মিছিল শব্দটি শুনলেই একটা দৃশ্য ভেসে ওঠে আমার চোখে। একদম সামনে কিছু মানুষ -- হাতে তাদের কিছু প্ল্যাকার্ড অথবা ব্যানার, পেছনে সারিতে সারিতে তাদের অনুসরণ করছে একদল মানুষ। তারা একটা নির্দিষ্ট কারণেই সবাই একসাথে, একই ছন্দে হেঁটে চলেছেন কোন একটা ময়দানে জমায়েত হবেন বলে। যে কারণে তারা সবাই একসাথে এগিয়ে চলেছেন -- হতে পারে সেটা কোন প্রাপ্তির বহির্প্রকাশ, হতে পারে সেটা কোন দাবী আদায়ের আকাঙ্খা। কারণ যেমনটাই হোক, তারা একই সাথে, একই গলায় শব্দোচ্চারণ করেন, একই পদক্ষেপে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে।
এমন একটা মিছিলের কথা আমার মনের দৃশ্যপটে জেগে উঠছিলো বারংবার। অমন একটা মিছিলে আমিও শামিল হয়েছি। আমার চারপাশে একদল মানুষ -- তাতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরাও আছে। দৃঢ় তাদের চেতনা, বুকে তাদের অজস্র ভালোবাসা, চিত্ত তাদের ভয়শূণ্য, দৃপ্ত তাদের পদক্ষেপ। আমি চারপাশে চেয়ে থেকে ভাবছিলাম -- এ আবার কোন মিছিল? আমি কীভাবে এখানে এলাম?
এই মিছিল চলেছে অতীত থেকে অনন্তকালের দিকে। অনন্ত এক মিছিল -- সাদামাটা কিন্তু ছিমছাম। এতে আছে বর্ণিল প্রকাশ, আভিজাত্যের প্রকাশ। এতে অনেক মানুষ আছেন যারা নিতান্ত ছিন্নবস্ত্রের। অথচ এই দারুণ পার্থক্যকে তারা নিজেরা কেউ গ্রাহ্য করেন না। হাতে হাত ধরে, একই চেতনা ধারণ করে তারা এগিয়ে চলেছেন যাত্রাপথে। এই মিছিলের পতাকা কী? পতাকায় কালিমা তাইয়্যেবা লেখা। পতাকার এই বাণী মিছিলের প্রতিটি মানুষের অন্তরের খোদাই করা -- এই বাণীর উপরে তাদের অপরিসীম ভালোবাসা। হাতে তাদের এক মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এই গ্রন্থখানি হাতে নেয়া তৌহিদবাদী মানুষকে কেউ কোনদিন থামাতে পারেনি। এই মিছিলে চোখ রাঙ্গিয়ে, আক্রমণ করে কোন দুর্মুখেরা পারেনি পথরোধ করতে।
আমরা আজন্ম এই মিছিলেই আছি। আমাদের অনেক সাথীকে আমরা ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে রেখে এসেছি। একদিন ওই আবাসে আমরাও যাবো। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরে আমাদের সেই শুভ্র আত্মার সাথীদের গুঞ্জণে মুখরিত হবে ভবিষ্যতকাল। তাদের মুখ থাকবে উজ্জ্বল, কপালে আলোর আভা, তাদের মুখে থাকবে স্মিত হাসি। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবেন সুন্দরতম, উজ্জ্বলতম আর শ্রেষ্ঠতম একজন মানুষ -- যার হাতে থাকবে পানির পেয়ালা। সেই পানি পান করে পিপাসামুক্ত হবে মিছিলের মানুষেরা। আমাদের মিছিল সেই অনন্তে গিয়ে থামবে সেই নেতার সামনে।
আমাদের মিছিল পেরিয়েছে উষর মরু, পেরিয়েছে শীতল মেরু, পাহাড়-পর্বত, নদীর তীর আর শুষ্ক অঞ্চল পেরিয়ে এই মিছিলে শামিল হয়েছে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ। অথচ এই এত ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা সবাই এক আত্মা, এক প্রাণ। আমাদের হৃদয়ে ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি, আমাদের চিত্তে একজন নেতা। আমাদেরই রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিলো মুতার প্রান্তর, ওহুদ আর বদর। সেই সময় পার হয়ে এই মিছিল আজ এসেছে আমাদের সামনে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের মানুষই ভাই-বোন। আমরা সবার প্রতি সমানভাবে অনুরক্ত। আমাদের ভালোবাসা এই যাত্রার প্রতিটি মানুষের প্রতি। আমাদের লক্ষ্য তো আসলে এক!
