বর্তমান দিনগুলো মিশরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিশরীয়রা তাহরীর স্কোয়ারে জমায়েত হচ্ছে আর দাবী জানাচ্ছে সেনাবাহিনীর পতনের জন্য। তারা চাইছে একটি সত্য আর স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে বেসামরিক জনগণ তাদের আইনত অবস্থান আর ভূমিকা খুঁজে পাবে। আপাতত এতটুকু নিশ্চিত যে সামরিক সরকারের অভিপ্রায় এবং কর্মপদ্ধতি এরকম কিছু নয় একদমই। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পরপরই ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা হোসনি মুবারকের লেফটেনেন্ট, ৭৭ বছর বয়স্ক কামাল জানজুরির নাম প্রকাশ করে। একজন প্রার্থীর নাম প্রকাশের এই ছোট্ট ঘটনাটা বলে দেয় সামরিক সরকার কীভাবে অবস্থা সামলানোর চেষ্টা করছে। ফিল্ড মার্শাল তানতাওয়ি এবং তার লোকজন একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত নয় এবং আগ্রহীও নয়। তারা দৃশ্যপটের বাইরের কাউকে খুঁজছে যাকে মিত্র হিসেবে পাওয়া যাবে, চাইছে কিছু চুক্তি করতে যেন নিজেদের রক্ষা করা যায় এবং দেশের ক্ষমতাও সামলে রাখা যায়।
তাহরীর স্কোয়ারে বিক্ষোভরত মানুষগুলোর দরকার সাহায্য -- কেননা তারা পরিষ্কার বুঝতে পারছেন যে মিশর একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রকৃত মুক্তি অর্জনই এজেন্ডা হয়ে থাকে -- সেক্ষেত্রে এখন অনেক জিনিস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুবারকের পতন ছিলো প্রথম ধাপ -- কিন্তু এখন বিক্ষোভকারীরা মুবারক সরকারের কাঠামোর স্বরূপ টের পাচ্ছে, টের পাচ্ছে তাদের মিশন কেমন ছিলো, এমনকি তাদেরকে মুখোমুখিও হতে হচ্ছে মুবারকের মিত্রদের। বিক্ষোভকারীরা লড়ছে অপেক্ষাকৃত কম দৃশ্যমান এবং জটিল একটি বাহিনীকে যা মিশরীয়দের মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। তাই সামরিক সরকারকে শুধু অভ্যন্তরীন ইস্যু নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলোকেও সামলাতে হচ্ছে (ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত, পশ্চিমা আর এশীয়দের স্বার্থ এবং অন্যান্য শক্তিশালী আন্দোলন প্রভৃতি)। কাজটা সহজ নয়। এদিকে বেশ ক'মাস সঙ্ঘাতবিহীন প্রতিবাদের পর (যখন সামরিক বাহিনীকে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হচ্ছিলো) এখন পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে দেখতে পাচ্ছি ধরপাকড়, আক্রমণ, হত্যা করতে। তারা হয়তবা ভুল স্বীকার করতে পারে কিন্তু রাজপথের ঘটনা তো বদলে গেছে। তাহরীরে প্রতিবাদরত মানুষগুলোর জন্য এখন আক্রমণাত্মক না হয়ে প্রতিবাদ করা কঠিন হয়ে গেছে। যদিও তাদের আন্দোলনের প্রথম দর্শন ছিলো -- "অস্ত্র নয় বরং সাহস ও সম্মানের সাথে প্রতিবাদ"
