আজকে একটি বইয়ের ব্যাপারে লেখা প্রয়োজন মনে করছি যা এই সমাজে, এই সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইটির নাম "বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর" যা লিখেছেন শাইখ মির্জা ইয়াওয়ার বেগ। বিয়ে আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনের স্বপ্ন থাকে, একসময় সেটা আটপৌরে হয়ে যায়। নামকরণের দিক থেকে হিসেব করলে বইটি অসাধারণ হয়েছে এবং নামকরণ সার্থক হয়েছে। একজন মানুষ বিয়েকে স্বপ্ন হিসেবে কেমন করে, কী করে সুন্দর একটি বিয়ের দিকে আগানো যায় এবং বিয়ে যখন জীবনের একটা অংশ হয়ে যায় তখনো যে বিয়েকে নিজেদের উদ্যোগে কীভাবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ইসলামী জ্ঞানে ভাস্বর লেখক অল্প কথায় ছোট কলেবরে তার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে দাম্পত্য নিয়ে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এই বইটিতে।
বইতে লেখা 'প্রকাশকের কথা' থেকে একটি অংশ উদ্ধৃত করছিঃ
মির্জা ইয়াওয়ার বেগের জন্ম প্রাচ্যে, জীবনের একটা বড় অংশ তিনি পশ্চিমে কাটিয়েছেন। কর্পোরেট জগতের অনেক ডাকাবুকোর গুরু তিনি। ইসলামের আলোয় আলোকিত এই মানুষটি এমন একটা চশমা দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখেন যার জুড়ি নেই। আদর্শিক পা হড়কানো থেকে উদ্ভুত সমস্যাগুলোকে তিনি ঝানু ব্যবসায়ীর চোখ দিয়ে দেখেন, ব্যবচ্ছেদ করেন। এরপর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান সাধেন। আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি ইসলাম একটি দ্বীন -- পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এর ব্যত্যয় হলে জীবনে ঝামেলা আসবেই; আর সে সমস্যার সবচেয়ে সুষ্ঠু সমাধান ইসলামই দিতে পারে। আমাদের সমাজের একক-পরিবারের বাঁধগুলো যে আজ ভাঙ্গতে শুরু করেছে তা মেরামতের উদ্যোগ না নিলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে যেমনি শান্তি হারিয়ে যাবে, ভবিষ্যত প্রজন্মও বিপদের মুখে পড়বে।
বইটির পেছনের কাভারে বইটিকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখা আছেঃ
বিয়ের মতো অনবদ্য একটি আশীর্বাদ দুঃসহ অভিশাপে পরিণত হতে পারে যদি বিয়ের আগের ও পরের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা না হয়। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সাজানো দাম্পত্য জীবন শুধু স্বামী-স্ত্রীর উপরই নয় বরং গোটা সমাজের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বয়ে আনে। বিয়েকে পার্থিব জীবনের সুখ ও পরিপূর্ণতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়গুলো এই বইতে আলোচিত হয়েছে। একজন আন্তরিক পাঠক বইটি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে সুখী-সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সক্ষম হবেন, ইনশাআল্লাহ।
বইটির সূচির দিকে চোখ রাখলে বুঝতে পারবেন যে কেমন প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূচী
- ভূমিকা
- ইসলামে বিয়ে...
- বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়
- বিবাহিত জীবনকে সুখী করার উপায়
১) সুন্দর দাম্পত্য জীবনের বৈশিষ্ট্য কী?
২) দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার কি কোনো সূত্র আছে?
৩) একটি দাম্পত্য জীবনকে কীভাবে সফল করা যায়?
৪) অসুখী দাম্পত্য জীবনে কীভাবে সুখ ফিরিয়ে আনা যায়?
৫) মনের মানুষ বলতে কি কিছু আছে?
৬) সুখী দাম্পত্য জীবনের পেছনে কী কী বিষয় ভুমিকা রাখে?
৭) দাম্পত্য জীবনে বাবা-মা এবং শ্বশুর বাড়ির লোকদের কতটুকু জড়ানো উচিত?
৮) সাংসারিক জীবনে পরস্পরকে কীভাবে ছাড় দেওয়া যায়?
৯) মানুষ কখন তার বৈবাহিক জীবনের ব্যর্থতা বুঝতে পারে?