এই মিছিল আমার স্বপ্নই ছিলো। মিছিলে শামিল হবার আকাঙ্খা ছিলো রক্তের প্রতিটি ফোঁটায়। আমি সেই অনন্তের শেষ দিনে সবার সাথে বুক মেলানোর অদম্য আকাঙ্খায় কেঁদেছি অজস্র রাত। সেই সুন্দরতম সময় আজ সমাগত। এই মিছিলের কথা মনে পড়ে গেলো এক অসাধারণ কাব্য পড়ে। কবিতাটার নাম -- "আমাদের মিছিল"। জেনেছি কবিতাটি লিখেছেন কবি আল মাহমুদ। আল্লাহ কবিকে দুনিয়া আর আখিরাতে সর্বোচ্চ কল্যাণ দান করুন। আর এই মিছিলের মানুষদের প্রতি তার দয়া আর রাহমাত ঢেলে দিন।
* * * * * * * * * * * * * * * * *
আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,
শত সংঘাতের মধ্যে এ শিবিরে এসে দাঁড়িয়েছি।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো ?
আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের।
উদয় ও অস্তের ক্লান্তি আমাদের কোনদিনই বিহবল করতে পারেনি।
আমাদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত,
আমাদের রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিল মূতার প্রান্তর।
পৃথিবীতে যত গোলাপ ফুল ফোটে তার লাল বর্ণ আমাদের রক্ত,
তার সুগন্ধ আমাদের নিঃশ্বাসবায়ু।
আমাদের হাতে একটি মাত্র গ্রন্থ আল কুরআন,
এই পবিত্র গ্রন্থ কোনদিন, কোন অবস্থায়, কোন তৌহীদবাদীকে থামতে দেয়নি।
আমরা কি করে থামি ?
আমাদের গন্তব্য তো এক সোনার তোরণের দিকে যা এই ভূ-পৃষ্ঠে নেই।
আমরা আমাদের সঙ্গীদের চেহারের ভিন্নতাকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনি না,
কারন আমাদের আত্মার গুন্জন হু হু করে বলে
আমরা একআত্মা, এক প্রাণ।
শহীদের চেহারার কোন ভিন্নতা নেই।
আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি।
কেউ পাথরে, কেউ তাঁবুর ছায়ায়, কেই মরুভূমির উষ্মবালু কিংবা সবুজ কোন ঘাসের দেশে।
আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি,
এর আদি বা অন্ত নেই।
পনের শত বছর ধরে সভ্যতার উথ্থান-পতনে আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।
আমাদের কত সাথীকে আমরা এই ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে কন্দরে রেখে এসেছি-
তাদের কবরে ভবিষ্যতের গুন্জন একদিন মধুমক্ষিকার মত গুন্জন তুলবে।
আমরা জানি,
আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুখয়বয়ে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।
আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয়নি, নেবে না।
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা,
আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি
আমরাও থামবো না।
কবিতাঃ আমাদের মিছিল -- আল মাহমুদ
এমন একটা মিছিলের কথা আমার মনের দৃশ্যপটে জেগে উঠছিলো বারংবার। অমন একটা মিছিলে আমিও শামিল হয়েছি। আমার চারপাশে একদল মানুষ -- তাতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরাও আছে। দৃঢ় তাদের চেতনা, বুকে তাদের অজস্র ভালোবাসা, চিত্ত তাদের ভয়শূণ্য, দৃপ্ত তাদের পদক্ষেপ। আমি চারপাশে চেয়ে থেকে ভাবছিলাম -- এ আবার কোন মিছিল? আমি কীভাবে এখানে এলাম?
এই মিছিল চলেছে অতীত থেকে অনন্তকালের দিকে। অনন্ত এক মিছিল -- সাদামাটা কিন্তু ছিমছাম। এতে আছে বর্ণিল প্রকাশ, আভিজাত্যের প্রকাশ। এতে অনেক মানুষ আছেন যারা নিতান্ত ছিন্নবস্ত্রের। অথচ এই দারুণ পার্থক্যকে তারা নিজেরা কেউ গ্রাহ্য করেন না। হাতে হাত ধরে, একই চেতনা ধারণ করে তারা এগিয়ে চলেছেন যাত্রাপথে। এই মিছিলের পতাকা কী? পতাকায় কালিমা তাইয়্যেবা লেখা। পতাকার এই বাণী মিছিলের প্রতিটি মানুষের অন্তরের খোদাই করা -- এই বাণীর উপরে তাদের অপরিসীম ভালোবাসা। হাতে তাদের এক মহাগ্রন্থ আল কুরআন। এই গ্রন্থখানি হাতে নেয়া তৌহিদবাদী মানুষকে কেউ কোনদিন থামাতে পারেনি। এই মিছিলে চোখ রাঙ্গিয়ে, আক্রমণ করে কোন দুর্মুখেরা পারেনি পথরোধ করতে।
আমরা আজন্ম এই মিছিলেই আছি। আমাদের অনেক সাথীকে আমরা ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে রেখে এসেছি। একদিন ওই আবাসে আমরাও যাবো। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরে আমাদের সেই শুভ্র আত্মার সাথীদের গুঞ্জণে মুখরিত হবে ভবিষ্যতকাল। তাদের মুখ থাকবে উজ্জ্বল, কপালে আলোর আভা, তাদের মুখে থাকবে স্মিত হাসি। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবেন সুন্দরতম, উজ্জ্বলতম আর শ্রেষ্ঠতম একজন মানুষ -- যার হাতে থাকবে পানির পেয়ালা। সেই পানি পান করে পিপাসামুক্ত হবে মিছিলের মানুষেরা। আমাদের মিছিল সেই অনন্তে গিয়ে থামবে সেই নেতার সামনে।
আমাদের মিছিল পেরিয়েছে উষর মরু, পেরিয়েছে শীতল মেরু, পাহাড়-পর্বত, নদীর তীর আর শুষ্ক অঞ্চল পেরিয়ে এই মিছিলে শামিল হয়েছে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ। অথচ এই এত ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা সবাই এক আত্মা, এক প্রাণ। আমাদের হৃদয়ে ভালোবাসা আল্লাহর প্রতি, আমাদের চিত্তে একজন নেতা। আমাদেরই রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিলো মুতার প্রান্তর, ওহুদ আর বদর। সেই সময় পার হয়ে এই মিছিল আজ এসেছে আমাদের সামনে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের মানুষই ভাই-বোন। আমরা সবার প্রতি সমানভাবে অনুরক্ত। আমাদের ভালোবাসা এই যাত্রার প্রতিটি মানুষের প্রতি। আমাদের লক্ষ্য তো আসলে এক!
