ছোটবেলায় মনটা আমার খুব কোমল ছিলো, লেখকদের কথায় খুব প্রভাবিত হতাম। 'লা
মিজারেবল' টাইপের বই পড়ে জাঁ ভালজাঁর জন্য কেঁদেছিলাম, 'হ্যাঞ্চব্যাক অফ
নোতরদাম' পড়ে কোয়াসিমোডোর জন্যেও চোখ ভিজেছিলো। আকুল হয়ে কেঁদেছিলাম নসীম
হিজাযীর 'ভেঙ্গে গেলো তলোয়ার', 'আঁধার রাতের মুসাফির', 'সীমান্ত ঈগল' পড়ে।
বই পড়ার জন্য একসময় মন ছটফট করতো, দু'দিন ছুটি পেলে বই পড়ার মতন না থাকলে
খুব কষ্ট হতো। ক্লাস ফাইভের টার্ম ফাইনালের পরে একবার 'শার্লক হোমস
রচনাসমগ্র' গিলে শেষ করেছিলাম সপ্তাহের মধ্যেই। প্রায় দু'দশক পেরিয়ে এখনো
ছুটি আসে জীবনে, হঠাৎ খেয়াল হয় বই কি আছে সাথে? এখন পূজার সাথে ঈদের ছুটি
মিলে বড় ছুটি পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ, গত ৫/৬ মাসে হাজার হাজার টাকার বই কিনে
চোখের সামনে রেখে চোখের ক্ষুধা মিটিয়েছি, মনের কেন যেন আমার ক্ষুধামন্দা,
প্রায় প্রতিদিন স্পর্শ করার পরেও পড়া হচ্ছেনা বইগুলো।
ছোটবেলার কথা মনে পড়লো আজ, বই না থাকলেও তখন হাতের সামনে ডায়েরি পেলে তাতে প্রতি পাতার নিচে লেখা 'বাণী' পড়ে ফেলতাম। সেখানেই একদিন পড়েছিলাম, "যে নদীর গভীরতা বেশি, সে নদীর শব্দ কম"; আমার ব্যক্তিগত ডায়েরিতেও খুব সম্ভব কালো জেল কালির পেন দিয়ে লিখে রেখেছিলাম এটা। কম কথা বলতাম, চাপা স্বভাবের ছিলাম, চিতকার চেঁচামেচি ভালো লাগতো না; তাই হয়ত এটা অনেকটাই নিজেকে অনুপ্রেরণা দিতে চেয়েছিলাম। অনেক বছর ধরে আমার এভাবে চিন্তা করার বিষয়টা মনে ছিলো না, ভুলেও গিয়েছিলাম যেন। সেদিন একটা কথা পড়লাম সুন্দর,
# "যারা কথা বলে তারা জানে না, যারা জানে তারা কথা বলে না।"~ প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক লাও-যু
কথাটা শাব্দিক অর্থে ধরলে কথাটা অর্থহীন লাগে, কিন্তু এতে আমি দারুণ চিন্তার খোরাক পেয়েছিলাম, চিন্তা করে আমার খুব ভালো লেগেছিলো। আসলে, চুপ থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়, সবার কথা-আচরণ-কাজ অবলোকন করা যায় -- সবকিছুকে উপলব্ধি করা যায়। নিজেদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় পাওয়া যায়।
এই প্রযুক্তির যুগে, মোবাইল-টেলিভিশন-ইন্টারনেটের চাপে পিষ্ট মানুষদের চিন্তা করার সময় এমনিতেই কমে যায়। খুব প্রয়োজন নিজেদের জন্যই কথা কম বলা। উপলব্ধির জন্য সময় পেতে হয়। জ্ঞান অর্জন এবং তাকে বুঝতে পারা -- দু'টো তো আর একই জিনিস না। তাছাড়া, চুপ থাকার (অনর্থক কথা এড়িয়ে যাওয়ার) সবচাইতে শক্তিশালী জিনিস আমার মনে হয়েছে জেদ বাড়ে।
জীবনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রতি লেগে থাকা খুবই দরকার। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সাফল্যের জন্য আমার কয়েকটা শর্ত আবশ্যক মনে হয়েছে তা হলো, সেই লক্ষ্যটির কথা বলে নিজের ভেতরের আর্তিটাকে হালকা করে না ফেলা। জেদ চেপে রাখতে হলে অপ্রয়োজনীয় কথা কম বলা প্রয়োজন, লক্ষ্যটির উপরে ফোকাস করা অর্থাৎ লক্ষ্যস্থির করা তাহলে সম্ভব হয়।
এতক্ষণ তো নানান কথা বললাম। এমন প্রসঙ্গে পৃথিবীর সবচাইতে জ্ঞানী মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষটা জানিয়ে দিয়েছিলেন কিছু অসাধারণ বিষয়, যেন আমি/আপনি একদিন পড়ি, নিজেদের জীবনের দিকে তাকিয়ে কল্যাণ অর্জন করি... আমাদের জন্য যার প্রাণ কাঁদতো সেই প্রিয় মানুষটির শাফা'আত যেন আল্লাহ আমাদের জীবনে দান করেন আখিরাতে...
