১৯ ডিসে, ২০১২

একটু শান্তির খোঁজে


অনেক চিন্তাভাবনার পরে অবশেষে মানসিকভাবে পার করা প্রতিটি কঠিন সময়ের পরে, অশান্তির বিশাল শেকলবদ্ধ সময়ের পরে আমি ঘুরে ফিরে অন্তরের সকল অশান্তির মূলে একটা জিনিসকেই খুঁজে পাই -- সেখানে জটিলতা নেই, অনেক কাহিনীর হুড়োহুড়ি কাহিনী নেই। স্রেফ একটাই ব্যাপার, যা দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করে, চোখের দেখাকে বদলে দেয় দেয়, প্রাণের শান্তি হারিয়ে দেয়।

আর সেই জিনিসটা হলো, আল্লাহর সাথে সম্পর্কে ভাটা পড়া। নামাজে খুশু না থাকলে সেই মানুষ দুনিয়াবী অনেক কিছু আঁকড়ে ধরে সেগুলোকেই সবকিছু মনে করবে। অথচ, আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলকারী জানেন, আমাদের শূণ্য অন্তরকে অনেক আনন্দে আর প্রাপ্তির জোয়ারে পূর্ণ করে দিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার একটা ইচ্ছাই যথেষ্ট।


কঠিন সময়? অনেক যন্ত্রণা বুকে? অনেক বিপদ? তাহলে একমাত্র বড় *চিকিৎসা* হচ্ছে নামায। আর সেই ধৈর্যধারণ করে যাইতে হলে বিনয়ী হতে হবে। যে কষ্ট পেতে পেতে বিরক্ত হয়ে হারিয়ে যাবে না আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা হতে। সে আবার বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে চাইবে মুক্তি। নয়ত আধ্যাত্মিক শূণ্যতায় ভুগতে হতে পারে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেনঃ

  "হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন" [১]
  "ধৈর্য্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।" [২]

এই নামাজে কখন কী বলছি, তার অর্থ কী, সেগুলো কীভাবে এলো আমাদের কাছে -- এই দারুণ সব তথ্যগুলো ও অর্থগুলো উস্তাদ নুমান আলী খানের ওয়েবসাইটে অ-নে-ক সুন্দর করে উল্লেখ করা আছে। আজকে অনেকদিন পর আবার চোখ বুলাতে গিয়ে সবার সাথে শেয়ার করতে প্রয়োজন মনে করলাম। এগুলো জেনে বুঝে নামায পড়লে নামাযের মাত্রা অন্যরকম সুন্দর হয়। এই সাইটটি অনেক সুন্দর!

[Meaningful Prayer] :: অর্থপূর্ণ নামায : বাইয়্যিনাহ ইনস্টিটিউট

সেই সাথে আমাদের যাদের আরবি উচ্চারণ শুদ্ধ নয়, তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হয়ে থাকেন, ভুল লাজ-শরম-জড়তা ভেঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন পড়া শেখার জন্য এখনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। শুদ্ধ করে কুরআন পড়া/শোনার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মতন নয়! একজন ইমাম বলছিলেন, "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম" পড়লে তো শয়তান পালিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের তো উচ্চারণই শুদ্ধ হয়না...

আমাদের ফরজ নামাযগুলো আদায় করতে দেখে যদি কেউ অবাক হয় বা আমাদের ধর্মভীরু মনে করে, বুঝতে হবে আমরা আসলে এখনো নামাযকে স্থাপন করতে পারিনি সমাজে। তাই কিঞ্চিত লজ্জিত হওয়া উচিত মনে হয়! সদলবলে নামায পড়তে হবে, নামায নিয়ে খুবই সিরিয়াস হতে হবে। নামায জান্নাতের চাবি, শান্তির বাগান হলো জান্নাত, সেখানে যেতে হলে এই চাবি লাগবেই। এই নামায হচ্ছে নামায কুফর ও ঈমানের পার্থক্যকারী। ঈমানের প্রথম পরিচয় নামায আদায়ের মাঝেই নিহিত, যার নামায নেই, তাকে কুফরকারীদের সাথে আলাদা করা যায়না।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা যে মুসলমানিত্বের মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট, এটা অচেতন মুসলিমদের বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজন বেশি বেশি নামায আদায়ের মাধ্যমে, যেন এতটুকু পালন করেই কেউ আত্মতুষ্ট না হয়, আবার কেউ করলে অন্যরা তাকে সো-কলড *ধার্মিক* মনে না করে। দ্বীনদার হওয়া তো আরো অজস্র জিনিসের সমন্বয়।

হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম একটা দু'আ করেছিলেনঃ

"হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া। হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।" [৩] 

উচ্চারণঃ রব্বি জা'আলনি মুক্কিমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিয়্যাতি রব্বানা ওয়া তাক্কাব্বাল দু'আ। রব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়া লিল মু'মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্কুমুল হিসাব।

কঠিন সময়গুলোর মাঝেও মাঝে মাঝে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় আকাশের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত সুন্দর একটা অনুভূতিতে বুকের উপরে হাত দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখটা বন্ধ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে স্মরণ করতে খুব ভালো লাগে এই বলে --

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ। মহাসুন্দর, মহাপবিত্র, মহামহিম। একদিন সবচাইতে সুন্দর তোমার সাথে দেখা হবেই ইনশাআল্লাহ। জানি সেদিনের সুসংবাদ পাবার আগে আমার বুকের এই শূণ্যতা কখনো পূর্ণ হবেনা। তুমি আমার পথ দেখিয়ে নিয়ে যেয়ো আল্লাহ, তুমি তো জান আমি কত দুর্বল, কত ক্ষুদ্র, কত অকৃতজ্ঞ। তুমি তো দয়াময়, প্রেমময়, ক্ষমাশীল... ♥ ♥




  নির্ঘন্ট 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে