মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি। অন্যেরা যখন তা ভুলে থাকে, তখন মুসলিমরাই সেই প্রতিনিধির দায়িত্বধারী। মজার ব্যাপার হলো, এই মুসলিমদের মধ্যে অল্প কিছুই সচেতন মুসলিম। এই সচেতনদের মাঝে অনেকেরই রয়েছে 'গ্রুপিং' মেন্টালিটি। নিজেদের 'বিশুদ্ধ' মনে করার বিভ্রম এবং অন্যদের 'অশুদ্ধ' মনে করে তাদের থেকে দূরে থাকার এক বিচিত্র বিশ্বাস ও সংস্কৃতি বেশিরভাগে 'গ্রুপের' লোকদের মাঝে বিরাজমান।
সংকীর্ণতার চর্চা করতে করতে নিজেদেরকে বিশাল এই পৃথিবী ও সৃষ্টিজগতের স্রষ্টার প্রতিনিধি থেকে সংকীর্ণমনা খুঁতখুঁতে নেগেটিভ মেন্টালিটির কিছু মানসিক প্রতিবন্ধীতে পরিণত করে ফেলেছি আমরা আমাদেরকেই। তাইতো, নিজেদের 'ইসলাম পালন' নিজেদেরও উপকার করে করেনা, অন্য মুসলিমদের, অন্য ধর্মের লোকদের উপকার তো দূরে থাক। অন্যদের বিশ্বাস, অন্যদের সাথে মেলামেশা যখন এতই অপছন্দ ও ঘৃণার, তখন তারা কেমন করে জানবে আল্লাহ এত সুন্দর একটা জীবনবিধান পৃথিবীতে পাঠিয়ে রেখেছেন। শেষমেষ, এসব বিশুদ্ধতাবাদী মুসলিমরা আত্মতুষ্টি পাওয়ার চেষ্টাতেই পৃথিবীর জীবনটা পার করে ফেলে। তাদের 'বিশুদ্ধ' ও সহীহ চিন্তাধারার অহং তাদের ভয়াবহ মানুষে পরিণত করে চলেছে। নতুন এই ভয়ংকর রোগ এখন বাংলাদেশের মাঝে ছড়িয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।
আবার, এই স্রোতে গা না ভাসিয়ে হৃদয়টাকে অনেক বড় করে চলা মানুষও কম নেই। হয়ত তাদের অনেক কটাক্ষ শুনতে হয়, তাদের অনেক বেশি জ্বালা ও যন্ত্রণা সইতে হয় সবখান থেকেই। মুসলিম নামের মানুষগুলোর কাছ থেকেও, অমুসলিমদের কাছ থেকেও। ইসলাম যে ভালোবাসার, শান্তির তা ভুলে যেতে বসেছি আমরা। ইসলাম কেবলমাত্র প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই কঠোর এবং সেটাও সমাজে শান্তি আনয়নের জন্য। তাই বলে অপরের সাথে আচরণের কঠোরতা এবং ভালোবাসাহীনতার, খুঁতখুঁতানি ও সন্দেহের এই বৈপরীত্যময় চর্চা এসেছে কাদের হাত ধরে?
ভালোবাসা, দয়া, রাহমা এগুলো সবই আল্লাহর গুণবাচক ব্যাপার। ভালোবাসলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। আপনি ভুল মানুষকে বিশ্বাস করতে পারেন, বিশ্বাস করে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কিন্তু বিশ্বাস একটি সম্পূর্ণ পজিটিভ বিষয়। কেবলমাত্র সাহসী, সৎ লোকেরাই বিশ্বাস করতে পারে-- হোক তা যেমনই বিশ্বাস।
ঈমানে রোগ লেগে থাকা লোকেরা নিঃসংকোচে ভালোবাসতে পারে না, বিশ্বাস করতেও পারেনা। ঈমান আছে কিনা তা বুঝতে ভলিউমের পর ভলিউম বই ঘাঁটতে হয় না। এত কঠিন বিষয় আল্লাহ মানবজাতির প্রতি দান করেন নাই, তিনিই সমস্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মালিক। মুসলিমরা ভালোবাসতে পারে, অন্যের কষ্টকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে পারে, সহজেই মিশতে পারে, দয়া করতে পারে শত পৃষ্ঠার যুক্তিমার্কা আলোচনা ছাড়াই।
সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।
[০৭ অক্টোবর, ২০১৫]