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
♥ “নিস্প্রয়োজন কথা ও কাজ বর্জন মানুষের দ্বীনদারীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে।” [তিরমিযী]
♥ “আল্লাহর স্মরণ ও তার সম্পর্কে কিছু বলা ছাড়া কথা বাড়িও না, কেননা আল্লাহর স্মরণ ও তার সম্পর্কে কিছু কথা বলা ছাড়া কথা বাড়ানো মনকে কঠিন বানিয়ে দেয়। মনে রেখো যার মন কঠিন, সেই আল্লাহর কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত।" [তিরমিযী, বায়হাকী]
১১ অক্টোবর, ২০১৩
ছোটবেলার কথা মনে পড়লো আজ, বই না থাকলেও তখন হাতের সামনে ডায়েরি পেলে তাতে প্রতি পাতার নিচে লেখা 'বাণী' পড়ে ফেলতাম। সেখানেই একদিন পড়েছিলাম, "যে নদীর গভীরতা বেশি, সে নদীর শব্দ কম"; আমার ব্যক্তিগত ডায়েরিতেও খুব সম্ভব কালো জেল কালির পেন দিয়ে লিখে রেখেছিলাম এটা। কম কথা বলতাম, চাপা স্বভাবের ছিলাম, চিতকার চেঁচামেচি ভালো লাগতো না; তাই হয়ত এটা অনেকটাই নিজেকে অনুপ্রেরণা দিতে চেয়েছিলাম। অনেক বছর ধরে আমার এভাবে চিন্তা করার বিষয়টা মনে ছিলো না, ভুলেও গিয়েছিলাম যেন। সেদিন একটা কথা পড়লাম সুন্দর,
# "যারা কথা বলে তারা জানে না, যারা জানে তারা কথা বলে না।"~ প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক লাও-যু
কথাটা শাব্দিক অর্থে ধরলে কথাটা অর্থহীন লাগে, কিন্তু এতে আমি দারুণ চিন্তার খোরাক পেয়েছিলাম, চিন্তা করে আমার খুব ভালো লেগেছিলো। আসলে, চুপ থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়, সবার কথা-আচরণ-কাজ অবলোকন করা যায় -- সবকিছুকে উপলব্ধি করা যায়। নিজেদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় পাওয়া যায়।
এই প্রযুক্তির যুগে, মোবাইল-টেলিভিশন-ইন্টারনেটের চাপে পিষ্ট মানুষদের চিন্তা করার সময় এমনিতেই কমে যায়। খুব প্রয়োজন নিজেদের জন্যই কথা কম বলা। উপলব্ধির জন্য সময় পেতে হয়। জ্ঞান অর্জন এবং তাকে বুঝতে পারা -- দু'টো তো আর একই জিনিস না। তাছাড়া, চুপ থাকার (অনর্থক কথা এড়িয়ে যাওয়ার) সবচাইতে শক্তিশালী জিনিস আমার মনে হয়েছে জেদ বাড়ে।
জীবনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রতি লেগে থাকা খুবই দরকার। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সাফল্যের জন্য আমার কয়েকটা শর্ত আবশ্যক মনে হয়েছে তা হলো, সেই লক্ষ্যটির কথা বলে নিজের ভেতরের আর্তিটাকে হালকা করে না ফেলা। জেদ চেপে রাখতে হলে অপ্রয়োজনীয় কথা কম বলা প্রয়োজন, লক্ষ্যটির উপরে ফোকাস করা অর্থাৎ লক্ষ্যস্থির করা তাহলে সম্ভব হয়।
এতক্ষণ তো নানান কথা বললাম। এমন প্রসঙ্গে পৃথিবীর সবচাইতে জ্ঞানী মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষটা জানিয়ে দিয়েছিলেন কিছু অসাধারণ বিষয়, যেন আমি/আপনি একদিন পড়ি, নিজেদের জীবনের দিকে তাকিয়ে কল্যাণ অর্জন করি... আমাদের জন্য যার প্রাণ কাঁদতো সেই প্রিয় মানুষটির শাফা'আত যেন আল্লাহ আমাদের জীবনে দান করেন আখিরাতে...
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
♥ “নিস্প্রয়োজন কথা ও কাজ বর্জন মানুষের দ্বীনদারীকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে।” [তিরমিযী]
♥ “আল্লাহর স্মরণ ও তার সম্পর্কে কিছু বলা ছাড়া কথা বাড়িও না, কেননা আল্লাহর স্মরণ ও তার সম্পর্কে কিছু কথা বলা ছাড়া কথা বাড়ানো মনকে কঠিন বানিয়ে দেয়। মনে রেখো যার মন কঠিন, সেই আল্লাহর কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত।" [তিরমিযী, বায়হাকী]
১১ অক্টোবর, ২০১৩
আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। সুন্দর লিখেছেন।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন