৩০ এপ্রি, ২০১৩

উপলব্ধি বা দর্শনঃ জীবন কি কেবল বিভ্রম?

কত যে কথা লিখতাম আগে খাতায়, ডায়েরিতে -- অনুভূতি-উপলব্ধি সবকিছুই!! পড়তে পড়তে একসময় থেকে বুঝতে শুরু করেছিলাম, যা বলতে চাই আমি তার প্রায় সবই অনেকে বলে গেছেন। আগের সব বাদ দিলাম, এইতো কয়েক বছর আগে বিপুল চিন্তাভাবনা করে ফেসবুকে একবার একটা অনুভূতি লেখার পরে এক ভাই কমেন্ট করলো "ভাই, প্লেটোর chariot allegory তে এইরকম বিষয়েই ব্যাখ্যা করেছে।" গিয়ে দেখি সত্যিই তাই! সেদিন প্রথম এই টাইপের আনন্দমিশ্রিত ধাক্কা খাই।

২৮ এপ্রি, ২০১৩

ফেসবুক জীবনঃ লাইক শেয়ার আর কমেন্টের ভালোলাগা

ফেসবুকে প্রথম সাইনআপ করেছিলাম ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তখন থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনে কম্পিউটার জড়িয়ে থাকায় খুব কমই বড় সময়ের দুরত্ব হয়েছিলো। জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে সাথে এই দীর্ঘ সময়ে আমার চিন্তা ও উপলব্ধির বিবর্তন হয়েছে, ফেসবুকও যার একটি অংশ। বিগত শাহবাগী-পরবর্তী সময় থেকে এখন অবধি উত্তাল ফেসবুক দেখে অনেক কথা মনে হচ্ছিল...... কেন এত সময় দেয়া এখানে? প্রচুর শেয়ার পাবার নিয়াতেই ছবি এডিট হয়? অনেক লাইক পাওয়ার আনন্দ উপভোগের আশায় স্ট্যাটাস দেয়া হয়? পেইজ প্রমোট করতে নোংরা নামের অজস্র পেইজ খুলে লাইক চেয়ে বেড়ানোতে কী লাভ? পেইজের অ্যাডমিন হওয়ায় কীসের এত অস্থিরতা? কী লাভ? ছবি আপলোড করে কেন এত লাইক ও কমেন্ট পেতে ইচ্ছা করে? কেউ আমাকে স্মার্ট, কিউট, সুইট বললে তাতে কীসের এত আনন্দ? সাহায্য চাওয়ার নামে নিজের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে মেরে দেয়া, সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যার প্রচার সর্বোচ্চ হলো যেন সর্বত্র। কথার সত্যতা যাচাই ছাড়াই ছড়াচ্ছে যা-তা।

সাভার ট্র্যাজেডির শত শত লাশ এবং একটি জুমু'আ

জুমু'আর সলাতে নিয়মিত হয়েছিলাম যতদূর মনে পড়ে সেই ক্লাস ওয়ান-টু থেকে, সাত বছর বয়সের সময়েই। খুবই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছাড়া কোনদিন মিস করেছি বলে মনে পড়েনা। তবে আজকের মতন ব্যতিক্রম দিন খুব বেশি ছিলো না। আজ সলাতের পরে একজন মাইয়্যেতের জানাজা পড়লাম। এরপর সম্মানিত ইমাম সাহেবের সাথে দু'আতে হাত তুলেছিলাম তিন-চারতলা বিশাল মসজিদে হাজার হাজার মুসল্লি একসাথে-- এরকম উচ্চস্বরে কান্নার শব্দ আমি জুমু'আর সময়ে শুনিনি আগে। সাভারে নিহত দ্বীনি ভাইবোনদের জন্য জান্নাতের দু'আ, অসুস্থদের দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য দু'আ মহান আল্লাহর কাছে। দু'আর সময়ে সব মানুষের সাথেই আবেগ বাঁধ মানছিল না -- সবাই জানে এ কেমন দুর্যোগ চলছে। বিশাল বিশাল স্লাবের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাড়গোড় গুঁড়া হয়ে যাওয়া মানুষদের কথা মনে হচ্ছিলো।

২৪ এপ্রি, ২০১৩

যদি নিজেকে ফালতু মনে হয় এবং বদলে যেতে চান তাহলে আপনার জন্য

সকালে ভোরের আলো ফুটছিলো যখন, তখন স্মৃতি হাতড়াচ্ছিলাম। খুব সম্ভব কলেজে পড়ি তখন, কোন স্যার হয়ত বলেছিলেন যা আমার মনে পড়ে এমন করে -- "জীবনকে এমন করে গড়বে যেন তুমি যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, তখন যেন এই অনুভূতিটা নিয়ে যেতে পারো যে এই পৃথিবীকে আগের চাইতে ভালো করে রেখে গেলে।"   

১৯ এপ্রি, ২০১৩

কোন আড়ালে পালাবো বলো?

