২৯ ডিসে, ২০১৪

সেই সময়ে আমাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য হাতে অনেক সময় থাকতো

অনেকদিন আগের কথা...

যখন 'উইন্ডো' ছিলো ঘরের জানালার চারকোনা ফাঁকা জায়গা এবং 'অ্যাপ্লিকেশন' ছিলো কাগজের উপরে কিছু লেখা। যখন 'কীবোর্ড' ছিলো একটি পিয়ানো এবং 'মাউস' ছিলো একটি প্রাণী। যখন 'ফাইল' ছিলো গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল বস্তু এবং 'হার্ড ড্রাইভ' ছিলো অশান্তিময় পথযাত্রা, যখন 'কাট' করা হতো ছুরি দিয়ে এবং 'পেস্ট' করা হতো আঠা দিয়ে। যখন 'ওয়েব' ছিলো  মাকড়শার জাল এবং 'ভাইরাস' ছিলো ফ্লু। যখন অ্যাপেল এবং ব্ল্যাকবেরি ছিলো শুধুই ফল...

সেই সময়ে আমাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের জন্য হাতে অনেক সময় থাকতো।

[শাইখ যাহির মাহমুদের ফেসবুক পেজ থেকে অনূদিত, ২৩ আগস্ট, ২০১৪]

[গ্রন্থচারণ] সুবহে সাদিক : খুররম মুরাদ


আমরা কেউ একদিনে বদলে যেতে পারিনা। কত ভুল প্রতিদিন করি, কত যে পাপ করি। শয়তান এসে হাল ছাড়িয়ে দেয়ার জন্য কত যে কুমন্ত্রণা দেয়!! এই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষেরই লক্ষ্য আদর্শ মানুষটির মতন হওয়া হলেও কেউ কোনদিন পুরোপুরি তেমন, হতে পারবে না। তাই কেউ কখনো *অ্যাবসোলিউট* ভালো মানুষ হতে পারবে না দুনিয়াতে, তাই তার আজীবনই বিনয়ী থাকতে হবে এই ভেবে যে সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়া তার ঢের দেরি।

আত্মার উন্নয়ন এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সবার প্রথমে দরকার জীবনটার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা। জীবনের উদ্দেশ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, আল্লাহর জন্যই আমাদের এই জীবন। সেই বিষয়টা যেই অবস্থাতেই আছি, সেই অবস্থাতেই নিজেকে বুঝানো। অর্থাৎ, জীবনটাকে অর্থবহ আর শান্তিপূর্ণ করতে হলে আল্লাহর পথে গিয়ে যেতে হবে, সেই জন্য দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। হৃদয়ের যত্ন নিতে হবে, এই যত্ন তার বেড়ে ওঠা ও পরিপুষ্টির জন্য দরকার। আমাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করার মাঝে রয়েছে সফলতা। যিনি হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করতে পারেন, তিনি তো সত্যিকার সফল। আমাদের লক্ষ্য তো জান্নাত লাভ করা, আর তা অর্জন করা সম্ভব আল্লাহ সন্তুষ্টির মাধ্যমে। জান্নাত লাভ কোনভাবেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি পেলেই জান্নাত অর্জন সম্ভব। তাই, যেভাবেই হোক, জীবনের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্যই হতে হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। এতেই সফলতা, এতেই শান্তি, এতেই পরিতৃপ্তি...

ঐ পারেতে সর্বসুখ বোকাদের বিশ্বাস


এক বনে এক কাক বাস করতো।
কাকটি তার জীবন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু একদিন সে একটি রাজহাঁস দেখতে পেল...
কিন্তু কথায় আছে, "নদীর এ পার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ও পারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।" কাকটি ভাবলো, আহা! রাজহাঁস কতই না সুন্দর!  নিশ্চয়ই সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখি। কাকটি তার এই ভাবনার কথা রাজহাঁসকে জানালো।

রাজহাঁস জবাব দিলো, "আসলে, আমি ভাবতাম আমিই বুঝি এখানকার সবচেয়ে সুখী পাখি যতক্ষণ না আমি একটি টিয়াকে দেখলাম... টিয়ার গায়ে আছে দু'ধরনের রং। তাই এখন আমি মনে করি, টিয়াই হলো সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে সুখী পাখি।"

কাক এরপর গেল টিয়ার কাছে। টিয়া তাকে বললো, "আমি ছিলাম খুব খুব সুখী, যতক্ষণ না আমি ময়ূরকে দেখতে পেলাম...... আমার গায়ে তো মাত্র দু'টি রং, আর ময়ূরের শরীরে কত বর্ণেরই না সমাহার!"

কাক এরপর চিড়িয়াখানায় গেল ময়ূরের সাথে দেখা করতে। সেখানে সে দেখতে পেল, ময়ূরকে দেখতে শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছে।  সবাই চলে যাওয়ার পর, কাক ময়ূরের কাছে গেল--
"ও ময়ূর, তুমি দেখতে কতই না সুন্দর! তোমাকে দেখতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। আর আমি? আমাকে দেখলেই মানুষ দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তুমি নিশ্চয়ই জগতের সবচেয়ে সুখী পাখি।"

ময়ূর জবাব দিলো,
"আমিও ভাবতাম, আমিই বোধহয় এই গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুখী পাখি। কিন্তু এই সৌন্দর্যের কারণে আমাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমি এই চিড়িয়াখানা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং বুঝতে পেরেছি কাকই হচ্ছে একমাত্র পাখি যাকে কখনোই খাঁচায় বন্দি করা হয় না।তাই গত ক'দিন যাবত আমি ভাবছি, ইশ! আমি যদি কাক হতাম, তাহলে যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াতে পারতাম।"

....................
এটাই হলো আমাদের সমস্যা।
আমরা অহেতুক অন্যদের সাথে নিজেদের তুলনা করি আর দুঃখ পাই।
আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন,আমরা তার কোন গুরুত্ব দিই না। এভাবে আমরা সকলেই দুঃখের দুষ্টচক্রে পড়ে ঘুরপাক খেতে থাকি।

তাই স্রষ্টা আপনাকে যা দিয়েছেন, তার গুরুত্ব দিয়ে, সুখী হওয়ার গোপন রহস্যটা বুঝতে শিখুন আর অহেতুক অন্যদের সাথে তুলনায় নিয়ে নিজে অসুখী হওয়াকে দূরে ছুড়ে ফেলুন।

* * * * * * *
শাইখ যাহির মাহমুদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত।
অনুবাদ কৃতজ্ঞতা: ইমরান হেলাল]

মনের জানালা মাঝে # ২০


(২১২)
কোন কিছু গড়ে তুলতে অনেকদিন সময় লাগে। ভাঙ্গতে চাইলে কিছুই প্রয়োজন হয়না। অনেক সময় একটু অসতর্কতার কারণেও অনেক কিছু ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়।

(২১৩)
মানুষ বড় অদ্ভুত। সে যখন জানে কেউ তার সফলতার প্রতি আশা করে, কেউ তাকে ভালোবাসে, কেউ তাকে মূল্য দেয়-- তখন সে প্রবলভাবে চেষ্টা করতে থাকে যেন তার কাজ অনেক সুন্দর হয়। ভালোবাসার অনুভূতি মানুষকে আত্মবিশ্বাস যোগায়। অন্যদিকে যখন সে বুঝতে পারে কোথাও তাকে অপছন্দ করা হচ্ছে, যখন সে সমালোচনার মুখোমুখি হয় অকারণেই, তখন সে এক ধরণের নির্বিকারতা অনুভব করে, তার আচরণ ও কাজ আরো বেশি কোমলতাবিবর্জিত হয়ে যায়, কখনো কখনো সে চায় ঐ ব্যক্তি তার কাজের সৌন্দর্যই আর দেখতে না পাক।

(২১৪)
আপনার জীবনের অপূর্ণতাগুলোই আপনার পার্থিব জীবনের পূর্ণতা। আপনার অপূর্ণতা,অপ্রাপ্তি,অশান্তি আপনাকে মনে করিয়ে দিবে আপনি এগুলোর অনুভূতিকে আখিরাতে চান না, ফলে জান্নাতের আকাঙ্ক্ষা আপনাকে আরো বেশি তীব্র হয়ে ধরা দিবে।

