২২ জুল, ২০১৩

সমাজে অশ্লীলতা যখন ক্রমাগত ভয়াবহ হচ্ছে তখন তরুণরা কী করতে পারে?

এই চলমান সমাজে অশ্লীলতা ভয়াবহ থেকে ভয়াবহতর হচ্ছে। একজন কিশোর-তরুণের অশ্লীলতাবিহীন বেড়ে ওঠা সত্যিই কষ্টসাধ্য মনে হয়েছে আমার কাছে। একবার আমার একটা লেখা [১] একটা পেইজে শেয়ার হয়েছিলো, লেখাতে অবিবাহিত ভাই ও বোনদেরকে পবিত্র জীবনসঙ্গীর জন্য অপেক্ষার তাগিদ ছিলো আমাদের ইসলামের ইতিহাসে সেরা মানুষদের উদাহরণ টেনে। সেখানে কয়েকজন মানুষ *সত্যিকারের* অবিশ্বাস নিয়ে নির্দেশ করেছিলেন 'এমন (পবিত্র) ছেলে-মেয়ে এই সমাজে আছে নাকি?' তার প্রোফাইল ঘুরে, কমেন্ট পড়ে আমার বিশ্বাস হয়েছিলো সে সত্যিই কল্পনা করতে পারেনা এই সমাজে সত্যিকারের পবিত্র মনের মুসলিম এবং মুসলিমাহ আছে। আমার বড্ড কষ্ট হয়েছিলো সেই মানুষটার প্রতি। কত অশান্তই না সেই অন্তর! সুবহানাল্লাহ!

একজন তরুণ ভাইয়ের জন্য কিছু বিষয় আমার অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করবো। শুধুই ব্যক্তিগত মত। আমি ব্যক্তিগতভাবে টেলিভিশন/স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবনে অনেক আগেই বাদ দিতে পেরেছিলাম। তাই মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে টিভি দেখতে গিয়ে নির্লজ্জ কমার্শিয়ালগুলোর অত্যাচার দেখে ভীত হয়েছি। ক'দিন আগে দেখলাম -- বডি স্প্রের কারণে কাউন্টার দিয়ে এক ভারতীয় নায়ক দেখছে কতগুলো মেয়ে তার প্রতি শারীরিকভাবে 'অ্যাট্রাক্টেড' বোধ করছে। আরেকজনের সাথে তার এই বিষয়ে প্রতিযোগিতাও হচ্ছিলো!! নারীদেরকে পণ্য থেকে কামুক করে কতটা নীচে নামিয়ে এনেছে এমন কমার্শিয়ালে ভাবতেই ঘেন্না হয়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন ধ্বংসের দিকে ধাবমান এই নোংরা সংস্কৃতি থেকে।

২১ জুল, ২০১৩

এই রমাদানে

এই রমাদানে আগের কয়েক বছরের মতন হুলুস্থূল প্ল্যান করিনি। অনেক ভিডিও দেখে, অনেক লেখা পড়ে, আলাপ আলোচনা ও অনেক পরিকল্পনা করে সবশেষে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে থাকার বিষয়টাকে সজ্ঞানে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছি। আগের বছরগুলোতে রমাদান শেষে সবসময়ে মন আমার ভারাক্রান্ত হয়ে থাকত। আমার উপলব্ধি, কিছু সময় একান্তই নিজের করে নিতে হয়, তাই আমাদের সবারই ভিতরে যা আছে, সেটুকু নিয়ে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ রমাদান। গত জুমু'আতে খতীব সাহেব বলছিলেন, রমাদান হলো ক্ষমা লাভের সুযোগ, তাই বেশি বেশি ইস্তিগফার করার মাস। কথাটা বুকে দাগ কেটেছে।

রোজার আগে স্রেফ ঠিক করেছিলাম নিজের গোড়াটাকে শক্ত করা দরকার। তাই, সলাতের ব্যাপারে খুব যত্নবান হবো, আর কুরআনুল কারীম পড়বো একটানা। মুফতি তাকী উসমানীর (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন) তাফসীর সেটটা এতদিন ধরে বিছানা থেকে এক হাত দূরে টেবিলের উপরে সাজিয়ে রেখেছিলাম। তাকিয়ে দেখলেও কেমন আলাদা অনুভূতি হত, নেড়েচেড়ে দেখতাম মাঝে মাঝে। বুক হু হু করে উঠতো অজ্ঞতার তুচ্ছতায়, এখনো করে। আমার আল্লাহ আমার জীবনে ঠিকভাবে জন্য এতকিছু জানিয়ে দিয়েছেন, আমি পড়েই দেখিনি। আখিরাতে কুরআন শাফা'আতকারী হবে তো এই অধমের? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সাহসও করিনা...

