ঘটনা ১
আজকাল যার সাথেই দেখা হয়, সবার আগে প্রশ্ন করে, "ভাই, বিয়ে কবে করবেন" বা "কিরে, বিয়ে কবে তোর?" !!
এইতো সেদিন ভার্সিটির এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হলো, সালাম আর কুশলাদি বিনিময়ের পর সবার আগে প্রশ্ন,
-- "ভাই কি বিয়ে করেই ফেলেছেন?"
-- "না রে ভাই"।
-- "তাহলে কি শীঘ্রই দাওয়াত পাচ্ছি?"
আশ্চর্য প্রশ্নের সিরিজ আক্রমণ!! সেই ধকল সামলে কথাবার্তা বলতে বলতেই এক ভাইয়ের ফোন,
-- "ভাই যে সেদিন বললেন বিয়ে নিয়ে সিরিজে কোন আর দিবেন না। তার মানে কি বিয়েটা করে শীঘ্রই বিয়ের পরের সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখবেন?"
আবার বিয়ের টপিক চলে আসায় আমি প্রমাদ গুণলাম। বহু কষ্টে সেই আলোচনাকে অন্যদিকে নিয়ে ফোন রাখলাম। খানিক পরে ছোটভাইটিকে বিদায় দিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
তারপর ইন্টারনেটে ঢুকেই ফেসবুকে দু'জন মু'মিন ভ্রাতাকে দেখি বিবাহ নিয়ে সেই মাপের স্ট্যাটাস !!
একজন লিখেছেঃ
"নাতী নাতনীর নাম কি কি রাখা যায় সেটা নিয়ে আম্মা আজ অনেক কথা বলল । হে আম্মা, এভাবে গোঁফে তেল দেওয়া আর কতদিন !! এইবার একটা কাঁঠালের ব্যবস্থা করেন । "
অপর ভাইজানেরটা তো আরেক কাঠি সরেস!
"Morning শব্দটাকে ভুলে Marriage পড়ছি। কাহিনী কি? আরেকবার chemistry কে christianity পড়েছিলাম কারন তখন christianity নিয়ে কিছু পড়াশুনা,চিন্তাভাবনা করছিলাম। তার মানে......
...............................................................................
কিছু কথাঃ
আমাদের আদু ভাই টাইপের সমাজে বিয়ের বয়স পিছাতে পিছাতে এখন কমপক্ষে তিরিশে গিয়ে ঠেকেছে। বাবা মায়েরা সন্তানদের ক্যারিয়ার চিনেছেন, সমাজে টাকাপয়সার অভাব চিনেছেন, স্ট্যাটাস ঠিকই চিনেন, কিন্তু চিনেন না সন্তানদের শারীরিক আর মানসিক অভাবের কথা। সেক্সুয়াল ইন্সট্রুমেন্টালাইজেশনের এই সমাজে চারিদিকে নারীদেহের ছবি, নারীকে পণ্য করে বিলবোর্ড থেকে শুরু করে টেলিভিশনের পর্দার প্রতিটি কমার্শিয়ালে প্রচার করা হয়। সবাই এখন স্কুলে থাকতেই ভাবতে থাকে তার একজন সঙ্গী/সঙ্গিনী প্রয়োজন। রেডিও-টিভি, পত্রিকাতে সয়লাব এই পণ্য দিয়ে। তখন হয়ত সে মাত্র ১৫ বছর বয়সের। তার সামনে আদৌ কোন সম্ভাবনা নেই বিয়ের। পরিবার চরম উদাসীন। তার উপরে নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা। ফলশ্রুতিতে সবখানেই এখন ঢুকেছে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের বীজ। কোচিং-এ, ক্লাসে, মোবাইল ফোনে প্রেমের মাদক ঢুকে পড়ে -- পরিণতি কারোই সুখের হয়না। নেই যথেষ্ট মোটিভেশন।