১০) একটা সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মূল দায়িত্ব কী? স্বামী ও স্ত্রীর জন্য কি এগুলো আলাদা?
১১) দাম্পত্য জীবনকে সুখী করার পেছনে মূল দায়িত্ব কার?
১২) ইন্টারনেটে পাত্র-পাত্রী পছন্দ ও বিয়ে!
১৩) সাত বছর পরে দাম্পত্য সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কুসংস্কার
১৪) সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বাচ্চাকাচ্চা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
১৫) জীবনসঙ্গীর কাছে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখার জন্য কী করা যেতে পারে?
১৬) তর্ক-বিতর্ক করা কি ভালো?
১৭) সংসার সুখী করতে টাকাপয়সা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৮) বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর কাজ কোনগুলো?
১৯) সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য কি ছোটখাটো মিথ্যা বলা যাবে?
২০) দাম্পত্য জীবনের সমস্যা নিয়ে কারও সাথে পরামর্শ করলে কি কাজে দেবে?
এছাড়াও বইটি থেকে কিছু চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করছিঃ
ভালোবাসা সৃষ্টি হয় সম্মান থেকে। আমরা এমন কাউকে ভালোবাসতে পারি না যাকে আমরা সম্মান করি না। তাই, স্বামী-স্ত্রী দু'জনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার হলো পরস্পরের ভালো গুণগুলোর প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেওয়া এবং ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেওয়া। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের আয়নার মতন, তারা যা দেখে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করলেও কেবল ভালো বিষয়গুলো স্মৃতিতে ধরে রাখে। যখন নতুন কোনো ছবি এই আয়নার সামনে আসে তখন তা স্মৃতিতে থাকা আগের ভালো ছবিগুলোর সাথে মিলিয়ে ভালোটা রেখে দেয়। একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছিল আমাদের বন্ধুদের ভালো গুণাগুলো যেন পাথরের উপরে খোদাই করে রাখি। আর তাদের ভুলগুলো বালিতে লিখি। একটি দীর্ঘদিন ধরে রয়ে যায় এবং অপরটি বাতাসের প্রথম ঝাপটাতেই উড়ে যায়। [মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
রোমান্টিকতার ধারণা থেকে আমরা জানি, প্রেম হচ্ছে শারীরিক আকর্ষণের অন্য একটা নাম মাত্র। সচরাচর এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। আপনি যেহেতু চান আপনার বিয়েটা এর চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হোক, সেহেতু সম্মানবোধকে বেশি গুরুত্ব দিন। এটাই পরবর্তী সময়ে সত্যিকার ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। ‘পড়ে যাওয়া’ নয় বরং ‘তৈরি হওয়া’। এর অর্থ, এমন একটি দাম্পত্য সম্পর্ক যেখানে বিয়ের ২৫ বছর পরও যতবার আপনি আপনার সঙ্গীর দিকে তাকাবেন, ততবার নতুন করে তার প্রেমে পড়বেন। ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া মানে চোখের চাহনি, ইশারা আর কিছু বিশেষ শব্দের মিশেলে তৈরি এমন এক নিজস্ব ভাষা, যে ভাষার ভাষী কেবল আপনারা দুজনা! [বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর, শাইখ ইয়াওয়ার বেগ]
অনুরাগ প্রকাশে কিছু পাগলামি করুন: জীবনসঙ্গীকে ফুল অথবা পছন্দনীয় কিছু উপহার দিন। কিন্তু তা কেবল জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে নয়। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে দিন-তারিখের এসব ছকবাঁধা জিনিস আজকাল আর কাউকে যত্ন করে মনে রাখতে হয় না, যন্ত্রগুলোই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। বরং সম্ভব হলেই উপহার দিন। সবসময় যে বড়ো উপহার দিতে হবে এমনও নয়; বরং উপহার দেওয়ার ভাবনাটাই মূল বিষয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে তোমরা উপহার দাও, কারণ তা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং একে অন্যকে উপহার দিন। যখন আপনি কিছু দিনের জন্য দূরে থাকেন, অথবা কদিন কাজে ডুবে থাকার কারণে মানসিকভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হয়—তখন