২৩ নভে, ২০১৩

মনের জানালা মাঝে # ৪



(৩৮)
ঠিক আপনার মতই জীবন আর কারো নেই। মানুষের সাথে মিশে দেখবেন তাদের শৈশব, কৈশোর অথবা বাল্যকাল আপনার চাইতে অন্যরকম, কিংবা তাদের পারিবারিক জীবন আলাদা। অথবা তাদের শারীরিক কোন অসহ্যকর কষ্ট আছে যা আপনার নেই। নিজের কষ্টগুলো নিয়ে যখন ভার মনে হবে, আশেপাশে মিশবেন। আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে নিজেকে ছড়িয়ে দিবেন। একজন অথবা দু'জন মানুষ খুঁজলে হয়ত মনে হবে সবাই আপনার চেয়ে সুখী। তখন সেই ভ্রান্তি কেটে উঠবে না। একটু বেশি করে নানান রকম মানুষের সাথে মিশতে হবে। আপনার গন্ডি ছাড়িয়ে অন্যদের জীবনকে জানলে দেখবেন আপনি হয়ত কারো জীবনের কথা ভেবে কাঁদতে শুরু করবেন।

(৩৯)
যখন খুব কষ্ট লাগে, তখন জানি, এই কষ্টের দুনিয়া খুব বেশিদিনের জন্য না। আর একটুই তো। কাটিয়ে দেয়াই কাজ...  যখন সুন্দর প্রকৃতিতে নিঃশ্বাস নিই আনন্দে, তখন জানি এই পৃথিবী ছেড়ে যাবার পর যা পাওয়া যায় তা এর চাইতেও অনেক সুন্দর। সেটা চাই, হে দয়াময়...

(৪০)
পৃথিবীর কোন কিছুর জন্য অপেক্ষার একটা সীমারেখা আছে। একটা সময় পরে অপেক্ষার বস্তুটার আবেদন হারিয়ে যায়, মনের অনুভূতিটাও শুকিয়ে যায় অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে। একসময় তা অনীহায় পরিণত হয়।

(৪১)
আপনি খারাপ থাকলে কারো কিছু আসে যায় না। কারো কাছে খারাপ থাকা বর্ণনা করলেও আসলে কেউ কিছু করবে না। মূলত মানুষ নিজেরাই খুব অসহায়। নিজেকে যেভাবেই হোক ভালো রাখাই উচিত, আল্লাহর কাছেই কেবল সাহায্য চাওয়া উচিত।

(৪২)
জীবনের পরতে পরতে খুশি-আনন্দ-কষ্টের মাঝে আল্লাহ আপনাকে মেসেজ দিয়ে চলেছেন... তার আরো কাছে যেতে, তার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বলছেন। খেয়াল করে পড়ে দেখুন...


(৪৩)
একজন বললো, স্বপ্ন দেখে কী হয়? স্বপ্নেরা কখনো সত্যি হয় না। কথা সত্যি। সব স্বপ্ন সত্য হয় না। কিন্তু এটাও সত্য, স্বপ্ন ছাড়া কিছুই হয় না। কিছু পেতে হলে স্বপ্ন দেখতে হয়, মানুষের মন কোন অবস্থাতেই আশা ছাড়া থাকে না। উচ্চাশা করা সঠিক নয়, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে হয়। ছোট ছোট স্বপ্ন, স্বপ্নেরা শিশির বিন্দুর মতন, ঘাসের উপরে চকচকে হীরার কণার মতন ঝলক দেয় কষ্টের মাঝে, দুঃখের মাঝে। কঠিন সময়ে তাই স্বপ্ন বেশি করে দেখতে হয়, কারণ, একদিন খারাপ সময় কেটে যাবে।

(৪৪)
বাস্তবতাকে উপভোগ করে দেখার কিছু নেই, সে আপনাকে জোর করেই স্বাদ নেয়াবে... কখনো টেনে-হিঁচড়ে হলেও আপনাকে বাস্তবতার স্বাদ নেয়াবে। বাস্তবতা হলো সেই জীবন, যা পার্থিব; যা আমাদের সব চাওয়ার মাঝে থাকে না, প্রায় সময়েই আমাদের না-চাওয়া বিষয়গুলো নিয়েও থাকে। কিন্তু আমাদের স্বপ্নগুলো শুধু পার্থিব না, তাতে অপার্থিব জগতের সৌন্দর্য মাখানো থাকে... এই রূঢ় বাস্তবতার নখর থেকে বাঁচতে চাইলে স্বপ্ন দেখতেই হবে। স্বপ্নেরা আশা জাগায়, ভালোবাসা জাগায়, হৃদয়কে কোমল করে...

(৪৫)
আমরা কেউ অন্য কারো মতন না, অন্য কেউ আমাদের মতন না। অন্যদের স্কেলে নিজেদের বিচার করা বোকামি, অন্যদের সাথে তুলনা করাও নির্বুদ্ধিতা। লক্ষ্য একটাই, মৃত্যুর পরের সফলতা, পৃথিবীটা শুধু পেরিয়ে যাওয়ার। কোন পূর্ণতা প্রাপ্তি এই জগতে হয় না, হতে পারে না...

(৪৬)
আমাদের এ এক অদ্ভুত সমাজ !! অজস্র অবিবাহিত ছেলে-মেয়ে এমনভাবে জীবন কাটাচ্ছে যেন তারা বিবাহিত। অজস্র বিবাহিতরা এমনভাবে জীবন কাটায় যেন তারা একা। সমস্যা কেন এত?

(৪৭)
অপেক্ষার পর, পরিশ্রমের পর যখন ঈপ্সিত জিনিসটি পাওয়া যায়, সেই আনন্দ, সেই উদ্বেলিত হৃদয়ের অনুভূতি কি কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যায়? যারা অমন করে অপেক্ষা করেনি তারা কীভাবে বুঝবে অপেক্ষার পরে প্রাপ্তির মাঝে ভালোবাসা কত তীব্র থাকে, তাতে কত গভীরতা থাকে, হৃদয়ে কত গভীর আনন্দের ধারা বয়ে যায়...

(৪৮)
আপনি যে জীবনে সত্যিকারের কল্যাণময় পরিবর্তন চান তার সম্ভবত প্রথম প্রকাশ হচ্ছে আপনি নিজের বিষয়ে ভালো কথা বলতে না পারলেও, খারাপ কথা বলবেন না। আশাবাদী কিছু শোনাতে না পারলেও নৈরাশ্য ও হতাশার কথা বলবেন না। যতদিন নিরাশা বা হতাশার সাথে থাকবেন, আপনি অবশ্যই কোন সত্যিকারের উন্নতি বা পরিবর্তন আনতে পারবেন না। উন্নতির মূল শর্ত হলো -- হয় ভালো কথা বলো নয়ত চুপ থাকো।

(৪৯)
আমাদের সবার অজস্র সীমাবদ্ধতা, ভুল, নীচতা, হীনতা, খুঁত আছে। এটা সত্যি। হয়ত অনেক ক্ষেত্রে ভালোগুলোর পরিমাণ খারাপগুলোর চেয়ে কম, এরকমটাও হতে পারে। কিন্তু তাতে কোন ক্ষতি নেই। বিষয়টা হচ্ছে, একজন মানুষ তার কোন সত্ত্বাকে মূল্য দিচ্ছে, কোন গুণাবলীকে ফুটিয়ে তুলতে চাইছে।