২৫ মার্চ, ২০১৪

শূণ্যতা-পূর্ণতা আর সৌম্য বিশালতায় প্রশান্তির আলাপ

সলাত শেষ হয়ে গেলে যখন সবাই মসজিদ থেকে চলে যায়, মসজিদের ভেতরের অংশের পেছন দিকে বসে মিম্বারের সামনে রেখে গোটা মসজিদের সৌম্য বিশালতাকে দেখতে আমার ভালো লাগতো। কেমন যেন প্রাণের শূণ্যতা তৈরি হয়, এবং সেই শূণ্যতা এক অদ্ভুত পূর্ণতা পায় একটা নির্ভরতায়। এই অনুভূতিটা মসজিদে বসে যতটা হয়, অন্য কোথাও হয় না। এক অদ্ভুত প্রশান্তি জনশূণ্য মসজিদে তিলাওয়াতের প্রতিধ্বনিতে হয়, যার তুলনা করার মতন অন্য কিছু পাইনি কোনদিন...

আমি শহরের বাইরে 'ট্র্যাভেলিং করতে' খুব বেশি ঘুরতে যাইনি। সবাই দলবেঁধে অনেক জায়গায় যায়, মজা করে, ছবি তোলে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লাইক কমেন্ট নেয় -- এই বিষয়গুলো কেন যেন আমাকে তেমন একটা টানেনি। কিন্তু আমি জেনেছি যে একটানা শহুরে জীবনে বা পারিবারিক জীবনে অনেক কাজকর্ম করতে করতে চাপে পিষ্ট হয়ে গেলে একটু 'রিল্যাক্সড' হওয়া প্রয়োজন, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তা উপকারী...

আমি আলহামদুলিল্লাহ আজীবনই বড় বড় মসজিদগুলোতে সলাত আদায়ের যে সুযোগ পেয়েছিলাম, সেখানে সলাতের পরে একটু বসে থেকে আল্লাহর স্মরণ করতে করতে নিজের তুচ্ছতাকে তার হাতে সোপর্দ করে ভারমুক্ত হতাম। হয়ত হৃদয়ের ক্লেশ-কষ্ট-ক্লান্তি-দুঃখগুলো আল্লাহর কাছেই ঝেড়ে ফেরা যায় মসজিদ থেকে, তাই 'আউটিং' করার সময়-সুযোগ না পাওয়াটা আফসোসে পরিণত হয়নি।

অনেক মানুষকেই দেখি সলাতের পরে মসজিদে চুপচাপ বসে চাইতে থাকেন, কাঁদতে থাকেন। তখন অনুভূতি হয়, কারা আসলেই অনেক সম্পদশালী। যেই মানুষগুলো এভাবে চাইতে পারেন, কান্নাকাটি করতে পারেন, তাদের গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর কাছে কোনমাত্রায়, তা ভাবলে নিজেকে কেমন তুচ্ছাতিতুচ্ছ সত্ত্বা বলে মনে হয়! আমি ব্যক্তিগতভাবে চেনা অনেকের জীবনে দেখেছি তারা চাওয়ার বিনিময় পেয়েছেন, অনেকে পার্থিব কিছু হয়ত পাননি, ঈমানকে পেয়েছেন আরো মজবুত করে! এই কারণেই হয়ত অভিজ্ঞ মানুষদের মুখে শোনা যায়, 'আল্লাহর কাছে চাওয়ার মতন চাইতে হয়'। আমাদের চারপাশে কত সাধারণ পোশাকে এমন অনেক আল্লাহর প্রিয় কিছু অসাধারণ মানুষ লুকিয়ে আছে! আফসোস! আমরা তাদের হয়ত আলাদা করে চিনিও না...

[২৪ মার্চ, ২০১৪]

২৪ মার্চ, ২০১৪

মনের জানালা মাঝে # ১০


(১০০)
নিশ্চিত থাকুন, সুন্দর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে আপনি কখনো ঠকবেন না।

(১০১)
পৃথিবীতে সুন্দর মানুষ আছে। অবশ্যই আছে। এই বিশ্বাস থাকলে তার দেখাও আপনি পাবেন। হয়ত নিজের ইচ্ছেমতন সময়ে না, ইচ্ছেমতন জায়াগায় না। অন্য কোথাও, অন্যসময়। আল্লাহর ইচ্ছেমতন...

