আমি অনেকগুলো মানুষ দেখেছিলাম যারা আকণ্ঠ ডুবে থাকতো তাদের 'ক্যারিয়ারকে' কতটা 'জোস' করা যায় তা নিয়ে। আমি সত্যিকারের 'জোস ক্যারিয়ারওয়ালা' কিছু মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম যারা তাদের জীবনকে খুব মূল্যবান মনে করতেন। সবাই তাদের জীবনকে মূল্যবান মনে করে। আমিও করতাম। স্কুল-কলেজ জীবনে এই-সেই বই পড়ে দেশ-জাতি নিয়ে চিন্তা করা খুব স্বল্প সংখ্যক তরুণকে দেখেছিলাম যারা ভাবতো তাদের চিন্তাগুলো খুব দরকারি। তাদের কেউ কেউ স্পিন বলের মতন ঘুরতে ঘুরতে কনফিউশনিস্ট-অ্যাগনস্টিক হয়ে এখন একটা বাফারে পড়ে আছে। দেশ-জাতি তাদের কাছে তেমন কিছু পায়নি, পেয়েছে তাদের প্রেমিকারা। প্রেমিকাদের নামে রচনা হয়েছিলো গানের লিরিক, কিছু কবিতা। প্রেমিকাদের দেখাতেই হয়ত ফেসবুকে তারা রচেছে বিশাল কলেবরের শব্দসর্বস্ব পোস্ট যা আদতে তেমন কোন অর্থবহন করে না। তাদের মূল্যবান জীবন ভালো ইউনিভার্সিটির ভালো ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি পেরিয়ে ভালো চাকরি, লিঙ্কিং পার্কে-আয়রন মেইডেনের গান, বাসায় ফিরে মুভি দেখা, বুক খা-খা করে এমন কিছু ব্লগপোস্ট লেখাতে রূপ নিয়ে আছে। ওরা অনেক বুঝে, কেউ কিছু গেলতে গেলে উলটা বুঝিয়ে ছ্যাড়াব্যাড়া করে দেয়। ধর্মবিশ্বাসীরা অনেক ব্যাকডেটেড, না বুঝেই নাকি বিশ্বাস করে বসে থাকে যা ওরা পারেনা। ওরা ব্রিলিয়ান্ট ইঞ্জিনিয়ার/সরকারি কলেজে পড়া ডাক্তার তাই 'ধর্মের' কথা বলা 'লিমিটেড ভিশনের' বন্ধু/বড় ভাইদের বেইল নাই।
এমন দামী জীবনের অনেকেই বিদেশ গিয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছে। তাই এখন অধিকার পেয়েছে দেশটাকে নিয়ে 'সুশীল' মন্তব্যে ভরে দেয়ার। দেশ আসলে অনেক পিছিয়ে আছে, ভার্সিটিগুলা খারাপ, অমুক দল খারাপ, তমুকেরা ফাউল। এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই খুব অগভীর। সমস্যা থেকে দূরে বহুদূরে। এই দামী জীবনের মালিকেরা ক'মাস পর এখানে ওখানে বেড়ায়, ফেসবুকে ছবি আপলোড করে 'ট্রিপ টু অমুক' নাম দিয়ে।
এমন 'দামী জীবন' অনেকেরই ছিল। কত নামই তো মনে পড়ে, অনেকদিন পত্রিকা কাঁপিয়ে দিতো। খবর দেখতে গেলেই নাম শুনতাম। মরে যাওয়া দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আর শাহ কিবরিয়া, রাজনীতিবিদ আব্দুল মান্নান ভুইয়া, মীর শওকত আলী, প্রেসিডেন্ট জিল্লুর, লেখক হুমায়ূন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, কবি শামসুর রাহমানরা আমার চোখে-কানে অনেক পড়তেন। তারা এখন আর পত্রিকার পাতায় থাকে না। দামী জীবন সবারই ছিলো। জীবনটা শেষ হওয়া পর্যন্ত দামী ছিলো, এখন ইতিহাস। তাদের নিয়ে কেউ তেমন আবেগাপ্লুত হয়না আর।
আমাদের জীবনের এখন অনেক দাম। অনেক প্ল্যান। অনেক ভবিষ্যত। প্রতিটা মানুষই মনে করে তার আবেগ অনেক দামী, তার অনুভূতিরা অনেক দামী। অথচ প্রতিটি মানুষেরই আবেগ আর অনুভূতি একই রকম। প্রিন্স উইলিয়ামের বউয়ের প্রতি যে ভালোবাসা তা মতিন রিকসাওয়ালার বউয়ের প্রতি যে ভালোবাসা তার চেয়ে আহামরি কিছু না। দু'টি হৃদয়ের আবেগগুলোও একই রকম। দামী হবার মতন কিছু নেই। অমন অনেক প্রিন্স দুনিয়াকে জ্বালা দিয়ে বিয়ে করেছে, এখন তাদের চিহ্নও নাই। থাকে না। থাকার নয়...
অনেকগুলো মানুষের কথাও জানি, যারা জীবনকে দামী করেছেন। ঈমানের কালিমা মুখে নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে শহীদ হয়েছেন যে সাহাবী তার জীবনটা সত্যিকারের দামী। অল্প সময়ের ঈমানে বিপুল পুরষ্কার, সবুজ পাখি হবার গৌরব অনন্তকাল। অনেক দামী জীবনের মানুষকে জানি যারা মুক্ত করেছিলেন মানুষকে, ভেঙ্গেছিলেন রাজা-বাদশাহদের হাতে পরাধীনতার জিঞ্জির। মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মানবতাকে এনেছিলেন আল্লাহর দাসত্বের মাঝে। এমন অনেক দামী প্রাণের কথা জানি যারা জীবনভর কষ্ট করেছেন ইলমের জন্য, শিখিয়েছেন হাজার-লক্ষ মানুষকে। হাজার বছর পরেও তাদের নাম আমরা আজো রাহিমাহুল্লাহ বলে দু'আ করে উচ্চারণ করি।
কোন ধরণের দাম দিয়ে জীবনকে আমরা দামী করতে চাই? সে হয়ত আমাদের সবারই ভেবে নেয়া উচিত। সেদিন হয়ত দূরে নয় যখন আচমকা দেখা হবে মালাকুল মাওতের সাথে। শোয়ার ঘরে, বাসের উপরে, হাসপাতালের বেডে, খাবার টেবিলে সে সাক্ষাতের পরে আর জীবনে মূল্য জোড়ানো যাবে না। আল্লাহ সেদিনের আগেই যেন আমাদেরকে সফল হবার, মুক্তি পাওয়ার, সবুজ পাখি হবার জীবন দান করেন। দয়াময় আল্লাহ আমাদের জন্য যা সহজ করে দেন তা কেউ কঠিন করতে পারে না, তিনি যা কঠিন করে দেন তা সহজ করার সাধ্য কারো নেই। হে আমাদের রব, আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দিন।
* * * *
১২ মুহাররাম, ১৪৩৬ হিজরি।
০৬ নভেম্বর, ২০১৪ ঈসায়ী।
এমন দামী জীবনের অনেকেই বিদেশ গিয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছে। তাই এখন অধিকার পেয়েছে দেশটাকে নিয়ে 'সুশীল' মন্তব্যে ভরে দেয়ার। দেশ আসলে অনেক পিছিয়ে আছে, ভার্সিটিগুলা খারাপ, অমুক দল খারাপ, তমুকেরা ফাউল। এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই খুব অগভীর। সমস্যা থেকে দূরে বহুদূরে। এই দামী জীবনের মালিকেরা ক'মাস পর এখানে ওখানে বেড়ায়, ফেসবুকে ছবি আপলোড করে 'ট্রিপ টু অমুক' নাম দিয়ে।
এমন 'দামী জীবন' অনেকেরই ছিল। কত নামই তো মনে পড়ে, অনেকদিন পত্রিকা কাঁপিয়ে দিতো। খবর দেখতে গেলেই নাম শুনতাম। মরে যাওয়া দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান আর শাহ কিবরিয়া, রাজনীতিবিদ আব্দুল মান্নান ভুইয়া, মীর শওকত আলী, প্রেসিডেন্ট জিল্লুর, লেখক হুমায়ূন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, কবি শামসুর রাহমানরা আমার চোখে-কানে অনেক পড়তেন। তারা এখন আর পত্রিকার পাতায় থাকে না। দামী জীবন সবারই ছিলো। জীবনটা শেষ হওয়া পর্যন্ত দামী ছিলো, এখন ইতিহাস। তাদের নিয়ে কেউ তেমন আবেগাপ্লুত হয়না আর।
