৪ ফেব, ২০১৪

ভ্রমণে বের হলে অনেক কিছু শেখা যায়

​ভ্রমণে অনেক অভিজ্ঞতা হয়। ভ্রমণে বের হয়ে অনেক রকমের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানের মানুষের সাথে পরিচয় হয়, আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্যকে দেখার সুযোগ হয়। না চাইলেও অন্যদের বিচিত্র আচরণগুলো 'বিনা প্রতিবাদ ও সমালোচনাতে' মেনে নিতে হয়; অনেকক্ষেত্রেই মানুষ বাইরে থাকার সময়টুকুতে সহজাত 'কুৎসা রটানোর' সুযোগ পায় না, এগুলোর ফলে 'ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার' সাথে তাদের পরিচয় ঘটে, পরিচয় হতে তারা বাধ্য হয়।

কয়েক বছর ধরে চাকুরিজীবনের দমবন্ধ এক লম্বা ছুটিহীন জীবনের মাঝে হাঁসফাঁস করছিলাম। আল্লাহ সুযোগ জুটিয়ে দেয়ার পরে বেশ ক'দিন অনেক জায়গা ঘুরে, অনেক মানুষের সাথে মিশে, অনেক অনেক ঘটনা পেরিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু শিখলাম। এই শেখা পয়েন্ট করে করে লেখার মতন না, বেশিরভাগই উপলব্ধিতে মিশে গেছে, যা পৃথিবীটাকে দেখার চোখটাকে আগের চেয়ে অনেক অন্যরকম করে বদলে দিয়েছে।

নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝেছি, তাত্ত্বিকভাবে অনেক কিছুই বুঝলেও সমাজে তার প্রয়োগ কত বেশি দুরূহ। হয়ত তাই আমি আগামীতে যারা 'কর্মী', যারা মানুষের সাথে মিশে তাদের সাথে কাজ করেছেন -- তাদের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা দিন-দিন বাড়তেই থাকবে। আমি উপলব্ধি করতে শিখেছি, এই সমাজের এই স্রোতে টাকার লোভে কত বেশি মানুষ অন্ধের মতন, উদভ্রান্তের মতন ছুটছে; তবু এর মাঝে কিছু মানুষ কল্পনাতীত ভালোবাসায় আল্লাহর বাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে এই সমাজকে বদলে দিতে চাইছেন। নতুন করে হতভম্ব হয়েছি তরুণদের মাঝে নির্লজ্জতা আর বেহায়াপনা কত গভীরে ঢুকে গেছে তার কিছু প্রদর্শনী দেখে; তবু বিপরীতে একদল মানুষের কথাও জানি, যারা আল্লাহকে ভয় করে, তাকে ভালোবেসে অন্য দুর্বার এক শক্তিতে এগিয়ে যেতে চায়।

মুসাফিরের অবস্থায় নিজের অসহায়ত্বকে টের পাওয়া যায় অনেক বেশি। মুসাফিরের জীবনের তো সবকিছুই অনিশ্চিত-- এই পথচলা, পৌঁছানোর সময়, যানবাহনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, সহযাত্রীর বিচিত্র আচরণ, খাবার হিসেবে কী জুটবে তার অনিশ্চয়তাসহ নিজের দুর্বলতাকে স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের চেয়ে বেশি কষ্টে থাকা মানুষদের দেখে আফসোস জাগে মানুষ হিসেবে অকৃতজ্ঞতার জন্য...

দুনিয়াতে তো আমরা মুসাফির হিসেবেই আছি, ভুলে যাই, বিভ্রম... শুধুই বিভ্রম... আমরা একেকটা মানুষ কতই না অসহায়। আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে আমাদের? কেউ নেই, কেউ থাকেও না... থাকতে পারেও না...


[৩১ জানুয়ারি, ২০১৪]