কৈশোরে আমার একটা শখ ছিলো, কোন ডায়েরি পেলে প্রতিটি পাতার নিচে লিখে রাখা বিভিন্ন লেখক ও দার্শনিকদের উদ্ধৃতিগুলো পড়তাম। উপদেশ পেতে আমার বড়ই ভালো লাগত সেই বয়সে-- বড় ভাই, স্যার, মসজিদের ইমাম সবার উপদেশ আমি গোগ্রাসে গিলতাম আর চিন্তাভাবনা করতাম, খুবই আনন্দ লাগত। সেই সময়ে পড়া একটা উক্তি আমার আজকে মনে পড়ছে, কে বলেছিলেন মনে নেই -- "অন্ধকারে তুমি কি সেটাই তোমার চরিত্র।" একই রকমের একটা কথা পড়েছিলাম একবার, "নির্জনতায় মানুষ ফেরেশতার চাইতে উত্তম নইলে শয়তানের চাইতে অধম।" এই কথাতেও চিন্তার খোরাক পেয়েছিলাম। আজকে হঠাৎ এই বাণী দু'টো মনে পড়ে যাওয়ায় ভাবছিলাম, আসলেই চিন্তাজাগানো কথা এগুলো। সবার সামনে আমরা অনেক সুন্দর ভালোমানুষের রূপ ধরে থাকতে পারি, সুন্দর কথা বলতেই পারি, হাসিমুখে তাদের সামনে বিনম্র ভালোমানুষের ভাব দেখাতে পারি। কিন্তু যখন আমি নির্জনতায় রুমে একা, তখন শয়তান এসে ওয়াসওয়াসা দেয়, মনের ভিতরে কুচিন্তা ও কুধারণাদের আগমন হয়। মাথায় হয়ত থাকে, কেউ তো আর দেখতে পাচ্ছে না, সমস্যা কী? সেরকম সময়ে অনেক ভালোমানুষের ভিতর থেকেও ভয়াবহ জন্তু-জানোয়ার বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু আসলে আমরা কি কখনো *আড়ালে* থাকতে পারি?

১৮ এপ্রি, ২০১৩

আল্লাহর উপরে আস্থা আমরা কেন রাখি? কীভাবে রাখি?

গভীর কষ্ট, যন্ত্রণা আর চাপের মাঝেও আমাদের সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার উপরেই আস্থা রাখা উচিত যিনি মুসা আলাইহিস সালামের সামনের লোহিত সাগরকে ভাগ করে পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন, যিনি ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে দগ্ধ করতে চাওয়া অগ্নিকুন্ডকে শান্তিময় শীতল করে দিয়েছিলেন, যিনি বদরের প্রান্তরের মানুষগুলোকে জয়ী করতে ফেরেশতাদের পাঠিয়েছিলেন, যিনি বৃদ্ধ বয়সে জাকারিয়া আলাইহিস সালামকে দান করেছিলেন ইয়াহইয়া (আ) এর মতন সন্তান, যিনি বৃদ্ধ ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে দান করেছিলেন ইসমাইল ও ইসহাক দু'জন নাবী (আলাইহিমুস সালাম)। আল্লাহর নির্দেশেই শিশু ইসমাইলের পায়ের আঘাতে তৈরি হয়েছিলো আমাদের বিষ্ময় ও রাহমাতপূর্ণ যমযম কূপ, খটখটে রৌদ্রে তৈরি করা নূহ আলাইহিস সালামের কিশতিকেও তিনিই ভাসিয়েছিলেন পাহাড় ডুবে যাওয়া পানির প্রবাহে।

আমাদের কাছে যা অসম্ভব, সেটা তার কাছে কোন ব্যাপারই না, কারণ তিনিই সৃষ্টিকর্তা। তিনি তাদেরকেই সাহায্য করেন যিনি তার উপরে বিশ্বাস রাখে, আস্থা রাখে। এই আস্থা কোন 'terms and conditions' দিয়ে তৈরি হওয়া না, এই আস্থা আমাদের পরম আস্থা। হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা, নির্ভরতা কেবল তার উপরে সঁপে দিয়েই আমরা নির্ভার হই। আমাদের মালিক আমাদেরকে যখন ইচ্ছা তখন দান করেন, আমাদের জীবনের ও অস্তিত্বের প্রতিটি জিনিসই তার দান। এই দান আরো বাড়বে, আমরা যতই শুকরিয়া করব, যতই পাগলের মতন চাইবো। আল্লাহ যখন দান করেন, কীভাবে দান করেন, কোথা থেকে আসে তা বোঝার যোগ্যতা মানুষের হয়না, সেই শক্তি ও ক্ষমতা ক্ষুদ্র মানুষের নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম শক্তিশালী, সর্বজ্ঞানী, ইবাদাতের যোগ্য একমাত্র সত্ত্বা। সমস্ত প্রশংসা কেবলই আল্লাহর যিনি রাহমান, যিনি রাহীম। আল্লাহ আমাদেরকে তার প্রতি সবসময়, প্রতিক্ষণে, প্রতিমূহুর্তে প্রশান্তচিত্তে কৃতজ্ঞ থাকার তাওফিক দিন।

[১৭ এপ্রিল, ২০১]

অনেক কষ্টের সময়েও যেন অন্তত এই কথাগুলো স্মরণে থাকে

খুব বেশি কিছু না। শত শত পাতার বই মুখস্তের বিষয় না, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শোনাও না, প্রিয়জনের হাতের স্পর্শে আশ্বস্ত হয়ে কিছু শিখতে যাওয়াও নয়। যখন যে কঠিন সময়ে সবকিছু ফেলে চলে যায়, যখন একদম অসহায় হয়ে যাই শত্রুতায়, বিপদে, কষ্টে, পরীক্ষায়; তখনো শুধু এই কথাটুকু হলেও যেন স্মরণে থাকে--

তিনি আমাকে ফেলে যাননি, যাবেন না। আমি যখনই তাকে স্মরণ করব, তিনিও করবেন। তিনি আমার সবচাইতে আপন, আমাকে তিনি ভালোবাসায় সিক্ত করে রেখেছেন বলেই এই নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আমাদের জীবন এখানেই শেষ নয়, এই নিঃশ্বাসের শেষে শুরু হবে অনন্তজীবন। সফলতা হবে সেই জীবনে। আমার এই ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্বও একটা রাহমাত কেননা একারণেই তাকে অনুভব করছি গভীর করে। আমার অশ্রুভেজা প্রার্থনা, আমার স্মরণ কখনো বিফলে যেতে পারেনা। এই চাওয়া, এই আর্তি তো সেই মহান সত্ত্বার কাছে, যার হাতে সকল ক্ষমতা। তিনি চাইলেই ধ্বসে যাবে পাহাড়-পর্বত, প্রাণ চলে যাবে জালিমের, অকল্পনীয় উপায়ে তিনি হয়ত আমার সামনে হাজির করবেন এমন জিনিস যা কেবল হৃদয়ের স্বপ্ন-কল্পনাই। যিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, যিনি প্রবল প্রতাপশালী রাজাধিরাজ পবিত্র সত্ত্বা, যিনি জানেন আমার মনের গূঢ়তম চিন্তাটাও, তিনি আমাকে দেখছেন আমি কতটুকু তাকে অনুভব করি, আর কাছে কতটা ভিখিরি হয়ে চাইতে পারি, তার সন্তুষ্টি পেতে কতটা ত্যাগ আমি স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি। পুরষ্কারের বেলা তো কেবলই তার। যেদিন তিনি পুরষ্কার দিবেন সেদিন জালিম-অন্ধ ভোগবাদীরা সবাই অসহায় হয়ে থরথর করে কাঁপবে ভয়ে। সেদিন তিনি তার প্রিয় বান্দাদের নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত করবেন চিরকালের জন্য। সেদিন কেবল তারই ক্ষমতা থাকবে, সবার সাময়িক জারিজুরি রহিত হবে তার আগেই। সেই মহান আল্লাহর জন্যই তো এই জীবন। এই কষ্ট, এই ত্যাগ, এই যন্ত্রণা, এই অশ্রুভেজা চোখ, এই আহত শরীর, এই আহত হৃদয়, এই সবর ---- সবই তো তোমার জন্য হে রাহমান, সবই তোমার জন্য হে গাফুরুল ওয়াদুদ। তোমার ভালোবাসায় আমাদের সিক্ত করো!! :'(

[১৭ এপ্রিল, ২০১৩]

সফল জীবন কার? কোথায় যাব সফল হয়ে?

আমার বন্ধুর চাচী মারা গেছেন রোড অ্যাক্সিডেন্টে। ছোট্ট একটা সন্তান আছে তার। শিক্ষিকা ছিলেন, ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নির্দেশ চলেই এসেছিলো, তাই তার রূহ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো। শোকাহত বন্ধুকে বলার কিছু পাচ্ছিলাম না, নীরবতাটুকুতে শুধু দু'আ করা। আল্লাহ যেন তার বান্দাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। তিনি যেন আল্লাহর রাহমাতপূর্ণ অভ্যর্থনাতে গৃহীত হন কবরে।

অদ্ভুত লাগে! নিশ্চিত যাত্রা আমাদের কবরে। এই রূহ আমার পৃথিবীর কিছু না। এই শরীরে রূহ না থাকলে তা একটা লাশমাত্র। সেই শরীরে রং মেখে, কাপড় চড়িয়ে, প্রসাধন লাগিয়ে আমাদের অন্ধজীবনের অজস্র সময় কাটে। এই আত্মার যত্ন তো নেয়া হয় না তেমন। মহান আল্লাহর স্মরণে চোখের পানিতে ধুয়ে এই আত্মার যত্ন হতে পারত, খারাপ শব্দ থেকে কান সরিয়ে রেখে, নোংরা-অশ্লীলতা থেকে চোখকে সাবধানে রেখে এই যত্ন হতে পারত, মুখকে অনর্থক কথাবার্তা থেকে, আঙ্গুলকে অর্থহীন শব্দলিখন থেকে মুক্ত রেখেও এই অন্তরকে যত্নে রাখা যায়। নফস শয়তানের কাছে এমনভাবেই পরাজিত থাকে যে মুক্তির জন্য দু'রাকা'আত সলাত আদায়ও করতে পারিনা! 