(২১৫)
আমরা যারা ভালো কাজের পরিকল্পনা করি, অথবা প্রতিদিন/সপ্তাহ/মাসের রুটিন তৈরি করি যেন সময় বাঁচিয়ে সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার করে নিজেকে উন্নত করে ভালো কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া যায় --

তারা খুব কমই হয়ত লক্ষ্যপূরণ করতে পারি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রুটিন বা প্ল্যান অল্প ক'দিন গিয়ে আর সেভাবে আগায় না। তাই অনেকে নিয়মিত প্ল্যান করি, বারবার ফসকে গেলেও আরো করি কেননা রুটিন বা প্ল্যানবিহীন দিনগুলোর সময় খুবই নষ্ট হয় আর তেমন কোন কাজই হয় না।

(২১৬)
পরিকল্পনা করা বন্ধ করে দেয়া মানে নিজের পরাজয় নিশ্চিত করা। আমাদের প্রতিটি প্ল্যানমাফিক কাজ আমাদের আপাতত সফলতা না দিলেও অনেকদিন পরে জীবনের পেছনে তাকালে দেখা যায় সেই প্ল্যান করে কাজ করে এগিয়ে যাওয়া পরিশ্রমটুকু আমাদের এমন সব পথ খুলে দিয়ে এগিয়ে আসতে দিয়েছে যা অনেক অনেক বেশি সুন্দর অথচ প্রথম করা প্ল্যানিং-এর মানসিকতা ও বুদ্ধিতে আমরা জানতাম না নিজেকে আমরা এতদূর নিয়ে আসতে পারবো!

তাই কখনো রুটিন করা ও প্ল্যানিং করা বন্ধ করা উচিত নয় বরং নিয়মিত পরিকল্পনা করুন, পরিকল্পনার আপডেট করে আরো উন্নত করুন এবং প্রচেষ্টা করতে থাকুন। পথ দেখানোর মালিক আল্লাহ, তিনি আমাদের অনেক উত্তম গন্তব্যে নিয়ে যাবেন ইনশা আল্লাহ।

(২১৭)
কখনো কখনো শব্দের চেয়ে নৈঃশব্দ ভয়ংকর!!

(২১৮)
আমরা যাদের ভালোবাসি তাদেরকে মূলত নিজেদের অজান্তেই খুব বেশি অনুকরণ করে ফেলি। তাদের ভালোলাগা আমাদের কাছেও ভালোলাগা হয়ে যায়, তাদের প্রিয় জিনিসগুলো আমাদের কাছেও প্রিয় হয়ে ধরা দেয়। তাদের প্রিয় শব্দগুলো আমাদের প্রিয় হয়ে যায়, তাদের প্রিয় মানুষগুলোও আমাদের প্রিয় হয়। মানবিক ভালোবাসা অথবা ঐশ্বরিক ভালোবাসা উভয়ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে থাকে...

(২১৯)
কিছু মানুষ কোন খাবার খেতে সুস্বাদু লাগলেও 'মজাদার বা সুস্বাদু' না বলে বরং বলে 'সুন্দর খাবার'। তাদের কাছে পৃথিবীর সবই 'সুন্দর' আর 'পচা'!! ব্যাপারটা মজার! হিহি!

(২২০)​
যতই সময় পেরিয়ে যায়, বুঝতে পারি আল্লাহ আমাকে যে পথে ঘুরিয়েছেন সেটা আমার পছন্দ করা পথের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি কল্যাণকর আর শান্তির। আলহামদুলিল্লাহ! হে আমাদের প্রিয় রব! আপনি সত্যিই ক্ষমাশীল, প্রেমময়, রাহমান।

(২২১)
প্রতিটি আলোক উৎস নিজেকে পুড়িয়ে অন্যকে আলো দেয়। মোমবাতি নিজেকে পোড়ায়; লন্ঠন পোড়ায় নিজের তেল, নিজের সলতে এবং নিজেকে নিঃশেষ করে অন্যকে আলো দেয়।  আলো ছড়িয়ে দেয়ার, অন্যদের সাহায্য করার ব্যাপারটাই এমন। তখনই কেবল অন্যদের আলোকিত করা যায় যখন কেউ নিজেকে পোড়ায়। হয়ত, এই পুড়ে যাওয়ার মাঝে, আলোকউৎস হবার মাঝেই রয়েছে সার্থকতা। তবু এতটুকু নিশ্চিত, নিজেকে না পুড়িয়ে আলো ছড়ানো যায় না।

তবে সবাই আলো চেনে না, যারা আলোকে ভালোবাসে, যারা আলোর আকাঙ্ক্ষায় অধীর থাকে, তাদের কাছেই আলো হয় উপকারী শক্তি, প্রাণসঞ্চারক, আনন্দোদ্দীপক... তারা সেই আলোকে কাজে লাগাতে পারে।

অন্যদের কাছে আলো মানে স্রেফ আলো নামক কিছুমিছুমাত্র; আশাজাগানিয়া, ভালোবাসার কোন শক্তি নয়...

