৮ এপ্রি, ২০১৪

স্যাডনেস ইজ... SADNESS IS...

​​ছেলেবেলার এক বন্ধু এখন ডাক্তার। তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ঢাকার এক হাসপাতালে। খানিক পরেই ফোন পেলাম আরেক সহপাঠী অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছে। অগত্যা ছুটে গেলাম, এক্সরে করে দেখা গেলো পায়ের হাড় দু'টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেছে। ওর আব্বা-আম্মা আর স্ত্রীর  কান্নাকাটি, হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। বাইরে চেয়ারে বসে থেকে দেখলাম কয়েকজন বৃদ্ধা হুইলচেয়ারে বসে আছেন, মলিন মুখ, চোখে শূণ্যতা তাদের। নাকে স্পিরিটের গন্ধ, কানে কান্নার শব্দ, চোখের সামনে অনেকজন রোগী... অস্থির এক অসহায়ত্ব!

ডাক্তার বন্ধুটির সাথে দেখা হবার পরেই বলছিলো ইদানিং 'মৃত্যু' নিয়ে ওর 'ডিসেনসিটাইজড' হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগার কথা নিয়ে-- খুব সহজেই নাকি তার সিনিয়রদের বলে "আজকে কী হইসে জানেন স্যার? পেশেন্টটা মরেই গেলো"... কিন্তু দীর্ঘকালের বন্ধুত্বের সুযোগে আমি জানি ওর অন্তরটা খুব সুন্দর। মৃত্যু নিয়ে এই নির্বিকারতা অনুভব করে ওর খারাপ লাগছে কারণ এই মৃত্যু নিয়েই একসময় অনেক আলাপ করতাম আমরা, সেই কিশোরবেলাতে... হয়ত পেশাগত কারণে ভয়াবহ আর কষ্টময় ঘটনা "মৃত্যু"র সাক্ষী হতে হতে তার কাছে সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কাছে তো তা সহজ হয়নি। আমার কাছে হাসপাতালের ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে বারান্দায় লাইন ধরে পড়ে থাকা মানুষগুলোর চেহারায় দেখে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হতে থাকে খুব। অপরাধবোধ আর খারাপ লাগায় কেমন ছোট্ট হয়ে যাই নিজের কাছেই...


আজকে একা একা অনেকক্ষণ এই রোগীদের মাঝে থেকে হঠাৎ মনে পড়ে ফেসবুকে দেখা ঢংসমৃদ্ধ ছবিগুলো যাতে লেখা থাকে SADNESS IS... আসলেই! আমরা কতই না স্যাড হতে পারি রাত-দিন! প্রবল নিয়ামত ভোগ করা আমাদের 'স্যাডনেস' কতই না হেঁয়ালী হয়ে থাকে! আমাদের জীবনে পরীক্ষা কার না হয়! কিন্তু "কেমন আছো?" প্রশ্নটার উত্তরে "আলহামদুলিল্লাহ" বলতে কেমন সংকোচ করি যেন! আল্লাহ রহম করুন যেন এমন অকৃতজ্ঞতা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।

বাসায় ফেরার পথে রাস্তার একটা 'ডিভাইডারের' উপরে একটা পিচ্চি মেয়েকে করুণ মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আশেপাশে কেউ নেই, হয়ত ওকে আদর করে মুখ ধুইয়ে, সুন্দর পোশাক পরিয়ে দেয়ার সুযোগ বা সঙ্গতি নেই তার বাবা-মায়ের... আদৌ হয়ত বাবা-মা নেই, কে জানে! কিন্তু তারই খানিকক্ষণ আগে একটা 'কমিউনিটি সেন্টারের' সামনে দিয়ে আসার সময় নানান রঙের আলোতে ঝিলমিল একগাদা তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি দেখেছিলাম... এই অল্প সময়ের মাঝেই এই চরম দুই বৈপরীত্য আমার বুকের মাঝে কষ্টবোধ জাগায়, সামলাতে পারিনা ঠিক। আল্লাহকে স্মরণ করলাম সীমাহীন নিয়ামাতে থাকার সৌভাগ্য দান করার জন্য...

শুকরিয়া করলে তো আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিবেন বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন আল্লাহ, তবু কেন পারিনা? একটা খুব সুন্দর দু'আ শিখেছিলাম, "আল্লাহুম্মা আ'ইন্নি আলা যিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা"... আল্লাহ আমাদেরকে তার শোকরগুজার বান্দা হিসেবে কবুল করুন। নিশ্চয়ই সমস্ত ক্ষমতা কেবলই আল্লাহর, আমরা সবাই আল্লাহর কাছেই মুখাপেক্ষী, তিনিই আমাদের উত্তম অভিভাবক। আল্লাহ আমাদের দয়া করুন, ক্ষমা করুন।

[০৫ এপ্রিল, ২০১৪]