(১০২)
অতীতের সুখস্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে প্যাকেটে ভরে রেখে দেয়া উচিত। জীবনের চলার পথে যত গ্লানি, তখন অতীতের প্রাপ্তি, মধুর সময়গুলোর প্যাকেট খুলে ঘ্রাণ নিয়ে মন ভালো করার চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি ভিতরে জাগরূক করার এটি একটি পদক্ষেপ হতে পারে -- 'একসময় আমার সুন্দর সময় ছিলো, আমার খুব সুন্দর কিছু প্রাপ্তির অনুভূতি ছিলো। আগামীতেও হবে ইনশা আল্লাহ। একদিন এই সব যন্ত্রণার শেষ হবেই।'

তিক্ত সময়গুলোকে আঁকড়ে ধরলে তার সম্ভাব্য ১০০ টা অপকারিতা এবং ০ টি  উপকারিতা আছে। ভালো খারাপ যা-ই হোক, সময়কে যেতে দেয়া দরকার। পৃথিবীকে বিদায় দেয়ার পর থেকে সফলদের আর গ্লানি নেই, সেই যাত্রাটা যেন হয় সুন্দর, সফল হয়ে।

(১০৩)
কথা দিচ্ছি ভাই, নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনি যখন সমাজ বদলাতে চাইবেন, তখন তা কখনই সহজ না। আপনি কখনই ত্যাগ ছাড়া স্রোত উলটে দিতে পারবেন না।

(১০৪)
প্রচুর বই কিনবেন। বই কিনে ক্ষতি নাই। যতটুকুই পড়বেন তা লাভ। সীমাহীন লাভ। এই লাভ আপনাকে বদলে দিবে। অন্য কোন বস্তুগত দ্রব্য মানুষ বদলায় না।

(১০৫)
অনেক ঘাটের পানি খেয়েছি বিভিন্ন ধরণের জ্ঞানের উৎসের খোঁজ পাওয়ার পরে। ঘুরে ফিরে সেই জায়গাতেই স্থির হই, কিংবা বলা যায় যে সেখানেই শান্তি পাই আর মন-প্রাণ-চিন্তাতে খোরাক পাই যেখানে কুরআনের আলাপ হয়, যা কুরআন নিয়ে আলাপ করে।

(১০৬)
একটা প্রজন্ম দরকার যারা প্রচুর পড়বে এবং তা পালন করবে। বইমুগ্ধ একদঙ্গল ছেলেই দরকার যারা এই ধ্বসে পড়া সমাজটাকে গড়বে।

(১০৭)
শ্রোতার ভাষা, জনমানুষের ভাষা ও আবেগ পড়তে না পারলে জ্ঞান কপচে লাভ নেই, তাতে কিছু বদলাবে না। মানুষকে বদলে দিতে হলে তার মন ও হৃদয়কে মুগ্ধ করতে হয়।

(১০৮)
জীবনের পথচলায় সঙ্গী পাওয়ার অপেক্ষায় যাত্রাটাই ভন্ডুল হয়ে গেলে কী লাভ? পথের গন্তব্য সম্পর্কে তাই সঠিক ধারণা মাথায় রাখা জরুরি।

(১০৯)
ইদানিং অনেকগুলো মানুষের জীবনের কাহিনী শুনে বারবারই মনে হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে পুরোপুরি ভুলে গিয়ে চলমান সময়ের চারপাশের প্রতিযোগিতাকে সবকিছু ধরে জোর করে, জোর করে, জোরাজুরি করেই নিজ জীবনকে জটিল করেছে; অশান্তি ও দুঃসহ যন্ত্রণাময় করেছে। অথচ, আল্লাহর দ্বীনের পথে পরীক্ষা থাকলেও, কতই না সরল, কতই না সহজ, কতই না জটিলতাবিহীন...

আল্লাহ তো আমাদের বোঝা হালকা করতে চান, আমাদেরকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে...

(১১০)
যখন আমি বিভিন্ন জায়গায় যাই, দেখি বেশিরভাগ মানুষের ব্যবহার নোংরা, তারা অসৎ, বোধহীন, নীতিহীন।

যখন আমি ফেসবুকে আসি, দেখি বেশিরভাগ মানুষ আলট্রা স্মার্ট, ব্রিলিয়ান্ট, সুন্দর/সুন্দরী!!

(১১১)
আনন্দ আর শান্তির অনুভূতি কেবলই হৃদয়ে। হৃদয়টার যত্ন নেয়া দরকার। যা-তা থেকে আনন্দ নিলে তা অসুস্থ হয়ে যাবে। রবের আলোয় হোক হৃদয়ের পথচলা।

১৯ মার্চ, ২০১৪

আমাদের সম্পর্কগুলো সচরাচর খুব নাজুক হয়

আমাদের সম্পর্কগুলো সচরাচর খুব নাজুক হয়। টিকিয়ে রাখতে হলে শ্রম দিতে হয়, নতুনত্ব আনতে হয়। হাদিস থেকে শিখেছিলাম, বিরতি দিয়ে দিয়ে পরস্পরের সাথে মিলিত হলে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। এরপর থেকে দ্বীনি ভাইদের সাথে একটু বিরতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এতে বিরতির পরের প্রথম দেখায়, আন্তরিক উষ্ণতাটুকু অনুভব করে সেই জ্ঞানটার নিপুণতা অনুভব করেছি।

কিন্তু, পরিবারের সম্পর্ক? সেখানে তো বিরতি দেয়ার উপায় নেই। এই সম্পর্কগুলো নিত্যদিনের, আটপৌরে ব্যাপার। এখানে থাকে পারস্পারিক সাহায্য-সহযোগীতা ও নির্ভরশীলতার ব্যাপার। এখান থেকেই তৈরি হয় পরস্পরের প্রতি দয়াশীলতা। কিন্তু তবুও, প্রতিদিন একই মানুষ, একই ধরণের জীবনধারণ, বাইরে থেকে ঘরে ফেরা, পরিবার ও দেশ নিয়ে মন্তব্য -- সবকিছুতে বাক্যগুলোও যেন একই রকম...

একটা উপায় খুঁজে পেয়েছি জীবনে। তা হলো, নিজের মাঝে পরিবর্তন আনা। এই পরিবর্তন উদ্ভট কিছু নয়, বরং প্রতিদিন অন্তত কিছু শেখা। প্রতিদিন নিজেকে আগের চেয়ে একটু ভালো মানুষে উন্নীত করা। প্রতিদিন একটু কম সমালোচনা করা, একটু বেশি আশাবাদী আলাপ করা।

পরিষ্কার পানির বদ্ধ জলাধার দীর্ঘদিন একই রকম করে রেখে দিলে তাতে শ্যাওলা পাওয়া যাবে একসময়। কিন্তু, স্রোতময় সমুদ্রের মাঝে ময়লা ফেললেও তা পরিষ্কারই রয়ে যায়। আমাদের সত্ত্বাকে তাই প্রতিদিন একটু হলেও নতুন চিন্তায়, নতুন উদ্দীপনায়, নতুন ভালোবাসায় উদ্বোধন করা দরকার। আমাদের চিন্তা আর জ্ঞানের বিশালতাকে সমুদ্রের মতন করে আর ভালোবাসার ও স্বপ্নের গতিময়তাকে স্রোতের মতন করে আমাদের সত্ত্বার মাঝে আমরা ময়লা-আবর্জনা-কষ্টের জঞ্জালকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবো ইনশা আল্লাহ।

প্রতিদিন অন্তত একটা কুরআনের আয়াত থেকে অনুধাবন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেখে যাওয়া মহান জীবনাদর্শ থেকে নেয়া অন্তত একটা ঘটনাকে অনুসরণের চেষ্টা করলে, নিজেকে বদলে দেয়া যায় অনেকখানি। প্রিয়জনদের সাথে আলাপচারিতায় একটা নতুন বিষয় যদি হয় এমন কিছু যা হৃদয়কে আলোকিত করে, সেই সম্পর্কগুলো গতানুগতিকতার হাত থেকে হয়ত মুক্তি পেতে পারে...

[১৮ মার্চ, ২০১৪]

১৮ মার্চ, ২০১৪

বাবা-মা ও স্ত্রীর অধিকার

​​​​আজকে একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম যার বিষয়টা বেশ আগ্রহ উদ্দীপক ছিলো - "বাবা-মা ও স্ত্রীর অধিকার", এতে বক্তব্য রেখেছিলেন ড এম সাইফুল্লাহ। প্রথমে প্রায় দেড় ঘন্টা আলাপে কুরআন এবং হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আব্বা-আম্মার অবস্থানটা এতই উঁচুতে থাকাটা পরিষ্কার করলেন যে মাঝে মাঝে অতীত জীবনের জন্য চোখ মুছতে হয়েছে, অন্তর কেঁপেছে নিজ জীবনের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কথা ভেবে... তবে, স্ত্রীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টা খুব অল্প আলোচনা করে 'টি ব্রেক' হওয়ায় কিঞ্চিত হতাশ হয়েছিলাম কারণ সেটা ভালো করে জানাও খুব জরুরি মনে করেছিলাম...

বিরতির পর ছিলো 'কোশ্চেন-আন্সার' সেশন। এসময় সেই হতাশা কেটে গিয়েছে সুন্দর সেশনটির কারণে। উপস্থিত ভাই ও বোনদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের মধ্যকার সমন্বয় করতে যে কষ্ট করতে হয় ছেলেদের, কিংবা স্বামী-শশুর-শাশুড়ি নিয়ে মুসলিমাহ মেয়েদের যে কষ্ট করতে হয় সেসব ব্যাপারে কিছু অসাধারণ প্র্যাকটিক্যাল টিপস দিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় শাইখ সাইফুল্লাহ। শিখেছি অনেক কিছু, উপলব্ধি আর অনুধাবনের অংশে যোগ হয়েছে অনেক বেশি, আলহামদুলিল্লাহ।

অনুষ্ঠানে হালকা নাশতা আর পানি ছিল, একটা নোটবুক আর কলমও উপহার হিসেবে দিয়েছিলো আয়োজক আইসিডি। উপহার পাওয়া সেই নোটবুকে কুরআন-হাদিসের আলোকে হওয়া মনোমুগ্ধকর আলোচনা থেকে আমার শেখা কিছু ছোট ছোট পয়েন্ট তুলে রেখেছি --

- বাবা মায়ের সাথে ইহসান করা উচিত। খুবই সুন্দর আচরণ করতে হবে যা হবে দয়া আর ভালোবাসাপূর্ণ। তাদের মনে কষ্ট হতে পারে এমন আচরণ কিছুতেই করা যাবে না।
- যদি চাই আমাদের দোয়াগুলো আল্লাহ কবুল করুক, তাহলে আব্বা-আম্মাকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে।
- দুনিয়ার বুকে দীর্ঘ হায়াত পেতে চাইলে আব্বা-আম্মাকে সন্তুষ্ট রাখা উচিত।
- রিযিকে প্রশস্ততা পেতে হলে আব্বা-আম্মাকে খুশি রাখার চেষ্টা করা দরকার।
- নিজের সন্তানের কাছে যদি ভালো ব্যবহার পেতে চাই, আব্বা আম্মার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
- পুত্রসন্তান হিসেবে আমি এবং আমার সকল সম্পদেই রয়েছে আমার পিতার সম্পূর্ণ অধিকার।
- পিতামাতার অবাধ্যতা আমাদেরকে পৃথিবীর বুকেই দ্রুত আজাবপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করে দেয়।

- আব্বা-আম্মা যদি মারা যান তবে কয়েকটি কাজ করা উচিত: (১) তাদের জন্য দু'আ করা, (২) তাদের হয়ে অন্যদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়া, (৩) তাদের অসিয়ত পূর্ণ করা, (৪) তাদের যারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন ছিলেন তাদের খোঁজখবর নেয়া ও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।

- ছেলেদের জন্য স্ত্রী হলো দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ সম্পদ, সন্তানরা পিতামাতার শ্রেষ্ঠ উপার্জন।
- স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অন্যকে দোষারোপ করার অভ্যাস না থাকা উচিত।
- নিজের কোন চাহিদা থাকা সত্বেও যদি অন্যের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে তার অভাব পূরণকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে আল্লাহর কাছ থেকেই উত্তম প্রতিদান পাওয়া যাবে।
- সময়ের সাথে সাথেই স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কটি প্রগাঢ় হয়, যে অনুভূতিটাকে 'রাহমাহ' বলা হয়েছে।
- কারো কোন বক্তব্য না শুনে তার ব্যাপারে কোন অভিযোগ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক নয়।
- কারো মৃত্যুর আগে তার সম্পদ বন্টনের কোন ধরণের সুযোগ নেই।
- অধিকার দাবী করা যেতেই পারে, তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না। অন্যদের প্রতি উত্তম আচরণ ও তাদের অভাবপূরণের চেষ্টা করা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবার উত্তম উপায়। যে দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করে, আল্লাহ তাকে রহম করেন।

আলোচনা শুনে টুকে নেয়া এই নোটে কোন ভুল থাকলে তার দায় একান্তই আমার। আল্লাহ আমার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে সবার সাথে শেয়ার করার সদিচ্ছাটুকু কবুল করে নিন। [১৭ মার্চ, ২০১৪]

ফেসবুকে তর্ক তো অনেকটাই জীবন ধ্বংসকারী

​​আমি জীবন থেকে জেনেছি, আমাদের এখনকার সময় দ্বীন হিসেবে ইসলামকে বেছে নেয়া মানুষগুলো এক অন্যমাত্রার। তারা ঠিক আমাদের পূর্বের কয়েক প্রজন্মের মানুষদের বেশিরভাগের মতন আনুষ্ঠানিকতা ও বিশ্বাস হিসেবে ইসলাম বেছে নেননি, বরং প্রচুর টানাপোড়েন, কষ্ট ও এই জীবনের অর্থ ও জীবনকে ধারণ করার আবশ্যকীয় ত্রাণকারী হিসেবে পেয়েছেন -- ইসলাম। চারদিকে যখন শয়তানী বুদ্ধির জয়জয়কার, নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষীদের আগ্রাসন এসেছে পরিকল্পনার মাধ্যমে সুচতুরভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে, সাহিত্যে, সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে, পথ চলতে প্রতিটি ব্যানার-ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে, চাকুরিক্ষেত্রের বিভিন্ন নিয়মাবলীতে -- তখনো সত্যসন্ধানী মানুষেরা খুঁজে বের করে নিয়েছেন তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের রক্ষা করবে যেই বিধান, সেই ইসলামকে। এ তো শুধু ভাষায় লেখা কিছু কথা নয়, এই বিষয়গুলো উপলব্ধির, অনুভবের...