আমাদের জীবনের এখন অনেক দাম। অনেক প্ল্যান। অনেক ভবিষ্যত। প্রতিটা মানুষই মনে করে তার আবেগ অনেক দামী, তার অনুভূতিরা অনেক দামী। অথচ প্রতিটি মানুষেরই আবেগ আর অনুভূতি একই রকম। প্রিন্স উইলিয়ামের বউয়ের প্রতি যে ভালোবাসা তা মতিন রিকসাওয়ালার বউয়ের প্রতি যে ভালোবাসা তার চেয়ে আহামরি কিছু না। দু'টি হৃদয়ের আবেগগুলোও একই রকম। দামী হবার মতন কিছু নেই। অমন অনেক প্রিন্স দুনিয়াকে জ্বালা দিয়ে বিয়ে করেছে, এখন তাদের চিহ্নও নাই। থাকে না। থাকার নয়...
অনেকগুলো মানুষের কথাও জানি, যারা জীবনকে দামী করেছেন। ঈমানের কালিমা মুখে নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে শহীদ হয়েছেন যে সাহাবী তার জীবনটা সত্যিকারের দামী। অল্প সময়ের ঈমানে বিপুল পুরষ্কার, সবুজ পাখি হবার গৌরব অনন্তকাল। অনেক দামী জীবনের মানুষকে জানি যারা মুক্ত করেছিলেন মানুষকে, ভেঙ্গেছিলেন রাজা-বাদশাহদের হাতে পরাধীনতার জিঞ্জির। মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মানবতাকে এনেছিলেন আল্লাহর দাসত্বের মাঝে। এমন অনেক দামী প্রাণের কথা জানি যারা জীবনভর কষ্ট করেছেন ইলমের জন্য, শিখিয়েছেন হাজার-লক্ষ মানুষকে। হাজার বছর পরেও তাদের নাম আমরা আজো রাহিমাহুল্লাহ বলে দু'আ করে উচ্চারণ করি।
কোন ধরণের দাম দিয়ে জীবনকে আমরা দামী করতে চাই? সে হয়ত আমাদের সবারই ভেবে নেয়া উচিত। সেদিন হয়ত দূরে নয় যখন আচমকা দেখা হবে মালাকুল মাওতের সাথে। শোয়ার ঘরে, বাসের উপরে, হাসপাতালের বেডে, খাবার টেবিলে সে সাক্ষাতের পরে আর জীবনে মূল্য জোড়ানো যাবে না। আল্লাহ সেদিনের আগেই যেন আমাদেরকে সফল হবার, মুক্তি পাওয়ার, সবুজ পাখি হবার জীবন দান করেন। দয়াময় আল্লাহ আমাদের জন্য যা সহজ করে দেন তা কেউ কঠিন করতে পারে না, তিনি যা কঠিন করে দেন তা সহজ করার সাধ্য কারো নেই। হে আমাদের রব, আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দিন।
* * * *
১২ মুহাররাম, ১৪৩৬ হিজরি।
০৬ নভেম্বর, ২০১৪ ঈসায়ী।
it is very important things
উত্তরমুছুন