৩০ সেপ, ২০১২

স্বপ্নচারীর স্মৃতিচারণ


আজকে হঠাৎ ব্লগে ঢুকে পরিসংখ্যান দেখে খানিক চমকে উঠে ভালোলাগায় মন ভরে গেল। এরই মাঝে কখন যে ৭২ হাজার বার পড়া হয়ে গেছে আমার লেখাগুলো -- টেরও পাইনি আমি! অথচ, যেদিন ব্লগে একাউন্ট খুলেছিলাম, সেদিন একটা দুঃসাহস ছিল নিজের মাঝে -- জানতাম না কী লিখব, তবে তখন চারিদিকে অজস্র খারাপ কথা, রাজনৈতিক ক্যাচাল, আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালের বেড়াজালে ব্লগ পড়তে বিধ্বস্ত লাগত নিজেকে। মনে হত, যদি একটা সুস্থ জায়গা পেতাম, তাহলে এই জীবনে যে অনেক সুন্দর কিছু কথা আছে, সেগুলো নিয়ে অন্তত একাই লিখে যাব, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক।

২৮ সেপ, ২০১২

বিয়েপাগলা ছেলেদের কথা


ঘটনা ১

আজকাল যার সাথেই দেখা হয়, সবার আগে প্রশ্ন করে, "ভাই, বিয়ে কবে করবেন" বা "কিরে, বিয়ে কবে তোর?" !!

এইতো সেদিন ভার্সিটির এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হলো, সালাম আর কুশলাদি বিনিময়ের পর সবার আগে প্রশ্ন,

-- "ভাই কি বিয়ে করেই ফেলেছেন?"
-- "না রে ভাই"।
-- "তাহলে কি শীঘ্রই দাওয়াত পাচ্ছি?"

২৬ সেপ, ২০১২

মনখারাপ যেভাবে হারিয়ে যায়

প্রায় সময়েই খুব মন খারাপ আমাকে আঁকড়ে ধরতে নেয়...
যখন আমারই চারপাশের কাছের মানুষদের মাঝে প্রায় সবাইকেই দেখি জাগতিক আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক দিক থেকে এবং আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও উন্নতি করেই চলেছে ক্রমশ, অথচ আমি যেন ঠিক আগের জায়গাটাতেই আঁটকে আছি -- উন্নতির নামগন্ধও নেই। এত চেষ্টা করি তবু যেন বারবার পা পিছলে পড়ি সবধরনের প্রচেষ্টাতেই!

তখন খেয়াল হয়, আরো শত-সহস্রজন মানুষের চাইতে বেশি নিয়ামাত আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, যা পেয়েছি, তার হিসেবটুকুই কি দিতে পারবো? এটুকুও না থাকতে পারতো, এই শারীরিক অসুস্থতাটুকুই তো তাঁর ইচ্ছাতে শতগুণ বেড়ে যেতেই পারে, তখন হয়ত স্বাভাবিক চলাচলের যোগ্যতা দূরে থাক, কীবোর্ড চাপার মতন শক্তিও থাকবে না। এই জগতের হাজার হাজার নিয়ামাত আমি পেয়েছি একদমই বিনামূল্য, বিনা পরিশ্রমে... তবু কতই না অপ্রাপ্তি আমার!

২৪ সেপ, ২০১২

ফেবুলাপঃ যারা ফেসবুকে তর্কে জুড়ে শায়খ হয়ে গালাগালি করি, তাদের জন্য স্মরণিকা

একজন ফেসবুক শায়খকে বলছি, হ্যাঁ, আপনি যত বেশি স্কলারদেরকে ধুইতে পারবেন, যত তাদের গায়ে কালি লাগাইতে পারবেন, ততই বেশি নেকি হবে আপনার। ঈমানকে জিন্দা করতে হইলে প্রতিটা অপছন্দ হওয়া স্কলারের নামে একশ লাইন করে লিখতে হবে। নইলে কিন্তু আপনার জান্নাত হবেনা। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অকলঙ্ক চরিত্রতে কুৎসা রটনার চেষ্টায় এক জঘন্য নীচ মানুষরূপী পশু ছবি বানিয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া হতে পারত।

কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন আসল কাজ হলো ফেসবুকে জিহাদ করা আর বাস্তব পৃথিবীতে যারা প্রতিবাদ করেছে -- ফেসবুকে আয়েশ করে বসে তাদেরকে ভুল প্রমাণিত করা। আর শুধু এই করেই হবেনা, অবশ্যই এক হালি করে স্কলারদের ধুইতে হবে। নিজে বাস্তব জীবনে একটা কুকুর বিড়ালকে ধরে রুটি খাওয়াতে না পারলেও স্কলার যারা কুরআন আর হাদিসের শিক্ষা দেন/দিয়েছেন সহস্র মানুষকে, যারা জীবনে অজস্র ত্যাগ স্বীকার করেছেন -- তাদের নামে কুৎসা ও নিন্দা করে নিজে বড় হইতে হবে।

ফেবুলাপঃ ফেসবুকের হিরোরা

ফেসবুকের হিরোরা প্রকৃতপক্ষে ডিলিউশানে থাকে। লাইক আর কমেন্টের জোয়ারে ভেসে গিয়ে নিজের বিকৃত নীচ চিন্তাকে সর্বজনবিদিত মহান অভিমত হিসেবে চিন্তা করার কিছু নেই। এটা নিছক একটা বিভ্রমমাত্র।

দু'ছত্র লিখতে শিখে বছরের পর বছর ধরে শ্রম দেয়া, মন দিয়ে কাজ করা জ্ঞানী-গুণী, কর্মী ও নেতাদের কাজকে, ভালোবাসা আর পরিশ্রমকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিয়ে আত্মতুষ্টি লাভ করা যেতে পারে, ফলশ্রুতিতে নিজেকে কেউকেটা মনে করাও যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই হিরোগণ বাস্তব পৃথিবীতে একটা টিকটিকি ধরে মারার যোগ্যতা রাখেনা, রাখেনা একজন সাধারণ মানুষের জীবনে কিঞ্চিত পরিবর্তনও আনয়ন করতে।

ভার্চুয়াল জগত আর বাস্তব জগতের এই ব্যবধান উপলব্ধি করার বিষয়। এই সমাজের রীতিনীতি, রাস্ট্রীয় রাজনীতি, এই সময়ের জ্ঞান-তথ্য-মিডিয়া-সাহিত্য-সংস্কৃতিগুলো শত-শত বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের ভিতরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে সৃষ্টি হয়েছে। কীবোর্ডে ঝড় তুলে সবকিছুকে *নালিফাই* করে নাকচ করে দিলেই তা বদলে যাবে না -- এই পুনর্গঠনের জন্য শ্রম দিতে হবে, কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে গিয়ে কাজ করতে হবে।

মুখভরা গালগল্পে জীবন বদলায় না, কেবল আত্মতুষ্ট হওয়া যায়। সম্মানিতদের অসম্মানের চেষ্টায় মহৎ হওয়া যায়না, নিজেকেই শুধু ছোট করা হয়।

১৬ সেপ, ২০১২

মীমাংসা ও আনুগত্য : সেরা মানুষের জীবনের আলোকে

এটা সেই অসাধারণ আয়াতগুলো। এই আয়াতগুলোর আলোচনা শুনেছিলাম উস্তাদ নুমান আলী খানের কাছে যা আমার সবচাইতে প্রিয় আলোচনাগুলোর একটা, ২০ মিনিটের মাত্র।

"নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।" [সূরা নিসা ৫৮-৫৯]

অতীত স্মৃতি এবং খোঁটা দেয়া

অতীত স্মৃতি
অতীতের স্মৃতি সবাইকে ভোগায়। অতীতের ভুল অন্তরকে বিদ্ধ করে, অতীতের কষ্ট ক্রমাগত বেদনার উদগীরণ করে। বিশেষ করে যেই মানুষ আল্লাহকে ভালোবেসে, ইসলামের অনুপম সৌন্দর্যকে অনুধাবন করে দ্বীনকে ধারণ করতে চায় -- তাকে সেই অতীতের পাপ দংশন করতে থাকে, সেইটা বাঁধন-হারা কষ্টে রূপান্তরিত হয় যখন আরেকজন মুসলিম/মুসলিমাহ সেই ভুল নিয়ে কটাক্ষ করে।

১৫ সেপ, ২০১২

ফেবুলাপঃ ভালোবাসা আর উন্মত্ততা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, যিনি এই বিশ্বজগতের অধিপতি, তিনি জানেন সমস্ত মানুষের অন্তর। আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। দুইটা চোখ আর একটা মাথা ছাড়া এই মূহুর্তে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা নেই, তাও কেবল আল্লাহ তা দান করেছেন বলেই আছে। প্রিয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কটাক্ষ করে একটা মুভি বানানোর দুঃসাহস দেখানোর পরে পর তার যেই দিশেহারা বহির্প্রকাশ মুসলিমদের কাছ থেকে -- তা হয়ত ইহুদী-খ্রিষ্টানদের যারা এই ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিয়েছে, তাদের জানা ছিলো পুরোপুরি। লিবিয়ার পথে রণতরী রওনা হয়েছে পড়েছি পত্রিকায়। যে বা যারা আগুন জ্বালিয়ে হত্যাকান্ড চালিয়েছে, তারাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দরবারে ভালো জবাব দিতে পারবে -- তবে এতটুকু বুঝি, যারা মারা গেছে, তারা যদি নবীজীর (সা) নামে কুৎসা রটনার কাছে জড়িত থেকে না থাকে -- তাদের বিচার আল্লাহই জানেন, হত্যাকারীদের বিচার সহজ হবার কথা না। যেই প্রবল শক্তিশালী উন্মত্ত আগুণ জ্বলতে দেখলাম, তার কতটা বাস্তব, কতটা শো-অফ, সেটাও আল্লাহই ভালো জানেন।