১০ মার্চ, ২০১৪

সেরাদের সেরা যারা তাদের স্মরণে


বিভিন্ন সময়ে স্কলারদের জীবনী পড়ে চোখে পানি চলে আসে... কতটা ত্যাগ, পরিশ্রম আর কষ্ট ছিলো তাদের কাজ করতে, তবু কী বিনয়! তবু কতই না মোহাব্বত তাদের হৃদয়ে মানুষের জন্য। এই সবই সেই দ্বীন আল ইসলামের সৌন্দর্য, যা আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করে দিয়েছেন। ইসলামের সাথে যিনি নিজেকে সংলগ্ন রাখেন, তিনিই এমন ভাগ্যবান হয়ে পড়েন। তবু, আলেমদের ব্যাপারটা অন্যরকম সুন্দর। যখন কিছু পড়তে যাই, মনে হয়, এই মানুষগুলোর শ্রম আর ভালোবাসার বদৌলতে সেই প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগের আলোচনা আর ঈমানের স্বাদ একদম অকৃত্রিম করে অনুভব করতে পারছি।

মাঝে মাঝে নিজেকে অপরাধী লাগে খুব। যে মানুষগুলোর রক্তস্রোত বয়ে আমরা দুনিয়াতে শান্তির ছিটেফোঁটা হলেও পাচ্ছি, যে মানুষগুলোর নির্ঘুম রাত আর বিশ্রামহীন দিনগুলোর জ্ঞান অন্বেষনের বিনিময়ে আমরা ইলম পেয়েছি -- তাদের কয়দিন কয়বার স্মরণ করে দোয়া করি? তারা ইনশা আল্লাহ সফল, আল্লাহ তাদের উত্তম বিনিময় দান করুন। কিন্তু সম্ভবত আমরা হতভাগা, যারা তাদের দোয়া করে আল্লাহর আরো কাছাকাছি যেতে পারছি না, আল্লাহর ভালোবাসাকে আরো বেশি করে পাচ্ছিনা...

সালাম ও দোয়া বর্ষিত হোক এই বিশ্বজগতের প্রতি রাহমাতস্বরূপ প্রেরিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি, রাহমাত বর্ষিত হোক সাহাবীদের প্রতি, তাবিঈদের প্রতি, তাবে'তাবিঈদের প্রতি এবং তাদের পরবর্তী সকল সৎকর্মশীল মানুষদের প্রতি, আলেমদের প্রতি, মুজাহিদদের প্রতি যারা কিয়ামাত পর্যন্ত দুনিয়ার বুকে পা রাখবেন...

আল্লাহ যেন আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের দলে অন্তর্ভুক্ত করেন। আমিন।

৮ মার্চ, ২০১৪

হাফিজের কবিতা [১] : আশা ও আনন্দ

​কেউ যদি আমার সাথে বসে,
আর আমরা আমাদের সেই প্রিয়তমকে নিয়ে আলাপ করি

যদি আমি তার অন্তরে স্বস্তি বয়ে আনতে না পারি.
যদি আমি তাকে আগের চেয়ে ভালো অনুভব করাতে না পারি
তাকে নিয়ে এবং এই পৃথিবীকে নিয়ে,

তাহলে হাফিজ,
দ্রুত ছুটে যাও মসজিদে আর সিজদাবনত হও --

কেননা তুমি এইমাত্র
আমার জানা একমাত্র পাপটি করেছ।

-- পারস্যের কবি হাফিজ

[আই হার্ড গড লাফিং: পোয়েমস অফ হোপ এন্ড জয়]

৭ মার্চ, ২০১৪

শামস তাবরিজি [১]



অতীত আমাদের মনে ঘন কুয়াশার মত। আর ভবিষ্যত? সম্পূর্ণ একটা স্বপ্ন। আমরা ভবিষ্যত কেমন হবে তা ধারণাই করতে পারি না, যেমন পারিনা অতীতকে বদলে দিতে।~ শামস তাবরিজি

 * * *
যখন সবাই কিছু একটা হতে চাইছে, তখন তুমি বরং কিছুই হতে যেয়ো না। শূণ্যতার সীমানায় নিজেকে মেলে দাও। মানুষের উচিত একটা পাত্রের মতন হওয়া। একটি পাত্রের মধ্যকার শূণ্যতা যেমন তাকে ধরে রাখে, তেমনি একজন মানুষকে ধরে থাকে তার নিজের কিছুই না হয়ে থাকার সচেতনতা। ~ শামস তাবরিজি

 * * *
"লোকের ছলচাতুরি আর প্রতারণা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না। কিছু লোক যদি তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এবং তোমাকে কষ্ট দিতে চায়, তবে আল্লাহও তো তাদের জন্য  কৌশল করছেন। যারা ফাঁদ পাতে তারা তাদের নিজেদের পাতা ফাঁদেই পড়ে যায়। কোন খারাপ কাজই শাস্তিবিহীন থাকে না, কোন ভালো কাজই পুরষ্কার ছাড়া যায় না। ন্যায়বিচারের উপরে বিশ্বাস রাখো এবং বাকিটা ছেড়ে দাও। ~ শামস তাবরিজি

 * * *
শেখার জন্য তুমি পড়াশোনা করো, কিন্তু বুঝতে হলো তোমার প্রয়োজন ভালোবাসা। ~ শামস তাবরিজি

 * * *
​এই​ পথ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা জানার চেষ্টা করা অর্থহীন। তুমি শুধু প্রথম ধাপটি নিয়ে চিন্তা করো, পরেরগুলো এমনিতেই চলে আসবে।" ~ শামস তাবরিজি ​

 * * *
পৃথিবীটা সুউচ্চ পর্বতের মতন, এখানে প্রতিধ্বনি নির্ভর করে তোমার উপরেই। তুমি যদি ভালো কিছুর জন্য চিৎকার করো, পৃথিবীও তোমাকে তেমন প্রতিদান দিবে। তুমি যদি খারাপ কথা বলে চিৎকার দাও, সে তোমাকে তেমনই ফেরত দিবে। কেউ যদি তোমার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে, তাদের সম্পর্কে ভালো কথা বলো। পৃথিবীকে বদলে দিতে তোমার হৃদয়কে বদলে দাও। ~ শামস তাবরিজি

 * * *
জীবনের পরিবর্তনগুলোর বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়িয়ে বরং আত্মসমর্পণ করুন। জীবনকে আপনার বিরুদ্ধে না রেখে বরং আপনার সঙ্গী করে নিন। "আমার জীবনটা পুরো উলটে যাবে" মনে করে দুশ্চিন্তা করতে যাবেন না। আপনি কেমন করে জানেন সেই ওলটানো জীবন এই সোজা অবস্থাটির চেয়ে ভালো হবে না? ~ শামস তাবরিজি

[উদ্ধৃতিগুলোর ইন্টারনেট থেকে ইংরেজিতে সংগৃহীত এবং অনুবাদকৃত]

৬ মার্চ, ২০১৪

মনের জানালা মাঝে # ৯


(৯০)
মানুষের কাছে ভালোবাসা পাবার যে আর্তিটা আমাদের ভেতরে কাজ করে সে ভালোবাসাটুকু যদি আমরা আল্লাহর বান্দাদের প্রতি বিলিয়ে দিই, আল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের অভাবটুকুও পূরণ করে দিবেন।

(৯১)
ফেসবুকে সম্ভবত বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে 'শো' করতে আসে। যারা তাদের প্রদর্শনের উপকরণ কম পায় কিংবা চায়না অথবা এর চাইতে এক কাঠি বেশি সরেস, তারা মূলত অন্যদের উষ্টা দিয়ে আনন্দ পেতে আসে। একটা কথা যেমনই হোক, তাতে কিছু বিরোধিতা করে নিজের বিশেষত্ব প্রমাণের চেষ্টা না করলে হয় না। এই উপলব্ধিটা তাদের কখনই হয়ত হয় না যে পৃথিবীর তাবৎ জিনিসের সমালোচনা করা সম্ভব, কিন্তু কোন কিছুর ভেতর থেকে সৌন্দর্য ও শিক্ষা পেতে হলে নিজের ভেতরে কিছু থাকতে হয়। অপরকে অপমানিত, লাঞ্ছিত ও বিপর্যস্ত করে আমাদের ঠিক বিশেষ কোন অর্জন হয় না, নিজের দেমাগকে সন্তুষ্ট করা ছাড়া।

ভালোবাসা শিখতে হয়, মুগ্ধ হতে মন তৈরি করার চেষ্টা করতে হয়... কিন্তু ঘৃণা করা শিখতে হয়না, রাগ করতে শিখতে হয়না, রাগ সামলাতে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হয়। সব সৃষ্টিশীল ও ধ্বংসকারী বিষয়গুলোই এমন পরস্পর বিপরীতধর্মী।

এভাবে আমরা মূলত আমাদের অহং (ইগো) বাড়িয়ে তুলি যত্ন করে, নিজেকে নিজে ধ্বংস করতে থাকি, আমাদের সাথে আমাদের রবের সম্পর্কে দুরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়, যোজন যোজন দূরে চলে যাই অন্তরের আনন্দ থেকে... একটু একটু করে...

(৯২)
নিজেই যখন নিজের শত্রু, তখন আর অন্য লোকের দরকার হয় না... দোষ চাপানো, রাগ-ক্ষোভেরও প্রয়োজন পড়ে না।

(৯৩)
কখনো কখনো একই ধরণের কিছু মানুষ এবং তাদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে আমরা যত কম জানতে পারি, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তা ততটাই উত্তম। ‪

#এড়িয়ে_যেতে_পারাই_সফলতা‬

(৯৪)
এগিয়ে যেতে হলে আপনাকে ছাড় দিতে হবে, অনেক কিছু না দেখার এবং না অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে। সবকিছুকে গুরুত্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকলে এগিয়ে যেতে পারবেন না, আপনাকে নিয়তই পরাজিত হতে হবে জীবনের বাঁকে বাঁকে...

(৯৫)
দুশ্চিন্তা আপনার আগামীকালের সমস্যা দূর করতে পারবে না, বরং আজকের শান্তিটুকু দূর করে দিবে।

(৯৬)
কোন কিছুর কারণে যদি আপনার মাঝে সুখ অনুপস্থিত থাকে, জেনে রাখুন তা পেলেও আপনি এমনই থাকবেন। একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম, সুখ আসলে আমাদের মনের একটা পছন্দ, কোন অবস্থা নয়। কথাটা নিগূঢ় সত্য...


(৯৭)
চলার পথে সকল কুত্তার ঘেউঘেউ আমলে নিয়ে তার উত্তর দিতে গেলে আপনি সঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন না।

(৯৮)
জীবনে কোন বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যেতে হবে -- এই শিক্ষাটা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলোর একটি। ভুল করবেন তো, ধরা খেতেই হবে।

(৯৯)
এভাবে সবাই একদিন মরে যাবে। কেউ বিখ্যাত অভিনেতা হতে পারে, কেউ বিখ্যাত ব্যবসায়ী, কেউ বিখ্যাত রূপবিক্রেতা, কেউ সুস্বাস্থ্যের অথবা রুগ্ন, অখ্যাত হলেও যেতে হবে, সম্পদ থাকলেও যেতে হবে, রিক্ত অসহায় হলেও যেতে হবে। চলে যাবার এই মিছিল আমাদের অঙ্গুলিনির্দেশ করে জীবনের অর্থ আছে, এই অজস্র রহস্যের পৃথিবীর নাগাল পেরিয়ে অনন্তের পথে পা বাড়ালেই একসময় রহস্যের জাল ছিন্ন হয়ে পরিষ্কার হয়ে যেতে থাকবে ক্রমশ।

এই সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। তিনি আমাদেরকে একটা সময়ের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, এখানে আমরা চোখের সামনে দেখা জ্ঞান দিয়ে সব বিচার করি। অন্যায় দেখে দেখে অনেকেই ভাবি এটাই স্বাভাবিক, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞান নিয়ে এই বিশাল বিশ্ব পৃথিবীকে বিচার করতে বসে যাই। এটা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞান লাগে না যে এগুলোর পেছনে যিনি আছেন, তিনি একজন প্রবল ক্ষমতাশালী ও জ্ঞানী, যিনি রাজাধিরাজ। সকল অন্যায়ের বিচার আল্লাহ একদিন করবেন। তিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচারে মুক্তি দিবেন অসহায় ভালো মানুষদের; যারা তাকে ভয় করে পৃথিবীতে নিজেকে রক্ষা করেছে তাদেরকে তিনি করবেন পুরষ্কৃত।

আমরা সেই বিশাল মাঠে পুরষ্কার নিতে আগ্রহী কিনা এটি একটি বড় প্রশ্ন --আমাদের কাজেই এর উত্তর মিলবে প্রতিদিন। এই পৃথিবীতে খ্যাতি, সম্পদ, যশ, সুখের খোঁজে এতটা ব্যতিব্যস্ত যেন না হই যে তা আমাদের পরকালের সত্যিকারের জগতকে ভুলিয়ে দিবে। আল্লাহ আমাদেরকে দয়া করুন, রহম করুন, ক্ষমা করুন, তার পছন্দের পথে পরিচালিত করুন।

মনের জানালা মাঝে # ৮



(৮০)
সবকিছুর একটা শ্রেষ্ঠ সময় থাকে, একটা সময় নির্দিষ্ট সময় থাকে যেসময় সে পূর্ণ বিকশিত হয়, শক্তিশালী হয়। নাইট কুইন ঠিক রাতেই বেলাতেই যেমন সুশোভিত হয়। চাঁদ পূর্ণ আলোকে আলোকিত হয় পূর্ণিমার রাতে, একটি মাসকে চাঁদের জীবন ধরলে ঠিক ১৪ এবং ১৫ তম দিনটিও চাঁদের যৌবন, সে রাতগুলোতে তার উপচে পড়া আলোয় ভেসে যায় বিশ্বচরাচর। পূর্ণিমার পরেও চাঁদ থাকে, আলো দেয়, পূর্ণিমার মতন আর হয়না।

সৃষ্টির মাঝে এমন দ্যোতনা বুঝি আরো অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। শ্রেষ্ঠ সময়টি পেরিয়ে গেলে যা থাকে, তা শুধুই সময়ের অতিক্রমণ। সঠিক সময়ের কাজগুলোর মূল্য অনেক। প্রকৃতির সাথে মানুষের অনেক মিল, সৃষ্টিজগতের বিশালতার মাঝে তাই শেখার আছে অনেক কিছু। অন্ততঃ সবাই-ই সেই মহান স্রষ্টা, আল-খালিকের হাতের নিপুণতায় তৈরি। শেখার আছে অনেক কিছু, কিন্তু আমরা শিখিনা...  