(২২২)
অমুক ফ্ল্যাটের ছেলেটা বুঝে না লাঙ্গল কিংবা পাওয়ার টিলারের মূল্য, চাষা বুঝে না জিআরই স্কোরে কী হয়, পাড়ার মস্তান বুঝে না কবিতা, স্টেশনের কুলিটা জানে না থ্রিজিতে কী এমন লাভ... তেমনি ফুল বাগানে সুন্দর, ফুল সুন্দর ফুলপ্রেমীর ঘরের ফুলদানিতে কিংবা ফুলে মুগ্ধ কোন নারীর খোঁপায়...

যে যার কদর বুঝে না, তার কাছে সেই জিনিসের মূল্য নেই। কেউ হয়ত যা পায় তা চায় না, যা পায় তা বুঝে না। উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে থাকলে তো লাভ নেই, মুক্তো থাকবে হারের মাঝে, সৌন্দর্যবর্ধনে, কারো প্রাণকে জুড়িয়ে দিতে।

চারিদিকে বেমানান সব মিল। অমিলের মাঝে মিলের প্রভাব, মিলের মাঝে অমিল। শান্তিপ্রেমীর অশান্তি আর অশান্তিপ্রেমীর শান্তি যেন একই রকম! বিচিত্রতা এই জগতে... ততোধিক বিচিত্র এই মানবগোষ্ঠী ও তাদের রুচি...

২৬ ডিসে, ২০১৪

অনুপ্রেরণা - ৬


[ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত ও অনুবাদকৃত]

* * *
আল্লাহ আপনার সাথে থাকার অর্থ এই নয় যে আপনার সমুদ্র যাত্রাতে বড় কোন ঢেউ কাঁপাবে না। আল্লাহ সাথে থাকার মানে হলো, এমন একট জাহাজে চড়ে বসা যা কোন ঝড়ই ডুবাতে পারবে না।

* * *
ঔদ্ধত্য ও অহংকারের কারণে শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। খেয়াল রাখবেন এই কারণগুলো যেন আপনার জান্নাতে ঢোকা থেকে বঞ্চিত হবার কারণ না হয়।

​বদলে যাওয়া সামাজিক সম্পর্ক ও আমাদের শিশুদের শৈশব হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কিছু কথা

সবারই শৈশব স্মৃতিময়, মধুময়। সম্ভবত শৈশবের ব্যাপারটাই আল্লাহ এমন করে আমাদের বুকে গড়ে দেন। যন্ত্রণায় অনেক সময়েই শৈশবের স্মৃতিগুলো আরাধ্য ভালোলাগা হয়ে ওঠে। ইদানিংকার শিশুদের শৈশব দেখে আমার নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে। আমরা তো আমাদের শিশুদের শৈশব কেড়ে নিয়েছি।

আজ থেকে ২০ বছর আগেও আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি অনেকটাই স্থির ছিলো। গল্পের বইতে পড়ে থাকতাম, সেটাই ছিলো বিনোদন আমার। আমার মতন অনেকেই ছিলো। আসরের আজান হলেই কেবল কিছু ছেলেপিলে বাসার বাইরে বের হবার অনুমতি পেতো। ঢাকার অলিগলির রাস্তায় ক্রিকেট বল নিয়ে বা ফুটবল নিয়ে খেলা, রাতে আবার এশার পরে মাসজিদের সামনে থেকে গলির মাথা পর্যন্ত একটু গপশপ করা... শুক্রবারের সকালে ন'টা পর্যন্ত পড়ে তারপর খেলতে বের হওয়া টাইপের ব্যাপার ছিলো।

ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের ​ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে অনেক