ফেসবুক কী এনে দিচ্ছে আমাদের জীবনে ভাবছি তো?

ব্যাপারটা এমন না যে ফেসবুকে রাশি-রাশি ভারা-ভারা স্কলার বসবাস করেন। বরং ব্যাপারটা পুরাই উলটা। একসময় আমরা ইসলাম শিখতাম কখনো স্কুলের ইসলাম শিক্ষা স্যার, এলাকার মসজিদের ইমামের কাছে ছোট-খাটো প্রশ্ন করে। ফিকহের বই ছিলো বাসায়, সেগুলো দেখে তাহারাত, সলাত, সিয়ামের মতন বিষয় শিখতাম। কুরআনুল কারীমের অনুবাদ, রিয়াদুস সলিহীন, বুখারী, মুসলিম শরীফ পড়া হত মন দিয়ে; শেখার আগ্রহে। আমাদের অনেকেরই এমনই হিসেব ছিলো।

এই তো কয়েক বছর আগে থেকে ফেসবুকে যেই জিনিস দেখে ভালো লাগত তা হলো কয়েকজন ভাই এবং আপুর লেখা যেখানে ইসলামের উপলব্ধি ছিলো। সেখান থেকে নিজের জায়গাগুলো খুঁজে বের করে প্রয়োগ করার সময় সাহায্য পেতাম। কখন যেন এই জায়াগাটা যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে গেলো। দু'চার বছর আবেগ ভিজিয়ে ইসলাম শেখা, অ্যাকাডেমিকভাবে ইসলামের স্পর্শ না নেওয়া মানুষগুলো সকাল বিকাল শ্লীল-অশ্লীল শব্দ দিয়ে পারস্পরিক আক্রমণ শুরু করে দিলো। এখন যেখানে সেখানে ফাতওয়া পাওয়া যায়। স্কলারদের তুলাধুনা করা হয়। অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তোলপাড়। ব্যক্তিজীবনে, নিজের মাঝেই ইসলাম ঠিকমতন প্রয়োগ না করলেও ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়ের উৎসধারা হতে আমাদের ভুল হয়না।

পুরুষ হয়ে নারীর পর্দা নিয়ে খুব চিন্তিত?

আমার যেইসব ভাইয়েরা নতুন করে ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে চাইছেন এবং  সত্যিকার অর্থেই আল্লাহকেই কেবল খুশী করতে চান , তাদের জন্য ক্ষুদ্র একটা অনুরোধ -- দয়া করে নারীর পর্দা নিয়ে অনলাইন অফলাইনে একটা শব্দও লেখার আগে নিশ্চিত করুন নিজের চোখের সংযম।

নারীরা কখনো কোথায় কীভাবে কী আবৃত করবে, কী পরবে, কতটুকু খোলা রাখবে -- সেইটা নিয়ে গবেষণাপত্র পাঠ করার আগে চিন্তা করুন কোথায়, কীভাবে, কখন আপনি গায়ের মাহরাম নারীদের এড়িয়ে, সরিয়ে, দূরে থেকে নিজেকে সামলাতে পারবেন। নারীর দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ করার অনুমুতি কিন্তু আপনার নেই, তাই নিজেকে আগে পাপরাশি থেকে রক্ষা করুন, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে হিফাজত করুন।

টেলিভিশনে প্রচুর কমার্শিয়াল, কম্পিউটারে হিন্দি-ইংরেজি মুভি দেখে উঠে ফেসবুকে বসে অনেক মানুষ পোশাকের দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা আর রঙ নিয়ে কথা বলতেই পারে, আল্লাহই ভালো জানেন তাদের চোখ গায়ের মাহরাম নারীর দিকে আটকে থাকে... নাকি থাকে না। এই রামাদান মাসের বরকতময় সময়কে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত চরিত্রকে উন্নত করার তাওফিক দান করুন।

১৬ জুল, ২০১৩

আগামীর ভ্রমণ পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও ঘরবাড়িরগুলোর আলাপ