উপহার দারুণ কাজ করে। উপহার সুন্দর দাম্পত্য জীবনকে জুড়ে রাখে আঠার মতো। আর হ্যাঁ, উপহারটি আপনার সঙ্গীকে একান্তে দিবেন। উপহারটিকে র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে, রঙিন ফিতে দিয়ে বেঁধে, সুগন্ধী লাগিয়ে একগুচ্ছ ফুলসহ তার হাতে তুলে দিন। ঘটনাটিকে স্মরণীয়, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও সৃজনশীল করুন। মনে রাখবেন, উপহারের বস্তুটি কিন্তু এখানে মুখ্য নয়, এখানে মূল হলো একটি স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া। উপহারটি এমন ব্যাগ ভরা কিছু হওয়ার দরকার নেই—যা সবার সামনে বের করে দেবেন। বরং এটা এমন কিছু হবে যা কেবল সে-ই পাবে। কোনো উপলক্ষ করে বা ঘটা করে কিছু করতে যাবেন না; বরং তাকে এমন সময় এমন কিছু দিন যা সে তখন আশা করেনি। উপহারটিই আপনার সঙ্গীর বিশেষত্ব প্রকাশ করে বলবে, ‘তুমি আমার বিশেষ' একজন। একই ঘটনা ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মনে রাখবেন, ছেলেরাও কিন্তু উপহার পছন্দ করে; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়েও বেশি। তাদেরকেও উদার মন নিয়ে উপহার দিন। [মির্জা ইয়াওয়ার বেগ, বিয়ে: স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
যখন ১০মিনিট কথা বলার পর দুজনের কারও আর বলার কিছু থাকে না; বরং একত্রে সময় কাটানো বলতে টিভির সামনে বসে থাকা, অথবা পত্রিকা পড়ায় রূপান্তরিত হয় তখন আপনি ধরে নিতে পারেন আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে রোগ ঢুকেছে। সুখী দাম্পত্য সম্পর্কে একে অন্যের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য একটা ব্যাকুলতা থাকে। কেবল আনুষ্ঠানিকতা বা দায়িত্ব পালনের জন্য নয়; আপনি বাইরে থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসতে চাইবেন, কারণ আপনার স্ত্রী আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। আপনি বাসায় এসেই আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়ে যাবেন না। পরস্পরকে সময় দেওয়াটা তখন শুধু অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য হবে না; বরং আপনি সত্যিকার অর্থেই তার কাছে থাকতে, তার সান্নিধ্য পেতে ভালোবাসেন—এজন্য সময় দেবেন। [মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
জীবনসঙ্গীকে সময় দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকে বঞ্চিত করে বন্ধুদের সাথে অকারণ আড্ডাবাজিতে সময় নষ্ট করা মোটেই উচিত নয়। এমন কিছু বিষয় তৈরি করে নেওয়া দরকার যা উভয়েরই পছন্দের। একে অন্যের কাজের মাঝে আনন্দ পাওয়ার বিষয়টা শিখে নেওয়া উচিত। সবধরনের ভালো কাজেই পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোনো বিষয় আপনার পছন্দ না হলে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই হতে হবে একান্তে; আগ্রহ ও যত্নের সাথে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা প্রাচীর গড়ে তোলা ঠিক নয়। এ সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। আবেগ অনুভূতির বিষয়ে একে অন্যের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া আবশ্যক। [মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
আমাদের সমাজের পরিবারগুলো সুন্দর হোক, শান্তিতে ভরে উঠুক প্রতিটি পরিবার। 'বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর' বইটি হয়ত এই অশান্ত সময়ে পারিবারিক জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে সমাজের মানুষদেরকে। বইটি বাংলা ভাষায় সবার জন্য সহজলভ্য করে দেয়ার জন্য 'সিয়ান পাবলিকেশন্সকে ' ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ তাদের এই সুন্দর উদ্যোগকে কবুল করুন এবং এই প্রকাশনার সাথে জড়িতে সবাইকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন।