এই আলাপ অনেক বড় করতে পারতাম। করছিনা কারণ অন্য একটা বিষয়ে ইদানিং ভাবছিলাম, তা হলো, ঠিক এই মূহুর্তে এখন কী উপায়? আমাদের এই সংস্কৃতির আগ্রাসনকে আজই আমরা ঠেকাতে পারবো না। হলিউড আর বলিউডের অজস্র নোংরামির তোড়ে ভেসে যাওয়া সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে যারা ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে চান -- তাদের দরকার এইসব সংস্কৃতিকে শুধু উপেক্ষা করতে চাওয়ার চেষ্টা না, বরং সুন্দর সংস্কৃতিকে আন্তরিকভাবে গড়ে উঠার অনুপ্রেরণা দেয়া। এই প্রয়োজন আজ অত্যন্ত বেশি। ভিন্ন স্রোতের সৃষ্টিশীলতা নিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের অনুপ্রেরণা দেয়া তাই আবশ্যক আমাদের।
আর এই তরুণ প্রজন্মের মাঝে যারা বিয়েপাগলা ছোটভাই আমার, অন্তত ২২ বছরের বেশি বয়স যাদের -- এই বিষয়টা নিয়েই তাদের আমি খুবই ভালোবাসি। ওরা চুপেচাপে, চিপায় চাপায় হারাম সম্পর্ক প্রেম করতে উন্মুখ না, বরং সম্ভাব্য বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বড় ভাইদের সাথে আলাপ করে নিয়মিত। তাদের বাসায় এখনো বুঝেনা , কারণ আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট আমাদেরকে আল্লাহর দাস থেকে সমাজের দাস করেছে। বাবার হোটেলে খেয়ে বড় হওয়া ছেলেটিকে প্রেম করে অন্য মেয়েকে খাওয়াতে খরচ বাবা-মায়েরা দেয় সজ্ঞানে অজ্ঞানে, কিন্তু তাকে ঘরে আনতেই শত-সহস্র বিপত্তি। এই ছেলেরা প্রস্তুতি নেয় মানসিকভাবে বিয়ের ব্যাপারে, তারা দায়িত্বশীল হচ্ছে, আর নিজেদের শূণ্যতা জানে, আল্লাহকে ভয় করে বলেই ঘুরে ফিরে বিয়ের আলোচনা করে। হালাল সম্পর্কটার স্বপ্ন দেখে হারামকে ভয় করে, নিজেদের আত্মিক আর বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়তে তারা ব্যস্ত -- আমি কেনইবা ভালোবাসবো না এমন ছেলেগুলোকে? এমন মানুষদেরকে তো আন্তরিক ভালোবাসতে হয়, যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন!
আল্লাহ তাদের স্বপ্ন পূরণ করে দিন, তাদেরকে সুন্দর জীবনসঙ্গিনী দান করুন যারা তাদের হাত ধরে এই দুনিয়ার পরীক্ষাগুলোতে ধৈর্য্য আর সংযমের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে পারে, যেন আখিরাতের অনন্ত জগতে হাত ধরেই হেঁটে যেতে পারে ফিরদাউসের বাগানে, আদনের পথে পথে স্নিগ্ধ আলোতে। আল্লাহকে যারা ভয় করে, তারা তো পার্থিব জীবনের ক্ষুদ্র মিছে প্রেমকাহিনী গড়তে বন্ধন গড়ে না, তাদের চোখে থাকে অনন্তের হাতছানি, থাকে হৃদয়ভরা এমন ভালোবাসা যা আল্লাহকে ভালোবাসার আলোকে উদ্ভাসিত। এই ভালোবাসা সংসারের অভাব, টানাপোড়েন, কঠিন সময়গুলোতেও হারিয়ে যায় না, এর শেকড় গভীরে, এর সৌন্দর্যও অতুলনীয়...
বিয়ে নিয়ে কিছু লেখাঃ
বিয়ে কি এমনই হওয়া উচিত?
বিবাহ সমাচার
বিয়ে না করতে পারলে সাওম?
আমার বয়স উনিশ বছর, আমি বিয়ে করতে চাই, কিন্তু আমার মা এটা চায়না : কী করণীয়