​কমবেশি সবাই বুঝি, সময়ের সাথে সাথে ফেসবুক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিষয়ে ও ইস্যুতে কোন পক্ষের শক্তি বৃদ্ধি ও হ্রাস করতে মিডিয়া হিসেবে ফেসবুক কতটুকু সক্ষম সেটা গবেষণার বিষয় হলেও সামাজিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো এর ভূমিকা যে অত্যন্ত বেশি তা প্রশ্নাতীত নিশ্চিত বিষয়।

আমি বলতে চাইছি, আমাদের আত্মিক বিষয়গুলোর কথা ভেবে আমাদের অত্যন্ত সাবধান হওয়া প্রয়োজন। নিজ স্পিরিচুয়ালিটি এবং সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্ট করতে ফেসবুক এখন খুব ঠুনকো সহজ বিষয়। একদিকে যেমন অন্যদের খুশি করতে কিছু লিখলে তা আমাদের কাজকে আখিরাতের পুরষ্কারের পরিবর্তে শাস্তি পাওয়ার সুযোগ করে দেয়, অন্যদিকে নিজ অসচেতনতায় লেখা আজেবাজে বিষয় ও শব্দ অন্যদের মনকে কলুষিত করলে তার দায়ভার আমাদের উপরেও বর্তাবে আখিরাতে। ফেসবুক অজস্র দাম্পত্য সম্পর্ককে নষ্ট-ধ্বংস-যন্ত্রণাবিদ্ধ করতে কাজ করেছে,করছে,করবে। সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

​​ ​ইন্টারনেট ও আমাদের অনুপকারী জ্ঞানের মাতাল চর্চা

​​কেন যেন আজ হঠাৎ ছেলেবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। জীবনটা কতই না সহজ ছিলো। এই স্মৃতিকাতরতা আমার স্রেফ ভাবাবেগে ডুবে থাকা টাইপ নয়, আমাদের বাল্যের সহজতার সাথে এ সময়কে মেলাতে চেষ্টা করছিলাম। আমার যতটুকু মনে পড়ে, আমার কৈশোরটাও এতটা জটিল ছিলো না। আমার সামনে যা কিছু ঘটনা থাকতো, যে ক'জন মানুষ থাকতো, তাদের প্রতি খেয়াল করে জীবনের রুটিনকে সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করতাম। ওটুকুর মাঝে সহজতা ছিলো জীবনে।

এখনকার জীবনে আমাদের সবারই মনে হয় অনেক অনেক সম্পর্ক ও চাপ। মোবাইল-ফেসবুক-ইন্টারনেটের যুগের যে মানসিক চাপ, তা বোধহয় পূর্বেকার সময়ের মানুষদের সাথে অনেক আলাদা। এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ভালো দিকগুলোকে অস্বীকার করছি না, সেসবের জন্যই ব্যবহার করতে আসা আমাদের সবার।

২২ ডিসে, ২০১৪

আমরা হয়ত বিশ্বাস করিনা আমরা যেকোন সময় মারা যেতে পারি

​আমার চারপাশে অনেক মানুষ নিয়মিত মারা যাচ্ছেন। কখনো একদিনেই দু'টি কাছের দূরের আত্মীয়ের সংবাদ শুনেছি। এদের কারো বয়স কম, কারো বেশি। কয়েক বছর আগে যে আমার ক্লাসমেট ছিলো, আজ সে মাটির নিচে। সুশীলদের মতন করে ইসলামবিহীন ঢঙ্গে তো আর বলতে পারি না, "যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস।" বরং আমি স্পষ্ট জানি সে এখন আখিরাতের জীবনে ঢুকে গেছে। হয়ত এখন খুব আনন্দ অথবা ভয়ংকর আযাবের মাঝে অন্ধকার কবরের সময়টা কাটাচ্ছে।

২০ ডিসে, ২০১৪

রুমী কবিতা (তৃতীয় কিস্তি)