আজকে একটি বইয়ের ব্যাপারে লেখা প্রয়োজন মনে করছি যা এই সমাজে, এই সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইটির নাম "বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর" যা লিখেছেন শাইখ মির্জা ইয়াওয়ার বেগ। বিয়ে আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনের স্বপ্ন থাকে, একসময় সেটা আটপৌরে হয়ে যায়। নামকরণের দিক থেকে হিসেব করলে বইটি অসাধারণ হয়েছে এবং নামকরণ সার্থক হয়েছে। একজন মানুষ বিয়েকে স্বপ্ন হিসেবে কেমন করে, কী করে সুন্দর একটি বিয়ের দিকে আগানো যায় এবং বিয়ে যখন জীবনের একটা অংশ হয়ে যায় তখনো যে বিয়েকে নিজেদের উদ্যোগে কীভাবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ইসলামী জ্ঞানে ভাস্বর লেখক অল্প কথায় ছোট কলেবরে তার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে দাম্পত্য নিয়ে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন এই বইটিতে।
বইতে লেখা 'প্রকাশকের কথা' থেকে একটি অংশ উদ্ধৃত করছিঃ
মির্জা ইয়াওয়ার বেগের জন্ম প্রাচ্যে, জীবনের একটা বড় অংশ তিনি পশ্চিমে কাটিয়েছেন। কর্পোরেট জগতের অনেক ডাকাবুকোর গুরু তিনি। ইসলামের আলোয় আলোকিত এই মানুষটি এমন একটা চশমা দিয়ে দুনিয়াটাকে দেখেন যার জুড়ি নেই। আদর্শিক পা হড়কানো থেকে উদ্ভুত সমস্যাগুলোকে তিনি ঝানু ব্যবসায়ীর চোখ দিয়ে দেখেন, ব্যবচ্ছেদ করেন। এরপর ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান সাধেন। আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি ইসলাম একটি দ্বীন -- পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এর ব্যত্যয় হলে জীবনে ঝামেলা আসবেই; আর সে সমস্যার সবচেয়ে সুষ্ঠু সমাধান ইসলামই দিতে পারে। আমাদের সমাজের একক-পরিবারের বাঁধগুলো যে আজ ভাঙ্গতে শুরু করেছে তা মেরামতের উদ্যোগ না নিলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে যেমনি শান্তি হারিয়ে যাবে, ভবিষ্যত প্রজন্মও বিপদের মুখে পড়বে।
বইটির পেছনের কাভারে বইটিকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখা আছেঃ
বিয়ের মতো অনবদ্য একটি আশীর্বাদ দুঃসহ অভিশাপে পরিণত হতে পারে যদি বিয়ের আগের ও পরের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা না হয়। কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সাজানো দাম্পত্য জীবন শুধু স্বামী-স্ত্রীর উপরই নয় বরং গোটা সমাজের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বয়ে আনে। বিয়েকে পার্থিব জীবনের সুখ ও পরিপূর্ণতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রধান বিষয়গুলো এই বইতে আলোচিত হয়েছে। একজন আন্তরিক পাঠক বইটি থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে সুখী-সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনে সক্ষম হবেন, ইনশাআল্লাহ।
বই সম্পর্কে কিছু তথ্য
বইয়ের নামঃ বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর
লেখকঃ মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২০১৩
পেপার ব্যাক, ৫৬ পৃষ্ঠা |
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যঃ ১৩৫ টাকা
Kindle Version: http://www.amazon.com/dp/B00EY2UR94
বইটির সূচির দিকে চোখ রাখলে বুঝতে পারবেন যে কেমন প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূচী
- ভূমিকা
- ইসলামে বিয়ে...
- বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়
- বিবাহিত জীবনকে সুখী করার উপায়
১) সুন্দর দাম্পত্য জীবনের বৈশিষ্ট্য কী?
২) দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার কি কোনো সূত্র আছে?
৩) একটি দাম্পত্য জীবনকে কীভাবে সফল করা যায়?
৪) অসুখী দাম্পত্য জীবনে কীভাবে সুখ ফিরিয়ে আনা যায়?
৫) মনের মানুষ বলতে কি কিছু আছে?
৬) সুখী দাম্পত্য জীবনের পেছনে কী কী বিষয় ভুমিকা রাখে?
৭) দাম্পত্য জীবনে বাবা-মা এবং শ্বশুর বাড়ির লোকদের কতটুকু জড়ানো উচিত?
৮) সাংসারিক জীবনে পরস্পরকে কীভাবে ছাড় দেওয়া যায়?
৯) মানুষ কখন তার বৈবাহিক জীবনের ব্যর্থতা বুঝতে পারে?
১০) একটা সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মূল দায়িত্ব কী? স্বামী ও স্ত্রীর জন্য কি এগুলো আলাদা?