(৮১)
প্রতিটা মানুষই একেকজন যোদ্ধা। প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে বেদনা-যন্ত্রণা-কষ্টের মহাকাব্য। প্রতিটি সফল মানুষের রয়েছে খুবই কষ্টকর অতীত। সফলতার পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর থেকে আমরা ভুলে যাই কষ্ট করা যে অবধারিত।  কষ্ট তাই স্বাভাবিক। বিষয় হলো, কষ্টটা কার জন্য করছি। যদি জীবনের ঘটনাগুলোকে আল্লাহর দেয়া পরীক্ষা, আমাদের জন্য আল্লাহর পছন্দ হিসেবে মেনে নিই, তাহলে জীবনটা সরল হয়ে যায়।  দিনশেষে মোটা দাগে কষ্টের আলাপ একটাই --কষ্ট সবাই করে। কেউ করে আল্লাহর জন্য, কেউ করে দুনিয়ার জীবনের সাময়িক কিছু সফলতার আশায়।

(৮২)
কোন মানুষের কাছে কিছু আশা করা মানেই নিজের মাঝে যন্ত্রণার সৃষ্টি করা। 'এক্সপেকটেশন' কখনই ভালো বিষয় না। কেবল আল্লাহর কাছে আশা করা যায়, দু'আ করে, কেননা ওটা কোনদিন ব্যর্থ হবে না। সঠিকভাবে করা প্রতিটি দু'আ গ্রহণ হয়, তার অফুরন্ত ভান্ডার থেকে পাওয়া যাবেই, এখন অথবা আখিরাতে।  তবু ঘুরে ফিরে মানুষের কাছে আশা করি, মনে হয়, ভালোবাসা পাওয়া যেন আমার অধিকার, যেন কিছুটা যত্ন-সম্মান আর সহমর্মীতা পাওয়ারই কথা-- এটা খুবই ভুল চিন্তা। মানুষ কোনদিন কিছুতেই আমাদের মনের আশা কিছুতেই পূরণ করতে পারবে না।

চিন্তার জগতটা আর ধরণটা তাই বদলে দিতে হবে। নইলে জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যেই কষ্ট পাবেন -- সেটার কোন 'মিনিং' নেই, বিনিময়ে এই জীবনে কিছু পাবো না; আখিরাতেও পাওয়া যাবে না কিছুই।

(৮৩)
অনেক কিছুই লেখার ইচ্ছা ছিলো জীবনে। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কল্পনার চেয়ে দ্রুতবেগে। পেছনে ফিরে তাকালে বুক হু হু করে ওঠে। যখন বুঝি অনেক কিছুই হবে না জীবনে, কিছুতেই হবে না -- তখন কেমন যেন হাহাকার লাগে। জীবনটা অনেক ছোট, খুব বেশি অনিশ্চয়তার। অথচ সবাই কেমন শক্তপোক্ত হয়ে চলে, নিশ্চিত তারা ভ্রমের মাঝে আছে। ভ্রমের মাঝে থাকার আনন্দ অনেক, নিজেদের সুখী করা যায়। অর্থহীন কথা আর চিন্তা দিয়ে নিজেদেরকে *বুঝ* দেওয়া যায়।

(৮৪)
আমি সারাজীবন এখানে, ওখানে, সেখানে আমার সমস্যাগুলোর উৎস খুঁজে বেড়িয়েছি। সমাধানও খুঁজেছি যত্রতত্র...

অবশেষে জেনেছি সমস্যা আমার মাঝেই ছিলো, আমার মনে, আমার আত্মার মাঝে। সমাধানও আমার হাতেই ছিলো, আমার নাগালেই ছিলো...

(৮৫)
আমরা ভুল থেকে শিক্ষা না নিলে, ভুলগুলোই আমাদেরকে শিক্ষা দেয়...

(৮৬)
যখন কিছু দেখার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটা আমরা বদলে ফেলি, যা দেখি তা বদলে যায়।

(৮৭)
আমি জীবনে এমন অনেক সমস্যা ও আতঙ্কে জর্জরিত ছিলাম, যা আসলে কখনো পৃথিবীতে ছিলো না।

(৮৮)
একসময় আমি সংখ্যায় বিশ্বাসী ছিলাম। এখন আমি গুণগত মানে বিশ্বাসী।

(৮৯)
অনেক সময় কিছু যখন প্রকট দুনিয়াবী এবং আজেবাজে ফালতু কথা শুনতে না চাইলেও শুনতে হয় তখন সেসব কথার প্রত্যুত্তরে মনে মনে অনেকে যেসব কথা বলেন, বক্তারা সেসব শুনতে পেলে কেমন খেপতো ভাবলে চেপে রাখা হাসি প্রকাশ হয়ে যেতে পারে।

সামনে বসেও সম্মান/সমীহ বজায় রেখে বিরক্তিকর কথার উত্তর মনে মনে দেয়ার বিষয়টা বেশ দারুণ!! :P