী আমাদের শিক্ষার একটা উৎস। জাতি-ধর্ম-বর্ণ ব্যতিরেকে এই সুন্দর ব্যবহারকে মানুষ প্রবল ভালোবাসে।
একটা হাদীস দিয়ে শেষ করি--
"নম্রতা ও কোমলতা যে জিনিসেই থাকবে, তা সুন্দর ও সুষমামন্ডিত হবে। আর কঠোরতা যে জিনিসেই থাকবে, তা কুৎসিত ও অকল্যাণকর হবে।"[মুসলিম]
রেফারেন্স
জাযাকাল্লাহ খাইরান
উত্তরমুছুন