৫ সেপ, ২০১২

আমার আঁধার, আমার ঘুম


আমার প্রতিটি যোগ্যতা -- প্রতিটি চিন্তার ক্ষমতা, সুস্থ সুন্দর হাসি দেয়া, কারো সাথে কথা বলা, সুন্দর পায়ে হেঁটে যাওয়া, কলম ধরে লিখতে পারা, কথা দেখে বুঝতে পারা, নিরোগ দেহে ঘুমাতে যাওয়া, প্রিয়জনদের সাথে অভিমান করতে চাওয়ার মনটাও, কষ্ট পাবার বোধটাও --- সব, স-অ-ব আমার আল্লাহ আমাকে দান করেছেন, এই নাদান, দুর্বল, মাটির তৈরি তুচ্ছ দেহটা সেই *আমার রূহ* ধারণ করেছি।

এই এত শত-সহস্র-নিযুত উপহারগুলোতে আমার কোনই অবদান নেই। তবু আমি দম্ভ করি, তবু আমি অহংকার করি, তবু আমি নিজেকে অনেক অনেক যোগ্য ভাবি... আমি এতই উজবুক আর বোকা। ওরে বেকুব, কখনো চারিদিকে তাকিয়ে দেখেছিস ওই পথচলার সময়? কত হাজার মানুষের কাছে তোর যা আছে তার অর্ধেকটাও নাই -- তার আর তোর মাঝে কোনই পার্থক্য নাই। ভেবেছিস এটা তোর জন্য একটা সুযোগমাত্র? এই উপহারগুলোর পার্থক্য কেবলই একই পরীক্ষার অন্য সেটের প্রশ্নমাত্র।

২ সেপ, ২০১২

দাওয়াতের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো

ক'দিন আগে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হলো একই দিনে। সেদিন সন্ধ্যায় অফিসের বসের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলাম, উনি কথার প্রসঙ্গে বললেন, একটা হাদিসে তিনি পড়েছিলেন, একজন মানুষকে আল্লাহর কাছে যে কয়টা বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তার কয়েকটা হলো, কীভাবে অর্থ উপার্জন করেছে, উপার্জিত অর্থ কীভাবে ব্যয় করেছে, যৌবন কীভাবে অতিক্রম করেছে...

এটুকু শুনে ড্রাইভার বলে উঠলো, "যদি হিসাব দিতে না পারি?"।
উনি বললেন, "তাহলে তো যা হবার সেটাই হবে, আল্লাহ ভালো জানেন"।
ড্রাইভার বললো, "এত কিছু না, নামায কালাম করতে হইবো, এইডা ঠিক। অন্যসব কথাই একেকটা মৌলভী একেক কথা কয়"।
- সবাই একই কথা বলে, আলাদা ভাষায় বলে।
- নাহ। আমাগের কাকরাইল মসজিদে যাই, সেইখানে তো নামাযের পরে মোনাজাত ধরেনা, সব মসজিদগুলানে হাত তুইলা দোয়া করনই লাগবো। কোথায় আছে যে মোনাজাত হাত তুইলা করতে হইবো।
- দোয়া তো হাত তুলেই করে। নামাজের পরে ভালো সময়
- ওই তো। একেক মৌলভীরা একেক কথা কয়। কেউ কয় এইটা ছিলনা, কেউ এইটা ছাড়া করবো না।

একজন ড্রাইভারের কাছে *মৌলভীদের* কথাকে দ্ব্যর্থক, ভিন্ন মনে হয়েছে কারণ একটা মোনাজাতের হাত তোলা নিয়ে *মৌলভীদের* ভিন্ন ভিন্ন বিচিত্র অবস্থান নিয়ে সে সন্দেহগ্রস্ত। এমনকি সেদিন আমাকে আরো একটা ফোন কল পেতে হয়েছে যেখানে এই ভিন্ন ব্যাখ্যা ও আরেকজনকে ভুল বলার কারণে সেই আমজনতা কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলো।

জুজুর ভয়

এই জীবনে দুই যুগ পার হবার পর আমি চির আকাঙ্খিত জিনিসটা পেয়েছিলাম। আমার এই জীবনে তা এমন একটা দিকের নির্দেশনা যা বেঁচে থাকার, জীবনকে অর্থপূর্ণ আর কর্মময় করার অনুপ্রেরণা দেয়। মুসলিম পরিবারে মৌলিক ইবাদাতের ব্যাপারে খুব সিরিয়াসভাবে বড় হওয়া সত্বেও কিশোর বয়সে এই দেশের হতভাগা আরো লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের মতন লক্ষ্যহীন এক জীবনে পা দিয়ে ফেলেছিলাম আমি। কেন? কারণ, জীবনে অজস্র উত্তরহীন প্রশ্ন ছিলো, আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন চালানোর অনুপ্রেরণাই ছিলোনা, দিক নির্দেশনা ছিলোনা সেই কঠিন সময়ে গড়ে ওঠার ব্যাপারে। কত ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার মাঝে এই জীবনটাকে নিয়ে বেঁচে সরে এসেছি আল্লাহর অশেষ রহমতে, সেটা আমি জানি। অনেক বৈচিত্র্যময় মতাদর্শ দেখেছি, কোনটাই আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, কারণ তারা সবই আমার কাছে ঠুনকো লেগেছিলো সবসময়।