১১) দাম্পত্য জীবনকে সুখী করার পেছনে মূল দায়িত্ব কার?
১২) ইন্টারনেটে পাত্র-পাত্রী পছন্দ ও বিয়ে!
১৩) সাত বছর পরে দাম্পত্য সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কুসংস্কার
১৪) সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য বাচ্চাকাচ্চা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
১৫) জীবনসঙ্গীর কাছে নিজের গুরুত্ব ধরে রাখার জন্য কী করা যেতে পারে?
১৬) তর্ক-বিতর্ক করা কি ভালো?
১৭) সংসার সুখী করতে টাকাপয়সা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৮) বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর কাজ কোনগুলো?
১৯) সংসারে শান্তি বজায় রাখার জন্য কি ছোটখাটো মিথ্যা বলা যাবে?
২০) দাম্পত্য জীবনের সমস্যা নিয়ে কারও সাথে পরামর্শ করলে কি কাজে দেবে?
এছাড়াও বইটি থেকে কিছু চুম্বক অংশ উদ্ধৃত করছিঃ
ভালোবাসা সৃষ্টি হয় সম্মান থেকে। আমরা এমন কাউকে ভালোবাসতে পারি না যাকে আমরা সম্মান করি না। তাই, স্বামী-স্ত্রী দু'জনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার হলো পরস্পরের ভালো গুণগুলোর প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেওয়া এবং ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেওয়া। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের আয়নার মতন, তারা যা দেখে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করলেও কেবল ভালো বিষয়গুলো স্মৃতিতে ধরে রাখে। যখন নতুন কোনো ছবি এই আয়নার সামনে আসে তখন তা স্মৃতিতে থাকা আগের ভালো ছবিগুলোর সাথে মিলিয়ে ভালোটা রেখে দেয়। একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছিল আমাদের বন্ধুদের ভালো গুণাগুলো যেন পাথরের উপরে খোদাই করে রাখি। আর তাদের ভুলগুলো বালিতে লিখি। একটি দীর্ঘদিন ধরে রয়ে যায় এবং অপরটি বাতাসের প্রথম ঝাপটাতেই উড়ে যায়। [মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
রোমান্টিকতার ধারণা থেকে আমরা জানি, প্রেম হচ্ছে শারীরিক আকর্ষণের অন্য একটা নাম মাত্র। সচরাচর এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। আপনি যেহেতু চান আপনার বিয়েটা এর চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হোক, সেহেতু সম্মানবোধকে বেশি গুরুত্ব দিন। এটাই পরবর্তী সময়ে সত্যিকার ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। ‘পড়ে যাওয়া’ নয় বরং ‘তৈরি হওয়া’। এর অর্থ, এমন একটি দাম্পত্য সম্পর্ক যেখানে বিয়ের ২৫ বছর পরও যতবার আপনি আপনার সঙ্গীর দিকে তাকাবেন, ততবার নতুন করে তার প্রেমে পড়বেন। ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া মানে চোখের চাহনি, ইশারা আর কিছু বিশেষ শব্দের মিশেলে তৈরি এমন এক নিজস্ব ভাষা, যে ভাষার ভাষী কেবল আপনারা দুজনা! [বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর, শাইখ ইয়াওয়ার বেগ]
অনুরাগ প্রকাশে কিছু পাগলামি করুন: জীবনসঙ্গীকে ফুল অথবা পছন্দনীয় কিছু উপহার দিন। কিন্তু তা কেবল জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে নয়। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে দিন-তারিখের এসব ছকবাঁধা জিনিস আজকাল আর কাউকে যত্ন করে মনে রাখতে হয় না, যন্ত্রগুলোই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। বরং সম্ভব হলেই উপহার দিন। সবসময় যে বড়ো উপহার দিতে হবে এমনও নয়; বরং উপহার দেওয়ার ভাবনাটাই মূল বিষয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে তোমরা উপহার দাও, কারণ তা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং একে অন্যকে উপহার দিন। যখন আপনি কিছু দিনের জন্য দূরে থাকেন, অথবা কদিন কাজে ডুবে থাকার কারণে মানসিকভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হয়—তখন উপহার দারুণ কাজ করে। উপহার সুন্দর দাম্পত্য জীবনকে জুড়ে রাখে আঠার মতো। আর হ্যাঁ, উপহারটি আপনার সঙ্গীকে একান্তে দিবেন। উপহারটিকে র্যাপিং পেপারে মুড়িয়ে, রঙিন ফিতে দিয়ে বেঁধে, সুগন্ধী লাগিয়ে একগুচ্ছ ফুলসহ তার হাতে তুলে দিন। ঘটনাটিকে স্মরণীয়, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও সৃজনশীল করুন। মনে রাখবেন, উপহারের বস্তুটি কিন্তু এখানে মুখ্য নয়, এখানে মূল হলো একটি স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া। উপহারটি এমন ব্যাগ ভরা কিছু হওয়ার দরকার নেই—যা সবার সামনে বের করে দেবেন। বরং এটা এমন কিছু হবে যা কেবল সে-ই পাবে। কোনো উপলক্ষ করে বা ঘটা করে কিছু করতে যাবেন না; বরং তাকে এমন সময় এমন কিছু দিন যা সে তখন আশা করেনি। উপহারটিই আপনার সঙ্গীর বিশেষত্ব প্রকাশ করে বলবে, ‘তুমি আমার বিশেষ' একজন। একই ঘটনা ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মনে রাখবেন, ছেলেরাও কিন্তু উপহার পছন্দ করে; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়েও বেশি। তাদেরকেও উদার মন নিয়ে উপহার দিন। [মির্জা ইয়াওয়ার বেগ, বিয়ে: স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
যখন ১০মিনিট কথা বলার পর দুজনের কারও আর বলার কিছু থাকে না; বরং একত্রে সময় কাটানো বলতে টিভির সামনে বসে থাকা, অথবা পত্রিকা পড়ায় রূপান্তরিত হয় তখন আপনি ধরে নিতে পারেন আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে রোগ ঢুকেছে। সুখী দাম্পত্য সম্পর্কে একে অন্যের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য একটা ব্যাকুলতা থাকে। কেবল আনুষ্ঠানিকতা বা দায়িত্ব পালনের জন্য নয়; আপনি বাইরে থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসতে চাইবেন, কারণ আপনার স্ত্রী আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। আপনি বাসায় এসেই আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়ে যাবেন না। পরস্পরকে সময় দেওয়াটা তখন শুধু অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য হবে না; বরং আপনি সত্যিকার অর্থেই তার কাছে থাকতে, তার সান্নিধ্য পেতে ভালোবাসেন—এজন্য সময় দেবেন। [মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
জীবনসঙ্গীকে সময় দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকে বঞ্চিত করে বন্ধুদের সাথে অকারণ আড্ডাবাজিতে সময় নষ্ট করা মোটেই উচিত নয়। এমন কিছু বিষয় তৈরি করে নেওয়া দরকার যা উভয়েরই পছন্দের। একে অন্যের কাজের মাঝে আনন্দ পাওয়ার বিষয়টা শিখে নেওয়া উচিত। সবধরনের ভালো কাজেই পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোনো বিষয় আপনার পছন্দ না হলে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই হতে হবে একান্তে; আগ্রহ ও যত্নের সাথে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা প্রাচীর গড়ে তোলা ঠিক নয়। এ সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। আবেগ অনুভূতির বিষয়ে একে অন্যের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া আবশ্যক। [মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ, বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
আমাদের সমাজের পরিবারগুলো সুন্দর হোক, শান্তিতে ভরে উঠুক প্রতিটি পরিবার। 'বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর' বইটি হয়ত এই অশান্ত সময়ে পারিবারিক জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে সমাজের মানুষদেরকে। বইটি বাংলা ভাষায় সবার জন্য সহজলভ্য করে দেয়ার জন্য 'সিয়ান পাবলিকেশন্সকে ' ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ তাদের এই সুন্দর উদ্যোগকে কবুল করুন এবং এই প্রকাশনার সাথে জড়িতে সবাইকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দান করুন।
বইটির ইংলিশ ভার্সন এর ডাউনলোড লিংক (যদি কোনো ভাই ইংলিশ ভার্সন পড়তে চান)
উত্তরমুছুনhttp://commondatastorage.googleapis.com/yawarbaig/Books/Marriage%20-%20Making%20it%20and%20living%20it.pdf
বইটির ডাউনলোড লিংক কোথায়
উত্তরমুছুন