আমরা উত্তরোত্তর আধুনিক হচ্ছি। উন্নত থেকে উন্নততর।
আগে আব্বা আম্মারা তাদের মধ্যে কথাবার্তা 'মেলামেশা' ছাড়াই বিয়া-শাদী করেছিলেন। সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেখলে গলার কণ্ঠ নামায়া ঝগড়া করতেন। কথায় কথায় তারা বাপের বাড়ি 'যাও', 'যাবো' বলতে পারতেন না, বলতেন না... একাট্টা হয়ে দু'জনে মিলে যুদ্ধ করে সংসার নামের নৌকাটার হাল ধরতেন চরম দুর্দিনেও...
আমরা 'দেখাদেখি' 'মিলামিলি' আর 'মিশামিশি' ছাড়া কল্পনাই করতে পারিনা বিয়েশাদী। আধুনিকা মেয়েরা অচেনা ছেলেদের সাথে বিয়ে করাকে "শুয়ে পড়া" বলে 'ডিনোট' করতে পছন্দ করেন। আধুনিক আমাদের পুলাপাইনরা ফেসবুকে দিনে রাতে স্ট্যাটাস বদলায়া "সিঙ্গেল" থেকে "ইন আ রিলেশনশিপ" আর "ইটস কম্পলিকেটেড" বানায়......ভাইস ভার্সা।
আমাদের মায়েরা ক্ষ্যাত ছিলো! সারাজীবন আমাদের কোলেপিঠে মানুষ করত, মাথার চুলটা আঁচড়ানোর সময় থুতনি সমেত গাল দুইটা ধরত, স্কুলের টিফিনটা বেঁধে দিতো নইলে পানির বোতলটা ভরে দিতো। এখন কাজের মেয়ে 'আনিসা'রা আমাদেরকে স্কুলে পাঠায়। আম্মু সকালে অফিসে যাবার আগে খালি বলে যান--"সুমন, খাবারটা খেয়ে নিয়ো, বাসায় ফিরে পড়াশোনা করিও... "
আমরা তিন চারটা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না থাকলে 'স্মার্ট' হইনা। বিএফসি আর কেএফসি তে না খাইলে 'ইশমার্ট' হইনা। আমাদের সময়ের টিভির মডেল আপুদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। জীবনে 'মুক্ত' হইতে পছন্দ করি। "কেমন ছেলে পছন্দ?" এই ধরণের প্রশ্নের উত্তরে শোনা যায়-- "কেয়ারিং শেয়ারিং...... ব্লা ব্লা" যত্তসব বকওয়াস। যার অর্থ তারা জানেনা।
আমি একটু 'স্বাধীনচেতা' বলে আমাদের নব্য আধুনিকা আপুরা বয়ান দেন। তারা জানেন না এইটার মানে কি! স্বাধীন হইতে হইতে অদ্ভূত একটা পরাধীনতার শিকলে আটকা পড়তেসে সেইটা টের পাচ্ছেন না। পশ্চিমে আধুনিকাদের কারণে খোদ আম্রিকাতেই সেইদিন পড়লাম যে ৫০ ভাগ পুলাপাইনের বাপের নাম জানেনা।
এই জগতের কোন নারী কোনদিন অস্বীকার করতে পারবে না যে তারা একটা পুরুষের জন্য মনের অনেক অনেক স্বপ্ন সযত্নে সাজিয়ে রাখেন। সেই মানুষটা এসে তার প্রতি আন্তরিক হবে, কথা শুনবে আর একসাথে বন্ধু হয়ে জীবনটা কাটাবে-- বেশিরভাগই এমন চিন্তা করেন। যেইসব 'ছেলেদের' সাথে আপুরা এখন সন্ধ্যাতে, গোধূলিবেলায় ঘুইরা বেড়ান-- তারা তাদের 'স্বপ্নপূরণে' সচেষ্ট হউক-- প্রার্থনা করি। আহারে, তাও যদি হইতো!!
সেইদিন এক বান্ধবী বলতেসিলো-- মেয়েরা এখন ছেলেদের ক্ষতির ভয় পায়না, বুঝসিস? আমি টাশকি খায়া তখন প্রভাপু এবং অন্যান্য অনেক মেয়েদের নামে শোনা ঘটনা দিয়া মিলানোর চেষ্টা করতেসিলাম। পরেক্ষণেই আবার বলে দিলো-- মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলাতে সিম্প্যাথি পায়-- তাই পরে আরো ভয় করে না। মেয়েরা কম যায়না মনে রাখিস...... আমি পুনর্বার টাশকি! সত্য মিথ্যা জানিনা, যে বলসে সে অন্য সবার চাইতে বেশি চিন্তাশীল বলেই জানতাম, মন্তব্যগুলা তাই ফাউ বলে উড়িয়ে দেই নাই।
এখন জীবনের সমস্ত ইমোশোন বিয়ার আগেই শেষ। ফোনে, রেস্টুরেন্টে মনের সব 'চাওয়া'গুলা পূর্ণ হয়ে যায়। টিএসসিতে, পার্কগুলোতে বসে, রেস্টুরেন্টে ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে বসে দেহের উষ্ণতা নেয়াটাই আমাদের 'স্বাভাবিকতা'। তারপর একদিন 'ইগনোর হয়ে যান' আমাদের আপু আর ভাইয়ারা... আবার শুরু হয় নতুন কারো খোঁজ... অন্তহীন অক্লান্ত খোঁজাখুজি।
এখন বন্ধুদের মাঝে স্বাভাবিক আড্ডাচ্ছলে প্রশ্ন হয়--"ওর কয়টা অ্যাফেয়ার ছিলো?" উত্তরে দুই বা ততোধিক শোনা বিচিত্র না।
সেদিন শুনলাম আমার বন্ধুর ইংলিশ মিডিয়ামে ক্লাস সেভেনে পড়া কাজিন (বোন) নাকি বলতেসিলো তাদের মাঝে নাকি "ক্রেজি" নামক খেলা আছে। কে কত বেশি 'ক্রেজি' কাজ করতে পারবে। নির্দিষ্ট কয়েক ধাপের পর যে 'সিলেক্ট' হবে, মোস্ট ক্রেজি কাজ হচ্ছে বড় ভাইয়াকে গিয়ে একটা 'অফার' দিতে হবে। কানগরম অফার! এইটাই নাকি সিম্পল।
এইটা শুনেই কান গরম হয়ে গিয়েছিলো আমার। আমরা তো আধুনিক হচ্ছি। কান উষ্ণ হওয়াটাও আমাদের কানের আধুনিকতা।
অনেক কিছু লেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু এলোমেলো লাগছে এখন। কিছুদিন পরে পূর্ণাঙ্গ একটা লিখবো-- সেইটা তে কিছু ভাবার আর চিন্তার কিছু থাকবে ইনশাল্লাহ। আমি যেইসমস্ত শুনে টাশকি-- সেগুলা আপনাদের না জানালে তো হয় না। কোন প্রবাহে আমরা বদলে চলেছি, তার গ্রাফ দরকার-- সেই সাথে কোথায় গিয়ে এটি শেষ হবে সেটা না জানলে এবং সে অনুযায়ী কল্যাণময় কিছু না করলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দোষী হয়ে থাকতে হবে...
[১২ অক্টোবর ২০১০, সন্ধ্যা ০৭:৩৭]