গত শুক্রবারের ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের প্রচারনা ছিলো -- "সর্বশেষ সুযোগ"। আমাদের আরো আশাবাদী হওয়া প্রয়োজন এবং চলমান সংকটের ব্যাপারে আরো গভীর বিশ্লেষণ করা দরকার। পর্দার অন্তরালে সামরিক সরকার একটা নোংরা খেলা খেলছে যেখানে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ ধৈর্যধারণ হবার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলছেন -- এটি একটি "ট্রানজিশন পিরিয়ড"। কথাটি আংশিক সঠিক -- ট্রানজিশন কাটিয়ে উঠতে লাগে সময়, সমঝোতা আর প্রচেষ্টা। কিন্তু মিশরে এখন ঠিক এটিই ঘটছে না। গণতন্ত্রের ডাক শোনা যাচ্ছে, কিছু আশার বাণী শোনা যাচ্ছে (সামরিক সরকার বলছে তারা আগামী জুন মাসে ক্ষমতা ছেড়ে দিবে) এবং পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে -- সেই প্রেক্ষিতে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ক আলোচনা চলছে। সামরিক সরকার অনেক বড় খেলোয়াড় -- যারা মিশরের জনপ্রিয় প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের সংস্পর্শে রয়েছে। এদের মধ্যে অবশ্যই মুসলিম ব্রাদারহুড রয়েছে। ইসলামিক সংগঠনগুলোর মধ্যে চলছে বড় ধরণের টানাপোড়েন -- তাদের কিছু নেতা নতুন প্রজন্মের ঘনিষ্টজন এবং তারা সহমত জানাচ্ছে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন আনতে। অন্যদিকে বর্তমান নেতৃত্বের অধিকাংশ নেতারা চাইছেন সামাজিকভাবে তাদের ভবিষ্যত ভূমিকা ঠিক রাখতে এবং সামরিক বাহিনীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য। তারা তাদেরকে এই আন্দোলন-প্রতিবাদ থেকে দূরে রাখছেন এবং সিভিল সোসাইটি এবং সামরিক সরকারের মাঝে দুর্বোধ্য একটি ভূমিকা পালন করছেন। অন্যদিকে এটা ভুলে গেলেও চলবে না যে আমেরিকা এই আলোচনার বাইরে নয়। সামরিক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র আমেরিকা যাদের মুখে আমরা শুনতে পাই তারা চাইছে বেসামরিক লোকের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক -- সুতরাং যুক্তরাস্ট্রের ভূমিকা হলো অপরিষ্কার ও ধোঁয়াটে। সামরিক সরকার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যকার কোন সমঝোতা মার্কিন প্রশাসনের জন্য আকর্ষণীয় কোন ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। আরো হতে পারে যদি তারা কোন "বেসামরিক লোক" খুঁজে পান যিনি রাজপথ সামলাতে পারবেন এবং তাদের স্বার্থোদ্ধারে কাজে আসবেন -- যেমন মোহাম্মদ আল বারাদি। যতই দিন যাচ্ছে, মিশরের বসন্তকে মনে হচ্ছে শীতল রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ যেখানে সাধারণ জনগণের চাওয়া-পাওয়া হলো গৌণ।
মিশর তিউনিশিয়া নয়। প্রথম থেকেই আমি মিশরের আন্দোলনে তিউনিশিয়াকে অনুকরণ করার ব্যাপারে নেতিবাচক ছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ভুল প্রমাণ করেছিলো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট আমার অভিমতকে ক্রমাগত সঠিক প্রমাণ করছে। appearances can be deceiving. আগে থেকে আন্দোলন ছিলো -- তাতে অনেক আশা জেগেছিলো যখন মুবারক বিদায় নেয়। কিন্তু আমরা তিউনিশিয়ার উদাহরণ থেকে যেহেতু অনেক দূরে -- এটা লক্ষ্যণীয় যে মিশরের অবস্থা সেই আলোকেই বুঝতে হবে যেখানে সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া একটা জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কিছু গোপন বৈঠক চলছে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় কাউন্সিল, যুক্তরাস্ট্র এবং ইউরোপিয়ান সরকারসমূহের মধ্যে যা আমাদের একটা ধারণা দেয় যে কী ঘটছে আসলে। তিউনিশিয়া এমনকি মরক্কোর প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন -- সেখানে ইসলামিক দলগুলো রাজনীতির মাঠে ও পথ পরিক্রমায় নতুন ভুমিকা পালন করতে যাচ্ছে।
পারস্পরিক স্বার্থ-সাংঘর্ষিক শক্তিগুলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাচ্ছে। জনগণের চাওয়ার মূখ্য বিষয়গুলো হুমকির মুখে। মধ্যপ্রাচ্যে যেমন রয়েছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ, তেমন রয়েছে সাংঘর্ষিক স্বার্থ। মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আলোর মুখ থেকে অনেক দূরে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই অঞ্চলের অনেক ক্ষমতাধর মতপ্রদানকারীর কোন আগ্রহ নেই। এই সংগ্রাম সহজ হবেনা। যাই হোক না কেন, যেকোন অবস্থাতেই আমাদের উচিত হবে সাধারণ মানুষদের প্রতি সহমর্মী হওয়া এবং সমর্থন প্রদান করা যারা হাল ছেড়ে দিতে নারাজ।
তারা রয়েছেন মিশর, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের রাজপথে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছেন লিবিয়ায়। তাদের পক্ষ নেয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিরীহ মানুষদের অযথা হত্যা করা হচ্ছে না বরং পর্দার অন্তরালের এই নোংরা হিসাব-নিকাশের তাৎক্ষণিক ফলাফল যাই হোক না কেন -- প্রকৃতপক্ষে আরব বিশ্বে কিছু ঘটছে। আজ অথবা কালকের ঘটনাগুলোর মাঝে শুধু আশাই নয়, বরং একটা ঐতিহাসিক সত্য লুকিয়ে আছে -- আরবরা তাদের স্বাধীনতা আর অধিকার ফিরে পাবে। সামরিক বাহিনী, পশ্চিমা এবং এশিয়ার ক্ষমতাধররা অথবা মিশরের সেই রাজনৈতিক পুতুলগুলো -- যারা আপাতত তাদের কিছু স্বার্থসিদ্ধি করছে, তারা কখনই জনগণকে তাদের অধিকার ও সম্মান অর্জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার, আর সাহসের। এখন তো সাহসিকতা দেখা যায় আরবের পথে-প্রান্তরের সবখানে।
লেখা সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
তাহরীর স্কোয়ারে বিক্ষোভরত মানুষগুলোর দরকার সাহায্য -- কেননা তারা পরিষ্কার বুঝতে পারছেন যে মিশর একটি সংকটময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যদিও প্রকৃত মুক্তি অর্জনই এজেন্ডা হয়ে থাকে -- সেক্ষেত্রে এখন অনেক জিনিস নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মুবারকের পতন ছিলো প্রথম ধাপ -- কিন্তু এখন বিক্ষোভকারীরা মুবারক সরকারের কাঠামোর স্বরূপ টের পাচ্ছে, টের পাচ্ছে তাদের মিশন কেমন ছিলো, এমনকি তাদেরকে মুখোমুখিও হতে হচ্ছে মুবারকের মিত্রদের। বিক্ষোভকারীরা লড়ছে অপেক্ষাকৃত কম দৃশ্যমান এবং জটিল একটি বাহিনীকে যা মিশরীয়দের মূল নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে। তাই সামরিক সরকারকে শুধু অভ্যন্তরীন ইস্যু নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলোকেও সামলাতে হচ্ছে (ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত, পশ্চিমা আর এশীয়দের স্বার্থ এবং অন্যান্য শক্তিশালী আন্দোলন প্রভৃতি)। কাজটা সহজ নয়। এদিকে বেশ ক'মাস সঙ্ঘাতবিহীন প্রতিবাদের পর (যখন সামরিক বাহিনীকে আপাতদৃষ্টিতে শান্ত মনে হচ্ছিলো) এখন পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে দেখতে পাচ্ছি ধরপাকড়, আক্রমণ, হত্যা করতে। তারা হয়তবা ভুল স্বীকার করতে পারে কিন্তু রাজপথের ঘটনা তো বদলে গেছে। তাহরীরে প্রতিবাদরত মানুষগুলোর জন্য এখন আক্রমণাত্মক না হয়ে প্রতিবাদ করা কঠিন হয়ে গেছে। যদিও তাদের আন্দোলনের প্রথম দর্শন ছিলো -- "অস্ত্র নয় বরং সাহস ও সম্মানের সাথে প্রতিবাদ"
গত শুক্রবারের ব্যাপারে আন্দোলনকারীদের প্রচারনা ছিলো -- "সর্বশেষ সুযোগ"। আমাদের আরো আশাবাদী হওয়া প্রয়োজন এবং চলমান সংকটের ব্যাপারে আরো গভীর বিশ্লেষণ করা দরকার। পর্দার অন্তরালে সামরিক সরকার একটা নোংরা খেলা খেলছে যেখানে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ ধৈর্যধারণ হবার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলছেন -- এটি একটি "ট্রানজিশন পিরিয়ড"। কথাটি আংশিক সঠিক -- ট্রানজিশন কাটিয়ে উঠতে লাগে সময়, সমঝোতা আর প্রচেষ্টা। কিন্তু মিশরে এখন ঠিক এটিই ঘটছে না। গণতন্ত্রের ডাক শোনা যাচ্ছে, কিছু আশার বাণী শোনা যাচ্ছে (সামরিক সরকার বলছে তারা আগামী জুন মাসে ক্ষমতা ছেড়ে দিবে) এবং পরবর্তী নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে -- সেই প্রেক্ষিতে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ক আলোচনা চলছে। সামরিক সরকার অনেক বড় খেলোয়াড় -- যারা মিশরের জনপ্রিয় প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের সংস্পর্শে রয়েছে। এদের মধ্যে অবশ্যই মুসলিম ব্রাদারহুড রয়েছে। ইসলামিক সংগঠনগুলোর মধ্যে চলছে বড় ধরণের টানাপোড়েন -- তাদের কিছু নেতা নতুন প্রজন্মের ঘনিষ্টজন এবং তারা সহমত জানাচ্ছে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থার একটা আমূল পরিবর্তন আনতে। অন্যদিকে বর্তমান নেতৃত্বের অধিকাংশ নেতারা চাইছেন সামাজিকভাবে তাদের ভবিষ্যত ভূমিকা ঠিক রাখতে এবং সামরিক বাহিনীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য। তারা তাদেরকে এই আন্দোলন-প্রতিবাদ থেকে দূরে রাখছেন এবং সিভিল সোসাইটি এবং সামরিক সরকারের মাঝে দুর্বোধ্য একটি ভূমিকা পালন করছেন। অন্যদিকে এটা ভুলে গেলেও চলবে না যে আমেরিকা এই আলোচনার বাইরে নয়। সামরিক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র আমেরিকা যাদের মুখে আমরা শুনতে পাই তারা চাইছে বেসামরিক লোকের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হোক -- সুতরাং যুক্তরাস্ট্রের ভূমিকা হলো অপরিষ্কার ও ধোঁয়াটে। সামরিক সরকার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যকার কোন সমঝোতা মার্কিন প্রশাসনের জন্য আকর্ষণীয় কোন ফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে। আরো হতে পারে যদি তারা কোন "বেসামরিক লোক" খুঁজে পান যিনি রাজপথ সামলাতে পারবেন এবং তাদের স্বার্থোদ্ধারে কাজে আসবেন -- যেমন মোহাম্মদ আল বারাদি। যতই দিন যাচ্ছে, মিশরের বসন্তকে মনে হচ্ছে শীতল রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ যেখানে সাধারণ জনগণের চাওয়া-পাওয়া হলো গৌণ।
