১৫ ডিসে, ২০১৩

পৃথিবীর বিভিন্ন সময়ের ফিতনাহ এবং ঈমানের পরীক্ষা নিয়ে ভাবনা

ছোটবেলা থেকে আমার মনে কিছু প্রশ্ন ছিলো, সেগুলো কেমন করে যেন ভেতরেই রয়ে গিয়েছিলো। আমার অবাক লাগতো রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা আল-আমিন বলে ডাকত, তারা কেন পরে তার কথাগুলোকে অবিশ্বাস করতে কিংবা এড়িয়ে যেতে পারত? নবীদের জীবনী পড়ে আমি খুবই অবাক হতাম, ফিরাউন কীভাবে এত এত শিশুকে হত্যা করার নির্দেশ দিতে পেরেছিলো? নূহ আলাইহিস সালামের ছেলে কেমন করে ঈমান না এনে থাকতে পারলো? আরেকটু বড় হয়ে পড়লাম ইমাম হাসান-হোসেনকে (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এজিদ-সীমার হত্যা করেছিলো কেমন করে, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ অবলীলায় হত্যা করেছিলো আল্লাহর রাসূলের (সা) সাহাবাদের। আমার অবাক লাগতো হাদিসে পড়া বনী ইসরাইলের সেই ছেলেটার কথা ভেবে, যিনি তার উস্তায এক বৃদ্ধের কাছ থেকে শিক্ষালাভ করে গোপনে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। পরে বৃদ্ধকে হত্যা করেও সেই ছেলেকে হত্যা করতে পারছিলো না অত্যাচারী শাসক, শেষে "বিসমিল্লাহির রব্বিল গুলাম" বলে হত্যা করার পর যখন অজস্র মানুষ ঈমান আনলো, তখন বিশাল অগ্নিকুন্ডলী বানিতে তাতে ঈমানদারদের ফেলে দেয়া হলো। অথচ খুবাইবকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সবাই মিলে আয়োজন করে কষ্ট দিয়ে দিয়ে কেমন করে হত্যা করতে পারলো? বীরে মাউনার ঘটনাটাও আমাকে খুব কষ্ট দিতো। অবাক লাগতো আব্দুল্লাহ বিন উবাইদের মতন লোকগুলোর কথা ভেবে। রাসূলুল্লাহর (সা) মতন এমন একটা রাহমাত, এমন একটা মানুষকে দেখেও কীভাবে অন্তরে মুনাফিকি নিয়ে থাকা যায়?

৫ ডিসে, ২০১৩

মনের জানালা মাঝে # ৬



(৬০)
অদ্ভুত এক ইগোসম্পন্ন লোকের সমাজ এটা। এখানে ছেলেরা ব্যক্তিত্ব মনে করছে ড্যাম কেয়ার হওয়াতে, মেয়েরা পণ্যের আঙ্গিকে কেয়ারলেস হয়ে অন্যদের কাছে "অ্যাপ্রিশিয়েটেড" হবার মাঝে স্মার্টনেস খুঁজে পাচ্ছে। এখানে কেউ কোমল না, এখানে কেউ বিনয়ী না। এখানে কেউ পারস্পারিক সহানুভূতি আর কোমল কথায় সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। যদি পারতাম, অনেকের পায়ে ধরে অনুরোধ করতাম, ভাই একটু কোমল হও, বিনয়ী হও। এভাবে যাচ্ছেতাইভাবে চলে নিজেদের আখিরাত তো বটেই, দুনিয়াটাও অন্য সবার জন্য ধ্বংসের আর অশান্তিতে ভরে দিচ্ছে।

(৬১)
যদি এমন হয় যে জীবনের ঘটনাগুলো, মানুষগুলো যেন চারপাশ থেকে চেপে ধরেছে, যদি রাগে-ক্ষোভে-যন্ত্রণায় এমন ইচ্ছে করে যে  পারলে ভেঙ্গেচুরে ফেলে দেই সবকিছু...

হ্যাঁ, ঠিক সেইরকম কষ্ট আর যন্ত্রণা হতেই পারে। তবে, তখন ভেবে দেখবেন, রাগ করে লাভ নেই, বরং ক্ষতি। আপনার এই কষ্টের কারণ হতে পারে আপনার আদর্শ, আপনার নীতি, আপনার ভেতরের ভালো যা আছে তার অনড় অবস্থান। যারা ক্রমশ বদলে যায়, তাদের কেউ বাঁকা করতে পারে না। দ্বীন মানতে চাওয়া অনড় মানুষদের অসহায় যন্ত্রণাময় অবস্থার প্রকৃত উদ্ধারকারী আল্লাহ। হয়ত চোখের সামনে কেবলই অকুল পাথার, কোন উপায় নেই সমাধানের, যন্ত্রণাবিনাশের। এমতাবস্থায় আপনার সমস্ত কষ্ট তাকে বলুন, জীবনের হাল তার কাছেই ছেড়ে দেন, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতের মালিক। ইনশা আল্লাহ, তিনি পথ দেখাবেন, সমস্যা থেকে বেরিয়ে যাবার সমাধান করে দিবেন। রাগ থেকে দূরে থাকুন। রাগ শুধু গড়ে দেয়া জিনিসকে ধ্বংস করে, কিছু গড়ে দিতে পারে না।

(৬২)
না-দেখা, না-জানা, না-বোঝার জগতটা আছে তাই মানুষ খুব বেশি অসম্পূর্ণ তা বোঝা যায়। আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ, নির্ভরশীল, অসহায়... এসব বুঝতে বেশি জ্ঞান লাগে না, একট ক্ষুদ্র বোধ, অনুভূতি আর উপলব্ধি শক্তি লাগে।

(৬৩)
ফেসবুকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে আমাদের মনগুলো কীভাবেই না পরিবর্তিত আর পথভ্রষ্ট হয়েছে। একটা কিছু হলেই ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার একটা উদগ্র বাসনা ভিতরে কাজ করে। ছবি আপলোড করে লাইক আর কমেন্টে যেন ফুটে উঠে আমার *গ্রহণযোগ্যতা* সবার কাছে, আমার দেখতে কতটুকু সুন্দর লাগে সেটা। একটা কিছু লিখেই অপেক্ষায় থাকি লাইক আর কমেন্টের। যেখানে উদ্দেশ্যগুলো হবার কথা আল্লাহর সন্তুষ্টি। খুব ক্ষীণ একটা লাইনের ওপারে আমাদের অজান্তেই সেটা হয়ে যায় কিছু লাইক আর কমেন্ট প্রাপ্তি...

নিশ্চিত যে জীবন, তাকে জটিল বা ব্যর্থ করে দেয়ার এই অদ্ভুত আয়োজনে আমরা কত আগ্রহেই না যোগ দেই প্রতিদিন। ভালো কাজের সংখ্যা আমাদের এমনিতেই কম। লাইক/কমেন্ট/শেয়ারের লোভ, চ্যাটিং-এ মানুষের সাথে আলাপের আগ্রহ আমাদের কোথায় ঠেলে দিচ্ছে প্রতিদিন... ভেবে দেখেছি কি আপন মনে?

(৬৪)
আমরা জানি মানুষ অন্ধকারের মাঝে আলোর কাঙ্গাল। অন্ধকারের ঝড়ো হাওয়াতে অল্প আলোর উৎসগুলো যেন নিভু নিভু করে। তাইতো, জীবনের কঠিন সময়েও আমাদের উচিত আত্মার আলোকে শক্তিশালী করে জ্বালিয়ে দেয়া।

(৬৫)
ফেসবুকের কথা ভাবলেই কেমন লাগে যেন! বাজে নামের বাজে পেইজ থেকে/ফেইক আইডি থেকে ভালো মেসেজ দেয়ার সাথে আমার মনে পড়ে গোবরের কোটিং দিয়ে কাউকে রঙ্গিন কাগজে মুড়ে যেন উপহার দেয়া। যত সুন্দর দেখতেই হোক তা দুর্গন্ধ ছড়াবেই। 

(৬৬)
সুন্দর হলো সত্য। সত্যই সুন্দর। সুন্দর সংখ্যায় কম হবেই, তাও সত্য। তাতে ভড়কে যাবার কিছু নেই। সুন্দরকে যারা পছন্দ করেন, যারা মূল্য দেন -- তারা খুঁজে নিবেন নিজ দায়িত্বে। আলো জ্বালিয়ে রাখলে, আলোর যাদের প্রয়োজন, তারা সেখানে ছুটে আসবে।

(৬৭)
ভালো মানুষ হওয়াটাই মূল, ভালো কথা ক্রমাগত সঠিকভাবে বলতে পারাটা, ভালো কাজটা যেভাবেই হোক করতে পারাটাই মুখ্য। জীবনের বাকিটা তো এমনিতেই হয়ে যায়, হয়ে যাবেই ইনশা আল্লাহ। সেসব থেমে থাকে না ...

(৬৮)
যখন কাউকে আপনার গল্প বলতে গিয়ে দেখলেন আপনার চোখ আর ভিজে উঠছে না, তখন বুঝবেন আপনি দুঃখ কাটিয়ে উঠেছেন।

(৬৯)
কখনো কখনো আমাদের জীবনে কিছু মানুষকে পেয়ে যাই, পরিস্থিতি আর সময়ের কারণে যাদের জন্য নিঃশব্দ অশ্রু ছাড়া আর কিছু দেয়ার থাকে না।

(৭০)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ সময়ের দু'আ শোনেন, আমাদের মনের কথা জানেন। একদিন আমরা সবাই তার সামনে হাজির হব, তার সান্নিধ্যে পূর্ণ হবো। সেদিন যারা হাসিমুখে থাকবে, তাদের মাঝে প্রিয়জনদের খুঁজে পাওয়ার আনন্দ হয়ত কল্পনাও করতে পারিনা। আল্লাহ যেন সেইদিন সকল মুসলিম ভাই-বোনদের হাসিমুখে থাকার তাওফিক দেন।

১ ডিসে, ২০১৩

রুমী কবিতা (প্রথম কিস্তি)



* * *
এই পথটা তোমার, তুমি পথ চলো একা
তোমার চলার পথে হয়ত কেউ সঙ্গী হবে
কিন্তু তোমার পথটা অন্য কেউ হেঁটে দিবে না।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তুমি হয়ত শাখা-প্রশাখায় যা কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছ, তা শুধু শেকড়েই পাওয়া যায়। ~ রুমী

* * *
শুধুমাত্র এই হৃদয় দিয়েই তুমি আকাশ ছুঁতে পারো।"  -- রুমী

* * *
আঁকড়ে ধরে রাখা আর চলে যেতে দেয়ার এক ভারসাম্য হলো জীবন। ~ রুমী

* * *
গলে যাওয়া বরফের মতন হও। নিজেকে দিয়ে নিজেকে ধুয়ে দাও।" -- রুমী

* * *
দুঃখ করো না। তুমি যা হারাও তা অন্য কোন রূপে তোমার কাছে ফিরে আসে।" -- রুমী

* * *
তোমার চালাকি বিক্রি করে মুগ্ধতা কিনে নিয়ে এসো।" -- রুমী

* * *
কড়া নাড়ো, তিনি তোমায় দরজা খুলে দেবেন
বিলীন হয়ে যাও, তিনি তোমায় সূর্যের মত উজ্জল করবেন
লুটিয়ে পড়ো, তিনি তোমায় বেহেশতে তুলে নেবেন
নিজেকে রিক্ত করো, তিনি তোমায় সবকিছু দিয়ে পূর্ণ করবেন।
 ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তোমার নিজের হৃদয়ের মাধুর্য খুঁজে বের করো, তখন সম্ভবত সবার হৃদয়ের মাধুর্য তুমি খুঁজে পাবে। ~ জালালুদ্দিন রুমী


* * *
খাঁচার বন্দীশালা থেকে তুমি পালিয়েছ,
তোমার ডানা দু'টো তুমি মেলে ধরেছ,
এবার উড়াল দাও।
~ জালালুদ্দিন রুমী