এই মিছিল আমার স্বপ্নই ছিলো। মিছিলে শামিল হবার আকাঙ্খা ছিলো রক্তের প্রতিটি ফোঁটায়। আমি সেই অনন্তের শেষ দিনে সবার সাথে বুক মেলানোর অদম্য আকাঙ্খায় কেঁদেছি অজস্র রাত। সেই সুন্দরতম সময় আজ সমাগত। এই মিছিলের কথা মনে পড়ে গেলো এক অসাধারণ কাব্য পড়ে। কবিতাটার নাম -- "আমাদের মিছিল"। জেনেছি কবিতাটি লিখেছেন কবি আল মাহমুদ। আল্লাহ কবিকে দুনিয়া আর আখিরাতে সর্বোচ্চ কল্যাণ দান করুন। আর এই মিছিলের মানুষদের প্রতি তার দয়া আর রাহমাত ঢেলে দিন।
* * * * * * * * * * * * * * * * *
আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,
শত সংঘাতের মধ্যে এ শিবিরে এসে দাঁড়িয়েছি।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো ?
আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের।
উদয় ও অস্তের ক্লান্তি আমাদের কোনদিনই বিহবল করতে পারেনি।
আমাদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত,
আমাদের রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিল মূতার প্রান্তর।
পৃথিবীতে যত গোলাপ ফুল ফোটে তার লাল বর্ণ আমাদের রক্ত,
তার সুগন্ধ আমাদের নিঃশ্বাসবায়ু।
আমাদের হাতে একটি মাত্র গ্রন্থ আল কুরআন,
এই পবিত্র গ্রন্থ কোনদিন, কোন অবস্থায়, কোন তৌহীদবাদীকে থামতে দেয়নি।
আমরা কি করে থামি ?
আমাদের গন্তব্য তো এক সোনার তোরণের দিকে যা এই ভূ-পৃষ্ঠে নেই।
আমরা আমাদের সঙ্গীদের চেহারের ভিন্নতাকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনি না,
কারন আমাদের আত্মার গুন্জন হু হু করে বলে
আমরা একআত্মা, এক প্রাণ।
শহীদের চেহারার কোন ভিন্নতা নেই।
আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি।
কেউ পাথরে, কেউ তাঁবুর ছায়ায়, কেই মরুভূমির উষ্মবালু কিংবা সবুজ কোন ঘাসের দেশে।
আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি,
এর আদি বা অন্ত নেই।
পনের শত বছর ধরে সভ্যতার উথ্থান-পতনে আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।
আমাদের কত সাথীকে আমরা এই ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে কন্দরে রেখে এসেছি-
তাদের কবরে ভবিষ্যতের গুন্জন একদিন মধুমক্ষিকার মত গুন্জন তুলবে।
আমরা জানি,
আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুখয়বয়ে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।
আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয়নি, নেবে না।
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা,
আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি
আমরাও থামবো না।
কবিতাঃ আমাদের মিছিল -- আল মাহমুদ
আল মাহমুদের কবিতা কিছু আছে মারাত্মক লাগে। এই কবিতাটায় সুন্দর আশাবাদী একটা টোন আছে।
উত্তরমুছুনটোটাল লেখাটাই (গদ্য পদ্য মিলিয়ে)পড়ে বেশ ভালো লাগল।
@রহস্যবালিকা
উত্তরমুছুনভালো লাগলো জেনে আমার ভালো লাগলো।লেখার উৎসাহ পাই...
কোন লেখায় আশাবাদ পেলে আমার খুবই ভালো লাগে। এই কবিতাটা যেমন!