মিশর তিউনিশিয়া নয়। প্রথম থেকেই আমি মিশরের আন্দোলনে তিউনিশিয়াকে অনুকরণ করার ব্যাপারে নেতিবাচক ছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ভুল প্রমাণ করেছিলো। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট আমার অভিমতকে ক্রমাগত সঠিক প্রমাণ করছে। appearances can be deceiving. আগে থেকে আন্দোলন ছিলো -- তাতে অনেক আশা জেগেছিলো যখন মুবারক বিদায় নেয়। কিন্তু আমরা তিউনিশিয়ার উদাহরণ থেকে যেহেতু অনেক দূরে -- এটা লক্ষ্যণীয় যে মিশরের অবস্থা সেই আলোকেই বুঝতে হবে যেখানে সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া একটা জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কিছু গোপন বৈঠক চলছে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় কাউন্সিল, যুক্তরাস্ট্র এবং ইউরোপিয়ান সরকারসমূহের মধ্যে যা আমাদের একটা ধারণা দেয় যে কী ঘটছে আসলে। তিউনিশিয়া এমনকি মরক্কোর প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন -- সেখানে ইসলামিক দলগুলো রাজনীতির মাঠে ও পথ পরিক্রমায় নতুন ভুমিকা পালন করতে যাচ্ছে।
পারস্পরিক স্বার্থ-সাংঘর্ষিক শক্তিগুলো অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাচ্ছে। জনগণের চাওয়ার মূখ্য বিষয়গুলো হুমকির মুখে। মধ্যপ্রাচ্যে যেমন রয়েছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ, তেমন রয়েছে সাংঘর্ষিক স্বার্থ। মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আলোর মুখ থেকে অনেক দূরে। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই অঞ্চলের অনেক ক্ষমতাধর মতপ্রদানকারীর কোন আগ্রহ নেই। এই সংগ্রাম সহজ হবেনা। যাই হোক না কেন, যেকোন অবস্থাতেই আমাদের উচিত হবে সাধারণ মানুষদের প্রতি সহমর্মী হওয়া এবং সমর্থন প্রদান করা যারা হাল ছেড়ে দিতে নারাজ।
তারা রয়েছেন মিশর, সিরিয়া এবং ইয়েমেনের রাজপথে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছেন লিবিয়ায়। তাদের পক্ষ নেয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিরীহ মানুষদের অযথা হত্যা করা হচ্ছে না বরং পর্দার অন্তরালের এই নোংরা হিসাব-নিকাশের তাৎক্ষণিক ফলাফল যাই হোক না কেন -- প্রকৃতপক্ষে আরব বিশ্বে কিছু ঘটছে। আজ অথবা কালকের ঘটনাগুলোর মাঝে শুধু আশাই নয়, বরং একটা ঐতিহাসিক সত্য লুকিয়ে আছে -- আরবরা তাদের স্বাধীনতা আর অধিকার ফিরে পাবে। সামরিক বাহিনী, পশ্চিমা এবং এশিয়ার ক্ষমতাধররা অথবা মিশরের সেই রাজনৈতিক পুতুলগুলো -- যারা আপাতত তাদের কিছু স্বার্থসিদ্ধি করছে, তারা কখনই জনগণকে তাদের অধিকার ও সম্মান অর্জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার, আর সাহসের। এখন তো সাহসিকতা দেখা যায় আরবের পথে-প্রান্তরের সবখানে।
লেখা সম্পর্কিত কিছু তথ্যঃ
- ড. তারিক রামাদান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কনটেমপোরারি ইসলামিক স্টাডিজের প্রফেসর। তিনি জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ করেছেন দর্শন এবং ফরাসি সাহিত্যে; ডক্টরেট করেছেন অ্যারাবিক এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ এ ইউনিভার্সিটি অফ জেনেভা থেকে। ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসের টাইম ম্যাগাজিনের জরীপে বিশ্বের সেরা ১০০ জন বিজ্ঞানী এবং থিঙ্কারের তালিকায় তারিক রামাদান রয়েছেন।
- লেখাটি গালফ নিউজে প্রকাশিত হয় ২৯ নভেম্বর, ২০১১।
- অনুবাদঃ আমার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে যান লেখককে