মাঝে মাঝে কিছু মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাই। অনেক অনাড়ম্বর। খুব কাছের মানুষগুলো তাদের ব্যাপারে যে সাক্ষ্য দেয় তা হৃদয়স্পর্শী। শুনে মনে হয়, আল্লাহ বোধকরি তাকে জান্নাতবাসী করবেন। আবার, পরম আড়ম্বরে দেখি অনেকের মৃত্যু হয়। পত্রিকা, টেলিভিশন, টক-শো, ফিচার, স্মরণসভায় বক্তাদের মিলনায়তন কাঁপানো আলাপ। ব্যক্তিজীবনে তারা চরিত্রহীন এবং সাধারণ মানুষকে যথেষ্টই যন্ত্রণা দিয়েই দীর্ঘজীবন ধরে সবাইকে যন্ত্রণা দিয়ে তাদের বিদায় হয়েছে। তখনই অনুভব করি, আসলে আমাদের পরিচিতি, সম্পর্ক, খ্যাতি, আরাম-আয়েশ, বন্ধন, জাঁকজমক বিষয়গুলো খুবই ঠুনকো। এই পৃথিবীর কোন কিছু পাওয়ার আশা করে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াটাই বোকামি, মূর্খতা। যাবার বেলায় সবাই শূণ্যহাতে বিদায় নেয় -- এই উপলব্ধিটা এই আঙ্গিকে হলে বেশ খা খা করে বুকটা।

আমি তো দেখেছি প্রতিটি মানুষই একেকজন যোদ্ধা

আমি তো দেখেছি আল্লাহর সৃষ্ট প্রতিটি মানুষই একেকজন যোদ্ধা। তাদের জীবনযুদ্ধগুলো একদম অন্যরকম। প্রত্যেকেরই পেয়েছি অনেক দীর্ঘসময় নিয়ে করার মতন গল্প। কারো সাথে কারো তেমন মিল পাইনা, প্রত্যেকের প্রেক্ষাপট, দৃষ্টিভঙ্গি, অনুভূতি আর জীবনদর্শনগুলো ছিলো স্বতন্ত্র। যাদের পেয়েছি আল্লাহর বান্দা হয়ে জীবন ধারণ করতে চাওয়া মানুষ, তাদের জীবনের পরীক্ষাগুলো যেন আরো বেড়ে যেতে দেখেছি! এসব বুঝেই কখনো কাউকে উপহাস করতে পারিনা, সাহস হয়না সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিতে। জানি, এক আল্লাহই মানুষের জীবন সহজ করে দেন। যারা দু'আ করে, যারা আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রাখে যে তিনিই সমস্ত ক্ষমতার মালিক, তিনিই সমস্যা দেন, আবার তিনিই তা সমাধান করে দেন -- তাদের দেখেছি জীবন নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কম, তাদের দেখেছি সমস্ত ভার আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিয়ে পরম শান্তিতে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে।

স্রেব্রেনিকা হত্যাকান্ড এবং একটি ১১ জুলাই

কিছু কথা কখনই খুব কাছের কাউকে ছাড়া আমি সচরাচর বলিনা। বলতে গেলে অনুভূতির অতিশায়ন হয়ে বদলে যায় কিনা এমন একটা চিন্তাও থাকে। যেমন, আজ যখন ইফতারের ঠিক আগে প্লেটটা ছোট ছোট কিছু সাদামাটা আইটেম দিয়ে পূরণ হয়ে গেলো, হঠাৎ মনে হলো আমারই এক ভাই কায়রোর পথে বসে ইফতার করছে কী দিয়ে?

মূহুর্তেই আরব সাগর পেরিয়ে আমার এই দু'চোখ যেন চলে যায় সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া, মিশরের পথে প্রান্তরে। ওদিকে সোমালিয়ায়, কাছেই রোহিঙ্গা ভাই-বোনেরা কতই না যন্ত্রণা সহ্য করে চলেছেন জীবন ধরে -- কেবল মুসলিম বলেই। আমার আফগানী, ইরাকী ভাই-বোনেরা আমার মতই রোজাদার, তাদের কি এত আয়োজন করে খাওয়া দাওয়া হচ্ছে? কত মা সন্তানহারা হয়ে খেতে বসে আকুল হয়ে কাঁদছেন হয়ত সন্তানটির জন্য, দু'আ করছেন তাদের জন্য প্রাণভরে... রেখেছি কারো খবর? এমনকি আমি ত অফিস শেষে আজকে বাসায় ফেরার সময়ও কারো খবর নিয়েই ফিরিনি!