(২১২)
কোন কিছু গড়ে তুলতে অনেকদিন সময় লাগে। ভাঙ্গতে চাইলে কিছুই প্রয়োজন হয়না। অনেক সময় একটু অসতর্কতার কারণেও অনেক কিছু ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়।
(২১৩)
মানুষ বড় অদ্ভুত। সে যখন জানে কেউ তার সফলতার প্রতি আশা করে, কেউ তাকে ভালোবাসে, কেউ তাকে মূল্য দেয়-- তখন সে প্রবলভাবে চেষ্টা করতে থাকে যেন তার কাজ অনেক সুন্দর হয়। ভালোবাসার অনুভূতি মানুষকে আত্মবিশ্বাস যোগায়। অন্যদিকে যখন সে বুঝতে পারে কোথাও তাকে অপছন্দ করা হচ্ছে, যখন সে সমালোচনার মুখোমুখি হয় অকারণেই, তখন সে এক ধরণের নির্বিকারতা অনুভব করে, তার আচরণ ও কাজ আরো বেশি কোমলতাবিবর্জিত হয়ে যায়, কখনো কখনো সে চায় ঐ ব্যক্তি তার কাজের সৌন্দর্যই আর দেখতে না পাক।
(২১৪)
আপনার জীবনের অপূর্ণতাগুলোই আপনার পার্থিব জীবনের পূর্ণতা। আপনার অপূর্ণতা,অপ্রাপ্তি,অশান্তি আপনাকে মনে করিয়ে দিবে আপনি এগুলোর অনুভূতিকে আখিরাতে চান না, ফলে জান্নাতের আকাঙ্ক্ষা আপনাকে আরো বেশি তীব্র হয়ে ধরা দিবে।
(২১৫)
আমরা যারা ভালো কাজের পরিকল্পনা করি, অথবা প্রতিদিন/সপ্তাহ/মাসের রুটিন তৈরি করি যেন সময় বাঁচিয়ে সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করে নিজেকে উন্নত করে ভালো কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া যায় --
তারা খুব কমই হয়ত লক্ষ্যপূরণ করতে পারি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রুটিন বা প্ল্যান অল্প ক'দিন গিয়ে আর সেভাবে আগায় না। তাই অনেকে নিয়মিত প্ল্যান করি, বারবার ফসকে গেলেও আরো করি কেননা রুটিন বা প্ল্যানবিহীন দিনগুলোর সময় খুবই নষ্ট হয় আর তেমন কোন কাজই হয় না।
(২১৬)
পরিকল্পনা করা বন্ধ করে দেয়া মানে নিজের পরাজয় নিশ্চিত করা। আমাদের প্রতিটি প্ল্যানমাফিক কাজ আমাদের আপাতত সফলতা না দিলেও অনেকদিন পরে জীবনের পেছনে তাকালে দেখা যায় সেই প্ল্যান করে কাজ করে এগিয়ে যাওয়া পরিশ্রমটুকু আমাদের এমন সব পথ খুলে দিয়ে এগিয়ে আসতে দিয়েছে যা অনেক অনেক বেশি সুন্দর অথচ প্রথম করা প্ল্যানিং-এর মানসিকতা ও বুদ্ধিতে আমরা জানতাম না নিজেকে আমরা এতদূর নিয়ে আসতে পারবো!
তাই কখনো রুটিন করা ও প্ল্যানিং করা বন্ধ করা উচিত নয় বরং নিয়মিত পরিকল্পনা করুন, পরিকল্পনার আপডেট করে আরো উন্নত করুন এবং প্রচেষ্টা করতে থাকুন। পথ দেখানোর মালিক আল্লাহ, তিনি আমাদের অনেক উত্তম গন্তব্যে নিয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ।
(২১৭)
কখনো কখনো শব্দের চেয়ে নৈঃশব্দ ভয়ংকর!!
(২১৮)
আমরা যাদের ভালোবাসি তাদেরকে মূলত নিজেদের অজান্তেই খুব বেশি অনুকরণ করে ফেলি। তাদের ভালোলাগা আমাদের কাছেও ভালোলাগা হয়ে যায়, তাদের প্রিয় জিনিসগুলো আমাদের কাছেও প্রিয় হয়ে ধরা দেয়। তাদের প্রিয় শব্দগুলো আমাদের প্রিয় হয়ে যায়, তাদের প্রিয় মানুষগুলোও আমাদের প্রিয় হয়। মানবিক ভালোবাসা অথবা ঐশ্বরিক ভালোবাসা উভয়ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে...
(২১৯)
কিছু মানুষ কোন খাবার খেতে সুস্বাদু লাগলেও 'মজাদার বা সুস্বাদু' না বলে বরং বলে 'সুন্দর খাবার'। তাদের কাছে পৃথিবীর সবই 'সুন্দর' আর 'পচা'!! ব্যাপারটা মজার! হিহি!
(২২০)
যতই সময় পেরিয়ে যায়, বুঝতে পারি আল্লাহ আমাকে যে পথে ঘুরিয়েছেন সেটা আমার পছন্দ করা পথের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি কল্যাণকর আর শান্তির। আলহামদুলিল্লাহ! হে আমাদের প্রিয় রব! আপনি সত্যিই ক্ষমাশীল, প্রেমময়, রাহমান।
(২২১)
প্রতিটি আলোক উৎস নিজেকে পুড়িয়ে অন্যকে আলো দেয়। মোমবাতি নিজেকে পোড়ায়; লন্ঠন পোড়ায় নিজের তেল, নিজের সলতে এবং নিজেকে নিঃশেষ করে অন্যকে আলো দেয়। আলো ছড়িয়ে দেয়ার, অন্যদের সাহায্য করার ব্যাপারটাই এমন। তখনই কেবল অন্যদের আলোকিত করা যায় যখন কেউ নিজেকে পোড়ায়। হয়ত, এই পুড়ে যাওয়ার মাঝে, আলোকউৎস হবার মাঝেই রয়েছে সার্থকতা। তবু এতটুকু নিশ্চিত, নিজেকে না পুড়িয়ে আলো ছড়ানো যায় না।
তবে সবাই আলো চেনে না, যারা আলোকে ভালোবাসে, যারা আলোর আকাঙ্ক্ষায় অধীর থাকে, তাদের কাছেই আলো হয় উপকারী শক্তি, প্রাণসঞ্চারক, আনন্দোদ্দীপক... তারা সেই আলোকে কাজে লাগাতে পারে।
অন্যদের কাছে আলো মানে স্রেফ আলো নামক কিছুমিছুমাত্র; আশাজাগানিয়া, ভালোবাসার কোন শক্তি নয়...
(২২২)
অমুক ফ্ল্যাটের ছেলেটা বুঝে না লাঙ্গল কিংবা পাওয়ার টিলারের মূল্য, চাষা বুঝে না জিআরই স্কোরে কী হয়, পাড়ার মস্তান বুঝে না কবিতা, স্টেশনের কুলিটা জানে না থ্রিজিতে কী এমন লাভ... তেমনি ফুল বাগানে সুন্দর, ফুল সুন্দর ফুলপ্রেমীর ঘরের ফুলদানিতে কিংবা ফুলে মুগ্ধ কোন নারীর খোঁপায়...
যে যার কদর বুঝে না, তার কাছে সেই জিনিসের মূল্য নেই। কেউ হয়ত যা পায় তা চায় না, যা পায় তা বুঝে না। উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে থাকলে তো লাভ নেই, মুক্তো থাকবে হারের মাঝে, সৌন্দর্যবর্ধনে, কারো প্রাণকে জুড়িয়ে দিতে।
চারিদিকে বেমানান সব মিল। অমিলের মাঝে মিলের প্রভাব, মিলের মাঝে অমিল। শান্তিপ্রেমীর অশান্তি আর অশান্তিপ্রেমীর শান্তি যেন একই রকম! বিচিত্রতা এই জগতে... ততোধিক বিচিত্র এই মানবগোষ্ঠী ও তাদের রুচি...