২ সেপ, ২০১২

দাওয়াতের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো

ক'দিন আগে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হলো একই দিনে। সেদিন সন্ধ্যায় অফিসের বসের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলাম, উনি কথার প্রসঙ্গে বললেন, একটা হাদিসে তিনি পড়েছিলেন, একজন মানুষকে আল্লাহর কাছে যে কয়টা বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তার কয়েকটা হলো, কীভাবে অর্থ উপার্জন করেছে, উপার্জিত অর্থ কীভাবে ব্যয় করেছে, যৌবন কীভাবে অতিক্রম করেছে...

এটুকু শুনে ড্রাইভার বলে উঠলো, "যদি হিসাব দিতে না পারি?"।
উনি বললেন, "তাহলে তো যা হবার সেটাই হবে, আল্লাহ ভালো জানেন"।
ড্রাইভার বললো, "এত কিছু না, নামায কালাম করতে হইবো, এইডা ঠিক। অন্যসব কথাই একেকটা মৌলভী একেক কথা কয়"।
- সবাই একই কথা বলে, আলাদা ভাষায় বলে।
- নাহ। আমাগের কাকরাইল মসজিদে যাই, সেইখানে তো নামাযের পরে মোনাজাত ধরেনা, সব মসজিদগুলানে হাত তুইলা দোয়া করনই লাগবো। কোথায় আছে যে মোনাজাত হাত তুইলা করতে হইবো।
- দোয়া তো হাত তুলেই করে। নামাজের পরে ভালো সময়
- ওই তো। একেক মৌলভীরা একেক কথা কয়। কেউ কয় এইটা ছিলনা, কেউ এইটা ছাড়া করবো না।

একজন ড্রাইভারের কাছে *মৌলভীদের* কথাকে দ্ব্যর্থক, ভিন্ন মনে হয়েছে কারণ একটা মোনাজাতের হাত তোলা নিয়ে *মৌলভীদের* ভিন্ন ভিন্ন বিচিত্র অবস্থান নিয়ে সে সন্দেহগ্রস্ত। এমনকি সেদিন আমাকে আরো একটা ফোন কল পেতে হয়েছে যেখানে এই ভিন্ন ব্যাখ্যা ও আরেকজনকে ভুল বলার কারণে সেই আমজনতা কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলো।


আমি একজন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিক্ষানবীস মুসলিম। আমি নিজেও জানি, ইসলাম সমস্ত স্কলারদের চিন্তার বৈচিত্র্যের সমন্বয়। তাদের প্রায়োগিক ব্যাখ্যাতে ভিন্নতা থাকতেই পারে, থাকাই স্বাভাবিক। এই বৈচিত্র্যতাকে গ্রহণ করাতেই একেকটা জ্ঞানের গভীরতা ও বিষয় একেকরকম। একেকজন একেক বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছেন, তাদের গড়ে ওঠার পরিবেশও ভিন্ন। কিন্তু সবশেষে সবাইই 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' এর অ্যাপ্লিকেশন অন্তরে গেঁথে দেয়া শেখান।

এরকম ড্রাইভারদের মতন সাধারণ লোকগুলো যারা ইসলামের কিছুই জানেনা, তাদের কাছে অনেক লোক (ইসলাম জানা ভাবসম্পন্ন) মোনাজাতে হাত তোলার মতন বিষয়ে অপরদের ভুল চিহ্নিত করে নিজেদের *শ্রেষ্ঠত্ব ও সঠিকতা* জাহির করে। এমন মানুষেরা আরো কত-শত ফিকহ সংক্রান্ত বিষয়ে স্কলারদের ব্যাখ্যার ভিন্নতাকে (যা সমস্ত স্কলাররা স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেন সেটাকে) ইসলামের বিতর্কের বিষয় বানিয়ে একটা দলে ভিড়ে অপরদের নামে কুৎসা রটিয়ে সাধারণ একদম কিছু না জানা হালকা ঈমান সম্পন্ন মানুষদের বিভ্রান্ত করেন -- ফলে তারা ইসলাম থেকে আরো দূরে সরে যায়। তখন একটা জিনিস আমার মনে হয়, যারা ইসলামের কথা বলে, তাদের হিসাব কতটাই না কঠিন হবে।

কুরআন না, সুন্নাহ না, ফিকহ সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় ভিন্নতা দেখা যাওয়ায় কেউ যদি অন্য একটা সংগঠন, দাওয়াহ আন্দোলনকে ভুল প্রমাণিত করায় লেগে যান, তাহলে যিনি কিছুই জানেন না এইসব ব্যাপারে তিনি বিভ্রান্ত হন। ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে এই বিদ্বেষ প্রচারের ফলে প্রকারান্তরে ইসলামকেই বিভ্রান্তিকর, অস্বচ্ছ হিসেবে উপস্থাপন করেন আমাদেরই কিছু মানুষ। এভাবে সাধারণ মানুষদের ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার মহান পাপটা করে থাকেন তারা।

যারা একটু হলেও জানেন, তারা যেন এই ব্যাপারটাতে খুব সাবধানে থাকি। সেদিন আমি নিজেই দুই থেকে তিনজন ভিকটিমকে পেলাম, যারা এরকম কিছু নরাধমের কাছে ইসলাম বুঝতে গিয়ে উল্টা বুঝে ফিরে এসেছেন। সাবধান বাণী!!! আমাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। নিশ্চয়ই আল্লাহর হিসাব হবে খুব সুক্ষ্ম। নিজের দলের/মতের/গোত্রের/সংগঠনে লোক ভিড়াতে গিয়ে ইসলামের একমাত্রিক অপব্যাখ্যা করে কাউকে কনফিউজড করলে -- তার দায় ঘুরে ফিরে আমাদের উপরে পড়বেই।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার তাওফিক দিন, আল্লাহ আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখান, আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে এক উম্মাহতে পরিণত করে দিন যারা হবে ভাই-ভাই - এক দেহের মতন, আল্লাহ আমাদের সহনশীলতা বাড়িয়ে দিন, আল্লাহ আমাদের সবাইকে কেবলমাত্র তারই সন্তুষ্টির জন্য কাজ করার তাওফিক দিন। নিশ্চয়ই আল্লাহর দয়া ছাড়া আমাদের মুক্তির কোন সুযোগ নেই, তিঁনিই আমাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক এবং সমস্ত ক্ষমতা কেবল তাঁরই হাতে।

৩টি মন্তব্য:

  1. Very very grateful to u for such important post...
    May Allah help ur honest wishes...

    উত্তরমুছুন
  2. আমাদের মসজিদের ইমাম খুব সুন্দর একটা কথা বলেছিলেন। যখনি দেখবে কোন মৌলবি তার সমস্ত সময় এবং শক্তি ব্যায় করছেন অন্যদের বদনাম করতে, তখনি মনে করবা এখন পালানোর সময় হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. এখন আমাদের এসব ভুলে এক হওয়ার সময়। এগুলো শয়তান আমাদের সামনে বড় করে দেখায়। একসময় বিতর্ক এমন পর্যায়ে গড়ায় যে ঈমান হারা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

    উত্তরমুছুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে