১৫ আগ, ২০১৩

মিশরে লাশের মিছিল

মিশরে লাশের মিছিল দেখছি কাল থেকে। গুলিতে ঝাঁঝরা করা, জীবন্ত-মৃতদের পুড়িয়ে দেয়া, সর্বাধুনিক অস্ত্রের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়া শরীরের উষ্ণ রক্তমাখা লাশগুলোর ছবি দেখে কেমন অন্য এক জগতে চলে যাচ্ছি। আমার জীবনের এই অধ্যায় শুরু হয়েছিলো ফিলিস্তিনে ইসরাইলের হামলা শুরুর সময়টি থেকে। লাশ দেখে ঝরঝরিয়ে কেঁদেছি, অসহায়ত্বেই। শুধু মুসলিম হবার কারণে, আল্লাহর কাছেই কেবল মাথানত করার প্রত্যয়ের কারণে পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে আমাদের ভাই এবং বোনদের রক্ত গবাদিপশুর রক্তের চাইতেও সস্তা করে ফেলেছে ইসলামবিদ্বেষীর দল। 

একসময় সবকিছু দেখে এই অসহায় ক্রন্দনের মাঝে নিজের প্রতিই খেদ তৈরি হত, কষ্ট হত আমাদের অক্ষমতা আর অযোগ্যতার জন্য। অথচ আজ কেমন যেন মনে হচ্ছে, এই ফিলিস্তিনে, ইরাকে, আফগানিস্তানে, সিরিয়ায়, মিশরে, কাশ্মীরে, মায়ানমারে, চীনে এবং সর্বোপরি আমার দেশের মাটিতে আল্লাহর বান্দাদের ছিটকে পড়া রক্তগুলো শুধু লক্ষকোটি প্রাণের শাহাদাতের তামান্নাই তৈরি করে দিচ্ছে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঈমানদার মানুষগুলো দৃপ্ত প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছে।

১৪ আগ, ২০১৩

যে লোহিত ঝর্ণাধারা সিক্ত করে পৃথিবীর জমিন

দেখেছি রক্তাক্ত ভাইয়ের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া শরীরের ছবি,
দেখেছি শহীদ করে দেহটিকে পুড়িয়ে দেয়া ভাইদের কৃষ্ণবর্ণ অবশেষ,
সপ্তদশী বোনটি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে জিহাদের ময়দানে, ভালোবাসায়।
দেখেছি সন্তানহারা পিতার​​ ঈমান, কয়েক ঘন্টা পরেই নির্বিকার উক্তি,
'দুঃখপ্রকাশে আসিনি, আমাদের লক্ষ্য অন্যায়কারী অত্যাচারীদের উচ্ছেদ।'
আল্লাহর পথে মৃত্যুর প্রত্যয়ে অপেক্ষারত প্রৌঢ়ের নিশ্চিন্ত চেহারা দেখেছি।
শিশু সন্তানকে হারানো মায়ের চেহারাতে ভাসতে দেখেছি দৃঢ়তা। এভাবেই
রক্ত পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে জয় আসে সত্যের, মুক্তি পায় মানবতা, একদিন।

সাক্ষী থাকছি হাজার হাজার মৃত্যুর; নমরূদ, ফিরাউনের অত্যাচার
হামানের বড়ত্বের নিস্ফল দম্ভ, আদ-সামুদ-মাদইয়ানবাসীর দাম্ভিকতার।
চোখে ভাসে মুসলিম নামের মুনাফিকদের পরিচয়, সূরা মুনাফিকুন।
আমি মুসলিম তাই ভাইয়ের মৃত্যুতে চোখ ঝরে শ্রাবণধারা, জ্বলে অন্তর
যন্ত্রণায় অসহ্য লাগে শরীর; বলে উঠি, 'আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা...'
ইসরায়েলে তৈরি কাঁদানে গ্যাসে কায়রোর কুয়াশাচ্ছন্ন। ট্যাঙ্ক, বুলডোজার,
স্নাইপার গান, রাইফেল,হেলিকপ্টারে রাবায়া আর নাহদা স্কয়ার ঘেরা।
তারা শাহাদাতের স্বপ্নদরজায় প্রবেশ করছেন আল্লাহর নাম মুখে নিয়ে,
প্রশান্ত আত্মাদের সম্ভাসন জানাচ্ছেন নূরের তৈরি একদল পবিত্র আত্মা।

নীলনদের তীরে নতুন ফেরাউন আজ, হাজার মুসলিমের শাহাদাতে তাই
উন্মত্ত আনন্দ আজ জেরুজালেমের ঘরবাড়িতে। অথচ সৌদ পরিবার,
দুম্বার ঠ্যাং চিবুচ্ছে। কায়রোর রাজপথের রক্তের নহর দেখে তাড়া করে
তেলবিক্রির টাকা বস্তায় পাঠিয়েছে সেনাশাসককে। হতভাগা আলেমরা
নির্ভাবনায় বিভক্ত করছে মুসলিমদেরকে নিত্যনতুন হঠকারী চিন্তায়।
মুসলিম উম্মাহ আজ শতধাবিভক্ত --দাড়ি কতটা লম্বা হবে হবে,
তারাবিহ কত রাকাত, নারীর মুখখানি ঢাকতেই হবে নাকি হবে না।
এমন তর্কে উন্মত্ত ব্যস্ততা দেখে হাসিমুখে ঘুমায় নেতানিয়াহুর দল।

আজ প্রয়োজন উমার, উসামা, খালিদ, খুবাইব, জাফরের মত প্রাণ।
অথবা আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, তারিক বিন জিয়াদের দৃঢ়তা
আল-আকসার পথে দৃঢ়চেতা সালাহ আদ-দীনের তেজোদীপ্ততা।
হে কাদির, হে লাতিফ, আমাদের ক্ষুদ্র প্রাণগুলোতে ঈমানী তেজ দিন,
দয়া করুন যেন এক কালিমার পতাকার নিচে সবাই সমবেত হই।
মিথ্যাবাদী, অত্যাচারীর হাত থেকে যেন মুক্ত করতে পারি মানবতাকে।

১৪ আগস্ট, ২০১৩
রাত : ০৯ টা ০৩ মি।

১৩ আগ, ২০১৩

কিছু কীটপতঙ্গ নারীর বুদ্ধিভ্রান্তিবিলাস

দেখেছ প্রিয়া, তোমাকে বলেছিলাম না এমনটা হবার নয়? আমি আর কবে আর এডগার এলান পো আর টেনিসনের কবিতা পড়ব? অথচ ইচ্ছে ছিলো দু'একটা অসাধারণ ছত্র আমি তোমাকে লিখে উৎসর্গ করবো। মনে আছে, তোমাকে পড়তে দিবো বলে রেখেছিলাম, W.B. Yeats এর 'the wild swans at coole' যেখানে সেই হাঁসগুলোর ডানা ঝাপটানোর ফলে সেই জলরাশিতে খেলে যাওয়া পানির মাঝে স্রোতটাকে কত সুন্দর করেই না বর্ণনা হয়েছিলো।

তাও যদি হতো! আর কবেই বা লংফেলো বা ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতার স্পর্শে নদীকূলের পাশে গিয়ে আপ্লুত হবো অথবা ড্যাফোডিলের নাচন দেখতে আকাশের মেঘে উড়ে বেড়াবো? তোমার জন্য আমি হয়ত বেশি কিছু না, দু'একটা সনেট অন্তত লিখতে পারতাম। হয়ত তোমার চুলের স্পর্শ মুখে নিয়ে আমার দু'একটা অষ্টক তৈরি হত মধুসূদনের মতন।

এখনকার বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো

এক ছোট ভাই প্রশ্ন করেছিলো, ভাইয়া এখনকার বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোর অবস্থা তো খুবই খারাপ হয়। গান-বাদ্য, ছেলে-মেয়ের মেলামেশা, নাচানাচিগুলো, ডিজে... এসব থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?

উত্তর আর কী দিবো? কাছের বন্ধুদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো দেখে-শুনে বুঝেছি এখানে 'ইসলামিক্যালি মডিফিকেশন' করার সুযোগ নেই বললেই চলে, বেশিরভাগ অনৈসলামিক কাজ। পারিবারিক আর সামাজিক চাপে পিষ্ট হয়ে করতে হয়। এখন অনেক ধাপ থাকে বিয়েতে, আমি এতটা 'ব্যাকডেটেড'(!) যে ঠিক সব জানিও না। তবু শুনেছি -- মেহেদি ১, মেহেদি ২, গায়ে হলুদ ১, গায়ে হলুদ ২, বিয়ে, বৌভাত, (রিসিপশন)। এগুলো থেকে যারা কমায়, তারা মূলত টাকার ঠেলাতে পড়ে কমায়।

পরের নিন্দা করলাম, অতঃপর...

ভেবে দেখলাম, খেয়ালে এবং বেখেয়ালে আমি মানুষের গীবত করে পরবর্তীতে যতটা আফসোস করেছি, ততটা আফসোস আমার খুব কম পাপের কারণেই বুক জ্বালা করে হয়েছে। আফসোস আরো বেশি হয়েছে যখন অনেক দেরিতে হলেও সেই মানুষগুলোর চারিত্রিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছি। তখনই টের পাই, যা খারাপ তা আসলে সবসময়েই খারাপ। যে মানুষটিকে আল্লাহ উপহার দিয়েছেন উত্তম চরিত্র, তার নামে কখনো কোথাও ভুলেও কিছু বলেছি, তা নিজে জেনেও পরে সেই মানুষের সামনে দাঁড়ানো সত্যিই অস্বস্তিকর এবং অশান্তির। সেই সাথে মনে হয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা যখন সব প্রকাশ করে দিবেন, সেইদিন সমস্ত মানুষের সামনেও লজ্জা পাওয়ার ভয়, আর আল্লাহ রব্বুল আলামিনের ন্যায়বিচারের ভয়। আল্লাহ পরনিন্দা তথা গীবত এবং মুসলিম ভাইদের সম্পর্কে মন্দ ধারণা করার অভাস থেকে আমাকে ও গোটা মুসলিম উম্মাহর ভাইবোনদেরকে রক্ষা করুন।

স্বপ্ন কারখানা, তিলোত্তমা নগরী
১২ আগস্ট, ২০১৩ ঈসায়ী

যে অদৃশ্য কারাগারে বন্দী থাকি অনেকেই

জীবনে আমরা অনেকেই খুব সহজেই যে ভুলগুলো করি তার একটা মনে হয় --অন্যদের কাছে নিজেদের জীবনের ব্যাখ্যা দিতে যাওয়া। আমি শিখেছি জীবনে, কারো কাছে ব্যাখ্যা দিতে যেয়ো না -- যে তোমাকে ভালোবাসে, সে তোমার ব্যাখ্যা না শুনলেও তোমাকে ভালোবাসবে। যে তোমাকে অপছন্দ করে সে তোমার ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হলেও অপছন্দই করবে।

মানুষ কী মনে করলো, সে কী ভেবে বসলো -- এই বিষয়টা আমাদেরকে এক অদৃশ্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত করে। তাদের কাছে নিজেদের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমাদের মানসিক শক্তি ক্ষয় হয়, সময় চলে যায়। কতই তো দেখেছি, কিছু বন্ধু/ভাই আমাকে ঘৃণা করবেন এমন আশাতেই চারপাশে চোখ বিদ্ধ করতেন কাজে-কর্মে, ভুল পেয়ে আমাকে ধরাশায়ী করে 'ঘৃণা' ছড়িয়ে চলে গেলেন। ঘৃণা করতে কষ্ট হয়না, ওটা আপনাতেই হয়। ভালোবাসা জিনিসটাই শ্রমসাপেক্ষ, বাজারি নারী-পুরুষ ভালোবাসার কথা বলছিনা, বলছি মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা।

জীবনটা খুব ছোট। অন্যের কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে, তারা কী মনে করলো সেই বিষয়টাকে গুণতিতে ধরে জীবনকে অনর্থক জটিল করার কোন মানে হয় না। অন্য মানুষেরা যেন কখনো যেকোন ভালো বা খারাপে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। শুধু একজন কী ভাবলো তাতে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। শুধু তাঁর, সেই মহান আল্লাহর পছন্দকে এড়িয়ে যাওয়াই এই জীবনের সবকিছুকে অর্থপূর্ণ থেকে অর্থহীন করে দিতে পারে। এই কেন্দ্রে স্রষ্টার সাথেই হৃদয় জুড়ে থাকুক, দূর হোক স্রষ্টার সৃষ্টিদের কাছে মানসিক কারাগারের বন্দীত্ব।

স্বপ্ন কারখানা, তিলোত্তমা নগরী
১১ আগস্ট, ২০১৩ ঈসায়ী

৯ আগ, ২০১৩

তরুণদের জীবনে ঈদ এবং নারী

গাইর-মাহরাম নারীদের সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ যেকোন উঠতি বয়সের ছেলে থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার কাছেই কমবেশি আকর্ষণীয়। লাগেই, লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহ তা অপছন্দ করেন। এমন মেলামেশা ও সম্পর্কগুলো হারাম। 'মিক্সড গ্যাদারিং' এড়িয়ে যেতে পারা মনে হয় তেমন সহজ নয়, যখন এখনকার সমাজে সবাই 'শিরাম স্মার্ট'। এখন প্রায় বন্ধুদের সার্কেলে ছেলেমেয়ে মেলামেশা থাকে, পরিবারে 'কাজিন'দের মাঝেও তা দেখা যায়। 'কাজিন' কখনই আপন ভাই-বোন নয়, এবং আমার শোনা অনেক বাস্তব ঘটনাতে আমি এই কাজিনদের সাথে দুনিয়ার জীবনের জটিলতা সৃষ্টিকারী নোংরা ও আখিরাত ধ্বংসকারী ভয়াবহ ঘটনার আলাপ শুনেছি। সাবধান থাকা আবশ্যক।

অনৈতিক মেলামেশার মাঝে কিছুটা জৈবিক/শারীরিক আনন্দ থাকলেও 'এগজস্টেড ফিলিং' এনে দিবে, তিক্ততার স্বাদ হবে, ঘটনা/মেলামেশার পরে ফেরত এসে খারাপ লাগা তৈরি হবে এবং জীবনের জটিলতা সৃষ্টি হবে। অমুকের সাথে মিশেছেন/মিশবেন তাই তমুককে তেল দিবেন, ঘমুককে ব্যাখ্যা দিবেন, টমুক আপনাকে গলা চেপে ধরবে। পরিবারে, বন্ধুমহলে, সমাজে ইজ্জত কমে যায়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান হারায়। ঈমানদারদের উঁচু পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস থাকে কেননা তারা জানেন তারা এমন কাজ করেননি, যা আল্লাহ অপছন্দ করেন। আর আল্লাহ যা অনুমুতি দিয়েছেন এমন কাজ এই দুনিয়ায় এবং আখিরাতেও সবাই জানবে--এমন ভয় হয়না। ইজ্জত তথা সম্মান আল্লাহরই হাতে, যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে, বেইজ্জতি তাদের প্রাপ্য হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদেরকে রহম করুন।

পুরষ্কার প্রাপ্তির দিনে আমার প্রিয়তম বাক্যগুলো

আজ ঈদ-উল-ফিতর। একমাসের সিয়াম সাধনার পুরষ্কার বিতরণী আজ, সবাই সমবেত হবো ঈদগাহে/মসজিদে ইনশা আল্লাহ। দু'আ করবো আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি ও আখিরাতের জীবনে মুক্তির প্রত্যাশায়। আমাদের গোটা মুসলিম উম্মাহ থাকবে দু'আতে। আমার যন্ত্রণাক্লিষ্ট-রক্তমাখা ভাই ও বোনেরা শুধুমাত্র আল্লাহকে রব মেনে শাহাদাহ ঘোষণা করাতেই পার্থিব সীমাহীন অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। আমরা অভাগা, পৃথিবীতে চলমান এই ঘটনাগুলোতে আমাদের কর্তব্য কী ছিলো এবং কী করেছি তার দায়ভার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে এড়াতে পারব না কিছুই।

আমাদের ঈদ হবে হয়ত সুন্দর, জামাকাপড় সুস্বাদু খাবার আর সুঘ্রাণে। কিন্তু অত্যাচারীদের আক্রমণে রক্তাক্ত প্রান্তরগুলো, পরিবারগুলোতে ভাই-বোনেরা কীভাবে ঈদ করছেন-- সেটা তো চিন্তার ও উপলব্ধির। আল্লাহ যেন আমাদেরকে ক্ষমা করেন, আমাদের দ্বীনকে বিজয়ী করেন। দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকা আমার ভাই-বোনদের যেন শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন, আমাদেরকেও যেন ক্ষমা করেন, বিজয়ীদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবার যেন যোগ্যতা দান করেন।

৮ আগ, ২০১৩

বোধ, শরীর মন ও আবেগ নিয়ে কিছু কথা

জীবন থেকে আমার একটা উপলব্ধি হচ্ছে, ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক যেকোন উন্নতির মূলে থাকতে হবে উত্তম চরিত্র, এর অভাবে বর্তমান সমাজ তথা পৃথিবীর ক্রমঅধোঃগতি হচ্ছে দ্রুতবেগে। উত্তম চরিত্রের মূলে রয়েছে উত্তম জ্ঞানার্জন (বইপড়া সর্বাগ্রে এবং সৎসঙ্গ ও অন্যান্য) যাকে বাড়াতে হবে, আমাদেরকে রোধ করতে হবে সময়ের অপচয়। জ্ঞান না থাকলে যত ভালো মনই থাকুক, তাকে ব্যবহার করা যায় না সঠিক উপায়ে। আর জ্ঞান থাকতে হবে, অবশ্যই থাকতে হবে আন্তরিকতা,ইখলাস।

একই সাথে নিজেকে যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করার মানসিকতাটা, নিজেকে চিন্তা করানোর পদ্ধতিটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জ্ঞান এবং বোধ দুইটা ভিন্ন জিনিস। একটা মানুষের কিছু জানা থাকলেই সে বুঝে -- এমন না। আমাদের সেই বোধটাকে গড়ে তোলা দরকার। আবেগ কমাতে হবে, দ্বীন এবং দুনিয়া উভয়ক্ষেত্রেই আবেগ কমিয়ে চিন্তা ও বুদ্ধিকে ব্যবহার করতে হবে। এই উপলব্ধি এবং প্রয়োগেও মনের মধ্যকার বোধের উত্তম অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। না হলে আবেগ জ্ঞানকে অতিক্রম করে, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয় না।

৭ আগ, ২০১৩

ঈদের ছুটি আর চিরদিনের ছুটি

ইফতার শেষে মাগরিবের সলাতে সালাম ফিরাতেই ইমাম সাহেব মাইক্রোফোনে বললেন যেন সুন্নাহ সলাতের পরে কেউ নফলের নিয়াত না করে, জানাযা হবে। জানাজা ছিলো বয়ষ্ক পুরুষের। শেষ তাকবীরের আগে 'আল্লাহুম্মাগফিরলি লিহায়্যিনা... ' পড়তে শুরু করে তার অর্থটা খেয়াল হলো শব্দগুলো ধরে ধরে। কয়েক জুমু'আ আগে খতীব সাহেব এটার ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিছু আলোচনাও করেছিলেন -- অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। জানাজার পরে আজকে মনে হলো একদিন আমার ঘরে আমার সবকিছু পড়ে থাকবে, খাতায় লেখা অর্ধেক পৃষ্ঠা, সবসময় চার্জের প্রয়োজন থাকা মোবাইল ফোনটা, অফিসের ব্যাগটা বিছানার একপাশে এলোমেলো পড়ে থাকবে। আমি থাকবো হয়ত ওই কফিনের ভেতরে, হয়ত তখন চাইতে থাকবো -- শির্ক না করা নিয়মিত নামাজ আদায় করা অনেকজন ভাই আমার জানাজাহ তে শরীক হবেন, আমার জন্য তারা দু'আ করবেন যেন অনন্তকালের জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাই। অথচ কেউ শুনবে না, জানবে না আমি কেমন আছি। এই একাকীত্বের যাত্রাই তো সত্যিকারের একাকীত্ব...

এই সময়ে আমাদের সমাজের স্বচ্ছল অথবা ধার্মিক পরিবারদের কথা

সম্পদের প্রাচুর্য ও সচ্ছলতা একটা অদ্ভুত ধরণের অহংবোধ নিয়ে এনে দেয়, অনুভূতিবোধকেও বোধহয় ভোঁতা করে দেয়। সহমর্মিতা জিনিসটা হয়ত খেয়েই ফেলে। সমাজের উচ্চবিত্তদের কম অংশই 'মনুষ্যত্ব' ধারণ করেন বলে মনে হয় ইদানিংকার ঢাকাভিত্তিক শহুরে জীবনের অভিজ্ঞতায়। অন্যদের জায়গায় তারা কখনো নিজেদেরকে বসিয়ে করে জীবনের কষ্টগুলোকে হয়ত ভেবে দেখতে, অনুভব করতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না তাদের কতটা যুদ্ধ করতে হয়। নিজেদের 'থাকা' কে তারা স্বাভাবিক ধরে অন্যদেরকে অবমূল্যায়ণ করেন প্রাচুর্য আর ক্ষমতার মানদন্ডে। অথচ সেই 'থাকা'টুকু তাদের সৌভাগ্য, আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া কল্যাণমাত্র, যার জবাবদিহিতাও হবে আখিরাতে, কঠিনভাবেই।

৪ আগ, ২০১৩

বাঁধভাঙ্গা পানির স্রোতের মতন শব্দগুলো

হঠাৎ বাঁধভাঙ্গা পানির স্রোতের মতন শব্দগুলো যেন
বুকের ভেতর থেকে প্রচন্ড বেগে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
ভোরের সূর্যের অস্ফূট আলোয় ভিজে যাওয়া ঢাকা শহরে
দালান-কোঠাগুলোর সারিতে এক ক্ষুদ্র কোণের গুমোট কক্ষে
আঙ্গুল চেপে গণনাযন্ত্রের পাতায় লিখছি একেকটি অক্ষর।
কোন বিশেষ কিছু বলতে নয়, স্রেফ হালকা হতে, নির্ভার হতে।

এই যে এই সময় চলে গেলো, তা আর কখনো ফিরে আসবে না।
আমার এই শব্দ, এই অনুভূতি, এই আবেগগুলো আর হুবহু রবে না।
বালুঘড়ি দেখেছিলাম, ঝরঝর করে ঝরার সময় কেমন অস্থির লাগত।
এইতো শেষ হয়ে গেলো, কে উলটে দেবে এরপর? শেষ দেখার এক তাড়না।
অথচ এই সময় আমার, এটাও শেষ হয়ে যাবে। জীবনটা বালুঘড়ির মতন
ঝরছে দ্রুতবেগে যেটুকু বাকি আছে। ঝরে নিঃশেষ হবো, মানুষ তো আমি!

যেখানে আমার শেষ, সেখানেই তাঁর শুরু। আমার সবটুকুই তার দয়া।
আমার চিন্তারা যেখানে অসহায়, দৃষ্টি যেখানে আটকে যায়, অজানাকে ভয়।
সেখানে তাকে খুঁজে পাই। ভালোবাসায় আশ্বস্ত করেন। জানিয়ে দেন পারব না।
এই না পারাতে নেই অসহায়তা, এই না পারাতেই মর্যাদা এই জন্মের।
যেন ফিরে ফিরে যাই তার কাছে। স্রষ্টা আর সৃষ্টির ব্যবধানকে উপলব্ধি করতে।

কেউ বলে কাহহার, তা সত্যি। আমি বুঝি রাহমান, বুঝি গাফুরুল ওয়াদুদ।
আমার হৃদয়ের এই শূণ্যতা, এই অনুভূতির এলোমেলো ঢেউগুলো, পবিত্র স্বপ্ন
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসের অস্থির আর্তিগুলো, চোখের অশ্রু, ভালোবাসা,
আমার অসহায় প্রতিটি ক্ষণ, আর অনুভূতিগুলোর সবই তো মানবের অপাঠ্য।
বাধ্য হয়ে আশ্লেষে, অশ্রুসিক্ত হয়ে ফিরে যাই তার কাছেই; যিনি রাহমান।

স্বপ্ন কারখানা
০৪ আগস্ট, ২০১৩

যদি জানতাম কবিতা লিখে কোন ব্যবধান কমানো যাবে

যদি জানতাম কবিতা লিখে কোন ব্যবধান কমানো যাবে,
যদি বুঝতাম একটা কবিতা কখনো হৃদয়ের জ্বালা জুড়াবে ,
হয়ত কবিতা লিখতে বসতাম আমি, অল্প ক'টা লাইনের।

