১৬ অক্টো, ২০১৩

কী অর্থ আমাদের জীবনের?


ঈদের দিনটা সবার মত আমারও অন্য সকল দিনের চাইতে আলাদা, ভিন্ন আমেজের। আজ সকালে আব্বা এবং মামা তাদের দাদাদের নিয়ে আলাপ করছিলেন। তাদের দাদারা দু'জন খুব ভালো বন্ধু ছিলেন, গোটা গ্রামে তাদের পারস্পারিক হৃদ্যতার কথা সবাই জানত। কোন কোন কাজ অপরজনের অপেক্ষায় বসে থেকে থেকে করতেন। নাতিদের পাঠাতেন বন্ধুকে ডেকে আনতে, নাতি বসে থেকে দাদার বন্ধুকে সাথে নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরতে পারতো। তারা আজ কেউ নেই, এমনকি আমার দাদাজানও নেই। আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন সবাই... যেতেই হবে, যেতে হয় সবাইকে। চলে যাওয়াই নিয়ম...

১১ অক্টো, ২০১৩

পড়াশোনা শেষ করে তবেই বিয়ে করার সংস্কৃতি নিয়ে বিলাল ফিলিপস যা বলেছেন

"বয়সে যারা নবীন তাদেরকে তাদেরই মতন নবীনদের বিয়ে করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমান মুসলিম বিশ্বে সন্তানদেরকে বলা হয় তাদের পড়াশোনা আগে শেষ করতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, অন্যান্য ডিগ্রি ইত্যাদি শেষ করে তারপর বিয়ে করতে। এই কারণে অনেক সন্তানকে তাদের জীবনের সবচাইতে কঠিন সময়টা অবিবাহিত অবস্থায় পার করতে হয়। যখন তারা ত্রিশের কাছাকাছি পৌঁছে, তখন তারা বিয়ে করে। তাহলে ১৩ থেকে ৩০ বছরের এই প্রায় বিশটি বছর কী ঘটে? কী হয় তাদের জীবনে? আর এই ভুলের জন্য দায়ী কে? প্রাথমিকভাবে, এটা বাবা-মায়ের দোষ। যখন সন্তানরা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছে যায় এবং শারীরিকভাবে সাবালক হয় তখন তাদের সকল কাজের দায়ভার অবশ্যই তারাই বহন করে, কিন্তু বাবা-মায়েরাও তাদের এই বিশাল পাপের ভাগীদার হয় তাদেরকে এই অবস্থাটি থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য না করার জন্য।"

--- ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস

বেশি কথা বলার ব্যাপারটা কেমন?

​ ছোটবেলায় মনটা আমার খুব কোমল ছিলো, লেখকদের কথায় খুব প্রভাবিত হতাম। 'লা মিজারেবল' টাইপের বই পড়ে জাঁ ভালজাঁর জন্য কেঁদেছিলাম, 'হ্যাঞ্চব্যাক অফ নোতরদাম' পড়ে কোয়াসিমোডোর জন্যেও চোখ ভিজেছিলো। আকুল হয়ে কেঁদেছিলাম নসীম হিজাযীর 'ভেঙ্গে গেলো তলোয়ার', 'আঁধার রাতের মুসাফির', 'সীমান্ত ঈগল' পড়ে। বই পড়ার জন্য একসময় মন ছটফট করতো, দু'দিন ছুটি পেলে বই পড়ার মতন না থাকলে খুব কষ্ট হতো। ক্লাস ফাইভের টার্ম ফাইনালের পরে একবার 'শার্লক হোমস রচনাসমগ্র' গিলে শেষ করেছিলাম সপ্তাহের মধ্যেই। প্রায় দু'দশক পেরিয়ে এখনো ছুটি আসে জীবনে, হঠাৎ খেয়াল হয় বই কি আছে সাথে? এখন পূজার সাথে ঈদের ছুটি মিলে বড় ছুটি পাচ্ছি ইনশাআল্লাহ, গত ৫/৬ মাসে হাজার হাজার টাকার বই কিনে চোখের সামনে রেখে চোখের ক্ষুধা মিটিয়েছি, মনের কেন যেন আমার ক্ষুধামন্দা, প্রায় প্রতিদিন স্পর্শ করার পরেও পড়া হচ্ছেনা বইগুলো।

৬ অক্টো, ২০১৩

প্রযুক্তির চাপে হারিয়ে যায় পাঠক

​আমার প্রায়ই মনে হয় আমাদের প্রযুক্তির যুগে আমরা যা হারিয়েছি, হারাচ্ছি তা হচ্ছে পাঠক। আমাদের সমাজে একটা অদ্ভুত প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা শুধুই মোবাইল আর টেলিভিশনের স্ক্রিনে চোখ সেঁটে রাখে, যাদের চিন্তা ও বোধের জগতটা সংকীর্ণ হতে হতে হয়ত আবেগশূণ্য-বিবেকশূণ্য একটা অদ্ভুত প্রাণীতে পরিণত হবে। বিবেক ও বোধহীন আবেগ তো মূলত নফসের দাস, সেই অনুভূতির প্রকাশকে আবেগ বলার চাইতে 'খায়েশ' বলাই বোধহয় অধিক যুক্তিযুক্ত। আমরাও বোধহয় তাদেরকে বইগামী করতে পারিনা, আমরা হয়ত চাইও না। সামগ্রিকভাবে আমাদের এই সমাজ কী অপরিসীম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা বোধকরি যে কেউ অনুমান করতে পারবেন। তাদের থাকবে বুকে বুকে ঘৃণা, মানুষকে বুঝে না বুঝে ঘৃণা করা কিন্তু ভালোবাসতে পারে না কাউকে। 'আমি এইটা পছন্দ করি, আমি ঘৃণা করি' -- টাইপের কথা বলতে পারে, অথচ আরেকটা মানুষকে সম্মান আর বিনয় দেখানো পারে না। আরেকটা মানুষকে বুঝতে হলে, তার হয়ে ভাবতে পারাটা একটা নিয়মিত অনুশীলন যেটা বই পাঠ থেকে শেখা যায়। একজন পাঠক প্রতিটি বইতেই অনেকগুলো জীবনকে যাপন করেন। যে কখনো বই পড়েনা, সে একটাই জীবনকে যাপন করে, আর মনের দিক থেকে খুব অসহায় আর দরিদ্র সেই জীবন।

৪ অক্টো, ২০১৩

জীবনের চক্রগুলো থেকে মুক্তি মিলে কেমন করে?

​মনে পড়ে সেই সময়গুলোর কথা, প্রথম চাকুরিতে ঢুকেছি। অসহায় অনভিজ্ঞ যুবকের কাঁধে অনেক দায়িত্ব। অল্প ক'টা টাকা বেতন পাই, কিছুই হয় না সে টাকায়। বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি, হাতল ধরে ঝুলতে ঝুলতে যাতায়াত করি, সকালে বেরিয়ে বাড়ি ফিরি রাতে এশার পরে। চাকুরি জীবনে এসে সপ্তাহের ৬ টি দিনই এই অদ্ভুত চক্রে বাঁধা পড়ে বারবারই মনে হত -- এই জীবন চাইনা, এই জীবনের অর্থ নেই কোন। ফেলে আসা ১৬ বছরের পড়াশোনা যথেষ্টই ঠিকমতন করে এলাম, এরপরেও এই অর্থহীন চক্রে ঘোরার নাম কি জীবন হতে পারে? টাকা টাকা টাকা, ভোগ... অন্যদের বানানো সিস্টেমে আমি একটা কাঁচামালমাত্র। ওরা যেভাবে সব তৈরি করেছে, এভাবেই জীবনকে চালিয়ে দিলে কী অর্থ এই প্রাণের? প্রশ্নগুলো ভেতরে গুমরে মরলেও বলার মতন কেউ ছিলো না। তখনকার ভাবনাগুলোকে এমন গুছিয়ে ছিলো না সেটাও নিশ্চিত।

স্বপ্নগুলো বড় বলে কি মুছে ফেলতে হবে?

মানুষের সাথে মিশে নতুন করে উপলব্ধি করছি, সবার জীবনে স্বপ্ন থাকে। মুখে উচ্চারণ করি বা না করি, স্বীকার করি বা না করি, সবাই কিছু স্বপ্ন বুকে ধারণ করে রাখে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় থেকে অনেক বড় কিছু করার ইচ্ছা থাকে অনেকের হৃদয়ের মাঝে। যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন, তারা আল্লাহ যেমনটি ভালোবাসেন তেমন করেই জীবনকে রাঙ্গাতে চান। মানুষ হিসেবে হয়ত সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়, হয়ত স্বপ্নগুলো বড়, সামর্থ্য কম -- তবু হৃদয়ের গভীরে জমে থাকা স্বপ্নগুলো কেন মুছে ফেলতে হবে? যদি তা আল্লাহর অপছন্দনীয় কিছু না হয়, তাহলে তাকে মুছে ফেলার কিছু নেই। হৃদয়কে তিক্ত করারও কিছু নেই। পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতাই কেবলমাত্র আল্লাহর কাছে। কেবলমাত্র তার ইচ্ছাতেই সবকিছু হয়, তার নির্দেশেই প্রতিটি ঘটনা ঘটে।