* * *
তুমি যত বেশি নিশ্চুপ থাকবে, তত বেশি শুনতে পাবে। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তোমার দু'টো চোখকেই বন্ধ করে দাও
যদি অন্য চোখটি দিয়ে দেখতে চাও।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
আমাকে দেখতে অস্থির মনে হতে পারে, কিন্তু আমার গভীরে আমি শান্ত ও স্থির। গাছের শাখারা দুলতে থাকে কিন্তু তার শেকড় থাকে দৃঢ়। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তুমি যদি প্রকৃত ভারসাম্য অর্জন করতে না পারো তাহলে যে কেউ তোমাকে প্রতারিত করতে পারবে। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
কারো চোখের মাঝে যে আলো জ্বলে সে আসলে তার হৃদয়ে জ্বলে থাকা আলো। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
​বাতিগুলো আলাদা হলেও তাদের আলো ঠিক একইরকম। ~ জালালুদ্দিন রুমী​

* * *
শান্ত হও, নড়াচড়া করো না! নীরবতার সাথে সখ্যতা করে নাও। আরো গভীরে যাও, তোমার হৃদয়ের গহীনে ডুব দাও। সমস্ত কোলাহল থেকে একটি দিনের জন্য ছুটি নাও।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *
ভালোবাসার কোন ভিত্তি বলতে কিছু নেই। এটা এমন এক অশেষ সমুদ্র যার শুরু নেই, শেষ নেই। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * *
আল্লাহ তোমাকে একটা অনুভূতি থেকে আরেকটা অনুভূতির দিকে ঘুরিয়ে দেন এবং এই বিপরীতধর্মী দুই অনুভূতি দিয়ে তোমাকে কিছু শেখাতে চান, যেন তুমি তোমার দু'টো ডানা দিয়ে উড়তে পারো, একটি দিয়ে নয়! ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
হে আমার আত্মার পাখি, যাও এখনি উড়ে যাও! আমার তো রয়েছে প্রাচীরঘেরা শত দুর্গ। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
আমি ভেবে কুল পাইনা আমি কতবার তোমাকে দিবো বলে
উপহার খুঁজে বেড়িয়েছি এখানে-ওখানে
তবু কিছুকেই তোমার জন্য সঠিক বলে মনে হয়নি।
স্বর্ণকে সোনার খনিতে ফিরিয়ে এনে,
পানিকে বিশাল সমুদ্রে নিয়ে আসার যৌক্তিকতা কী?
আমার হৃদয় আর গোটা সত্ত্বা তোমায় দিয়ে লাভ নেই
কেননা সেগুলো তো ইতোমধ্যেই তোমার হয়ে গেছে।
তাই আমি এনেছি একটি আয়না
তার মাঝে তুমি তোমায় দেখ এবং আমায় স্মরণ করো।

~জালালুদ্দিন রুমী

২ ডিসে, ২০১৪

​আমাদের সামনে অনেক বিপদ



আমাদের সামনে অনেক বিপদ। আমরা যতক্ষণ বড় কোন বিপদে না পড়ি, ততক্ষণ পর্যন্ত বুঝি না আমরা কত ভালো ছিলাম। এ কথাগুলো শঙ্কা না জাগালেও এগুলোই বাস্তব। কেন বললাম তা আমি এখনই স্পষ্ট করে বলছি...

এই কথার স্পষ্টতা দেখতে পাওয়া যাবে আমাদের ইতিহাসে। বিভিন্ন জায়গায় পড়তে গিয়ে দেখি অনেক বড় বড় দার্শনিকেরা মানুষকে ইতিহাস শিখতে বলেন। ইতিহাস আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, শেখায়। অথচ মুসলিমদের আল্লাহ দিয়েছেন কুরআন, তাতে রয়েছে নবীদের কাহিনী এবং আরো নানান রকম ঘটনা যা থেকে আল্লাহ 'শিক্ষা' রেখেছেন 'চিন্তাশীলদের' জন্য। এই চিন্তাশীল হওয়াটাও আমাদের দায়িত্বের মাঝে পড়ে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন, শ্রেষ্ঠ সময় সেই সাহাবী এবং পরবর্তী তাবিঈন ও তাবে'তাবিঈদের জীবন জানাটাও আমাদের মূল জ্ঞানার্জনের অন্তর্গত-- সেটা একটা জ্ঞানময় ইতিহাস, শিক্ষা ও অনুপ্রেরণায় ভরা। আমরা খুব কম, খুবই কম মানুষ এগুলোকে আগ্রহভরে পড়ি। বাঁচতে পড়িনা হয়ত, পড়ার জন্য পড়ি।