১৫ এপ্রি, ২০১৩

সঙ্গ পেতে চাই

নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে প্রায়ই খুব ভেঙ্গে পড়তে নিই। চারপাশের দিকে চেয়ে কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা, অন্তরকে প্রশান্ত রাখতে পারিনা। এত সীমাহীন রাহমাতে ডুবে থেকেও কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পারিনা। আল্লাহর রাহমাতে মাঝে মাঝে মনের এমন অবস্থায় যখন স্কলারদের জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে যাই , তখন জীবনের অনুভূতিগুলোর কথা ভেবে আবার খুব লজ্জা পেয়ে যাই। জানি আমার মতন এই তুচ্ছ পাপাচারী বান্দার যোগ্যতা পৃথিবীর মাটিতে হেঁটে যাওয়া সেই মানুষগুলোর পায়ের ধুলোর সমানও যোগ্যতা নেই। কিন্তু, একথা সত্য -- মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। স্বপ্ন এমনই, যার সাথে বাস্তবের অবস্থানের অনেক পার্থক্য থাকে, আমরা সেটার পানে ছুটে ছুটে যোগ্যতা অর্জন করি। আমাদের নির্ভরতা কেবলই আল্লাহর উপরে থাকে। তিনি তখন বারাকাহ দেন। ইসলাম তো আমাদের এমন করেই শেখায়, যত পাপিষ্ঠ-অপরাধীই হই না কেন, ইস্তিগফার করে, তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসার পথ মৃত্যু পর্যন্ত খোলা। হতে পারি আমি অযোগ্য, নীচ, পাপিষ্ঠ কিন্তু তবু নিজেদের শুধরে নিয়ে আখিরাতে সঙ্গ পেতে চাই আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের, তাদেরকেই ভালোবাসতে চাই এই দুনিয়ায়।

একটু আগে স্কলারদের কথা ও জীবনীর দিকে আপনমনে চোখ বুলাচ্ছিলাম। চোখ আটকে গেলো ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের (রাহিমাহুল্লাহ) একটা উদ্ধৃতির দিকে। মানুষগুলো কত অসাধারণ ছিলেন সুবহানাল্লাহ! নিজেদের উপরে তারা কতই না কাজ করেছিলেন, শ্রম দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে অর্জন করেছিলেন ঈমান। অদ্ভুত সুন্দর সেই বাক্যটি ইমাম আহমাদের --

“আমার সেরা দিনটি হলো যেদিন জেগে উঠে খাবারের তাকগুলোকে শূণ্য পাই, সেই দিনটির জন্য আল্লাহর উপর আমার নির্ভরতা (তাওয়াক্কুল) পরিপূর্ণ থাকে।” — ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ)  

[মৃত্যু, ২৪১ হিজরী, বাগদাদ]

১৪ এপ্রি, ২০১৩

এই শহর, এই নতুন বছর, এই উদ্দামতা

এই নগরীতেই আমার জন্ম, এখানকার আলো-বাতাস, ধুলোমাখা রাস্তায় পা মাড়িয়েই আমার বেড়ে ওঠা। একটা কাজে বেরিয়েছিলাম সকালে। রাস্তায় আজকে যে নারকীয় অভিজ্ঞতা হলো, তা আগে কখনো হয়নি। আসরের আগে ফেরার পথে প্রবল জ্যামে বারবার বাস হার্ডব্রেক করছিলো। একবার তো সামনে সিটে বাড়ি খেয়ে নাক দিয়ে রক্ত পড়লো। রুমাল চেপে বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। সামনে অনেকদূর রাস্তার সকল বাস-ট্রাক থেমে আছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম আশেপাশে কনসার্ট হচ্ছে তাই এত জ্যাম। ফুটপাথে হাঁটার উপায় নেই, প্রচন্ড ভীড়। এতগুলো নানান বয়সের কপোত-কপোতী ও অন্যান্যরা এই গরমে, ধুলোয়, রাজপথের নোংরা পরিবেশে কেন কষ্ট করে দাঁড়িয়ে ছিলো/পথ চলছিলো?

তারুণ্য ও বিকিয়ে দেয়া চরিত্র নিয়ে কিছু কথা

ক'দিন আগে সন্ধ্যাবেলা মেইনরোড থেকে ভিতরে এলাকার প্রশস্ত গলিতে এমাথা-ওমাথা হাঁটাহাঁটি করছিলাম। এমন সময় সামনে তিনজন ছেলে ও একটা মেয়ে পাশাপাশি হাঁটছিলো, কাঁধে স্কুলব্যাগ ঝোলানো কয়েকজনের, এটুকুন পোলাপাইন, হাঁটতে হাঁটতে অকারণেই পাশের ছেলেরা মেয়েটার সাথে 'ঠোকাঠুকি' খাচ্ছিলো। আলো-আঁধারির পথে আমার সামনে সামনে তারাও অনেকক্ষণ চক্কর দিলো। গায়ে অকারণে ঢলে পড়া ও তা 'সম্ভবত' খুশিমনে সহ্য করার এই দৃশ্য অনেক্ষণ সহ্য করে আমি পথ বদলে দিলাম।

আমরা মনে হয় ঘুরে ফিরে নিজেকেই দেখি অন্যদের মাঝে

"আমরা মনে হয় ঘুরে ফিরে নিজেকেই দেখি অন্যদের মাঝে।" -- এটা কেমন একটা অদ্ভুত টাইপের কথা না? সেদিন এক ছোট ভাইয়ের সাথে আলাপ করছিলাম, ছোটবেলা থেকে আমার কিছু প্রিয় মানুষ ছিল। সময়ের সাথে সাথে তারা অনেকেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে হারিয়ে গেছে। তারা হয়ত বেশিরভাগ তাদের মতই আছেন, বদলেছি আমি। একসময় আমার যা ভালো লাগত, আমার এখন তা ভালো লাগেনা, আমার ভালো লাগে অন্যকিছু। তাই আমার ভালোলাগা বিষয়গুলো যাদের মাঝে আছে, তাদেরকে আমার ভালোলাগে। নিজের ভালোলাগা কী, সেইটা নিয়ে যেমন খেয়াল রাখা উচিত, তেমনি কারা আমাকে পছন্দ করে, সেটাও চিন্তা করা উচিত। চরিত্রহীন মানুষ যদি আমার ভালোবাসার তালিকায় থাকে, বা আমি যদি তাদের ভালোবাসার তালিকায় থাকি, উভয়ক্ষেত্রেই তা আতঙ্কিত হবার বিষয় -- আমার ঈমান ঠিক আছে তো?

কোন কিছু কি সহজ? আমরা কি কিছু করতে পারি?

কোন কিছু কি সহজ? আমরা কি কিছু করতে পারি? সবকিছুই তো কঠিন, যতক্ষণ না তিনি তা সহজ করে দেন, যতক্ষণ না তিনি আমার চারপাশকে একটা কাজের জন্য তৈরি করে দেন। আশেপাশের কতজন কী ভীষণ বদলে গেলো, সুন্দর থেকে সুন্দর মন-প্রাণের হয়ে গেলো। কেউ কেউ এত খারাপ হয়ে গেলো, সেই খারাপ কাজে মরেও গেলো। প্রায়ই ঘোরের মতন লাগে। এইতো সেদিন ছিলাম একসাথেই, একই আড্ডায়। আজ ছেলেগুলো নেই, আর কোনদিন পৃথিবীতে আসবে না। আমার নিজেরও অফিসে বের হবার সময় প্রায় প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় মনে হয়, আজ কি বাসায় ফিরতে পারব দিনশেষে? আমরা তো ভীষণ দুর্বল সৃষ্টি। আমার দুর্বলতা আমি টের পেয়েছি যখন জ্বরে বিছানায় শুয়ে ঘোরে চলে গিয়েছি। অথবা অপারেশন থিয়েটারে ডাক্তারের সুঁই আর চাকুর নিচে গিয়ে মনে হয়েছিলো, আমার বিভ্রমের জীবনের সমাপ্তি কি তেমন কঠিন কিছু? যাদের চারপাশে বেঁধে রাখতাম, জুড়ে থাকতাম -- সবাই তো দূরেরই।

৯ এপ্রি, ২০১৩

জীবনকে বদলে দিতে প্রয়োজন কেবল একটি উদ্যোগ

আমি মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে তাকাই, আমার অতীতে। আর দশজনের মতন সময় অতিক্রমণ হলেও, সাফল্য কম ছিলো না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অশেষ রাহমাতে। যখন থেকে জীবনে ভাবতে শুরু করেছিলাম এত পরিশ্রম আমি করে আসলে কী অর্জন করব, কেন এই পৃথিবীতে এলাম, কেন আমার জীবন একজন আমেরিকানের জীবন থেকে কম সুবিধাসম্পন্ন হবে (তখন আমি ভাবতাম আমি আম্রিকায় জন্মাইলে অনেক কিছু করে ফেলতাম একাডেমিক্যালি) এরকম শত-শত প্রশ্ন। আমি অনেকগুলো বছর একটা অদ্ভুত যন্ত্রণার মাঝে অব্যক্ত প্রশ্ন নিয়ে হাবুডুবু খেয়েছি, কাউকে বলা সম্ভব হয়নি/বলে লাভ হয়নি কারণ তেমন কাউকে পেতাম না যাদের এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মাথ্যাব্যথা আছে। কেন যেন মনে হয়, বেশিরভাগ মানুষই জানেনা সে কেন জীবন কাটাচ্ছে পৃথিবীতে। সে একটা ফোন না থাকায়, ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারায় মন খারাপ করে, অথচ সে যদি আজ থেকে ২০০ বছর আগে জন্ম নিত, তখন কি এই বিষয়গুলোতে মন খারাপ হত? কী অদ্ভুত না? এই জিনিসটা তবু কেন আমাদের এত মর্মবেদনার কারণ হবে? কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাব, কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন -- এসব উত্তর যা-তা ভাবে যার-তার কাছ থেকে পাওয়া অস্বাস্থ্যকর, সে আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই জীবনের। রীতিমতন আতঙ্ক লাগে যেখানে সেখানে 'ক্রিটিক্যাল' বিষয়ের কিছু শিখতে গেলে! তবে, অভিজ্ঞতা ও জীবনকে উপলব্ধি করতে আমি সবখান থেকে শিখতে রাজি।

হাজার বছর এই বাংলার মাটি মুসলিমদের রক্তে আর অশ্রুতে ভেজা

মাত্র কয়েকশত বছর পেছনে তাকাই? বৃটিশরা যখন এই ভূখন্ড কব্জা করে নিলো, তখন অন্যায়-অত্যাচারে কিন্তু কিছু লোক হাত মিলিয়েছিলো, তারা জমিদার হয়েছিলো, নীলকর হয়েছিলো -- তারাই সুবিধাভোগী ও অন্যায়কারী স্থানীয় লোক। সাধারণ মানুষ তখনো যন্ত্রণাদগ্ধ ছিলেন, অর্থনৈতিক-সামাজিক-ধর্মীয়ভাবে তারা শোষিত ছিলেন। মাওলানা হাজী শরীয়তুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেছিলেন বিদ'আত-শিরকমুক্ত সমাজ গঠনে, দাওয়াতের আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে। মানুষকে জ্ঞানের আলোয় মুক্ত করার এই আন্দোলনের নেতা ২০ বছর মক্কায় সেরা আলেমদের ছাত্র ছিলেন। তার পুত্র পীর মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া (১৮১৯-১৮৬২) সেই আন্দোলনকে তরান্বিত করেন যিনি নিজেও মক্কায় পড়াশোনা করেন অনেকগুলো বছর। ফরায়েজি আন্দোলনে তিনি ইংরেজদের ও তাদের সমর্থনকারী জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ দেন। মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়ার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর (রাহিমাহুল্লাহ) যিনি কুরআনের হাফিজ ছিলেন। মুসলিমদের দাড়ির উপরে খাজনা ছিলো তখন। তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ন অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় জমিদারদের নিজস্ব বাহিনী এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর বৃটিশ সৈন্যর তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র তিতুমীর ও তাঁর অনুসারীদের অক্রমন করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে দাঁড়াতে পারেনি; তিতুমীর (রাহিমাহুল্লাহ) শহিদ হন। পরবর্তীতে ফরায়েজী আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলনের এমন অনুপ্রেরণা থেকেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ হয়। এমন মানুষদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়েই ব্রিটিশরা ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে যায়, অবশেষে ভারতবর্ষ ছাড়ে ১৯৪৭ সালে।

৮ এপ্রি, ২০১৩

ঈমান নিয়ে সীমানা সুস্পষ্ট যখন

যখন ইসলামবিদ্বেষী উগ্র ঘৃণ্য নাস্তিকদল ও তাদের প্রশ্রয়-সমর্থনদাতাদের লাগাতার সীমাহীন অসভ্যতা, উগ্রতা, সীমালঙ্ঘন, আস্ফালন পরিষ্কারভাবে অবধারিত একটি মোটাদাগের রেখা টেনে স্পষ্ট করে আলাদা করে দিলো দ্বীনের প্রতি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা আর ঈমান রক্ষার তাগিদে জেগে ওঠা মুসলিমদের সাথে -- তখন বিষয়টি লক্ষ্যণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ! এই দেশের, এই সময়ে, এই পরিস্থিতিতে কারো পক্ষে এই সুস্পষ্ট বিভাজন এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। সমস্ত আলেম, সমস্ত মুসলিমদল, সকল ঈমানদার মানুষ যখন একদিকে স্থান নিয়েছে, তখন অন্যপাশে ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক ইসলামবিদ্বেষীদের কাছ থেকে ইসলামের ব্যাখ্যা নিয়ে যারা স্বস্তি/আশ্রয় খুঁজতে চাইছেন তারা যে ইসলামের ধারে-কাছে নেই তা বুঝতে 'কমনসেন্স' যথেষ্ট। ইসলাম শিখতে হয় যারা জীবন ধরে দশক-দশক যাবত ইসলামের গভীরে গিয়েছেন, শিখেছেন, জীবনের প্রতি পদক্ষেপে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে পালন করেছেন/করার চেষ্টা করেছেন তাদের কাছ থেকে!

৭ এপ্রি, ২০১৩

আমার সফলতা, আমাদের সফলতা

জীবন থেকে কিছু অদ্ভুত জিনিস শিখছি। সবাই আমরা অনেক সুন্দর সময়ের অপেক্ষা করি। আমাদের কষ্টগুলো করাই হয় ভালো কিছুর আশায়। যেমন আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনের চারটা বছর ত্যক্ত-বিরক্ত হওয়া শিডিউলে ক্লাস-কুইজ-ল্যাব-অ্যাসাইনমেন্ট-রিপোর্ট-ফাইনাল টাইপের চক্রগুলো কাটিয়ে একটা এমন সার্টিফিকেট নেয়া, যার পরে চাকুরি করা যায়। রেজাল্টের পরে প্রোভিশনাল সার্টিফিকেট হাতে একটা প্রশান্তি হয়, কিন্তু এরপরেই আরেক নতুন যন্ত্রণার শুরু। সবসময়েই আমাদের জীবন কাটে অপেক্ষায়। নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত অন্তহীন অপেক্ষা...

৩ এপ্রি, ২০১৩

বদলে যায় চারপাশ, আমরা কি বদলাই?

আজ অফিসপাড়ায় রাস্তায় অনেক মানুষের ভীড়ে হঠাৎ করেই খেয়াল হলো, কী করলাম এই জীবনে? এইরকমই কিছু শংকা, কাজের চাপ, ভবিষ্যতের চিন্তা নিয়েই দিন পার হতো অনেকগুলো বছর আগেও। বুকের এক অংশে অজানার আশংকা, ল্যাবে-কুইজের চিন্তা, 'ভবিষ্যতে কী যে করবো' টেনশন, এক অংশে অনির্ণেয় শূণ্যতা নিয়ে অস্থির জীবন ছিলো। এক বন্ধুকে ডেকে পেয়ে গেলাম সৌভাগ্যক্রমে, বলছিলাম, কী লাভ হলো বড় হয়ে রে? এখন টেনশন করি 'বস'কে কী রিপোর্ট করব সেইটার, বেতন বাড়ানোর... সময়ের সাথে জীবনের অবস্থান বদলালেও বুকের অবস্থা অনেকটা একই। শুধু শূণ্যতা একটু বদলেছে। হয়ত বিগত কয়েকটা বছর সত্য-সুন্দরের এক স্বপ্নভান্ডার ও রত্নভান্ডারের সন্ধান পেয়ে অন্তরের অনেক শূণ্যতা পূর্ণ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। তবু, কিছু পেরেশানি ও চিন্তাভাবনার বিষয়গুলো বোধহয় মৃত্যু অবধিই থাকবে। কারণ, আমি অনেকবার ভেবে দেখেছি, আমি প্রয়োজনের চাইতে অনেক কম চিন্তা করি ঐসব পেশাগত ও টাকা-পয়সা বিষয়ে। জীবনযুদ্ধে এতটুকু মনে হয় আবশ্যিক, সবাইকেই করতে হয়...

২ এপ্রি, ২০১৩

বৃষ্টিভেজা রাতে তিলাওয়াত শুনে মুগ্ধ মন

ভেজা পিচঢালা রাস্তার পথ মাড়িয়ে প্রিয় মসজিদের সিঁড়ি বেয়ে সাদা ধবধবে মার্বেল পাথরে পা রাখতেই একটু বেশি শীতলতার স্পর্শেই যেন টের পেলাম আজ বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা ছিলো। সলাতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকা'আতে ইমামের সূরা হাশরের ২১ নম্বর আয়াতটির 'লাও আনযালনা হা যাল কুরআনা আলা জাবালিল... ...ইয়াতাফাক্কারুউন" তিলাওয়াত শুনে মনে হলো, এই কন্ঠের আর্দ্রতাটাও কি আজকে একটু বেশি না? হয়ত ইমামের কন্ঠে আসলেই বেশি আবেগ ছিলো, আয়াতটি তিলাওয়াত করার সময় অর্থটা অনুভব করেই এমন হয়েছিলো তার, আমি জানিনা। তবে, আমার অনুভব হয় সলাতের সময় প্রতিটা মানুষের কুরআন তিলাওয়াতগুলো তার সব সময়ের তিলাওয়াতের চাইতে বেশি আর্দ্র, গভীর অনুভূতিময় হয়। মিশারী আল আফাসির তিলাওয়াতে আমি এটা অনুভব করেছিলাম। আমাদের ইমাম যখন খুতবায় আলোচনা করেন, তাফসিরের সময় আলোচনা করেন -- তখনকার তিলাওয়াতের সাথে সলাতের তিলাওয়াত একদমই অন্যরকম লাগে, তার 'ইহদিনাস সিরাতাল মুসতাকিম' শুনলে আমার মনে হয় যেন সত্যিই প্রচন্ড অসহায় বান্দা তার আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে... সুবহানাল্লাহ! এ আমার দ্বীন, যার পরতে পরতে সৌন্দর্য গেঁথে গেঁথে আছে। আমাদের স্রষ্টা ও মালিকের কাছে নিজেকে সোপর্দ করে সব কিছুর জন্য তারই কাছে সাহায্য চাওয়ার মাঝেই কত যে শক্তি আর প্রশান্তির প্রবাহ লুকিয়ে আছে! কত সহজেই এই দ্বীনের খোঁজ দিয়েছিলেন আমার রব, এটা ভাবতেই মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু এই নিয়ামাতটির শুকরিয়া করেই আমার গোটা জীবন কাটিয়ে দিলেও তা যথেষ্ট হবেনা।

হে রাহমান! জানিনা কবে তোমায় দেখবো, তুমি যে কত সুন্দর, তা তোমার সৃষ্টি দেখেই উপলব্ধি করতে পারি। আমাদের জীবনকে তুমি কেবল তোমার জন্যই কবুল করে নাও গো আল্লাহ, হে মহাপবিত্র, হে মহামহিম!

সূরা আল-হাশরের সেই আয়াতটি যা ইমাম তিলাওয়াত করলেন সলাতে :

♥♥ "যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।" ♥♥

--- [মহিমান্বিত কুরআন, আল হাশর, ৫৯ : ২১]

১ এপ্রি, ২০১৩

নিখুঁত শিল্পী এবং ন্যায়ের সৃষ্টি

আমি যখন বান্দরবানের পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দূর দিগন্তে তাকিয়ে ছিলাম, তখন আমার রক্তবিন্দুর প্রতিটি কণা বোধকরি সেই সুমহান আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্যে মোহিত হয়েছিলো। বঙ্গোপসাগরের পানি ঘেঁষে বসে থাকা বিকেলেও নীল জলের তরঙ্গের দোলা আমার হৃদয়ের প্রতিটি কণাকেই দুলিয়েছিলো -- কানে বাতাস এসে ফিসফিস করে জানিয়ে গিয়েছিল, এ সেই মহান সত্ত্বার সৃষ্টি, যিনি নিরুপম, যিনি সুন্দর, যিনি নির্ভুল। রাহমানের প্রতিটি সৃষ্টির নির্ভুল ও অনুপম শৈলীকে দেখেই তার প্রতি আমাদের ভালোবাসাগুলো জেগে ওঠে, জানি এই সুশৃংখল পৃথিবীর স্রষ্টা পরম সুন্দর কেউ হতেই হবে, কাউকে থাকতেই হবে যিনি সবকিছুর মালিক, নইলে কী করে মানুষের চেহারা এত সুন্দর হয়? সকালে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকি যখন, সামনের মানুষগুলোর দিকে চোখ যেতে কতবার নাকমুখ এখান থেকে ওখানে সরিয়ে সাজিয়েছি কল্পনায়, নাহ! অভ্যস্ততাই শুধু না, আসলেই আমার কল্পনায় এর চাইতে সুন্দর রূপ ভাবতে পারিনা। কার্টুন নেটওয়ার্কে সেদিন অ্যালিয়েন হিসেবে মানুষের মতই ৪হাতওয়ালা প্রাণীর রূপ দেখে কেবল হাসি পাচ্ছিলো। বুঝলাম, তিনি সত্যিই সেরা শিল্পী।

লাক্সতারকা ও আমাদের বিভ্রম

আমার জীবনের একটা অনুভূতির সাথে আমার অনেক বছর যাবত অসহায় সম্পর্ক। মাঝে মাঝেই ফার্মগেইট, মহাখালি আমতলি মোড়, সাইন্স ল্যাব মোড় সহ এমন কিছু জনলোকারণ্যে বাসের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে কেমন সবকিছু হঠাৎ Mute হয়ে যায়, আমি শুধু সবকিছুকে ধাবমান দেখতে থাকি, নিজে স্তব্ধ হয়ে যাই। শত-সহস্র লোকের ভীড়ে মনে হয়, আমি আসলে কতই না তুচ্ছ। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে একসময় বলাকা বাসের হেলপার ধাক্কা দিয়ে বাসে এক পা উঠে যাওয়া আমাকে নামিয়ে দেয়ার পরে মনে হয়েছিলো সারাজীবন ধরে এত কষ্ট করে এত ভালো রেজাল্ট করেছি, এত মানুষের ভীড়ে আসলে সেসব একদমই কিছু না। এমন আমার প্রায়ই হয়। অনেক লোকের ভীড়ে আমি নিজের তুচ্ছতা ফিল করতাম গভীরভাবে, বুঝতাম নিজেকে আপ্রাণ যত্নে গড়ে তুললেও সেইটা আসলে অনেক মানুষের মাঝে গুণতির বিষয়ও না।