কবিতাকে ফেলে রেখে এসেছি বহুদূর, ইচ্ছে করেই, সজ্ঞানে।
যেদিন বুঝেছি কাব্যবিলাস নিতান্তই সময়ক্ষেপন। এই বিশাল
পৃথিবীর মাঝে কোন পরিবর্তন হয়না কবিতায়, কোন বেলায়।

ক্ষুদ্র এই জীবনে নিন্তান্ত শব্দমোহে, শব্দচ্ছটায় আলোকিত হয়ে
হয়ত রুচবে না আমার অভাগা ভাইদের না খাওয়া একটা বেলা।
রক্তাক্ত ভাইয়ের যন্ত্রণার উপশম হবেনা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে।

ভোরের আলোর স্নিগ্ধতায় হৃদয়ের বিচ্ছিন্ন যন্ত্রণাগুলোকে বিন্যস্ত করতে
কীবোর্ড চেপে লিখছি কিছু কথা, যাকে আমি বলি আচমকা সৃষ্ট অকবিতা।
যে শব্দগুচ্ছের মাঝে কষ্ট, শূণ্যতা আর একরাশ সহমর্মিতা লুকিয়ে আছে।


স্বপ্ন কারখানা
০৪ আগস্ট, ২০১৩

যে বিষয় শুধুই উপলব্ধির

আল্লাহর রাহমাতে ছোটবেলা থেকে কুরআনকে নিয়ে দিনগুলো চলার অভ্যাস তৈরি হলেও নিজের ভুলে একটা সময় এসে এই সম্পর্কে ভাটা পড়ে গেলো। সমরেশ, শীর্ষেন্দু আর সুনীলের বইগুলোর মোটা মোটা ভলিউম প্রথম থেকে শেষ পাতা গিলতে শুরু করলাম, নতুন ভালোবাসায় পুরনো একটা মধুর সম্পর্ক হালকা হতে শুরু করলো।

'সেই বেলার কুরআন শেখায় আভিজাত্য কম ছিলো, কিন্তু গভীরতা আর আন্তরিকতা ছিলো অন্যমাত্রার' --এই বিষয়টা উপলব্ধি করলাম আজকে জুমু'আতে খতীব সাহেব কুরআন নিয়ে আলাপ করছিলেন যখন। ইখলাস জিনিসটার মাত্রা সত্যিই অন্যরকম। তখন যেই আয়াত পড়তাম, সেই একটা আয়াতের গভীরতা বুকের গহীনে দাগ কেটে থাকত। মনে আছে যখন পড়েছিলাম, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে ভরসা করে, আল্লাহ তা'আলাই তার জন্য যথেষ্ট হবেন' -- তখন সেই জীবনের প্রতিদিনের প্রতিমূহুর্ত আমি চেষ্টা করেছিলাম প্রাণপণে একটা অসম্ভবকে সম্ভব করতে। ব্যক্তিজীবনের সবচাইতে শক্তিশালী পার্থিব অর্জন আমার এই আয়াতের শক্তির উপরে ভিত্তি করেই ছিলো। এখন আমি হয়ত অনেক বেশি জানি সেই সময়ের তুলনায়, অথচ শক্তি কাজ করেনা তেমন। যা কমে গেছে তা হলো *ইখলাস*, sincerity.

২ আগ, ২০১৩

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আমাদের সমাজে আর দেশে-দেশে আলাদা

এক ছোটভাই সাজিদ ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, সে ফেসবুকে লিখেছে --
"দেশে দেখেছি মেয়েরা চিকন হওয়ার জন্য খাওয়া দাওয়া করেনা । রাতে ভাতের বদলে শসা খায়।স্লিম না হইলে বিয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা।
আমার এক রুমমেট মৌরিতানিয়ান । মামা কঠিন ট্যলেন্ট। ওদের দেশে নাকি মোটা মেয়ে ছাড়া বিয়েই হয়না। তাই মায়েরা ঠেসে ঠুসে খাওয়ায়।
তাই যারা আফ্রিকায় বিয়ে করতে চান তারা বেশি বেশি খান এবং প্রচুর মোটা হউন।"

কথাগুলোতে আনন্দের খোরাক আছে বৈকি!!